Author : Vivek Mishra

Published on Sep 30, 2023 Updated 0 Hours ago

রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য নেহাত কূটনীতির চেয়ে আরও বেশি কিছু প্রয়োজন। ভারতের সঙ্গে চলতি দ্বিপাক্ষিক সংকট বুঝিয়ে দেয়, ট্রুডোর এই সব গুণ নেই।

অটোয়ার মূর্খামি: রাষ্ট্রচালনার বিকৃত পদ্ধতি

কানাডার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ধারাবাহিকভাবে একটি বিদ্বেষপূর্ণ ধরন রয়েছে যা এখন অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়ে ভারতের সঙ্গে তার সম্পর্ককে প্রভাবিত করছে। প্রাথমিকভাবে এর কারণ অটোয়ার এই ধরনের কার্যকলাপে উৎসাহ দেওয়া, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, এবং তা ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করা। এটি কানাডার লিবারাল পার্টির  বিশেষ বৈশিষ্ট্য। বিশ্বের যে কোনও দুটি দেশের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে শক্তিশালী ডায়াস্পোরা সংযোগ, যা একটি সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সেতু নির্মাণের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারত, তা এখন অভ্যন্তরীণ রাজনীতির তাৎক্ষণিক টিকে থাকা ও ভবিষ্যৎ লাভের জন্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কানাডায় এই ডায়াস্পোরা যদিও বৈচিত্র্যময়, তার একটি অংশ নিজেদের ভারত–বিরোধী খালিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হিসাবে চিহ্নিত করে। একদম উপর মহলের রাজনৈতিক সমর্থনের সঙ্গে খালিস্তান আন্দোলনের বিভিন্ন উপদল এখন সেখানে রাজনৈতিক জমি পেয়েছে, এবং তহবিল ও মানবসম্পদ সংগ্রহ করার সময় ভারতের বিরুদ্ধে তাদের উদ্বেগ তুলে ধরার জন্য প্রায়শই যথেষ্ট সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন–ব্যবস্থা খুঁজে পেয়েছে। এটি এমন একটি ঘটনা এতদিন পর্যন্ত কানাডার অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।

এক কাল্পনিক খালিস্তানের বিচ্ছিন্নতার সমর্থনে অনুষ্ঠিত নিয়মিত গণভোটগুলি কানাডায় একটি নির্দিষ্ট মাত্রার রাষ্ট্রীয় মদতের দিকেই ইঙ্গিত করে।

এই নতুন কানাডিয়ান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব কানাডার বাইরেও বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো বিভিন্ন দেশে খালিস্তানপন্থী গোষ্ঠীগুলি এখন রাজনৈতিক দাবির মাধ্যমে সামনে এসেছে। দুটি প্রধান গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে ‘‌শিখস ফর জাস্টিস’‌ ও ‘‌খালিস্তান টাইগার ফোর্স’‌, এবং উভয়েরই কানাডায় শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এদের তহবিল, প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন ও দল ভারি করার ধরনে বেশ উন্নতি হয়েছে। এক কাল্পনিক খালিস্তানের বিচ্ছিন্নতার সমর্থনে অনুষ্ঠিত নিয়মিত গণভোটগুলি কানাডায় একটি নির্দিষ্ট মাত্রার রাষ্ট্রীয় মদতের দিকেই ইঙ্গিত করে।

