Author : Sushant Sareen

Published on May 26, 2023 Updated 0 Hours ago

পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক ক্ষমতাধরদের প্রতিটি পদক্ষেপই দেশটিকে গভীরতর রসাতলের দিকে ঠেলে দিচ্ছে

পাকিস্তান: এক অন্য ধরনের গৃহযুদ্ধ

পাকিস্তানে বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিঃসন্দেহে ১৯৪৭ সালে গঠিত রাষ্ট্রটির সামনে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জ। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্কটের ফলে দেশটি যখন দু’টুকরো হয়ে যায় এবং ভারতের পশ্চিম দিকে পাকিস্তানের এক অংশ পড়ে, সে সঙ্কটের চাইতেও এটি বেশি গুরুতর এবং বিপজ্জনক বললে অত্যুক্তি হবে না। দেশটির বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা শাসক শ্রেণির মধ্যেই গৃহযুদ্ধে পরিণত হওয়ায় তাকে বিশেষ করে ধ্বংসাত্মক করে তুলেছে। পূর্ব পাকিস্তানের আলাদা হয়ে যাওয়াও একটি গৃহযুদ্ধেরই ফলাফল হলেও তা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্রের। ১৯৭১ সালের গৃহযুদ্ধে এক দিকে ছিল পাকিস্তানের ‘প্রতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা’ এবং অন্য দিকে ছিল শোষিত, নির্যাতিত, অসন্তুষ্ট, বৈষম্যের শিকার হওয়া প্রদেশ ও জাতিগোষ্ঠী। পূর্ব পাকিস্তান সঙ্কটের সময় অসামরিক-সামরিক ব্যবস্থাটি ছিল অক্ষত, যা ওই সঙ্কট পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানকে পরাজিত অবস্থা থেকে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাটিই নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত।

অভিজাতদের ঐকমত্য ভেঙে খানখান

প্রায়শই পাক সামরিক বাহিনী সম্পর্কে আলগাভাবে ‘প্রতিষ্ঠান’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। তবে সেটি ‘প্রতিষ্ঠান’ আসলে কী, তার কিছুটা সরলীকৃত বর্ণনা। সামরিক বাহিনী অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শক্তি এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী অংশ। তবে এটিকে কখনওই সামগ্রিক প্রতিষ্ঠান বলা যাবে না। সামগ্রিক প্রতিষ্ঠানকে বৃহত্তর অর্থে অভিজাত ঐকমত্য বলা যায়, যা পাকিস্তানকে চালিত ও নিয়ন্ত্রিত করে। এই ঐকমত্য — যাকে অবশ্য চাইলে ‘পাকিস্তানের ধারণা’ও বলা যেতে পারে — সামরিক বাহিনী এবং সমাজ ও রাজনীতির অন্যান্য প্রভাবশালী অংশের সমন্বয়ে গঠিত, যার মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়ী, মধ্যবিত্ত বুর্জোয়া, পেশাদার শ্রেণি (ব্যাঙ্ককর্মী, আইনজীবী, চিকিৎসক প্রমুখ), বিচারক, আমলা, রাজনীতিবিদ এবং কিছু ধর্মগুরু। সবচেয়ে স্পষ্ট করে বললে, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা হল সেই শাসক শ্রেণি, যা সর্বদাই শাসক দল বা জোটের সঙ্গে সমার্থক নয়।

পূর্ব পাকিস্তান সঙ্কটের সময় অসামরিক-সামরিক ব্যবস্থাটি ছিল অক্ষত, যা ওই সঙ্কট পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানকে পরাজিত অবস্থা থেকে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করেছিল।

দেশটিকে সমন্বিত করে রাখা এই অভিজাত ঐকমত্য বর্তমানে ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলি পরস্পরবিরোধী উদ্দেশ্য সাধনে ব্যস্ত। রাষ্ট্রের স্তম্ভগুলি একে অপরের বিরুদ্ধে কৈফিয়ত গ্রহণে ব্যস্ত। অভিজাতরা তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের রক্তের জন্য লালায়িত। আপাতদৃষ্টিতে দেখলে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতা হল রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং আধিপত্যের জন্য আর একটি বাধাহীন লড়াই। কিন্তু আসলে এটি রাজনৈতিক অভিজাতদের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে, যেখানে একমাত্র বিজয়ীরাই সব সুবিধা পাবে। এই প্রেক্ষিতে বিজয়ও হবে ব্যাপক মূল্যের বিনিময়ে এবং পরাজয়ের অর্থ হল রাজনৈতিক মৃত্যু বা আরও খারাপ কিছু।

