পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনের আর এক মাসও বাকি নেই, আর রাজনৈতিক পরিবেশ ম্রিয়মাণ হয়ে রয়েছে। প্রচারে এখনও হাওয়া লাগেনি। সাধারণ নির্বাচনের সঙ্গে যে স্বাভাবিক উদ্দীপনা ও উত্তেজনা থাকে তা যেমন অনুপস্থিত, তেমনই অনুপস্থিত বড় আকারের রাজনৈতিক সমাবেশ, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই আগ্রহের অভাবের একটি বড় কারণ নির্বাচনের সততা, স্বচ্ছতা ও সুষ্ঠু অনুষ্ঠান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে মোটামুটি ঐকমত্য রয়েছে যে একটিও ভোট পড়ার আগেই ফলাফলগুলি ইতিমধ্যেই সামরিক কর্তৃপক্ষ দ্বারা নির্ধারিত হয়ে আছে: নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল–এন) একক বৃহত্তম দল হিসাবে আবির্ভূত হবে; ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফকে (পিটিআই) জিততে দেওয়া হবে না; অন্যান্য দল যেমন পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি), মওলানা ফজলুর রহমানের জমিয়ত উলেমা ইসলাম (জেইউআই-এফ), মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) এবং ইস্তেকাম পাকিস্তান পার্টি (আইপিপি) নির্বাচনী কেকের কিছু অংশ পাবে।
সাধারণ নির্বাচনের সঙ্গে যে স্বাভাবিক উদ্দীপনা ও উত্তেজনা থাকে তা যেমন অনুপস্থিত, তেমনই অনুপস্থিত বড় আকারের রাজনৈতিক সমাবেশ, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কলঙ্কিত নির্বাচন
তর্কাতীতভাবে পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল পিটিআই–এর উপর এখন যেভাবে নিপীড়ন চলছে, এমনকি সেই দেশের জঘন্য রাজনৈতিক ইতিহাসেও এর তুলনা নেই। পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান কারাগারে আছেন, এবং নির্বাচনে লড়ার জন্য অযোগ্য ঘোষিত হয়েছেন। দলের বেশির ভাগ বিশিষ্ট প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) পিটিআই–এর নির্বাচনী প্রতীক প্রত্যাহার করেছে, যার অর্থ তাদের প্রার্থীদের নির্দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। যদিও পেশোয়ার হাইকোর্ট প্রথমে ইসিপি–র রায় বাতিল করেছিল, পরে আবার তা বহাল রাখে। ফলে পিটিআই তার নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে লড়তে পারবে কি না তা নিয়ে বিপুল অনিশ্চয়তা রয়েছে। পিটিআই প্রার্থীদের ভয় দেখানো হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে, এমনকি ছোট মিটিং করতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।
তবে শুধু পিটিআই–ই যে উত্তাপের মুখোমুখি হচ্ছে তা নয়। নতুন ফেভারিট নওয়াজ শরিফ ও পিপিপি–র মতো অন্য রাজনৈতিক খেলোয়াড়রাও অভিযোগ করছেন যে তাঁদের রাজনৈতিক চুক্তি করতে বাধ্য করা হচ্ছে, বা তাঁদের রাজনৈতিক পরিসরকে সঙ্কুচিত করছে ‘শক্তিশালী মহল’, যার অর্থ এস্ট্যাবলিশমেন্ট। খাইবার পাখতুনখোয়ায় (কে–পি) জেইউআই–এফ ও ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট –এর প্রার্থীরা সন্ত্রাসবাদীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। মওলানা ফজলুর রহমান ইতিমধ্যেই কে–পি ও বালুচিস্তানে নিরাপত্তা হুমকির কারণে নির্বাচন স্থগিত করার দাবি করেছেন।
রাজনৈতিক কারসাজি কাজ করছে না
তাদের দিক থেকে জেনারেল আসিম মুনিরের নেতৃত্বাধীন সামরিক সংস্থা নির্বাচন নিয়ে তাদের পরিকল্পনায় অটল থাকতে দ্বিধা করবে না। তাদের রাজনৈতিক কৌশল যেভাবে কল্পনা করা হয়েছিল সেভাবে কাজ করেনি। স্বআরোপিত নির্বাসন থেকে নওয়াজ শরিফের প্রত্যাবর্তন রাভি নদীকে মোটেই উত্তাল করে তোলেনি। সামরিক সংস্থার পক্ষপাত থাকা সত্ত্বেও, এবং পরবর্তী সরকারের নেতৃত্বে থাকবে বলে ধরা হলেও, পিএমএল–এন জনতার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে এবং তার পুরনো ভোটার–ভিত্তি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি। এদের নতুন কোনও ধ্যানধারণা নেই, এবং অর্থনীতিকে কীভাবে চাঙ্গা করা যায় সে সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাও তারা দেয়নি। তারা যে ৯ দফা অ্যাজেন্ডা প্রস্তাব করেছে তা সাদামাটা, এবং এই অ্যাজেন্ডাটি কীভাবে অর্জন করা হবে তার কোনও বিবরণ নেই।
