Author : Kabir Taneja

Published on Jan 14, 2025 Updated 0 Hours ago

তালিবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভারতের সম্ভাব্য সম্পৃক্ততা ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত পরিবর্তনকেই দর্শায়, যা আসলে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগ বৃদ্ধি করেছে।

তালিবানের রাজনৈতিক বাস্তবতা দিল্লিতে উপস্থিতি জানান দিচ্ছে

Image Source: Getty

২০২৪ সালের ১৪ গস্ট কাবুলে তালিবানের ক্ষমতা দখলের তৃতীয় বার্ষিকী উদ্‌যাপন করার সময় তালিবান নিরাপত্তাকর্মীরা প্রাক্তন মার্কিন দূতাবাসের সামনে একটি গাড়িতে চড়ে যাচ্ছেন।

দিল্লি ও মুম্বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক পদগুলিতে তালিবান নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বহাল হওয়ার একগুচ্ছ খবর ভারতে ছড়িয়ে পড়তেই এক উল্লেখযোগ্য নীতি পরিবর্তন প্রকাশ্যে এসেছে, যা কাবুলের বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতারই প্রতিফলন। নয়াদিল্লিতে তালিবানি আধিকারিকরা সম্প্রতি ভারতের টেলিকম নিয়ন্ত্রক দ্বারা আয়োজিত একটি বহুপাক্ষিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

দীর্ঘমেয়াদের অবাস্তবতাকে সরিয়ে রেখে তালিবানের ক্ষমতায়ন সমগ্র প্রতিবেশ অঞ্চলের জন্য এক রূঢ় বাস্তব। সমস্ত স্তর জুড়ে রাজনৈতিক স্বীকৃতির জন্য তালিবান একটি সফল প্রচেষ্টা চালিয়েছে। চিন থেকে শুরু করে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি পর্যন্ত (ইউএই) একগুচ্ছ রাষ্ট্র খোলাখুলি তালিবানের অন্তর্বর্তী সরকার দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের স্বীকৃতি দিয়েছে। অন্যরা যদিও এ বিষয়ে কিছুটা সাবধানী থেকেছে এবং বেশ কিছু হিসেব-নিকেশের প্রেক্ষিতেই নতুন তালিবানি প্রশাসনকে দেখছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পাশ্চাত্যের দেশগুলি থেকে দূরত্ব ও যুদ্ধজনিত ক্লান্তির পাশাপাশি পরাশক্তি প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রকাশ। ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তালিবানকে আন্তর্জাতিক ভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার একাধিক সুযোগ প্রদান করেছে এবং তালিবানও এই সুযোগকে যথাযথ ভাবে কাজে লাগিয়েছে।

চিন থেকে শুরু করে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি পর্যন্ত (ইউএই) একগুচ্ছ রাষ্ট্র খোলাখুলি তালিবানের অন্তর্বর্তী সরকার দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের স্বীকৃতি দিয়েছে।

যাই হোক, আনুষ্ঠানিক মঞ্চে তালিবানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া ভারতের জন্য একটি জটিল প্রক্রিয়া। শুরুতেই বলে রাখা দরকার, এই সম্পৃক্ততা এড়ানো সম্ভব নয় এবং ভারতকে এমনটা করতেও হবে। তবে প্রশ্ন শুধু সম্পৃক্ততার নয়, বরং কী ধরনের ও কোন পর্যায়ে এই সম্পৃক্ততা ঘটবে, তা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা ও কৌশলের উপর এই সম্পৃক্ততার ফলাফলের প্রভাব নির্ণয় করবে। এ ক্ষেত্রে উপস্থিত নীতিগত পরিবর্তনগুলিকে খাটো করে দেখা সম্ভব নয়। ভারতীয় কূটনীতিবিদরা হাক্কানি নেটওয়ার্কের সিরাজুদ্দিন হাক্কানির সঙ্গে দেখা করেছেন। এটি এমন এক গোষ্ঠী, যাকে এর আগে ভারত আফগানিস্তানে ভারতীয় মিশনের উপর হামলা চালানোর পাশাপাশি ২০০৮ সালে কাবুলের দূতাবাসে বোমা হামলার – যাতে ৫৮ জন নিহত হন – জন্য দায়ী করেছিল। সিরাজুদ্দিন বর্তমানে সে দেশের ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তাঁর অনুমতি ছাড়া কাবুলে কাজ করা দুষ্কর।