বিচারবিভাগীয় শক্তির খেলা

পাকিস্তান যে রাজনৈতিক সর্বনাশের দিকে ক্রমশ চালিত হচ্ছে, তা ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলকে সরকার ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এক দিকে যেখানে রাস্তায় ইমরানের আধিপত্য রয়েছে এবং রাস্তায় নেমে লড়াই চালানোর মাধ্যমে তাঁর দলীয় কর্মীরা পুলিশ এবং আধা-সামরিক রেঞ্জারদের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে, তখন ইমরান পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বন্দিয়ালের নেতৃত্বে উচ্চতর বিচার বিভাগের একটি অংশের সমর্থনও অর্জন করেছেন। ইসলামাবাদ এবং লাহোরের হাইকোর্টগুলিও ইমরান এবং তাঁর অনুসারীদের পক্ষে অনুকূল রায় দিয়েছে। সাধারণত, বিচার বিভাগ পাকিস্তান সেনাবাহিনী মতামতই অনুসরণ করে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এক দিকে এক দল দ্বিধাহীনভাবে ইমরানের পক্ষ অবলম্বন করেছেন, বিচারকদের বেঞ্চকে প্রভাবিত করেছেন, এবং ইমরানকে খানিক স্বস্তি দিয়েছেন। এবং অন্য দিকে সমস্যাটির প্রেক্ষিতে আইনগত ও সাংবিধানিক পথ অনুসরণ করা অপর অংশটিকে কোণঠাসা করা হয়েছে।

পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে কেবল বেঞ্চের গঠন দেখেই রায়  অনুমান করা সম্ভব। কিন্তু ইমরানের পক্ষাবলম্বনকারী বিচারকদের মন্তব্যের অডিও ফাঁস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি প্রকাশ্যে আসে যে, বেশ কিছু বিচারক কিছু ক্ষেত্রে বেঞ্চ থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানান এবং প্রধান বিচারপতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এবং তাঁর বিচার বিভাগ পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ন তোলা কিছু রায়ের কথাও জানা গেছে। সাংবিধানিক ভাবে বাধ্যতামূলক ৯০ দিনের মধ্যে পাঞ্জাব এবং খাইবার পাখতুনখোয়া বিধানসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠান সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে।

প্রক্সি বা মেকি যুদ্ধ

বিষয়টিকে জটিলতর করে তুলেছে সেনাপ্রধান জেনারেল অসীম মুনির ও ইমরান খানের মধ্যে প্রক্সি যুদ্ধ। এই প্রক্সি যুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকার জেনারেল মুনিরের পক্ষে লড়াই করছে, তখন বিচার বিভাগ ইমরানের পক্ষ নিয়েছে। একটি সংগঠন হিসাবে সেনাবাহিনী প্রকাশ্যে তার ক্ষমতা প্রদর্শনে দ্বিধাগ্রস্ত এবং বিরোধী পক্ষ ও বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে তারা সরকারের উপর নির্ভর করছে ও সরকারকে সমর্থন জোগাচ্ছে। কিন্তু সরকার রাজনৈতিক আখ্যান এবং ভিন্ন ভিন্ন ধারণার যুদ্ধ দুটির মোকাবিলাতেই সম্পূর্ণ অযোগ্য প্রমাণিত হচ্ছে। অক্ষমতার কারণে সৃষ্ট ক্ষতি কেবল অর্থনীতির ভয়ঙ্কর পরিচালনা দ্বারা স্পষ্ট হয়েছে। ফলস্বরূপ, বর্তমানে সরকার এবং বিচার বিভাগের মধ্যে প্রক্সি লড়াইয়ে সম্ভবত বিচার বিভাগই জয়ী হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইসলামাবাদ এবং লাহোরের উচ্চ আদালতগুলিও ইমরান এবং তাঁর অনুসারীদের পক্ষে অনুকূল রায় দিয়েছে।