জাস্টিন ট্রুডোর রাজনৈতিকভাবে বেঁচে থাকা জগমিত সিংয়ের নেতৃত্বে নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)–র সমর্থনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত, যা পরিস্থিতির জটিলতায় একটি মাত্রা যুক্ত করে। গত নির্বাচনের পর থেকে ট্রুডোর লিবারেল পার্টি প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির থেকে যে সামান্য রাজনৈতিক ব্যবধান ধরে রেখেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এই সমর্থন বজায় রাখা ট্রুডোর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা আশ্চর্যজনক নয় যে কানাডার নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) খোলাখুলিভাবে খালিস্তানি শক্তিকে সমর্থন করেছে, কারণ লিবারাল পার্টির মধ্যেই তারা রয়েছে। যদিও এই রাজনৈতিক কূটকৌশল কিছু অভ্যন্তরীণ স্বার্থের জন্য কাজ করতে পারে, এটি ভারতের সঙ্গে কানাডার সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনও উপকারে আসে না। ভারতবিরোধী কার্যকলাপের বৃদ্ধি ঘনিষ্ঠভাবে আর্থিক প্রতিপত্তি বৃদ্ধির সঙ্গেও জড়িত, যার জন্য হরদীপ সিং নিজ্জরের মতো ব্যক্তিরা সন্দেহজনক আর্থিক কাঠামো ও প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে, এবং প্রায়শই যথাযথ তদারকি ও নিরীক্ষা ছাড়াই কাজ করে। এই পরিস্থিতি এই গোষ্ঠীগুলির কর্মসূচি ও উদ্দেশ্য নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন করে তোলে।

গত নির্বাচনের পর থেকে ট্রুডোর লিবারেল পার্টি প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির থেকে যে সামান্য রাজনৈতিক ব্যবধান ধরে রেখেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এই সমর্থন বজায় রাখা ট্রুডোর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এক পরিচিত খালিস্তানি হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ নিয়ে কানাডা ও ভারতের মধ্যে বর্তমান সঙ্কট কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে, যা ভারতের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য বিপদের বাইরেও প্রসারিত। প্রথমত, এটি কানাডার অভিবাসন ব্যবস্থার ত্রুটিগুলিকে তুলে ধরেছে, যা বিতর্কিত অতীতের ব্যক্তিদের নাগরিক হতে এবং অন্যান্য দেশকে লক্ষ্যবস্তু করে কাজ করার জন্য সেই সুবিধাকে কাজে লাগাতে দেয়। আজকের আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বে দৃঢ় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয়ত, বর্তমান ইস্যুতে কানাডার অবস্থান এই সত্যকে বৈধতা দেওয়া এবং এমনকি স্বাভাবিক করে নেওয়ার চেষ্টা করছে যে রাষ্ট্র চাইলে উদার গণতন্ত্রের মূল মূল্যবোধগুলি রক্ষার অছিলায় বাইরের উপাদানগুলিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিসর তৈরি করে দিতে পারে। এই বিষয়ে অটোয়াকে বরং কানাডার অভ্যন্তরে তার নিজস্ব প্রদেশ কুইবেকের শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডাগুলির তালিকায় উঠে আসার জন্য অপেক্ষা করা উচিত। বৃহত্তর ফরাসিভাষী প্রদেশ কুইবেকের সার্বভৌমত্বের জন্য একটি দল ব্লক কিবেকোয়াসের উত্থান লক্ষ্য করার মতো, যা কানাডার নিজস্ব উঠোনে জাতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদের একটি প্রচ্ছন্ন রূপ। কল্পনা করুন, ভারত কানাডার একটি প্রাদেশিক বিচ্ছিন্নতা সমর্থনকারী দলকে সুযোগ করে দিচ্ছে। এই ধরনের পরিস্থিতি ইতিবাচক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য অনুকূল হবে না। বিপরীতে, ভারত অতীতে চিনের সঙ্গে সংকীর্ণ অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক লাভের চেয়ে বৈদেশিক সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিয়েছে।

এক পরিচিত খলিস্তানি হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ নিয়ে কানাডা ও ভারতের মধ্যে বর্তমান সঙ্কট কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে, যা ভারতের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য বিপদের বাইরেও প্রসারিত।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে এই ভারতবিরোধী কার্যকলাপগুলিকে ন্যায্যতা দেওয়া বাস্তবে মৌলিক গণতান্ত্রিক নীতির বিকৃতি। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ হলেও  বেশিরভাগ গণতন্ত্রে তার একটি নির্দিষ্ট মাত্রার যুক্তিসঙ্গত সীমাবদ্ধতা থাকে। এর মধ্যে অন্তর্নিহিত সুরক্ষাগুলি এমনভাবে অন্তর্ভুক্ত থাকে যাতে ভিত্তিহীন ও বর্ধিত বাগাড়ম্বর দেশের অভ্যন্তরীণ সংহতি বা বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষতি না করে। গণতন্ত্রে অর্পিত এই ক্ষমতাগুলি প্রয়োগ করার সময় নেতাদের রাষ্ট্রীয় সুশাসন কৌশল দেখাতে হবে।