স্বআরোপিত নির্বাসন থেকে নওয়াজ শরিফের প্রত্যাবর্তন রাভি নদীকে মোটেই উত্তাল করে তোলেনি।
পঞ্জাবে পিটিআই–আইপিপি এবং কে–পিতে পিটিআই–পার্লামেন্টারিয়ানস (পিটিআই–পি)–এর মতো দলছুট গোষ্ঠীগুলি অসফল বাজি বলে প্রমাণিত হয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের বিপুল সহায়তায় এই দুই দল পিটিআই–এর ‘নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য'দের তাদের শিবিরে নিয়ে এসে আটকে রাখতে পেরেছে। কিন্তু তাঁরা মাটিতে কোনও অনুরণন খুঁজে পাচ্ছেন না। এই দলছুট পিটিআই উপদলগুলির কোনওটিই পিটিআই–এর সমর্থন ভিত্তিতে কোনও উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করতে পারেনি। পিটিআই–কে হেয় করা এবং ভেঙে ফেলার জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মারাত্মক ব্যবহার শুধু বেশিরভাগ বিশিষ্ট রাজনীতিবিদের দলত্যাগ ঘটাতে পেরেছে এবং এর সাংগঠনিক ক্ষমতা ও সামর্থ্যের ক্ষতি করেছে। তবে ইমরান খানের জনসমর্থন ও জনপ্রিয়তায় সামরিক বাহিনীর নৃশংস শক্তির ব্যবহার খুব একটা প্রভাব ফেলেনি।
রাস্তা বনাম রাষ্ট্র
অবশ্যই পাকিস্তানে নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে জনসমর্থনের সরাসরি সম্পর্ক থাকে না। পাকিস্তানি বৈশিষ্ট্য হল সেখানে স্টালিনবাদী বক্তব্য কাজ করে: “যারা ভোট দেয় তারা কিছুই নির্ধারণ করে না; যারা ভোট গণনা করে তারাই সব কিছু নির্ধারণ করে।” এর অর্থ হল যে ফলাফল শুধু যাঁরা ভোট গণনা করেন তাঁদের দ্বারা নির্ধারিত হয় না, বরং যাঁরা নির্বাচন পরিচালনার জন্য দায়ী এবং যাঁরা ফলাফল ঘোষণা করেন তাঁদের দ্বারাও। সাধারণ পরিস্থিতিতে নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ পাকিস্তানের সামরিক সংস্থার জন্য যথেষ্টই সহজ কাজ হয়ে যেত। কিন্তু সামরিক বাহিনী উদ্বিগ্ন ও সন্ত্রস্ত। কারণ, পাকিস্তানে রাস্তা ও রাষ্ট্রের মধ্যে এত গভীর বিভেদ আগে আর কখনও হয়নি।
রাস্তাটি ক্ষুব্ধ, অবাধ্যতায় পূর্ণ, এমনকি পঞ্জাবেও, যেখান থেকে সেনাবাহিনীতে বেশিরভাগ নিয়োগ হয় এবং যেখান থেকে এটি তার সমস্ত সমর্থন লাভ করে। অন্যান্য প্রদেশে, বিশেষ করে বালুচিস্তান এবং ক্রমবর্ধমানভাবে কে–পিতেও, রাষ্ট্র ও রাস্তার মধ্যে সম্পর্ক সব সময়ই উত্তেজনাপূর্ণ। এমন এক সময়ে যখন ট্রান্স–ইন্ডাস প্রদেশগুলিতে রাষ্ট্র ও রাস্তার মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে — কে–পিতে ইমরান ফ্যাক্টরের কারণে এবং বালুচিস্তানে বলপূর্বক অদৃশ্য করে দেওয়া, হেফাজতে হত্যা ও সামরিক বাহিনীর নৃশংসতার কারণে — সে সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী যা যে কোনও মূল্যে এড়াতে চাইবে তা হল পঞ্জাব রাজ্য ও রাস্তার মধ্যে বিস্তৃত বিভাজন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী যতই শক্তিধর হোক না কেন, একটি নির্দিষ্ট বিন্দুর বাইরে তারা রাস্তার, এবং এমনকি বাহিনীর নিচের তলার, আবেগকে উপেক্ষা করতে পারে না। পঞ্জাবের রাস্তায় যখনই শত্রুতা দেখা দেয় — ১৯৬৮ সালে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে, ১৯৭১ সালের পরাজয়ের পরে ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে, ১৯৮৭–৮৮ সালে জিয়ার বিরুদ্ধে, ২০০৭ সালে মোশারফের বিরুদ্ধে — সেনাবাহিনীতে অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন ঘটে।