পাঞ্জাবি অভিজাতদের সমর্থন হারানো

সেনাবাহিনীর জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, তারা যে কেবলমাত্র অভ্যন্তরীণ পদাধিকারীদের কাছ থেকে প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে বা তার ভয় পাচ্ছে এমনটা নয়, বরং পাকিস্তানি অভিজাতদের, বিশেষ করে পাঞ্জাবের কেন্দ্রস্থলে তার সমর্থকদের একটি বড় এবং প্রভাবশালী অংশের সমর্থন হারিয়েছে। বরাবরই পাঞ্জাবি অভিজাতরা প্রশ্নাতীতভাবে সেনাবাহিনীকে সমর্থন করেছে। এই অভিজাতদের খুব বড় ও প্রভাবশালী অংশ পক্ষ বদল করেছে এবং বর্তমানে তারা পাকাপাকিভাবে ইমরান-শিবিরে যোগ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সামরিক পরিবার, তাদের বর্ধিত সামাজিক শৃঙ্খল, প্রাক্তন সৈনিক সম্প্রদায় এবং বিচারক এবং তাঁদের পরিবার, শীর্ষ আইনজীবী, সাংবাদিক, ইউটিউবার, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার, গায়ক, ক্রিকেটার, অভিনেতা ইত্যাদি-সহ পাঞ্জাবি অভিজাত শ্রেণির অন্যান্য অংশ। গত ৭৫ বছরে, এমনকি ভারতের কাছে যুদ্ধে হেরে যাওয়ার পরেও, পাকিস্তান সেনাবাহিনী পাঞ্জাবি অভিজাতদের কাছ থেকে এতটা খারাপ ব্যবহার পায়নি যেমনটা গত বছর জেনারেলরা ইমরান খানকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে দেখা গিয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে তথ্য সংক্রান্ত যুদ্ধ চালানোর জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে পুরো ‘পঞ্চম প্রজন্ম’ বা ‘হাইব্রিড ওয়ার’ ট্রল আর্মি তৈরি করেছিল, তা বর্তমান সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হচ্ছে। বিষাক্ত সাইবার বুলেট ও শেলের অবিরাম আক্রমণ দেশের সেনাবাহিনীর মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে।

সেনাবাহিনীর প্রতি ভয় কেটে গেছে

সেনাবাহিনীর প্রতি ভয়-ভীতিও দূর হয়ে গিয়েছে। আগে যে সেনা মর্জি মতো নিজেদের পথ করে নিতে অভ্যস্ত ছিল, তাদের কাছে এই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অপরিচিত ও অজানা। হঠাৎই সেনাবাহিনী অথৈ জলে পড়েছে এবং তারা জানে না, তাদের শ্রেষ্ঠত্বের সম্মুখে উপস্থিত এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা কীভাবে করবে। তার সামরিক বল প্রয়োগ করা দুরূহ, প্রায় অসম্ভবই বলা চলে। কারণ তাদের লক্ষ্য এখন আর প্রতিরোধহীন, নামহীন বা কণ্ঠহীন বেলুচ, সিন্ধি বা পশতুনরা নয়। বরং এ বার তাদের লক্ষ্য হল পাঞ্জাবিরা এবং তা সাধারণ, অনামী জনগোষ্ঠী নয়, বরং সুবিধাপ্রাপ্ত, সুসংযুক্ত, প্রতিবাদী, দৃশ্যমান অভিজাতরাই।

ভারতের বিরুদ্ধে তথ্য সংক্রান্ত যুদ্ধ চালানোর জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে পুরো ‘পঞ্চম প্রজন্ম’ বা ‘হাইব্রিড ওয়ার’ ট্রল আর্মি তৈরি করেছিল, তা বর্তমান সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হচ্ছে।

যতবারই সেনাবাহিনী ইমরানের সাইবার যোদ্ধাদের লাগাম টানার চেষ্টা করেছে, তত বারই বিচার বিভাগ এগিয়ে এসেছে এবং তাদের স্বস্তি দিয়েছে। বিচার বিভাগের বান্দিয়াল গোষ্ঠী স্থিতিশীলতার কিছু চিহ্ন পুনরুদ্ধার করার জন্য সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক দিক থেকে সেনাবাহিনীর জন্য এটি দ্রুত বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই হয়ে উঠছে, যা কেবল সরকারের ক্ষেত্রটিকেই দখল করছে না, বরং সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাকেও খর্ব করছে। সরকার এখন বিচার বিভাগের লাগাম টেনে ধরতে আইন প্রণয়নের কথা ভাবছে। তবে এ কথা করার চেয়ে বলা সহজ। কারণ বিচার বিভাগ শুধু যে সেই আইন খুব সম্ভবত খারিজ করে দেবে তাই নয়, একই সঙ্গে দেশের রাষ্ট্রপতিও আইনটি অনুমোদন করতে যতটা সম্ভব দেরি করবেন।