ভারত ও কানাডার মধ্যে বর্তমান উত্তেজনা এ কথাই স্পষ্ট করে যে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আপাতদৃষ্টিতে শক্তিশালী ও স্থিতিশীল সম্পর্কের স্থিতিশীলতাও প্রায়শই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল বিষয়গুলির ভারসাম্যের উপর নির্ভর করে। নেতৃত্ব ও রাষ্ট্র-পরিচালনা বা স্টেটক্র‌্যফটের দায়িত্ব হল স্থিতিশীলতা বজায় রেখে অন্য পক্ষের কাছে নিজের গভীরতম উদ্বেগগুলি এমনভাবে প্রকাশ করা যা ভারসাম্যকে ব্যাহত করে না। স্পষ্টতই, কানাডার প্রধানমন্ত্রী ঘোড়াটিকে গাড়ির সামনে জুড়ে দিয়েছিলেন যখন তিনি শুধু নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগই করেননি, বরং একজন ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাহলে তো বলতে হয় যখন কানাডা, ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের কূটনীতিকরা হত্যার হুমকির সম্মুখীন হয়েছিলেন তখন ভারতের উচিত ছিল তার দূতাবাস ও কনস্যুলার অফিস বন্ধ করে কানাডা থেকে সব কূটনীতিককে সরিয়ে নেওয়া। ভারত কিন্তু প্রয়োজনীয় বিনয়ের সঙ্গে কাজ করেছে।

ভারত ও কানাডার মধ্যে বর্তমান উত্তেজনা এ কথাই স্পষ্ট করে যে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আপাতদৃষ্টিতে শক্তিশালী ও স্থিতিশীল সম্পর্কের স্থিতিশীলতাও প্রায়শই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল বিষয়গুলির ভারসাম্যের উপর নির্ভর করে।

এই ঘটনাটি বিস্ময়কর যে ট্রুডোর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলি প্রথাগত রাষ্ট্রীয় কৌশলের অভাব বেশি করে প্রতিফলিত করছে মনে হচ্ছে, কারণ রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বে দেশের অন্যদের তুলনায় তাঁর প্রজন্মগত বাড়তি সুবিধা আছে। তাঁর পিতা পিয়ের ট্রুডো ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৯ এবং ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। হ্যারল্ড নিকলসন বলেছিলেন যে রাষ্ট্র-পরিচালনার জন্য কূটনীতির চেয়ে আরও বেশি কিছু প্রয়োজন। এটি জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য কৌশল প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নকে সমন্বিত করে। এক ধাক্কায় ট্রুডো প্রমাণ করেছেন যে তাঁর মধ্যে এই গুণগুলির গুরুতর অভাব আছে।

অবশেষে, অটোয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সঙ্কট ভারতের কূটনীতির জন্যও একটি পরীক্ষা হয়ে উঠেছে। জাস্টিন ট্রুডোর কূটনীতিকদের বহিষ্কার করা একটি দুর্ভাগ্যজনক পদক্ষেপ যার বিরুদ্ধে ভারতের তরফে প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন ছিল। যদিও এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ভারতের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে চ্যালেঞ্জ করে, নয়াদিল্লির উচিত এটিকে খুব বেশি গুরুত্ব না দেওয়া। যখন ভারতের অর্থনৈতিক শক্তি ও রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার ফাটলগুলি আরও বেড়ে চলেছে, এবং অনেক বিকল্প ব্যবহার করে ঝুঁকি কমানোর সুযোগ আগের চেয়ে কমে যাচ্ছে, সেই সময় আরও বেশি করে এই ধরনের জটিল সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে যা ‘সফট স্টেট’‌ হিসাবে ভারতের পরিচিতিকে সমস্যার মুখে ফেলে।।


বিবেক মিশ্র অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের একজন ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.