Published on Jan 06, 2022 Updated 0 Hours ago

কপ ২৬ সম্মেলনে সুসংহত জৈব শোধনাগার বা ইন্টিগ্রেটেড বায়ো রিফাইনারি গড়ে তোলার ঘোষণা ভারতের তরফে শক্তিক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা গড়ে তোলার জন্য পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির সম্ভাব্য উৎস হিসেবে জৈব সমাধানগুলিকে খতিয়ে দেখার আগ্রহকেই তুলে ধরে।

ভারতে শক্তিশালী জৈব জ্বালানি শিল্প গড়ে তোলার বাড়তি সুবিধা

সদ্য অনুষ্ঠিত ২৬তম ইউ এন এফ সি সি সি কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ-এর (কপ ২৬) গ্লাসগো চুক্তিতে জানানো হয়েছে যে, বিশ্বের দেশগুলি জলবায়ু সংকট নিরসনে যথেষ্ট চেষ্টা করছে না। এই চুক্তিতে সব কটি দেশকেই ২০৩০ সালকে লক্ষ্যমাত্রা ধরে জলবায়ু প্রতিশ্রুতি রক্ষা বা ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কনট্রিবিউশনস-এর (এন ডি সি-গুলি) সশক্তিকরণে জোর দিতে অনুরোধ জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কপ ২৬ সম্মেলনে তাঁর ভাষণে ভারতের হালনাগাদ এন ডি সি-গুলি পাঁচটি মূল ঘোষণার মাধ্যমে প্রকাশ করেন। এর মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য লক্ষ্যমাত্রাগুলি হল ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন এবং ২০৭০ সালের মধ্যে নেট জিরো বা শূন্য নিঃসরণের মাত্রা অর্জন করা।

সুসংহত জৈব শোধনাগার এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে জৈব উপাদান বা বায়োমাস থেকে ব্যবহারোপযোগী দ্রব্য উৎপাদন করা হয় এবং এই রূপান্তর চলাকালীন যথাসম্ভব বেশি পরিমাণে শক্তির পুনরুদ্ধার করা হয়।

কপ ২৬ চলাকালীন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ সুসংহত জৈব শোধনাগার বা ‘ইন্টিগ্রেটেড বায়ো রিফাইনারিজ’ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এটি মিশন ইনোভেশন উদ্যোগের আওতায় দূষণমুক্ত শক্তি সমাধান গড়ে তোলার প্রেক্ষিতে ভারত এবং নেদারল্যান্ডসের এক যৌথ উদ্যোগ। সুসংহত জৈব শোধনাগার এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে জৈব উপাদান বা বায়োমাস থেকে ব্যবহারোপযোগী দ্রব্য উৎপাদন করা হয় এবং এই রূপান্তর চলাকালীন যথাসম্ভব বেশি পরিমাণে শক্তির পুনরুদ্ধার করা হয়। এই প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে শক্তিশালী, আত্মনির্ভর, স্থিতিশীল এবং পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে যথেষ্ট পরিমাণে এবং সূক্ষ্ম রাসায়নিক উৎপাদন করা সম্ভব। জৈব জ্বালানি শিল্পে একাধিক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে গত কয়েক বছরে ভারত জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প এবং আরও একটি পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে জৈব জ্বালানি ব্যবহারের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার প্রতি তার আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেছে।

বিশ্বে শক্তির চাহিদা ক্রমবর্ধমান এবং আগামী দশকের মধ্যে এই চাহিদা ১৭০০ কোটি টন তেলের সমতুল্য হয়ে দাঁড়াবে। বি পি এনার্জি আউটলুক ২০১৯ অনুযায়ী, বিশ্ব শক্তি চাহিদার ক্ষেত্রে ভারতের অংশীদারিত্বের পরিমাণ ২০৪০ সালের মধ্যে ১১ শতাংশে পৌঁছবে। কয়লা, তেল এবং গ্যাসোলিনের মতো তীব্র গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণকারী জ্বালানিগুলি ভারতের জাতীয় শক্তি চাহিদার প্রায় ৬৯% পূরণ করে। এই বিপুল চাহিদা স্বাভাবিক ভাবেই পরিবেশের উপরে প্রতিকূল প্রভাব ফেলবে এবং এই সব জ্বালানির জন্য অনভিপ্রেত আমদানি নির্ভরতা গড়ে তুলবে। যেমন, ২০২০ সালে অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও ভারতের আমদানিকৃত জ্বালানির পরিমাণ ছিল ১০,৪৩০ কোটি মার্কিন ডলারের সমান যা দেশের মোট আমদানির মূল্য অর্থাৎ ৩৬,৭৯০ কোটি মার্কিন ডলারের ২৮.৩৫%। এর ফলে ভারতের শক্তিক্ষেত্রটি ভূরাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং জোগান ব্যবস্থার সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নিঃসৃত গ্রিন হাউস গ্যাসের দরুন মানুষের সৃষ্ট জলবায়ু সংকট এবং জীবাশ্ম জ্বালানির সঞ্চয় দ্রুত শেষ হয়ে আসার সম্ভাবনার মুখে দাঁড়িয়ে জৈব জ্বালানিই এক মাত্র বিকল্প যেটির একাধিক ইতিবাচক দিক বর্তমান।