সামরিক আইনের বিকল্প

পরিস্থিতি দ্রুত এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে কিছু করা আবশ্যক। এমনটা মনে হয় না যে, সাধারণ নির্বাচনের সময় অক্টোবর মাস পর্যন্ত এ হেন পরিস্থিতি বহাল থাকবে। কিন্তু বাঁধ ভাঙলে কী হবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব নয়। অতীতে সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করত এবং ব্যবস্থাকে পুনস্থাপন করত। কিন্তু এটি বর্তমানে আর অনিবার্য কোনও বিকল্প নয়। সেনাবাহিনী বিভক্ত। এর আগে পাঞ্জাবি অভিজাতদের কাছ থেকে পাওয়া সমর্থনও আর নেই। সমালোচকরা অবশ্য যুক্তি দেন, যদি সত্যিই সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে তা হলে পাঞ্জাবি অভিজাতরাও অবিলম্বে পক্ষ বদল করবেন এবং নতুন স্বৈরাচারী শাসককে সমর্থন জোগাবেন। কিন্তু এঁরা  কখনও এ কথা ভাবতে পারেননি যে, ইমরান শুধুমাত্র টিকেই যাবেন না, বরং একই সঙ্গে পাকিস্তানের ক্ষমতা ও রাজনৈতিক কাঠামোর ভিত খারাপ ভাবে নাড়িয়ে দেবেন। রাস্তা থেকে উঠে আসা প্রতিক্রিয়া ছাড়াও সেনাবাহিনীকে প্রতিকূল বিচার বিভাগের সঙ্গেও লড়াই করতে হবে। এ কথা প্রায় নিশ্চিত যে, বর্তমান বিচারকদের অধিকাংশকেই  সরানো হবে এবং এক নতুন বিচার বিভাগ দায়িত্ব গ্রহণ করবে। আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার কথাও বিবেচনা করতে হবে। এমনটা হলে বেশ কিছু সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।

সাধারণ ভাবে এ ধরনের পরিস্থিতি আগে মোকাবিলা করা গেলেও বর্তমান সময়ে এই পরিস্থিতি সুবিধের নয়। বিদেশ থেকে যে ত্রাণ প্যাকেজ পাওয়ার জন্য পাকিস্তান মরিয়া, তাকে আটকে দেওয়া হতে পারে এবং দেশটি ঋণখেলাপি হলে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে। তাই সেনাবাহিনীকে অর্থনীতি চাঙ্গা করতে হবে। অর্থাৎ গভীর কাঠামোগত সংস্কারের কাজে হাত লাগাতে হবে, যা সেনাবাহিনীকে অজনপ্রিয় করে তুলবে। এই অনিবার্য ও প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কারের প্রভাবে অস্থির জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি একটি নতুন সন্ত্রাসবাদী উত্থান ঘটবে, যা সেনাবাহিনীকে মোকাবিলা করতে হবে। জিহাদি তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) একাধিক ভাবে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা এবং তার অংশগুলির মধ্যে গৃহযুদ্ধের প্রতিফলন। এই জিহাদিদের বেশির ভাগই এক সময় পাকিস্তানি সেনার অংশ ছিল, কিছুটা ‘ট্রোল কোর’-এর মতো, যাদের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ চালানোর জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু এই ‘পবিত্র যোদ্ধা’রা বর্তমানে প্রশাসনের দিকেই বন্দুক তাক করেছে।

বিদেশ থেকে যে ত্রাণ প্যাকেজ পাওয়ার জন্য পাকিস্তান মরিয়া, তাকে আটকে দেওয়া হতে পারে এবং দেশটি খেলাপি হলে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে

এমনকি সেনাবাহিনী বর্তমান জোটের সমর্থনের উপরেও বিশেষ ভরসা করতে পারছে না। ইমরান-বিরোধী রাজনীতিকরা ইমরানের হুমকি প্রশমিত করার জন্য সেনাবাহিনীর কথা অনুযায়ী কাজ করবেন। তবে একদিন না একদিন তাঁদের গণতান্ত্রিক মুখোশ খসে পড়বে এবং তাঁরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সরব হবেন। সংক্ষেপে, সামরিক শাসন অবস্থা ভাল করার পরিবর্তে তাকে খাদের কিনারায় দাঁড় করিয়ে দিতে পারে।