ভারত দীর্ঘ দিনব্যাপী বারংবার বিশ্বকে এ কথা মনে করিয়ে দিয়েছে যে, তালিবানের সৃষ্টি ও ক্ষমতায়ন পাকিস্তানের নিজের সুবিধার্থে পরিকল্পিত। বর্তমান সময়ে পাকিস্তান ও তালিবান একে অপরের বিরোধী এবং বিতর্কিত ডুরান্ড লাইন বরাবর প্রায়শ সংঘর্ষের খবর প্রকাশ্যে আসে। রাওয়ালপিন্ডি তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান-কে (টিটিপি) নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। ২০২১ পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের সামরিক এবং গোয়েন্দা দফতরের একটি প্রধান লক্ষ্য ছিল ভারতকে কাবুলের মাটিতে জায়গা না করতে দেওয়া, যেটিতে পাকিস্তান অবশ্য ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানি কৌশলের এই স্বাভাবিক ব্যর্থতা ভারতীয় নিরাপত্তা বলয়ের আনন্দ উদ্‌যাপনের কারণ হতে পারে না এবং কাবুলের মাটিতে তার উপস্থিতির বার্তা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল হতে পারে না। একটি নতুন চরমপন্থী ও সন্ত্রাসবাদী বাস্তুতন্ত্রের দ্রুত উত্থান অন্যান্য দেশের মতো  ভারতকেও প্রভাবিত করবে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানি প্রশাসন এমন এক পথের কাঁটা, যাকে উপড়ে ফেলা খুব একটা কঠিন হবে না।

বৃহত্তর আঙ্গিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে তালিবানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের নিজস্ব লড়াইয়ের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তালিবানের অন্তর্বর্তী সরকারি অবকাঠামোর শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা সন্ত্রাসবাদের জন্য মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকা ও রাষ্ট্রপুঞ্জের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন। ‘ভাল’ এবং ‘খারাপ’ সন্ত্রাসবাদের মধ্যে পার্থক্য গড়ে তোলার যে কোনও প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে দিল্লি ক্রমাগত প্রতিরোধ জানিয়ে এসেছে।

বর্তমান সময়ে পাকিস্তান ও তালিবান একে অপরের বিরোধী এবং বিতর্কিত ডুরান্ড লাইন বরাবর প্রায়শ সংঘর্ষের খবর প্রকাশ্যে আসে। রাওয়ালপিন্ডি তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান-কে (টিটিপি) নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে।

বাস্তববাদী নীতি অনুসরণ করার সময় প্রতিটি আখ্যানেরই নিজস্ব সময়সীমা থাকে এবং কখনও কখনও সেগুলি বিপরীত ফল প্রদানকারী হয়ে উঠতে পারে। তালিবান নিজে বেশ কিছু সময় যাবৎ ভারতে তার আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধিত্বকারীদের জায়গা করে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে, যখন অন্য দিকে একটি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের দরুন আংশিক ভাবে গত বছর দিল্লিতে তার দূতাবাসটিকে আংশিক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। তালিবানের হাতেও কাজে লাগানোর মতো তুরুপের তাস রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে ভারত বলে এসেছে যে, দুই দেশের মধ্যে মানুষে মানুষে সংযোগ এই সম্পর্কের ভিত্তিপ্রস্তর। বিগত বছরগুলিতে এই অবস্থান ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এর নেপথ্যে থেকেছে আফগানদের জন্য ভিসা সংক্রান্ত ভারতের ভ্রান্ত নীতি এবং ত্রাণ আটকে রাখা অথবা ভারতের টেকনিক্যাল অফিসগুলিতে চলাচল সীমিত করার মাধ্যমে জনসংযোগকে ব্যাহত করার তালিবানি সম্ভাবনা। ভারতের টেকনিক্যাল অফিসটি বর্তমানে একটি আনুষ্ঠানিক দূতাবাসের পরিবর্তে কাজ করছে।

অবশেষে, তালিবানি নেতৃত্বাধীন সরকারকে স্বীকৃতি না দিয়ে তার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকতার একটি পর্যায় বজায় রাখার ইতিবাচক দিকটি হল, এ হেন বোঝাপড়া থেকে যে কোনও মুহূর্তে সরে আসা মোটেও মূল্যসাপেক্ষ নয়। ভারতের সঙ্গে তালিবানের সম্পৃক্ত হতে চাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হল, তালিবান জানে যে, তাদের টিকে থাকার উপর প্রভাব পড়তে পারে যদি অঞ্চলটির বৃহত্তম শক্তি তাদেরকে শুধু মাত্র শত্রুর নজরেই দেখে। ভারতের জন্য আজকের কাবুল এমন এক বাস্তবতা, যার সঙ্গে তাকে মানিয়ে নিতেই হবে এবং ভারত আফগানিস্তানে আর কোনও আঞ্চলিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়তে পারে না ও অন্যদের তরফে উঠে আসা আপাত প্রলোভনের প্রতিবেদনে সাড়া দিতে পারে না।

এ হেন সম্পৃক্ততাকেও বাস্তব মূল্য চোকাতে হতে পারে এবং দ্রুত উদীয়মান শক্তি হিসেবে ঝুঁকি এড়িয়ে চলার পরিবর্তে ভারতকে এ বিষয়সমূহের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। তা সত্ত্বেও ভারতে তালিবান নির্বাচিত আধিকারিকদের উপস্থিতি নিঃসন্দেহে বাঁকবদলকারী মুহূর্ত।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় হিন্দুস্থান টাইমস-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.