রাজনৈতিক কুশীলব এবং রাস্তার মধ্যে সংযোগ ক্রমবর্ধমানভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার, বিশেষত পাঞ্জাবে, অর্থ হল তা আর রাষ্ট্র ও রাস্তার মধ্যে সেতুবন্ধনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে না।
ঐতিহ্যগতভাবে, পাকিস্তানে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই সেই দিকে ঝুঁকতে থাকেন যেটির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এবার তা হবে বলে মনে হয় না। ইমরান খানের সমর্থকদের পাকিস্তানের ‘স্বাধীন মিডিয়া’ থেকে মুছে দেওয়া হতে পারে, এবং তাদের কণ্ঠস্বরকে অবদমিত ও পীড়িত করা হতে পারে, কিন্তু তারা সোচ্চার ও দৃশ্যমান নয় মানে এই নয় যে তারা সেখানে নেই। ইমরান খানের পক্ষে অবস্থান নেওয়া এই অসন্তুষ্ট ভোটারদের নিয়ে সামরিক বাহিনী বেশ অস্বস্তিতে রয়েছে। তারা এটাও জানে যে রাজনৈতিক দল ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে জোটবদ্ধ ‘নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য’দের রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে দেখা হবে, রাস্তার নয়। রাজনৈতিক কুশীলব এবং রাস্তার মধ্যে সংযোগ ক্রমবর্ধমানভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার, বিশেষত পঞ্জাবে, অর্থ হল তা আর রাষ্ট্র ও রাস্তার মধ্যে সেতুবন্ধনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে না। অন্য কথায়, তারা টেবিলে কোনও বাস্তব মূল্য আনে না।
একটি দুষ্ট সমস্যা
সামরিক সংস্থার জন্য দ্বিধার বিষয়টি হল যে নির্বাচন স্থগিত বা বিলম্বিত করার বিকল্প ব্যবহার করে সমস্যার সমাধান হবে না। এটি পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকটকে আরও গভীর করবে, এবং আরও নিয়ন্ত্রণের অযোগ্য করে তুলবে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী জনপ্রিয়তার তালিকায় খুব বেশি নম্বর পাচ্ছে না। এ থেকে বেশ স্পষ্ট কেন নওয়াজ শরিফের মতো কেউ, যিনি সেনাবাহিনীর কাঁধে চড়ে ক্ষমতায় আসতে প্রস্তুত, কষ্টকর চেষ্টা করে চলেছেন যাতে তাঁকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ‘লাডলা’ হিসাবে দেখা না–হয়। তিনি এখন ইমরান খানকে তুলে ধরে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য দায়ী সকলের (সাবেক জেনারেল সহ) জবাবদিহি দাবি করছেন। সমস্ত রাজনৈতিক কুশীলব সেনাবাহিনীর সমর্থন চান, কিন্তু কেউ সেনাবাহিনীর প্রক্সি হিসাবে নিজেকে দেখতে চান না। নির্বাচন স্থগিত করা হলে ক্ষমতায় যাওয়ার আশায় যে রাজনৈতিক অংশীদারেরা সেনাবাহিনীর পাশে রয়েছেন, তাঁদের অনেকেই এর বিপক্ষে চলে যাবেন। এমনকি তাঁদের নামমাত্র ও প্রসাধনী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা লাইনচ্যুত হলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডার (আইএমএফ) এবং কিছু পশ্চিমী দেশ পাকিস্তানের অর্থনৈতিক লাইফলাইন বিচ্ছিন্ন করে দেবে, এমন একটি সত্যিকারের বিপদ রয়েছে।
সমস্ত রাজনৈতিক কুশীলব সেনাবাহিনীর সমর্থন চান, কিন্তু কেউ সেনাবাহিনীর প্রক্সি হিসাবে নিজেকে দেখতে চান না।
কিন্তু নির্বাচন দিয়েও কোনও সমাধান হবে না, কারণ এই নির্বাচন ইতিমধ্যেই চরম বিতর্কিত হয়ে উঠেছে। যাঁরা সরকার গঠন করবেন তাঁদের এমন রাজনৈতিক পুঁজির প্রয়োজন হবে যার জোরে যুদ্ধ ও শান্তি এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের প্রশ্নে অত্যন্ত কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, যা কিনা এখন রাষ্ট্রের টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী একটি কঠিন সমস্যার সম্মুখীন, যা এই সত্যের দ্বারা আরও বিভ্রান্ত যে এর সমস্ত রাজনৈতিক গণনা ভুল হয়ে যেতে পারে, তা সে ফলাফল কাঙ্ক্ষিত বা অপ্রত্যাশিত যাই হোক না কেন।
শুধুই খারাপ ফলাফল?
