Author : Angad Singh Brar

Published on Feb 16, 2024 Updated 0 Hours ago

প্রধান দাতাদের অর্থায়ন স্থগিতের সিদ্ধান্ত ঘোষণার কারণে ইউএনআরডব্লিউএ–র মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রবল

সংঘাত–পরবর্তী গাজার জন্য বিপদ: ইউএনআরডব্লিউএ অর্থায়ন স্থগিত

ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ ওয়ার্কস এজেন্সি ফর ‌প্যালেস্টাইন রিফিউজিস ইন দ্য নিয়ার ইস্ট (ইউএনআরডব্লিউএ)–এ তহবিল প্রদানকারী বৃহত্তম দাতা দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১২ জন ইউএনআরডব্লিউএ কর্মচারীর ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে হামাসের হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে এই বহুপাক্ষিক সংস্থায় নতুন কোনও অবদান স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করেছে। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ব্রিটেন, জাপান, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড এবং ফিনল্যান্ডও সংস্থাটিকে অর্থায়ন স্থগিত করেছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অতীতেও এই সংস্থাটিতে অর্থ সরবরাহ বন্ধ করেছিল, তবে ২০১৮ সালের ট্রাম্প প্রশাসনের সেই সিদ্ধান্তকে একটি ব্যতিক্রম হিসাবে দেখা হয়েছিল। ২০২১ সালে, বাইডেন প্রশাসনের অধীনে, ইউএনআরডব্লিউএ অর্থায়ন পুনরায় শুরু করা হয়েছিল, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তখন তার প্রাক–ট্রাম্প বহুপাক্ষিক প্রতিশ্রুতিতে ফিরে যেতে দেখা গিয়েছিল। মার্কিন প্রশাসনের কর্মপ্রণালী হিসাবে অর্থায়ন বন্ধের বর্তমান সিদ্ধান্ত ইঙ্গিত দেয় যে প্রশাসন নির্বিশেষে ইউএনআরডব্লিউএ একটি অস্তিত্বের সঙ্কটের মুখোমুখি। বেশ কয়েকটি বড় দাতা দেশ থেকে অর্থ বন্ধের ঘোষণার মাত্রাও ইউএনআরডব্লিউএ–এর সাংগঠনিক মৃত্যুর দৃশ্যকে অতীতের তুলনায় আরও বাস্তব করে তোলে। এর শীর্ষ ২৫ দাতার তালিকা দেখলে (ছবি ১) ইউএনআরডব্লিউএ ডিফান্ডিংয়ের এই তরঙ্গের মাত্রা অনুমান করা যেতে পারে।



ছবি 1:  ইউএনআরডব্লিউএ–র ডোনার র‍্যাঙ্কিং ২০২২ (লাল = দাতা রাষ্ট্র যারা অস্থায়ী অর্থ বরাদ্দ ঘোষণা করেছে)

ইউএনআরডব্লিউএ গাজায় কাজ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বহুপাক্ষিক সংস্থা হিসাবে থেকে গিয়েছে। শান্তির সময়ে, ১৯৬৭ সালে ইজরায়েল ভূখণ্ড দখল করার পর থেকে, এটি একটি
হোস্ট স্টেট বা একটি  আধা–সরকারের সমতুল্য কার্য সম্পাদন করে। সংস্থাটি রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের নির্দেশে গঠিত, এবং এর কাজ হল গাজায় প্যালেস্তাইনিদের স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো পরিষেবা প্রদান করা, কারণ সেখানকার মানুষকে সমর্থন করার জন্য রাষ্ট্রীয় উপকরণ নেই। ২০০৭ সাল থেকে ইজরায়েল গাজার চারপাশে অবরোধ শুরু করার পরে ইউএনআরডব্লিউএ–র গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। তাই, ২০২৩ সালের ইজরায়েল–গাজা আক্রমণগুলি শুরু হওয়ার আগেও, এই ভূক্ষেত্রটি ইউএনআরডব্লিউএ–র মানবিক যত্নের অধীনে ছিল। অন্য কোনও বহুপাক্ষিক সংস্থার বিপরীতে, ইউএনআরডব্লিউএ হল একমাত্র সংস্থা যা একটি নির্দিষ্ট বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীর, অর্থাৎ প্যালেস্তাইনি শরণার্থীদের, যত্ন নেওয়ার জন্য নিবেদিত। এই উদ্বাস্তুরা ভৌগোলিকভাবে জর্ডন, লেবানন, সিরিয়া, গাজা স্ট্রিপ এবং পূর্ব জেরুজালেম–সহ পশ্চিম তীর জুড়ে ছড়িয়ে আছেন। ইউএনআরডব্লিউএ এই সমস্ত এলাকায় তার কর্মসূচি চালায়, কিন্তু তার অ্যাজেন্ডার সিংহভাগ জুড়ে থাকে গাজা, যেহেতু সংস্থাটিকে গাজা স্ট্রিপে তার প্রোগ্রাম বাজেটের প্রায় ৪১ শতাংশ ব্যয় করতে দেখা যায়। তাছাড়া, গাজায় সংস্থাটির সর্বাধিক কর্মীর উপস্থিতি রয়েছে, এবং এখানে এটির কাজকর্ম অন্যান্য নির্দেশিত এলাকার চেয়ে বেশি।


