Author : Ayjaz Wani

Published on Jan 04, 2025 Updated 0 Hours ago

জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে বিদেশী সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা স্থানীয় সংস্থাগুলির মধ্যে বর্ধিত সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে৷

কাশ্মীরে পাকিস্তানের প্রক্সি যুদ্ধ তীব্রতর হচ্ছে

৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর থেকে হিংসায় একটি অস্বচ্ছন্দ বিরতি এবং ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা সন্ত্রাসবাদ-‌বিরোধী কৌশলগুলির প্রয়োগসহ কড়া নজরদারির মধ্যে পাকিস্তান কাশ্মীর উপত্যকায় সমস্যা তৈরি করতে ফিরে এসেছে। ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রতিবেশী এখন জম্মু ও কাশ্মীরে শান্তি বিঘ্নিত করতে, এবং এই অঞ্চলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বানচাল করতে, সন্ত্রাসবাদী ও স্লিপার সেল ব্যবহার করতে শুরু করেছে।

ওমর আবদুল্লা
জম্মু ও কাশ্মীর (জেঅ্যান্ডকে) কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের (ইউটি) প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই, কাশ্মীর উপত্যকায় একের পর এক সন্ত্রাসবাদী ঘটনা ঘটে। ১৬ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বরের মধ্যে, সন্ত্রাসবাদীরা কাশ্মীর জুড়ে আটটি স্থানকে লক্ষ্যবস্তু করে। শ্রীনগর শহরে কিছুদিন আগে গ্রেনেড বিস্ফোরণে ১১ জন আহত হওয়া, এবং শ্রীনগরের কেন্দ্রস্থলে একজন পাকিস্তানি  লস্কর-ই-তৈবা (এলইটি) কমান্ডারকে হত্যা করা, ইঙ্গিত দেয় যে সন্ত্রাসবাদের প্রত্যাবর্তন ঘটছে, অর্থাৎ পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে তার প্রক্সি যুদ্ধ জোরদার করছে।


ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রতিবেশী এখন জম্মু ও কাশ্মীরে শান্তি বিঘ্নিত করতে, এবং এই অঞ্চলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বানচাল করতে, সন্ত্রাসবাদী ও স্লিপার সেল ব্যবহার করতে শুরু করেছে।



১ থেকে ৯ নভেম্বরের মধ্যে, কাশ্মীর অঞ্চল জুড়ে ছয়টি এনকাউন্টারে আট সন্ত্রাসবাদী নিহত হয়; এর চারটি হচ্ছে উত্তর কাশ্মীরে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত, হত্যার সঙ্গে জড়িত
৬০টি সন্ত্রাসবাদী ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে জেঅ্যান্ডকে-তে ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক, ২৬ জন নিরাপত্তা কর্মী এবং ৬৪ জন সন্ত্রাসবাদী নিহত হয়েছেন। সন্ত্রাসবাদী হামলায় বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা ২০২৩ সালের তুলনায় এই বছর দ্বিগুণ হয়েছে, বেশিরভাগ শিকার অ-স্থানীয়।

পাকিস্তানের প্রক্সি যুদ্ধ এবং জম্মু ও কাশ্মীরে বিদেশী সন্ত্রাসবাদী

২০২০ সাল থেকে, সন্ত্রাসবাদীরা পির পাঞ্জাল ও জম্মু অঞ্চলের দক্ষিণে কাজ করছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জেঅ্যান্ডকে বিধানসভা নির্বাচনে ৬৩.৯ শতাংশ ভোট পড়েছে, কিন্তু
ভোটারদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে কাশ্মীরের ২০টি জেলার মধ্যে মাত্র ছয়টিতে   কুলগামে ৩.৪ শতাংশ, পুলওয়ামায় ২.৫ শতাংশ, শোপিয়ানে ৮.৫ শতাংশ, শ্রীনগরে ২.১ শতাংশ এবং বারামুল্লায় ৩.৩ শতাংশ। ৩৭০ ও ৩৫এ অনুচ্ছেদ বাতিলের পরে ইউটি-তে গণতন্ত্রের একটি সফল প্রথম পরীক্ষা চিহ্নিত করে কোনও সন্ত্রাসবাদী ঘটনা ছাড়াই নির্বাচনগুলি পরিচালিত হয়েছিল। এমনকি ১৫টি দেশের বিদেশী কূটনীতিকরা নির্বাচনী প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন, এবং ইউটি-র প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের কার্যকারিতা প্রত্যক্ষ করতে বুদগাম ও শ্রীনগরের ভোটকেন্দ্রগুলি পরিদর্শন করেন।