কয়লা, তেল এবং গ্যাসোলিনের মতো তীব্র গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণকারী জ্বালানিগুলি ভারতের জাতীয় শক্তি চাহিদার প্রায় ৬৯% পূরণ করে। এই বিপুল চাহিদা স্বাভাবিক ভাবেই পরিবেশের উপরে প্রতিকূল প্রভাব ফেলবে এবং এই সব জ্বালানির জন্য অনভিপ্রেত আমদানি নির্ভরতা গড়ে তুলবে।

স্থিতিশীল শক্তির উৎস রূপে জৈব জ্বালানির ব্যবহার

জৈব জ্বালানি এমন এক স্থিতিশীল শক্তি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করে যেটি পুনর্নবীকরণযোগ্য, পরিবেশবান্ধব এবং দেশীয় সহজলভ্য কাঁচামাল ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদনে সক্ষম। জৈব জ্বালানি উৎপাদনের বহুল ব্যবহৃত প্রক্রিয়াটি ফার্মেন্টেশন বা গাঁজন নির্ভর — এই প্রক্রিয়ায় অণুজীবেরা একাধিক জৈব রাসায়নিক পদ্ধতিতে গ্লুকোজের মতো সাধারণ শর্করাকে নানা গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিকে রূপান্তরিত করে। রাসায়নিক প্রক্রিয়ার (যে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তাপের পরিমাণ ৫০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের চেয়ে বেশি) তুলনায় অনেক কম তাপমাত্রায় (২৫ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) জৈব জ্বালানির উৎপাদন করা সম্ভব। যার ফলে সমগ্র প্রক্রিয়াটি অনেক বেশি সাশ্রয়ী। জীবাশ্ম জ্বালানিজাত শক্তির তুলনায় জৈব জ্বালানি ব্যবহারের ফলে শুধুমাত্র কার্বন নিঃসরণের পরিমাণই কমে না, পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কাঁচামালের জোগানটিও সুনিশ্চিত হয়।

গাঁজন প্রক্রিয়াটি মূলত দু’ধরনের — সলিড স্টেট বা কঠিন অবস্থায় গাঁজন এবং সাবমার্জড ফার্মেন্টেশন বা জলে নিমজ্জিত অবস্থায় গাঁজন। এই দু’টির মধ্যে প্রথমটিতে জল ছাড়া অণুজীব বা মাইক্রো অর্গ্যানিজমের চাষ করা হয়, যেটি জলে নিমজ্জিত গাঁজনের তুলনায় অর্থনৈতিক দিক থেকে ১০০ গুণ বেশি কার্যকরী। কারণ জল খরচ বৃদ্ধির এক অন্যতম কারণ। যে হেতু প্রক্রিয়াটির মানোন্নয়ন এবং পরিচালনা কঠিনতর, তাই গবেষকদের মধ্যে জলে নিমজ্জিত গাঁজন প্রক্রিয়াটি অধিক জনপ্রিয়। তবে প্রয়োজনীয় জল জোগানের স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সুবিধার কথা মাথায় রাখলে কঠিন অবস্থায় গাঁজন প্রক্রিয়ার কথা অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত।

প্রথম পর্যায়ে ভুট্টা, আখ ইত্যাদি খাদ্যশস্য ব্যবহার করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে জৈব জ্বালানির উৎপাদন ধানের তুষ, গমের ভুষি ইত্যাদি লিগনোসেলুলোজিক অ্যাগ্রো রেসিডিউ বা কৃষিজাত পদার্থের অবশিষ্টাংশের উপরে নির্ভরশীল হয়।

