-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
২০২৫ প্যারিস এআই অ্যাকশন সামিট কর্মকাণ্ডের উপর জোর দিলেও এআই নিরাপত্তা, নিয়ন্ত্রণ এবং ক্রমবর্ধমান মার্কিন-চিন প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা সংক্রান্ত বিভাজন গভীরতর হয়েছে।
বিশ্বনেতা, প্রযুক্তিবিদ এবং এআই সমর্থকরা ২০২৫ সালের ১০-১১ ফেব্রুয়ারি প্যারিসে তৃতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) শীর্ষ সম্মেলনের জন্য একত্রিত হন। ২০২৩ সালে সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ব্লেচলি-তে অনুষ্ঠিত ‘এআই নিরাপত্তা শীর্ষ সম্মেলন’ এবং ২০২৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত ‘এআই সিওল শীর্ষ সম্মেলন’-এর তুলনায় ‘এআই অ্যাকশন’ পুনর্গঠন সংক্রান্ত নিরাপত্তা উদ্বেগ থেকে বাস্তবায়নের সূক্ষ্মতার দিকে রূপান্তরকেই দর্শায়। ‘কর্মসূচি’র উপর জোর দেওয়া অপরিহার্য হলেও প্যারিস এআই অ্যাকশন শীর্ষ সম্মেলন দর্শিয়েছে যে, বিশ্বের বর্তমান এআই অগ্রাধিকারগুলি সর্বোত্তম ফলাফলের সঙ্গে সম্পূর্ণ রকম সামঞ্জস্যপূর্ণ না-ও হতে পারে।
এআই সম্পর্কিত উদ্বেগের প্রেক্ষিতে এবং মূলত ‘কর্মসূচি’কে অগ্রাধিকার দিয়ে শীর্ষ সম্মেলনটিতে কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ, নীতিশাস্ত্র, নিয়ন্ত্রণ ও জনস্বার্থে প্রযোজ্য এআই নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ২০২৫ সালের এআই অ্যাকশন শীর্ষ সম্মেলনে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত বিবৃতি’ বা ‘স্টেটমেন্ট অন ইনক্লুসিভ অ্যান্ড সাস্টেনেবল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ শীর্ষক একটি অ-বাধ্যতামূলক ঘোষণা নিশ্চিত করা হয়েছে, যেখানে ৬১ জন স্বাক্ষরকারী এআই-এর উন্মুক্ত, নীতিগত, নিরাপদ ও সুরক্ষিত ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই অনুষ্ঠানটিতে ‘কারেন্ট এআই’ নামক ‘জনস্বার্থমূলক’ অংশীদারিত্বেরও সূচনা হয়, যার প্রাথমিক বিনিয়োগ ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং যার লক্ষ্য আগামী পাঁচ বছরে ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করা, যাতে বিশ্বস্ত এআই শক্তির তথ্যভাণ্ডার, সফটওয়্যার এবং সাধনীগুলিতে ওপেন-সোর্স অ্যাক্সেস সহজতর করা যায়।
২০২৫ সালের এআই অ্যাকশন শীর্ষ সম্মেলনে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত বিবৃতি’ বা ‘স্টেটমেন্ট অন ইনক্লুসিভ অ্যান্ড সাস্টেনেবল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ শীর্ষক একটি অ-বাধ্যতামূলক ঘোষণা নিশ্চিত করা হয়েছে, যেখানে ৬১ জন স্বাক্ষরকারী এআই-এর উন্মুক্ত, নীতিগত, নিরাপদ ও সুরক্ষিত ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
প্যারিস শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের সহ-সভাপতিত্ব এবং ২০২৬ সালের আয়োজক হিসেবে ভারতের ভূমিকা সংক্রান্ত ঘোষণায় বিশ্বব্যাপী শক্তিগুলির অংশগ্রহণকেই নির্দেশ করা হয়েছে, যা মূলধারার এআই আলোচনাকে মার্কিন-চিন প্রযুক্তিগত লড়াইয়ের অংশ হতে বাধা দেয়। ভারত এআই প্রযুক্তির উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা প্রচারের জন্য একটি ‘এআই ফাউন্ডেশন’ এবং ‘কাউন্সিল ফর সাস্টেনেবল এআই’ প্রতিষ্ঠারও প্রস্তাব দিয়েছে। তবে প্যারিস এআই শীর্ষ সম্মেলন ঘোষণায় স্বাক্ষর করতে মার্কিন ও ব্রিটিশদের অস্বীকৃতিই সকলের নজর কেড়েছে। বিশ্বব্যাপী শাসনের ক্ষেত্রে সারবস্তু ও ব্যবহারিক স্পষ্টতার অভাবের জন্য সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণাটির সমালোচনা করলেও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স কঠোর এআই নিয়মকানুনের প্রয়োজনীয়তার তীব্র নিন্দা করেছেন।