প্ল্যান বি: পুনর্মূষিক

আর অন্য বিকল্পটি হল পিছু হঠা এবং দ্বন্দ্বের অবসান ঘটানো। অর্থাৎ আগাম নির্বাচনের ডাক দেওয়া এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দায়িত্ব পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের উপর ছেড়ে দেওয়া। কিন্তু এই বিকল্পটির নিজস্ব সমস্যা রয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নির্বাচন হলে তা প্রায় নিশ্চিতভাবেই ইমরান খানকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনবে, যে সম্ভাবনা সেনাবাহিনী বা সরকার কারও কাছেই  গ্রহণযোগ্য নয়। ইমরান শুধু তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের পথেই হাঁটবেন না, বরং একই সঙ্গে নিশ্চিতভাবে সেনাবাহিনীর শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদেরও আক্রমণ করবেন। ইতিমধ্যেই খবর আসতে শুরু করেছে যে, তিনি ক্ষমতায় এলে সেনা ও আইএসআই প্রধানদের সরিয়ে দেবেন। এমনটা মনে হয় না যে, জেনারেল অসীম মুনির এ হেন কোনও বিকল্পকে সমর্থন জোগাবেন, যেখানে তাঁর গর্দানই কোপের মুখে পড়তে পারে। সেনাবাহিনীর মধ্যে অভ্যুত্থান না ঘটলে এবং প্রবীণ জেনারেলরা একত্র হয়ে জেনারেল অসীম মুনীরকে ক্ষমতাচ্যুত না করলে আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা কার্যত ক্ষীণ। একজন কর্মরত সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে বাহিনীর ভিতরে অভ্যুত্থান সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ ‘কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল’ ব্যবস্থার জন্যও বিপর্যয়কর হবে এবং তার অবসানের সূচনা ঘটাবে।

আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নির্বাচন হলে তা প্রায় নিশ্চিতভাবেই ইমরান খানকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনবে, যে সম্ভাবনা সেনাবাহিনী বা সরকার কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়।

সেনাপ্রধানের আপত্তি ছাড়াও বর্তমান বেসামরিক সরকারের তরফেও আগাম নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ থাকবে। প্রকৃতপক্ষে সরকার আরও এক বছরের জন্য সাধারণ নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার বিরোধিতা করবে না। তবে ইমরান-তরঙ্গকে বাগে আনতে পারলে এবং বিচারবিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে তা সম্ভব হবে। কিন্তু সমস্যা হল বিচারবিভাগ এবং ইমরানকে নিয়ন্ত্রণ করা যদি এতটাই সহজ হত, তাহলে সমস্যাটি গত এক বছরেই মিটে যেত। যতক্ষণ না সরকার ও সেনাবাহিনী রক্তক্ষয়ে লিপ্ত হচ্ছে এবং স্পষ্টতই আইন-বহির্ভূত ও অসাংবিধানিক পদক্ষেপ করতে প্রস্তুত হচ্ছে, তারা ইমরানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে না।

পাকিস্তান রাষ্ট্রের টিকে থাকা এখন হুমকির মুখে। কিন্তু রাষ্ট্রটির কাছে এই সঙ্কট কাটানোর কোনও পরিকল্পনা নেই। পাকিস্তানের কুর্সির লড়াইয়ে রত কুশীলবদের প্রতিটি কাজ এবং প্রতিক্রিয়া দেশটিকে আরও গভীর রসাতলে ঠেলে দিচ্ছে। পাকিস্তানিরা বর্তমানে তাঁদের রাষ্ট্রের ডুবন্ত জাহাজকে বাঁচাতে কোনও মসিহা বা অলৌকিক ঘটনার অপেক্ষায় রয়েছেন।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Sushant Sareen

Sushant Sareen

Sushant Sareen is Senior Fellow at Observer Research Foundation. His published works include: Balochistan: Forgotten War, Forsaken People (Monograph, 2017) Corridor Calculus: China-Pakistan Economic Corridor & China’s comprador   ...

Read More +