Author : Ian Kemish

Published on Mar 28, 2023 Updated 0 Hours ago
একটি অঞ্চল, দুটি আখ্যান: প্রশান্ত মহাসাগর, জলবায়ু পরিবর্তন ও নিরাপত্তা

এই নিবন্ধটি ‘‌রাইসিনা ফাইলস ২০২৩’‌ জার্নালের একটি অধ্যায়


প্রশান্ত মহাসাগর সম্পর্কে বৈশ্বিক আখ্যান মূলত এই অঞ্চলে চলতি ভূ–কৌশলগত প্রতিযোগিতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলির সঙ্গে চিন নতুন নিরাপত্তা চুক্তি করতে চাইছে, এবং তার ফলে অস্ট্রেলিয়া ও তার গণতান্ত্রিক মিত্রেরা এই অঞ্চলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা গভীরতর করতে উদ্যোগী হয়েছে। কৌশলবিদরা উদ্বিগ্ন যে বেজিংয়ের সঙ্গে বৃহত্তর আঞ্চলিক নিরাপত্তা সম্পর্ক গড়ে ওঠা এবং সেইসঙ্গে লক্ষ্যভিত্তিক চিনা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও রেয়াতি অর্থায়ন সম্মিলিতভাবে সময়ের সঙ্গে চিনকে এই অঞ্চলে একটি নৌঘাঁটি স্থাপন করতে সাহায্য করতে পারে, যা কিনা তার নীল জলের নৌবাহিনীর নাগাল বিশ্বব্যাপী প্রসারিত করতে সহায়তা করবে।

প্রশান্ত মহাসাগরের বাসিন্দারা অবশ্য মৌলিকভাবে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখেন। তাঁরা এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তাঁরা জলবায়ু পরিবর্তনকে তাঁদের সবচেয়ে গুরুতর নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসাবে গণ্য করেন। তাঁরা তাঁদের বহিরাগত অংশীদারদের মধ্যে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে ক্ষুব্ধ, এবং এই অঞ্চলে বৃহত্তর সামরিকীকরণের লক্ষণ দেখে শঙ্কিত। তাঁরা হতাশা প্রকাশ করেন যে জলবায়ু পরিবর্তনকে যতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে তাঁরা মনে করে, তার চেয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সে দিকে অনেক কম মনোযোগ দিচ্ছে। ফিজির তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ২০২২ সালে বলেছিলেন:

মেশিনগান, ফাইটার জেট, ধূসর জাহাজ ও সবুজ ব্যাটালিয়ন আমাদের প্রাথমিক কৌশলগত উদ্বেগ নয়। ঢেউ আছড়ে পড়ছে আমাদের দোরগোড়ায়, বাতাস আমাদের ঘরে আঘাত হানছে, আমরা নানা দিক থেকে এই শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছি।[১]

২০১৮ সালের প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জ ফোরাম (পিআইএফ) নিরাপত্তা ঘোষণায় এই অঞ্চলের নেতারা স্পষ্ট করেছেন যে তাঁরা জলবায়ু পরিবর্তনকে ‘‌প্রশান্ত মহাসাগরীয় জনগণের জীবিকা, নিরাপত্তা ও কল্যাণের জন্য একক বৃহত্তম হুমকি’‌ হিসাবে দেখছেন। ‘বো ডিক্লারেশন’–এর এই অনুভূতিই অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক বিবৃতি ও নথির কেন্দ্রে রয়েছে। এটি নীল প্রশান্ত মহাসাগরীয় মহাদেশের জন্য পিআইএফ–এর ২০৫০ কৌশলেরও কেন্দ্রবিন্দু[২], যা আরও নিরাপদ, স্থিতিস্থাপক ও সমৃদ্ধ আঞ্চলিক ভবিষ্যতের পথে এগনোর জন্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় সম্প্রদায়ের চিন্তাভাবনার দিশা তৈরি করেছে।

এই দুটি দৃষ্টিকোণ পারস্পরিক অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা খারিজ করে না। জলবায়ু পরিবর্তন যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলিকে (পিআইসি) অস্তিত্বের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে, তা মেনে নেওয়ার জন্য চিন–সমস্যাকে উপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। অনেক প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপবাসী চিনা প্রভাব বিস্তারের বিষয়ে অন্যান্য ভৌগোলিক এলাকার উদ্বেগের শরিক, এবং এখন এই অঞ্চলে মূল্যবোধের প্রতিযোগিতা চলছে। কিছু দেশে বেজিংয়ের আগ্রাসী জনতথ্য কার্যক্রম গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করার বিপদ তৈরি করেছে;[৩] বেজিং এবং এই অঞ্চলের কিছু নেতার মধ্যে সংযোগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাবও রয়েছে,[৪] এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উদ্বিগ্ন যে চিনা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এই অঞ্চলের সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর বাকস্বাধীনতা ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের অধিকারকে সম্মান করার প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করবে।[৫]