ট্রাম্পের এআই নীতি এখনও ভারসাম্যহীন হলেও তার প্রযুক্তি বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন উপদেষ্টা বোর্ড তাদের এআই নীতিকে প্রভাবিত করেছে বলে মনে হচ্ছে, যা আসলে কঠোর নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে আরও সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের পক্ষে এবং উদ্ভাবনকে ধীর করে দেওয়ার পক্ষেই কথা বলে।
আমেরিকার উদ্ভাবনী সুযোগের জন্য তীব্র আহ্বান ইউরোপের শীর্ষ সম্মেলনের প্রদর্শনীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এআই শিল্পে ১০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের বেসরকারি বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছেন। আশ্চর্যজনক ভাবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) - যারা জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশনস-এর (জিডিপিআর) মাধ্যমে তথ্যের নিয়ন্ত্রণে অগ্রসর হয়েছিল এবং ২০২৭ সালের মধ্যে তাদের এআই আইনের পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত ছিল - এখন একটি কঠোর নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে সুর অনেকটাই নরম করেছে বলে মনে হচ্ছে। ইইউ-এর প্রধান উরসুলা ফন দের লেইন উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি জনসাধারণের আস্থা বজায় রাখার জন্য সুষম নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন।
চিনের এআই অগ্রগতি ডিপসিক দর্শিয়েছে যে, ছোট এআই সংস্থাগুলিও উদ্ভাবনকে সমান ভাবে ভাল ভাবে এগিয়ে নিতে পারে এবং বিশ্বব্যাপী উজ্জীবিত চেতনাকে শক্তিশালী করতে ও এআই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। বেসরকারি এআই শিল্পে বিনিয়োগের উপর ইউরোপের পুনর্নবীকৃত মনোযোগে এই ধরনের অনুঘটকের প্রভাব স্পষ্টতই দৃশ্যমান। কারণ এআই প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বোপরি, নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটি মধ্যপন্থী অবস্থান ইউরোপীয় নীতিনির্ধারকদের মনে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধার অভাবকেই দর্শায়, যা তাদের পশ্চিমি সমকক্ষদের পিছনে পড়ে যাওয়ার সতর্কতাও প্রদান করে।
চিনের এআই অগ্রগতি ডিপসিক দর্শিয়েছে যে, ছোট এআই সংস্থাগুলিও উদ্ভাবনকে সমান ভাবে ভাল ভাবে এগিয়ে নিতে পারে এবং বিশ্বব্যাপী উজ্জীবিত চেতনাকে শক্তিশালী করতে ও এআই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
চিনের সাম্প্রতিক এআই অগ্রগতিতে পশ্চিমি নেতারা ভীত বলে মনে হলেও চায়না এআই সেফটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে চিন আবারও তাদের সর্বশেষ এআই অগ্রগতি, শাসন ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শনের জন্য একটি বিশ্বব্যাপী মঞ্চের ব্যবহার করেছে। শি জিনপিং এই বিষয়টিকে বাদ দিলেও ‘মানবজাতির অভিন্ন সাধারণ ভবিষ্যতের জন্য একটি সম্প্রদায়’ গড়ে তোলার বিষয়ে তাঁর বক্তব্য চিনের প্রাইম মিনিস্টার ঝাং গুওকিং-এর বক্তৃতায় বেশ উল্লেখযোগ্য ভাবেই প্রতিধ্বনিত হয়েছিল।