এখন যা পরিস্থিতি তাতে তিনটি সম্ভাব্য ফলাফল হতে পারে। সামরিক সংস্থার জন্য সবচেয়ে ভাল পরিণতি হল একটি ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি, যেখানে পিএমএল–এন এমন একটি জোট সরকারের নেতৃত্ব দেবে যার মধ্যে আইপিপি, এমকিউএম ও জেইউআই–এফ–এর মতো সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত দলগুলি থাকবে। এভাবে সামরিক বাহিনী শুধু পিটিআই ও ইমরান খানকে ক্ষমতার বাইরে রাখতেই সফল হবে না, বরং নিজের রাজনৈতিক প্রক্সিদের মাধ্যমে সরকারের উপর নিয়ন্ত্রণও নিশ্চিত করবে। সমস্যা হল যে, এই ধরনের একটি বিভ্রান্তিকর ও অপ্রত্যাশিত জোট, সংজ্ঞা অনুসারে, দুর্বল হবে এবং তার পক্ষে বড় ও কষ্টসাধ্য অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করা খুব কঠিন হবে। এই ব্যবস্থার একটি খুব দীর্ঘ জীবন থাকবে না।
পরবর্তী সর্বোত্তম দৃশ্য হল যে সামরিক বাহিনীর গণনা ভুল করা এবং নিজের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেখার কারণে নওয়াজ শরিফ ফেডারেল স্তরে এবং পঞ্জাবেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেন। নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বকালে সামরিক–অসামরিক দ্বন্দ্ব পুনরায় আবির্ভূত হওয়া শুধুই সময়ের ব্যাপার। এক পর্যায়ে নওয়াজ শরিফ সামরিক বাহিনী থেকে নির্দেশ নিতে ঘৃণা বোধ করবেন। তিনি তাঁর নিজের কাজটি করতে চাইবেন, এবং অর্থনৈতিক, বিদেশ ও নিরাপত্তা নীতির বিষয়ে সেনাবাহিনীকে পিছনের আসনে বসে গাড়ি চালানোর অনুমতি দেবেন না। যদিও সেনাবাহিনী নমনীয় ও তাদের অনুগত শাহবাজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পছন্দ করবে, ছোট শরিফের কিন্তু নওয়াজ শরিফের রাজনৈতিক ওজন নেই। তা ছাড়া ইমরান খান ২০২২ সালের এপ্রিলে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পরে ১৬ মাস প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করার সময় শাহবাজ নিজেকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করতে পারেননি।
মুষ্টিমেয় পিটিআই প্রার্থীদের জয়ী হওয়াতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আপত্তি করবে না, কারণ তা নির্বাচনকে কিছুটা বিশ্বাসযোগ্যতা দেবে।
সবচেয়ে খারাপ, এবং খুব সম্ভবত সবচেয়ে অসম্ভব পরিস্থিতি হল যে, পিটিআই সমস্ত হিসাব–নিকাশ ভেঙে দেবে এবং বিপুল সংখ্যক আসন জিতবে। এই তাত্ত্বিক সম্ভাবনা তখনই ঘটবে যদি ভোটের সংখ্যা এত বেশি হয় এবং পিটিআই–সমর্থিত প্রার্থীদের জন্য এত বেশি ভোট পড়ে যে ফলাফলের হেরফের করা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই দৃশ্যটি উদ্ঘাটিত হলে বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে, এই কারণেই সামরিক বাহিনী এমনটি যাতে না–ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্য সমস্ত প্রয়াস চালিয়ে যাবে। মুষ্টিমেয় পিটিআই প্রার্থীদের জয়ী হওয়াতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আপত্তি করবে না, কারণ তা নির্বাচনকে কিছুটা বিশ্বাসযোগ্যতা দেবে। প্রকৃতপক্ষে, পিটিআই প্রার্থীরা যদি নির্দল হিসেবে জয়লাভ করেন তবে তা সেনাবাহিনীর পক্ষে কাজ করতে পারে, কারণ তাঁরা ‘প্রতিষ্ঠান’ যে দিকে চাইবে সেদিকে যেতে সব ধরনের প্রলোভন ও ব্ল্যাকমেলের সামনে অরক্ষিত থাকবেন।
২০২৪ সালের নির্বাচনের পাকিস্তানে স্থিতিশীলতা নিয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু তা এখন অনেক দূরের কথা বলে মনে হচ্ছে, এবং তা আরও বেশি করে মনে হওয়ার কারণ সামরিক স্থাপনা অতীতের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, নিরাপত্তা ও কৌশলগত ভুলগুলিকে আরও দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতে চাইছে, যার মধ্যে অনেকগুলিই পাকিস্তানকে আরও বিধ্বস্ত করতে এবং দেশের গুরুতর ক্ষতি করতে চলেছে৷
সুশান্ত সারিন অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.