প্রশান্ত মহাসাগরের দুর্বলতা

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দুর্বলতা সম্পর্কে বর্তমান কথোপকথন চ্যালেঞ্জটির অবমূল্যায়ন করে শুধু ভঙ্গুর, নিচু প্রবালপ্রাচীর দেশগুলিতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সম্ভাব্য প্রভাবগুলির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। প্রকৃতপক্ষে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় নেতারা নিজেরাই বিশ্বব্যাপী ফোরামে বারবার এই ঝুঁকির কথা তুলে ধরেছেন, কারণ তাঁরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শক্তিশালী জলবায়ু ব্যবস্থা নিতে রাজি করানোর লক্ষ্যে কাজ করেছেন। ২০২১ ইউএন ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্স (কপ ২৬)–এর আগে টুভালুর বিদেশমন্ত্রীর ভাষণ,[৬] যেটি তিনি হাঁটু অবধি সমুদ্রের জলে দাঁড়িয়ে দিয়েছিলেন, এই যুক্তিগুলো জোরালোভাবে তুলে ধরার একটি উচ্চ–প্রভাবসম্পন্ন উপায় ছিল।

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা একমত যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধি বৈশ্বিক উষ্ণায়নের একটি গুরুতর পরিণতি এবং প্রবালনির্মিত দেশগুলির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ হয়েই থাকবে, যদি এমনকি উচ্চতাবৃদ্ধির সম্ভাব্য মাত্রার অনুমানে বড় ধরনের ত্রুটিও হয়ে থাকে।[৭] বিপদগুলি আরও জটিল এবং এই অঞ্চলের সমস্ত দেশে প্রসারিত৷ কিরিবাটি, টুভালু ও মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের মতো প্রবাল দ্বীপরাষ্ট্রগুলি বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু–ঝুঁকিপূর্ণ, আর ভানুয়াটু, টোঙ্গা, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও পিএনজি–র মতো অন্যগুলি সবচেয়ে দুর্যোগ–প্রবণ।[৮] এই অঞ্চলজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যা, ঝড়, খরা ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি আরও ঘন ঘন এবং তীব্রভাবে ঘটছে। লবণাক্ত জলের অনুপ্রবেশ ভূগর্ভস্থ জলসম্পদের ক্ষতি করছে, যার ফলে উপলব্ধ কৃষি জমি হ্রাস পাচ্ছে এবং উচ্চতর জলের তাপমাত্রা প্রাচীরের ক্ষতি করছে, আর সেই কারণে মাছের মজুদ হ্রাস পাচ্ছে।[৯] বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে টুনার ঝাঁক দ্বীপরাষ্ট্রগুলির অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরের সমুদ্রে চলে যেতে পারে,[১০] যার ফলে জনগণের রাজস্ব ও খাদ্য নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হারিয়ে যাবে।

এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার জন্য জলবায়ু প্রভাব সত্যিই তাৎপর্যপূর্ণ। ডেলয়েট মনে করে যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃহত্তর ইন্দো–প্যাসিফিক জুড়ে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গতিপথ ২০৫০ থেকে ২০৭০–এর মধ্যে গড়ে তিন শতাংশে নেমে আসতে পারে, যা এই শতাব্দীর প্রথম ২০ বছরের বার্ষিক বৃদ্ধির তুলনায় প্রায় এক পয়েন্ট কম। [১১] পিআইসি–গুলি তাদের কৃষি ও মৎস্য ক্ষেত্রের কেন্দ্রীয় ভূমিকার কারণে বিশেষভাবে অরক্ষিত। কোভিড–১৯ অতিমারি তাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির উপর প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে তাদের পর্যটন শিল্পকে আঘাত করেছে। এটি এই অঞ্চলের জন্য একাধিক মাত্রার সঙ্কট ডেকে আনছে।

অস্ট্রেলিয়ার ক্লাইমেট কাউন্সিল সঠিকভাবেই বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনে অস্তিত্বের হুমকির জন্য প্রশান্ত মহাসাগরকে শুধু ‘‌পোস্টার চাইল্ড’‌ হিসেবে দেখা উচিত নয়; অথবা পিআইসি–কে নিছক নিষ্ক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসাবে গণ্য করা উচিত নয়।[১২] বছরের পর বছর ধরে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলি অন্য ছোট উন্নয়নশীল দ্বীপরাষ্ট্রগুলির সঙ্গে কাজ করে বিশ্ব উষ্ণায়নকে বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রে আনতে সক্রিয় থেকেছে। অতি সম্প্রতি, ২০২২ সালের শেষের দিকে, ভানুয়াটু রাষ্ট্রপুঞ্জে একটি প্রস্তাব পেশ করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ পরিণতি থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করার জন্য সরকারের কী কী দায়িত্ব আছে তা স্পষ্ট করে দিতে আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতের (‌আইসিজে) ‌থেকে উপদেষ্টা মতামত চেয়েছে।[১৩] আইসিজে থেকে এই ধরনের পরামর্শমূলক মতামত আন্তর্জাতিক আলোচনায় অরক্ষিত দেশগুলির অবস্থানকে শক্তিশালী করতে পারে, এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে মানবাধিকারের সমস্যা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করার পথ তৈরি করতে পারে।[১৪]