পূর্বোল্লিখিত সুবিধেগুলি থাকা সত্ত্বেও জৈব জ্বালানি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় মাইক্রোবিয়াল ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়াটির অনেকগুলি অসুবিধেও আছে। সাধারণত এই প্রক্রিয়াটি বাণিজ্যিক স্তরে জ্বালানি উৎপাদনের তুলনায় অধিক খরচ সাপেক্ষ। এই খরচের একটা বড় অংশ লাগে মূলত গ্লুকোজের মতো দামি মাড় বা সাবস্ট্রেটের জন্য। জৈব জ্বালানির দাম কমানোর জন্য অপেক্ষাকৃত সস্তা ফিড স্টকের প্রয়োজনীয়তা এবং ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়। ব্যবহৃত ফিড স্টকের উপরে ভিত্তি করে জৈব জ্বালানিকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করা যায় এবং প্রত্যেকটি পর্যায়েরই উদ্ভাবন হয়েছে তার পূর্ববর্তী পর্যায়ের সীমাবদ্ধতাগুলি অতিক্রম করার জন্য। প্রথম পর্যায়ে ভুট্টা, আখ ইত্যাদি খাদ্যশস্য ব্যবহার করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে জৈব জ্বালানির উৎপাদন ধানের তুষ, গমের ভুষি ইত্যাদি লিগনোসেলুলোজিক অ্যাগ্রো রেসিডিউ বা কৃষিজাত পদার্থের অবশিষ্টাংশের উপরে নির্ভরশীল হয়। জৈব জ্বালানি উৎপাদনের প্রথম পর্যায়ে খাদ্যশস্য বনাম জ্বালানির নৈতিক বিতর্ক দূর করার জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ে এমন অবশেষ ব্যবহার করা হয় যেগুলি প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয় এবং যেগুলিকে সাধারণত বর্জ্য পদার্থ বলে গণ্য করা হয়। এর পাশাপাশি রেস্তরাঁ, রান্নাঘর এবং সাপ্লাই চেন স্ল্যাক থেকে প্রাপ্ত খাবারের অবশিষ্টাংশ শর্করার এক উল্লেখযোগ্য উৎস। মিউনিসিপ্যাল সলিড ওয়েস্ট (এম এস ডব্লিউ)-এর আওতাভুক্ত খাদ্যের অবশিষ্ট বর্জ্য পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্য দুইয়ের জন্যই ক্ষতিকর। বিশাল মাত্রায় ফিড স্টক উৎপাদনে ভারত সক্ষম এবং প্রতি বছর এ দেশে ৩০ কোটি টনেরও বেশি কৃষিজ বর্জ্য এবং প্রায় ৩০ কোটি টন খাদ্য বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এই ধরনের বর্জ্যগুলির দেশীয় প্রাচুর্য, নিম্ন মূল্য এবং উচ্চ শর্করা মাত্রার জন্য এগুলিকে জৈব জ্বালানি উৎপাদনের সম্ভাব্য উৎস হিসেবে মনে করা হয়। একই সঙ্গে এই ধরনের কাঁচা মালের ব্যবহার চক্রাকার অর্থনীতি বহাল রাখতে সাহায্য করে।

গবেষকদের জন্য আর একটি প্রতিবন্ধকতা হল গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদনের কম কার্যকারিতা। বাজারের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে নিম্ন খরচের মাড় ব্যবহার করে অধিক পরিমাণে উৎপাদন প্রয়োজন। কিন্তু কৃষিজ এবং খাদ্যজাত বর্জ্য ব্যবহারের অর্থ হল প্রাক-ব্যবহারিক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া, যা বর্জ্য থেকে শর্করা পুনরুদ্ধারের পূর্বে সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ এবং চিটিনের স্তরগুলি ভাঙার জন্য আবশ্যিক। এর ফলে মাল্টি স্টেপ প্রসেসিং বা বহুস্তরীয় প্রক্রিয়াকরণ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে এবং সমগ্র প্রক্রিয়াটি ক্লান্তিকর, খরচসাপেক্ষ এবং অকার্যকর হয়ে দাঁড়ায়। প্রক্রিয়াটির কার্যকারিতা এবং উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মতো জৈব প্রযুক্তিগত কৌশল কাজে লাগানো হচ্ছে।