জম্মু ও কাশ্মীরের শান্তিপূর্ণ নির্বাচন এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদী বাস্তুতন্ত্র এবং এর সহানুভূতিশীলদের প্রতি শূন্য-সহনশীলতার পদ্ধতির ফলাফল। নিরাপত্তা বাহিনী ওভার গ্রাউন্ড ওয়ার্কার্স (ওজিডাবলু) নেটওয়ার্ক ভেঙে দিয়েছে, এবং গ্রেফতার, অভিযান, অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ ও সরকারি চাকরি অস্বীকারের মাধ্যমে
সন্ত্রাসবাদী অর্থায়নের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। তার উপর, নয়াদিল্লির প্রতি তরুণ সমাজের ধারণার একটি উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন হিংসা হ্রাসে অবদান রেখেছে। যুব সম্প্রদায় বুঝতে পেরেছিল যে ইসলামাবাদ ও পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি ধর্মকে কাজে লাগিয়ে সমস্যা উস্কে দিচ্ছে, এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের জন্য মাদক ব্যবহার করছে। বর্ধিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ইতিবাচক পরিবর্তনের কারণে, এই বছরের নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র চারজন স্থানীয় মানুষ সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে যোগ দিয়েছে। এটি স্থানীয় নিয়োগে ২০২৩ সালের ২২ এবং ২০২২ সালে ১১৩ থেকে উল্লেখযোগ্য হ্রাস চিহ্নিত করেছে৷ ফলস্বরূপ, ৮০ জনেরও বেশি বিদেশী সন্ত্রাসবাদীর তুলনায় বর্তমানে প্রায় ১৬ বা তারও কম স্থানীয় বিদ্রোহী রয়েছে৷


নিরাপত্তা বাহিনী ওভার গ্রাউন্ড ওয়ার্কার্স (ওজিডাবলু) নেটওয়ার্ক ভেঙে দিয়েছে, এবং গ্রেফতার, অভিযান, অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ ও সরকারি চাকরি অস্বীকারের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদী অর্থায়নের বিরুদ্ধে কাজ করেছে।



ক্রমবর্ধমান শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং জম্মু ও কাশ্মীরে গণতন্ত্রের সাম্প্রতিক সাফল্যের কারণে, ইসলামাবাদ এবং এর সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি কট্টরপন্থাকে প্ররোচিত করা এবং টপ-ডাউন কৌশলগুলির মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদী হিংসা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে। পাকিস্তান শুধু নতুন
ভার্চুয়াল সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীই প্রতিষ্ঠা করেনি, বরং ফেসবুক, এক্স, টেলিগ্রামের পাশাপাশি ডার্ক ওয়েবের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম জুড়ে ভারতবিরোধী কার্যকলাপও তীব্রতর করেছে। ২০২৪ সালের অক্টোবরে, নিরাপত্তা সংস্থাগুলি ২,০০০-‌এরও বেশি উদ্বেগজনক পোস্টের বিষয়ে রিপোর্ট করেছে, যা ২০২৩ সালের একই সময়ের মধ্যে মাত্র ৮৯টি থেকে উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এই পোস্টগুলির মধ্যে, ১৩০টি সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পর্কিত, ৩১০টি পরিকাঠামোর জন্য হুমকি তৈরি করেছে, এবং ৩৩টি বিচ্ছিন্নতাবাদকে সমর্থন করেছে৷ সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসবাদী হিংসার বিষয়ে জনসাধারণের আলোচনার বিষয়বস্তু তৈরি করতে পাকিস্তান ও ইসলামাবাদের সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি কৌশলগতভাবে সাইবার-সক্ষম প্রভাবমূলক প্রচারণা ও প্রোপ্যাগান্ডা ব্যবহার করে ।

চার বছর ধরে বিদেশি সন্ত্রাসবাদীদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে, প্রাথমিকভাবে পির পাঞ্জালের দক্ষিণে এবং এখন জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে। এই গোষ্ঠীগুলি তাদের কার্যকলাপের জন্য ঘন বন ও জটিল ভূ-‌চরিত্রের সুযোগ নেয়। রাজৌরি-পুঞ্চ এলাকায় মারাত্মক অতর্কিত আক্রমণ ও হামলার পরে জম্মুর ছয়টি জেলা জুড়ে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বেড়েছে, যার ফলে
১৮ জন নিরাপত্তা কর্মী এবং ১৩জন সন্ত্রাসবাদী সহ ৪৪ জন নিহত হয়েছেন।

