Author : Harsh V. Pant

Published on May 04, 2025 Updated 0 Hours ago

ভারত ফ্রান্স উভয়ই তীব্র স্বায়ত্তশাসিত বৈদেশিক নীতি দ্বারা পরিচালিত, যা আজকের লেনদেন অস্থির বিশ্বে দুই দেশকে লাভবান করেছে।

প্যারিস ও দিল্লি: অস্থির বিশ্বে স্থিতিশীলতার জন্য অংশীদারিত্ব

ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ফ্রান্স সফরে দুটি মূল উপাদান ছিল - কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অ্যাকশন সামিট এবং ভারত-ফরাসি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করা। সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনের উপর ভিত্তি করে প্যারিস শীর্ষ সম্মেলন জনসাধারণের কল্যাণে এআই গবেষণা প্রয়োগের উন্নয়নকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছিল।

জি২০ সভাপতিত্বের সময় প্রস্তাবিত মানবকেন্দ্রিক কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভারত তার জনসংখ্যার মধ্যে এআই-এর সুবিধাগুলি ন্যায্যভাবে বিতরণ করার লক্ষ্য রাখে এবং একইসঙ্গে বৃহত্তর গ্লোবাল সাউথের এআই চাহিদাকেও সমর্থন করে। ভারতের ন্যাশনাল এআই মিশন উন্মুক্ততা ও উপলব্ধতা অনুরূপ নীতিগুলি থেকে উদ্ভূত, যা ভারতের সফল ডিজিটাল পাবলিক অবকাঠামোকে ভিত্তি করে তার সমাজ অর্থনীতিকে দ্রুত রূপান্তরিত করছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল অনুমান করেছে যে, এই দশকের শেষের আগে অন্য যে কোন দেশের তুলনায় প্রতিদিন আরও বেশি ভারতীয় এআই ব্যবহার করবে, যা ভারতকে এআই-এর যে কোন বৈশ্বিক কাঠামোর কেন্দ্রবিন্দুতে তুলে নিয়ে আসবে।

ভারতের ন্যাশনাল এআই মিশন উন্মুক্ততা ও উপলব্ধতা অনুরূপ নীতিগুলি থেকে উদ্ভূত, যা ভারতের সফল ডিজিটাল পাবলিক অবকাঠামোকে ভিত্তি করে তার সমাজ অর্থনীতিকে দ্রুত রূপান্তরিত করছে।

এআই-তে অংশীদারিত্ব এবং ভারত-ফ্রান্স এআই রোডম্যাপ চালু করার মাধ্যমে দুই দেশ দায়িত্বশীল এআই উন্নয়নের ভবিষ্য গঠনের জন্য একটি যৌথ পথে যাত্রা শুরু করছে এবং একই সঙ্গে উত্তর-দক্ষিণ এআই বিভাজন দূর করার চেষ্টা করছে। দুই পক্ষের অভিজ্ঞতাকে একত্রিত করে দু দেশ উচ্চ শক্তির চাহিদার উপর ভিত্তি করে এআই-এর ক্রমবর্ধমান কার্বন পদচিহ্ন হ্রাস করার সমাধানের ধারণা তৈরি করার জন্যও বেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে।

তবে পদ্ধতির মৌলিক বৈপরীত্যগুলি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য হিসাবে ফ্রান্স ইইউ এআই আইন মেনে চলে, যেটি এআই ব্যবস্থার জন্য ঝুঁকি-ভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার করে এবং এআই নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে সর্বাত্মক কঠোর আইন। অন্য দিকে, ভারত তার উদ্ভাবনী বাস্তুতন্ত্রকে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের দ্বারা দমিয়ে রাখার বিষয়েও যথেষ্ট সতর্ক। তবুও দেশীয় বিতর্কগুলি এআই-তে একটি নিয়ন্ত্রক কাঠামো গ্রহণের জন্য ভারতের সদিচ্ছাকেই দর্শায়, যা ব্যক্তিগত অধিকার রক্ষা করার সময় সুরক্ষা উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে। এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় মডেল নিঃসন্দেহে একটি কার্যকর কেস স্টাডি হতে পারে।

এ বার প্যারিস থেকে মার্সেই যাওয়ার পথে ম্যাক্রোঁর রাষ্ট্রপতি বিমানেই দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছিল। মার্সেইতে একটি নতুন ভারতীয় দূতাবাসেরও উদ্বোধন করা হয়। ফ্রান্স – যে দেশটি গত বছর ইন্ডিয়া-মিডল ইস্ট-ইউরোপ ইকোনমিক করিডোরের (আইএমইসি) এক বিশেষ দূত নিযুক্ত করেছিল - ভূমধ্যসাগরে শহরের কৌশলগত অবস্থানের উপর ভিত্তি করে মার্সেইকে ইউরোপীয় বাজারে আইএমইইসি-র প্রবেশদ্বার করে তোলার প্রস্তাব দিয়েছে। দুই নেতা মার্সেইভিত্তিক লজিস্টিকস শিপিং সংস্থা সিএমএ-সিজিএম-এর নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। এই কেন্দ্রটি ভারতীয় জাহাজ চলাচলের কার্যকলাপের ১১.৫% নিয়ন্ত্রণ করে এবং ভারতে ৩৪ বছর ধরে এই সংস্থার উপস্থিতি রয়েছে। তবে মার্সেই ইতালির ত্রিয়েস্তে গ্রিসের তরফ থেকে প্রতিযোগিতারও সম্মুখীন হয়েছে। পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনা সত্ত্বেও ভূ-রাজনৈতিক বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা বিকল্প পথের অন্বেষণ বিষয়টিকে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে।