কৃত্রিম জেনারেল ইন্টেলিজেন্স-এর (এজিআই) মধ্যে উদীয়মান মডেলগুলি অতি-মানব স্তরের এআই ক্ষমতা ধারণ করলেও – যা কিনা আগামী পাঁচ বছরে প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনা রাখে - এআই প্রতিযোগিতার নিরিখে একটি স্থানান্তরিত দৃষ্টিভঙ্গি ও ক্রমবর্ধমান দ্বিধাগ্রস্ত পদ্ধতি লক্ষ করা গিয়েছে। তা সত্ত্বেও এই ধরনের উদ্বেগগুলিকে তেমন আমল দেওয়া হয়নি। কারণ ভ্যান্স স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ট্রাম্প প্রশাসন বিদেশি সরকারগুলির তরফে ‘মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলির উপর চাপ প্রয়োগ করা’র বিষয়টি ‘মেনে নিতে পারে না এবং মানবেও না’। এই ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে, ‘জনস্বার্থমূলক এআই’-এর সম্ভাবনাও দোলাচলে রয়েছে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে এই উদ্যোগকে সমর্থন করার সম্ভাবনা কম এবং চিনের তরফে সম্ভাব্য বিচ্যুতির আশঙ্কাও একেবারে অমূলক নয়।
২০২৫ সালের এআই অ্যাকশন সামিট তিনটি মূল কারণে ব্যর্থ হয়েছে:
প্রথমত, শীর্ষ সম্মেলনটি এমন একটি অস্থির সময়ে হয়েছে, যেখানে নেতারা স্বীকার করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন যে, শক্তিশালী ও বিঘ্নিত এআই ব্যবস্থাগুলি কত দ্রুত পরিসর দখল করে নিতে পারে। সেই সব ক্ষেত্রের উপর মনোনিবেশ করার পরিবর্তে শীর্ষ সম্মেলনটি শুধু মাত্র জাতীয় প্রকল্প ও অগ্রাধিকারের জন্য স্রেফ ঘোষণার একটি মঞ্চে পরিণত হয়েছিল।
এআই নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আমেরিকার পিছু হঠার মনোভাব দর্শিয়েছে যে, ট্রাম্প প্রশাসন কঠোর এআই সুরক্ষা বিধিমালার ভবিষ্যতের চাইতেও প্রযুক্তিগত ও উদ্ভাবনী বক্ররেখার নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়ে আরও বেশি চিন্তিত।
দ্বিতীয়ত, ইইউ-এর কঠোর নিয়মকানুন সম্পর্কে মার্কিন সমালোচনা মার্কিন নেতৃত্বাধীন অবাধ ব্যবহার-বান্ধব পদ্ধতির পক্ষে ও কঠোর নিয়ন্ত্রক কাঠামোর পক্ষে দেশগুলির মধ্যে একটি ক্রমবর্ধমান বিভাজনকেই তুলে ধরে। এআই নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আমেরিকার পিছু হঠার মনোভাব দর্শিয়েছে যে, ট্রাম্প প্রশাসন কঠোর এআই সুরক্ষা বিধিমালার ভবিষ্যতের চাইতেও প্রযুক্তিগত ও উদ্ভাবনী বক্ররেখার নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়ে আরও বেশি চিন্তিত।
তৃতীয়ত, এআই উদ্ভাবনের জন্য একটি নতুন আশাবাদের সঞ্চার ঘটলেও এটি এআই কৌশলগুলিতে আক্রমণাত্মক বিকাশের ইঙ্গিতও দেয়, যা এআই সুরক্ষার উপর সুনির্দিষ্ট ঐকমত্য গড়ে তোলার সুযোগে বাধা দিয়েছে।
প্যারিস এআই অ্যাকশন সামিটে এই সব কিছু নিয়ে আলোচনার পাশাপাশিই কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রয়েই যায়: বিদ্যমান এআই প্রতিযোগিতার গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য সুরক্ষা সাধনীর বর্তমান মান কি যথেষ্ট? এআই অস্ত্র প্রতিযোগিতার ফলে যে অশনি সঙ্কেত স্পষ্ট, তার সঙ্গে বৃহত্তর এআই বাস্তুতন্ত্র কীভাবে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে? আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, পরবর্তী এআই শীর্ষ সম্মেলনে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলে কি এই উদ্বেগগুলি সবই ধামাচাপা পড়ে যাবে?
মেঘা শ্রীবাস্তব ভারতের মণিপাল অ্যাকাডেমি অফ হায়ার এডুকেশনের (ইনস্টিটিউট অফ এমিনেন্স) ডিপার্টমেন্ট অফ জিওপলিটিক্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস-এর গবেষক।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Megha Shrivastava is a Doctoral Research Scholar and Dr. TMA Pai Fellow, Department of Geopolitics and International Relations), Manipal Academy of Higher Education ...
Read More +