সংস্থাটি রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের নির্দেশে গঠিত, এবং এর কাজ হল গাজায় প্যালেস্তাইনিদের স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো পরিষেবা প্রদান করা, কারণ সেখানকার মানুষকে সমর্থন করার জন্য রাষ্ট্রীয় উপকরণ নেই।

রাষ্ট্রপুঞ্জের বহুপাক্ষিক জালের অন্তর্গত অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার বিপরীতে, যেখানে সংস্থাগুলি রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তর্জাতিক কর্মী ও আমলাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে, ইউএনআরডব্লিউএ–র কর্মীরা মূলত প্যালেস্তাইনি। ইউএনআরডব্লিউএ গাজা উপত্যকায় একটি প্রধান নিয়োগকর্তা হিসাবে কাজ করে, এবং সেখানে এর কর্মীদের ৯৫ শতাংশ প্যালেস্তাইনি। ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ইউএনআরডব্লিউএ কর্মীদের জড়িত থাকার সাম্প্রতিক অভিযোগগুলি বিশ্লেষণ করার সময় অবশ্যই মনে রাখা উচিত যে, বহুপাক্ষিক সংস্থায় আন্তর্জাতিক কর্মীদের পরিবর্তে স্থানীয়দের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের কর্মীদের স্থানীয়করণ গাজায় প্যালেস্তাইনিদের কর্মসংস্থান প্রদানে সহায়তা করে, যেখানে সংঘাত শুরু হওয়ার আগে বেকারত্বের হার ৪০ শতাংশের মতো ছিল। ইউএনআরডব্লিউএ কর্মীদের অব্যাহত বেতন শুধু ব্যক্তিদের জন্যই নয়, গাজায় তাঁদের আত্মীয়দের জন্যও একটি স্থিতিশীল আয়ের উৎস হিসাবে কাজ করে। গাজায় প্যালেস্তাইনিদের প্রতি ইউএনআরডব্লিউএ–র গুরুত্ব সত্ত্বেও, এই অতি–স্থানীয়কৃত কর্মীবাহিনী হল সংস্থার চলতি সংকটের কেন্দ্রবিন্দু। একটি অতি–স্থানীয়কৃত কর্মীবাহিনী বহুপাক্ষিক সংস্থার নিরপেক্ষতাকে দুর্বল করে দেয়, কারণ রাষ্ট্রপুঞ্জের স্থানীয় কিছু কর্মচারী তাদের প্যালেস্তাইনি পরিচয় থেকে উদ্ভূত দৃঢ় ব্যক্তিগত মতামত পোষণ করে্ন। রাষ্ট্রপুঞ্জের ১২ জন কর্মীকে ঘিরে চলতি টানা্পড়েনের মধ্যে নয় জন ইউএনআরডব্লিউএ শিক্ষক ছিলেন। এর মধ্যে সাত জন ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে প্রবেশ করেন বলে অভিযোগ আনা হয়। যদিও এই সংখ্যাগুলি ইউএনআরডব্লিউএ দ্বারা নিযুক্ত প্যালেস্তাইনিদের মোট সংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ, তা এমন এক সময়ে এজেন্সির শীর্ষ পশ্চিমী দাতাদের তহবিল বন্ধ করার মতো চরম পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য যথেষ্ট কারণ হয়ে ওঠে যখন গাজার বহুপাক্ষিক সংস্থার প্রয়োজন ।