ভারত এবং জৈব জ্বালানিসাম্প্রতিক নীতিগত দ্যোগ

ভারত জৈব জ্বালানি উৎপাদনে প্রয়োজনীয় ফিড স্টক বা কাঁচা মালের দেশীয় জোগানের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, ন্যাশনাল পলিসি অন বায়ো ফুয়েলস ২০১৮-তে ‘ইন্ডিয়ান এনার্জি বাস্কেট বা ভারতীয় শক্তি ভাণ্ডারে জৈব জ্বালানির কৌশলগত ভূমিকা’কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এই নীতিগুলিতে জৈব ইথানলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মানুষের খাদ্যের জন্য অনুপযুক্ত শর্করা বিশিষ্ট (মিষ্টি বীট, মিষ্টি জোয়ার ইত্যাদি) এবং স্টার্চযুক্ত বর্জ্য (ভুট্টা, নষ্ট হয়ে যাওয়া খাদ্যশস্য ইত্যাদি) ব্যবহারের উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। ক্ষেত্রটিতে পুঁজির অভাবের ব্যাপারটি লক্ষ করে সরকারের তরফে দ্বিতীয় প্রজন্মের ইথানলের জৈব শোধনাগারগুলির জন্য ৫০০০ কোটি টাকার বাস্তবোপযোগী তহবিল প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ভারত ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে পেট্রলে ২০% ইথানল মিশ্রণের লক্ষ্যমাত্রাও স্থির করেছে।

এমনকি সাম্প্রতিক কালে কপ ২৬ ঘোষণার আগেই বিগত বছরগুলিতে আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভারত নিজেকে জৈব জ্বালানির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করে তুলতে চেয়েছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী মোদীর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রেক্ষাপটে দুই দেশ ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিউ টাস্ক ফোর্স অন বায়ো ফুয়েলস নামক দ্বিপাক্ষিক কর্মসূচি গ্রহণ করে যার প্রধান লক্ষ্য হল প্রযুক্তি বিনিময় প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা এবং জৈব জ্বালানি ক্ষেত্রটিকে উন্নততর করার জন্য বিজনেস মডেল বা ব্যবসায়িক পরিকাঠামো তৈরি করা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক এশিয়ান ক্লিন এনার্জি ফান্ড বা এশিয়ার দূষণমুক্ত শক্তি তহবিলের আওতায় জৈব জ্বালানি ক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য ভারতকে ২৪ লক্ষ মার্কিন ডলার অনুদান অনুমোদন করে। ভারত বায়ো এনার্জি কো-অপারেশন বা জৈব শক্তি সহযোগিতার ক্ষেত্রে ব্রাজিলের সঙ্গে মউ স্বাক্ষর করেছে। ব্রাজিল জৈব জ্বালানি উৎপাদনের কাজে আখের ফিড স্টক ব্যবহার করে উল্লেখযোগ্য ফল লাভ করেছে।

যে হেতু ভারতের বিশাল পরিমাণ কৃষিজ বর্জ্য গ্রামীণ অঞ্চলে উৎপন্ন হয়, তাই জৈব জ্বালানি প্রস্তুতকারক কারখানা নির্মাণ স্থানীয় স্তরে জোগান ব্যবস্থা তৈরি করবে। এই স্থানীয় জোগান ব্যবস্থাকে কীটপতঙ্গ সংক্রমণ এবং জলবায়ুর হাত থেকে খাদ্য বর্জ্য নষ্ট হওয়া রুখতে তৎপর থাকতে হবে।

আত্মনির্ভরতার জন্য প্রয়োজনীয় জৈব জ্বালানি

যদিও জৈব জ্বালানি ভারতের শক্তি চাহিদার এক বিরাট অংশ পূরণে অসমর্থ হতে পারে, তবুও জৈব জ্বালানির উৎপাদন আগামী দশ বছরের প্রেক্ষিতে ভারতের আত্মনির্ভরতার কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। প্রথমত জৈব জ্বালানির উৎপাদন জ্বালানি আমদানির উপরে নির্ভরতা কমাবে যা বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ে এবং মূলধনের বহির্প্রবাহ রুখতে সাহায্য করবে। নীতি আয়োগের বিশেষজ্ঞ কমিটির মত অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে ২০% ইথানল মিশ্রণের (ই ২০) লক্ষ্যমাত্রা বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারে বার্ষিক ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার সাশ্রয় জোগাবে। দ্বিতীয়ত, এর ফলে জীবাশ্ম ভিত্তিক শক্তি ব্যবস্থার সরবরাহ শৃংখলের দুর্বলতার দিকগুলি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে। যে হেতু ভারতের বিশাল পরিমাণ কৃষিজ বর্জ্য গ্রামীণ অঞ্চলে উৎপন্ন হয়, তাই জৈব জ্বালানি প্রস্তুতকারক কারখানা নির্মাণ স্থানীয় স্তরে জোগান ব্যবস্থা তৈরি করবে। এই স্থানীয় জোগান ব্যবস্থাকে কীটপতঙ্গ সংক্রমণ এবং জলবায়ুর হাত থেকে খাদ্য বর্জ্য নষ্ট হওয়া রুখতে তৎপর থাকতে হবে। এর ফলে অপুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহারের রসদ এবং পরিবহণ খরচ হ্রাস পাবে। পাশাপাশি সরবরাহ শৃংখলটি ভূরাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক টালমাটাল অবস্থা থেকে সুরক্ষা পাবে। তৃতীয়ত, জৈব জ্বালানি ক্ষেত্রটি গ্রামীণ অঞ্চলে আধা-দক্ষ কর্মসংস্থানের রাস্তা খুলে দেবে এবং ভারতীয় কৃষকদের জন্য অতিরিক্ত উপার্জনের সুযোগ তৈরি করতে সাহায্য করবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, চিনি কলগুলি ইথানল শিল্পের সুবাদে ২০২০-২১ সালে ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের মুনাফা অর্জন করতে পারে। গ্রামীণ অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি ভোক্তাদের চাহিদাকে প্রভাবিত করবে, যা ভারতের অসংগঠিত অর্থনীতিতে এক গুণক প্রভাব ফেলবে।