প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা দীর্ঘদিন ধরে এই অংশীদারিত্বের মূল ভিত্তি। ফ্রান্স এখন ভারতীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের শীর্ষ তিন গ্রাহকের মধ্যে রয়েছে এবং এই সফরের সময় ভারত ফ্রান্সকে তার পিনাক মাল্টি-ব্যারেল রকেট লঞ্চার সিস্টেম কেনার কথা বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে। ২০২৪ সালের গোড়ার দিকে একটি প্রতিরক্ষা শিল্প পথনির্দেশিকা চালু করা হয়েছিল, যার লক্ষ্য ছিল সামরিক সরঞ্জামের সহ-উৎপাদন, যা ভারতীয় স্বদেশী প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে ফ্রান্স ভারতে প্রযুক্তি হস্তান্তরে সম্পৃক্ত হতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেনি এবং দুই দেশের মধ্যে পি-৭৫ স্করপিন সাবমেরিন, রাফাল বিমান এবং হেলিকপ্টার জেট ইঞ্জিন সম্পর্কিত চুক্তিও রয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতে ফরাসি ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ শার্ল দ্য গল-এর যাত্রাবিরতির মাধ্যমে, বহুজাতিক মহড়া লা পেরুসে ভারতীয় নৌবাহিনীর অংশগ্রহণ এবং মার্চ মাসে দ্বিপাক্ষিক বরুণ নৌ মহড়ার মতো যৌথ মহড়ার মাধ্যমে নিরাপত্তা সহযোগিতাও ত্বরান্বিত হয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি সামরিক, সামুদ্রিক, জ্বালানি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও গভীর করার উপরও জোর দেওয়া হয়েছে।

ফ্রান্স এখন ভারতীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের শীর্ষ তিন গ্রাহকের মধ্যে রয়েছে এবং এই সফরের সময় ভারত ফ্রান্সকে তার পিনাক মাল্টি-ব্যারেল রকেট লঞ্চার সিস্টেম কেনার কথা বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে।

একই রকমের আশাব্যঞ্জক বিষয় হল, ভারতের প্রাচীনতম কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক দ্রুত চিরাচরিত প্রতিরক্ষা স্তম্ভের ঊর্ধ্বে উঠেছে এবং এর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য, উদ্ভাবন, ডিজিটালকরণ এবং মানুষের সঙ্গে মানুষে সম্পর্ক। ভারতীয় স্টার্টআপগুলিকে এখন ফরাসি স্টার্টআপ ইনকিউবেটর স্টেশন এফ-এ অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং ২০২৬ সালটিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারত-ফ্রান্স উদ্ভাবনের বছর হিসেবে স্বাগত জানানো হচ্ছে। গত বছর ফ্রান্স প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে ইন্ডিয়ান ইউনাইটেড পেমেন্টস ইন্টারফেস (ইউপিআই) চালু করেছে, যার পরিষেবাটি আইফেল টাওয়ার থেকে শুরু হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করার  সঙ্গে সঙ্গে সেই শূন্যস্থান পূরণের জন্য জলবায়ু ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উপর ভারত-ফ্রান্সের শক্তিশালী সহযোগিতা আরও বাড়ানো যেতে পারে

প্যারিস নয়াদিল্লি বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও উন্নত মডিউলার রিঅ্যাক্টরগুলিতে সহযোগিতা সম্প্রসারণ করছে এবং বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি সংক্রান্ত একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স এই লক্ষ্যে কাজ করছে। মহারাষ্ট্রের জৈতাপুরে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের প্রচেষ্টা চলছে। ফ্রান্সের জ্বালানি চাহিদার ৭০% পারমাণবিক উৎস থেকে আসে এবং দেশটি বিশ্বব্যাপী মাথাপিছু সর্বোচ্চ পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। ভারত ২০৪৭ সালের মধ্যে তার পারমাণবিক শক্তি ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি করে একটি নিম্ন-কার্বন অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে এবং তাই ফ্রান্সের সঙ্গে সহযোগিতা একটি স্বাভাবিক পদক্ষেপ।

২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত একই ধরনেসম্মেলনের পর প্যারিসে ভারত-ফ্রান্স সিইও ফোরাম অনুষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে দুই দেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করছে। ২০২২-২৩ সময়কালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মূল্য ১৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে ২০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। যৌথ বিবৃতিতে ২০৩০ সালের মধ্যে ফ্রান্সে ভারতীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০,০০০-এ উন্নীত করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে বর্তমানে জার্মানিতে ৩৫,০০০ ছাত্র পড়তে গেলে ফ্রান্সে যায় মাত্র ১০,০০০। একই সময়ে প্যারিসকে বিদেশি শিক্ষার্থী অভিবাসীদের জন্য কম প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

ভারত ও ফ্রান্স উভয়ই তীব্র স্বায়ত্তশাসিত বৈদেশিক নীতি দ্বারা পরিচালিত, যা আজকের লেনদেনভিত্তিক ও অস্থির বিশ্বে দুই দেশকে লাভবান করেছে এবং মার্কিন-চিন কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্রতর হয়েছে। একটি বিস্তৃত ভারত-ফ্রান্স অংশীদারিত্ব এই ধরনের অনিশ্চয়তা থেকে বেরিয়ে আসার এক ‘তৃতীয় উপায় হতে পারে।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় হিন্দুস্থান টাইমস-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.