এই অর্থ ছাঁটাইয়ের পরিণতি প্যালেস্তাইনিদের ভবিষ্যতের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে সংঘাত–পরবর্তী গাজায়, যেহেতু ওই ভূক্ষেত্রে ইউএনআরডব্লিউ–র মতো গভীরভাবে প্রবেশকারী রাষ্ট্রপুঞ্জের অন্য কোনও সংস্থা নেই। বর্তমান ডিফান্ডিং ক্রিয়াগুলিকে এজেন্সি উন্নতি না–করা পর্যন্ত এবং তার সাংগঠনিক সমস্যাগুলির সমাধান না–হওয়া পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে একটি সাময়িক স্থগিত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এটি একটি নজির স্থাপন করেছে যেখানে ইউএনআরডব্লিউএ–র মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাকে আর্থিক ভাবে শাস্তি দেওয়া দাতা দেশগুলির কাছে রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে৷ ইউএনআরডব্লিউএ ঐতিহাসিকভাবে তহবিল ছাঁটাইয়ের প্রতি সংবেদনশীল, কারণ সংস্থাটি রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি স্থায়ী সংস্থা নয়, এবং এর রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদ থেকে নিয়মিত পুনর্নবীকরণের আদেশ প্রয়োজন। একটি গুরুতর তহবিল ছাঁটাইয়ের, যেমনটি প্রত্যক্ষ করা হচ্ছে, অর্থ হতে পারে যে সংস্থাটি সেই প্রধান দেশগুলির সমর্থন হারিয়েছে যেগুলি সাধারণ পরিষদের ভোটগুলিকে প্রভাবিত করার জন্য কূটনৈতিক ওজনও রাখে৷ যদিও এই ধরনের কৌশল অসম্ভাব্য বলে মনে হচ্ছে, ক্রমবর্ধমান আর্থিক অনিশ্চয়তা ইউএনআরডব্লিউএ–র সর্বোচ্চ উদ্বেগের বিষয়। ট্রাম্প ২০১৮ সালে তহবিল বন্ধ করার পরে ইউএনআরডব্লিউএ তহবিল সংগ্রহের জন্য একটি ব্যাপক প্রচার অভিযান শুরু করেছিল, যার ফলে এটি এমন দেশগুলিকে টানার প্রয়োজনীয়তাও চিহ্নিত করেছিল যারা দান করতে পারে, তবুও দেয় না।
চিন এমন একটি প্রান্তিক ইউএনআরডব্লিউএ দাতা হিসেবে থেকে গিয়েছে যে অবদান রাখতে পারে কিন্তু প্রান্তিক থেকে যায়। উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলিও একই রকম, কারণ প্যালেস্তাইনি কল্যাণের জন্য ইউএনআরডব্লিউএ অর্থায়নের সিংহভাগ পশ্চিমী দেশগুলি থেকে আসে। বর্তমান আর্থিক ঘাটতি ইঙ্গিত করে যে ইউএনআরডব্লিউএ–র জন্য চিনের মতো দাতাদের পাশাপাশি উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলির গভীর সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।


একটি গুরুতর তহবিল ছাঁটাইয়ের, যেমনটি প্রত্যক্ষ করা হচ্ছে, অর্থ হতে পারে যে সংস্থাটি সেই প্রধান দেশগুলির সমর্থন হারিয়েছে যেগুলি সাধারণ পরিষদের ভোটগুলিকে প্রভাবিত করার জন্য কূটনৈতিক ওজনও রাখে৷

ইউএনআরডব্লিউএ–র সাংগঠনিক নির্মাণই এর সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতার দিকে যাত্রায় একটি বড় বাধা। যদি এজেন্সি তার বিদ্যমান স্টাফিং প্যাটার্নের অনুসরণে কাজ চালিয়ে যায়, তবে এজেন্সির বিরুদ্ধে রাজনৈতিককরণের আক্রমণ সম্পূর্ণরূপে এড়ানো যাবে না। ‌আবার গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য সংস্থাটির সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অবিরাম কাজ করে যাওয়ার সময় এর একটি সাংগঠনিক সংস্কারের সম্ভাবনাও কম। সংস্থাটির একটি স্বাধীন পর্যালোচনার কথা ঘোষণা করা হয়েছে, তবে কে সেই পর্যালোচনার মূল্যায়ন পরিচালনা করবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ইউরোপীয় কমিশন একটি বিবৃতি দিয়েছে যা সরাসরি ইঙ্গিত করেছে যে তারা আশা করে ইউএনআরডব্লিউএ এমন একটি অডিট করাতে সম্মত হবে যা ‘‌ইইউ–নিযুক্ত স্বাধীন বহিরাগত বিশেষজ্ঞদের’‌ দ্বারা পরিচালিত হবে। যদিও এই ধরনের অডিট প্রয়োজন, ইউএনআরডব্লিউএ–র সাংগঠনিক ভারসাম্যহীনতা রাতারাতি সংশোধন করা যাবে না। এই সময়ে ইউএনআরডব্লিউএ মেরামত করার উপর একটি ভুল গুরুত্ব আরোপ যেন গাজাবাসীদের তীব্র ও তাৎক্ষণিক মানবিক চাহিদাকে আঘাত না–করে। শীর্ষ দাতাদের আর্থিক পুনর্গণনার সময় অবশ্যই এই সত্যটি মাথায় রাখতে হবে যে গাজায় ইউএনআরডব্লিউএ–র সমতুল্য কোনও বহুপাক্ষিক সংস্থা নেই, যার একটি দ্রুত সংঘাত–পরবর্তী পুনরুদ্ধারের সুবিধার্থে এই অঞ্চলে গভীর সাংগঠনিক পরিসর রয়েছে।



অঙ্গদ সিং ব্রার অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন গবেষণা সহকারী

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.