নির্বাচনের পরে কাশ্মীর উপত্যকায়, বিশেষ করে বারামুল্লা, কুপওয়ারা, বান্দিপোরা ও গান্ডারবাল জেলায় বিদেশি সন্ত্রাসীদের কার্যকলাপের বৃদ্ধি ঘটে। এই প্রবণতাটি ২০০৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত সময়ের উদ্বেগজনক স্মৃতিকে উজ্জীবিত করে, যে সময়ে বিদেশি সন্ত্রাসবাদীরা জম্মু ও কাশ্মীরকে ফুটন্ত রাখতে সফলভাবে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালিয়েছিল। পাকিস্তানের ঘৃণ্য কার্যকলাপ বুরহান ওয়ানি ও অন্য স্থানীয় বিদ্রোহীদের দ্বারা সমর্থিত ছিল, যারা স্থানীয় নিয়োগ বাড়াতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেছিল।

সামনের পথ

ইসলামাবাদের ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত স্বার্থে সন্ত্রাসকে ব্যবহার করার রাষ্ট্রীয় নীতির কারণে আফ-পাক অঞ্চলটি সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। বৈদেশিক নীতির হাতিয়ার হিসাবে সন্ত্রাসবাদের ব্যবহার, হাদিসের বিকৃতি, নিয়োগের জন্য এনক্রিপ্ট করা অ্যাপস ও সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার, এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সমর্থন জম্মু ও কাশ্মীরে নয়াদিল্লির সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ কৌশলকে জটিল করে তুলেছে। টেকহিন্ট-ভিত্তিক (টেকনিক্যাল ইন্টেলিজেন্স) সন্ত্রাসবাদীদের উপস্থিতি ও গতিবিধির তথ্য কমে গিয়েছে, নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে সফল অভিযানের জন্য হিউমিন্ট (মানব বুদ্ধিমত্তা) শক্তিশালী করতে বাধ্য করেছে৷


বৈদেশিক নীতির হাতিয়ার হিসাবে সন্ত্রাসবাদের ব্যবহার, হাদিসের বিকৃতি, নিয়োগের জন্য এনক্রিপ্ট করা অ্যাপস ও সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার, এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সমর্থন জম্মু ও কাশ্মীরে নয়াদিল্লির সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ কৌশলকে জটিল করে তুলেছে।



নয়াদিল্লির উচিত তার সন্ত্রাসবিরোধী কৌশলগুলিকে শক্তিশালী করা এবং মাল্টি-এজেন্সি সেন্টার (ম্যাক)-এর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো। ভারতের
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট করেছেন যে দেশটির সামনে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা হুমকি মোকাবেলা করতে এবং সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্কগুলিকে কার্যকরভাবে ধ্বংস করতে সংস্থাগুলির মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতা অপরিহার্য।

জম্মু ও কাশ্মীরে আগাম সক্রিয়তা এবং প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ ও প্রক্সি যুদ্ধের মোকাবিলা করতে নয়াদিল্লির উচিত বিভিন্ন সংস্থার একটি মাল্টি-এজেন্সি সেন্টার (স্ম্যাক)-‌এর তত্ত্বাবধানে স্থানীয়দের নিয়ে ইউটি-‌পর্যায়ে উত্তর কাশ্মীর, দক্ষিণ কাশ্মীর, রাজৌরি-পুঞ্চ ও জম্মুতে উন্নত সমন্বয়ের জন্য চারটি সুনির্দিষ্ট ফিউশন কেন্দ্র স্থাপনের কথা ভাবা। এক ধাপ এগিয়ে থাকার জন্য সন্ত্রাস দমনে বিগ ডেটা, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে এই ফিউশন কেন্দ্রগুলিতে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে যৌথ প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন করা উচিত। অগ্রাধিকার ও অভিযানগত পদ্ধতি নির্ধারণের জন্য যৌথ প্রশিক্ষণও অপরিহার্য, যা জেঅ্যান্ডকে-তে স্থায়ী শান্তি অর্জনে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখবে। ম্যাক-এর উপরের স্তরে সমন্বয় প্রশংসনীয় হলেও, বড়সড় গোয়েন্দা তথ্যের আরও ভাল অনুধাবন নিশ্চিত করতে নয়াদিল্লিকে নিম্ন স্তরে সহযোগিতা বাড়াতে হবে।



আইজাজ ওয়ানি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের একজন ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.