যদিও এ ক্ষেত্রে কতগুলি সতর্কতা মেনে চলা আবশ্যক। ই ২০ লক্ষ্যমাত্রার দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য সাম্প্রতিক অতীতে সরকারের তরফে দ্বিতীয় পর্যায়ের খাদ্যবর্জ্যের তুলনায় খাদ্যশস্য ব্যবহারের প্রচার চালানো হচ্ছে। এর ফলে মাঝারি মেয়াদের মধ্যে ভুট্টা, বার্লি, বাজরার মতো শস্যের উৎপাদনে এক আচমকা বৃদ্ধির চাহিদা তৈরি হবে। এই সকল ঘটনা দর্শায় যে, খাদ্যশস্য বা ফিড স্টকের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নির্ধারকদেরও কৃষি পদ্ধতির চিরাচরিত পন্থাগুলির বিনির্মাণের কথা ভাবতে হবে। খাদ্যশস্যের বাজারে মুনাফার পরিমাণ ফিড স্টকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হতে হবে, অন্যথায় কৃষকেরা শস্যের চাহিদা, মাটির অবস্থা এবং পরিবেশগত সংকটের কথা না ভেবে উচ্চ শর্করাযুক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন করবেন। ফলে ইনডিরেক্ট ল্যান্ড ইউজ চেঞ্জ (আই এল ইউ সি) বা পরোক্ষে জমির ব্যবহারে পরিবর্তন ঘটবে এবং মোট নিঃসরণের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়াও, দ্বিতীয় পর্যায়ের কৃষিজ বর্জ্য পোলট্রি খাদ্য হিসেবে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয়, এই কৃষিজ বর্জ্যকে ফিড স্টক বা মাড় হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করলে পোলট্রি ক্ষেত্রে আলোড়ন পড়ে যাবে এবং স্বাভাবিক ভাবেই খাদ্যের জোগানে টান পড়বে। তাই মাড় উৎপাদনকারী খাদ্যশস্য চাষের জন্য আরও বেশি করে প্রণোদনা জোগানোর পাশাপাশি দেশের খাদ্য নিরাপত্তার দিকটিও তলিয়ে দেখতে হবে।

স্থানীয় সরবরাহকারীদের এবং বর্জ্য পৃথককারীদের তাদের বর্জ্যের আর্থিক লাভের সম্ভাবনার দিকটি সম্পর্কে শিক্ষিত করার মাধ্যমে এবং এই কাজে উৎসাহ জোগানোর মাধ্যমে আত্মনির্ভরতার প্রেক্ষিতে জৈব জ্বালানি উৎপাদনের কাজটি বাস্তবে সম্ভবপর হতে পারে। এই লক্ষ্য পূরণে ভারতের উচিত বিজ্ঞান, শিল্প এবং সমাজের মধ্যে আরও ব্যাপক ভাবে সমন্বয় সাধনে উৎসাহ দেওয়া।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Akanksha Jain

Akanksha Jain

Akanksha Jainis adoctoral researcher at South Asian University. Her research areasinclude industrial biotechnology waste and biomass valorisation bioenergy and bioproduct production and bioprocess engineering. She ...

Read More +
Ambuj Sahu

Ambuj Sahu

AmbujSahuworks as a Research Associate at the Delhi Policy Group and an alumnus from Indian Institute of Technology Delhi. His interests include foreign security and ...

Read More +