আঞ্চলিক নিরাপত্তা সমস্যা হিসাবে জলবায়ু পরিবর্তন

২০২২ সালের মে মাসে অস্ট্রেলিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর নতুন প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজ সেই কথাটাই মেনে নিয়েছেন যা প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপবাসীরা দীর্ঘকাল ধরে বোঝানোর চেষ্টা করছে: জলবায়ু পরিবর্তনকে অস্ট্রেলিয়া এবং এর প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রতিবেশীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সমস্যা হিসাবে দেখা প্রয়োজন।[১৫]  প্রকৃতপক্ষে, অন্য অনেক সরকার এখন কিছুদিন হল স্বীকার করেছে যে বিশ্ব উষ্ণায়নকে একটি নিরাপত্তা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা উচিত। অ্যালবানিজ যে বুঝতে পেরেছেন এই ধরনের একটি সংযোগকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা কতটা প্রয়োজন, তা মূলত তাঁর পূর্বসূরি স্কট মরিসনের অনিচ্ছার উপর আলোকপাত করে। মরিসন সরকার জাতীয় নিরাপত্তাকে একটি অগ্রাধিকার হিসাবে দেখেছিল যা তার শক্তির স্মারক, কিন্তু জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপের জন্য সামান্যই প্রকৃত উৎসাহ দেখিয়েছিলেন।

জলবায়ু পরিবর্তন ও নিরাপত্তার মধ্যে যোগসূত্র পরীক্ষা করে এমন চর্চার অভাব নেই। অস্ট্রেলিয়ান প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন প্রাক্তন প্রধান ও অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাম্মানিক অধ্যাপক ক্রিস ব্যারি জলবায়ু পরিবর্তনকে এমন একটি বিপদের গুণক হিসাবে বর্ণনা করেছেন, যা সামাজিক ভঙ্গুরতাকে তীব্র করে, ইতিমধ্যে দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও চাপের মধ্যে ফেলে, ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন করে, এবং শান্তি বিনির্মাণ ও পুনরুদ্ধার প্রয়াসকে অস্থিতিশীল করে তোলে।[১৬] কিছু নিরাপত্তা বিশ্লেষক উদাহরণস্বরূপ এ কথা তুলে ধরেছেন যে সিরিয়ার ইতিহাসে নথিভুক্ত দেশের সবচেয়ে খারাপ খরার পরেই এসেছিল গৃহযুদ্ধ, যা ২০১১ সালে একটি সাধারণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল।[১৭] যদিও বিদ্রোহের প্রতি শাসনের নৃশংস প্রতিক্রিয়া এবং ইসলামিক স্টেটের উত্থানে চরমপন্থী মতাদর্শের ভূমিকাসহ জনসাধারণের অসন্তোষের মতো অন্যান্য কারণও ছিল, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং এর ফলে দ্রুত শহুরে পরিস্থিতির অবনতি কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

কিছু পর্যবেক্ষক যুক্তি দেন যে জলবায়ু পরিবর্তন যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সংঘর্ষের একটি প্রত্যক্ষ কারণ, [১৮] তার পক্ষে সামান্যই প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু তাঁরাও স্বীকার করেন যে এর থেকে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব–শরিকদের সঙ্গে অ–সহায়ক সম্পর্ক তৈরি হতে পরে। যদিও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কোনও জলবায়ু যুদ্ধ হয়নি, বিরোধ বিশেষজ্ঞরা এই ঝুঁকির দিকে ইঙ্গিত করেছেন যে জলবায়ু পরিবর্তন এই অঞ্চলের ভঙ্গুর অংশে বিদ্যমান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।[১৯] একটি উদাহরণ হল পাপুয়া নিউ গিনির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বোগেনভিল, যেখানে একটি দ্বন্দ্বপরবর্তী সমাজ এখনও ১৯৯০–এর দশকের বিচ্ছিন্নতাবাদী যুদ্ধের পর ফের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য সংগ্রাম করছে। আরেকটি উদাহরণ হল সলোমন দ্বীপপুঞ্জের অত্যধিক জনবহুল মালাইটা প্রদেশ, যা ছিল চলতি শতাব্দীর প্রথম দশকের গোড়ার দিকে গৃহযুদ্ধের একটি ফ্ল্যাশপয়েন্ট। এটি তারপর অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বাধীন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা মিশন মোতায়েনের পথে নিয়ে গিয়েছিল, এবং সেখানকার পরিবেশগত অবনতি আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ হ্রাসের দিকে চালিত করেছিল।[২০]

স্থানীয়, প্রাত্যহিক, জনসম্প্রদায় স্তরের জীবনে প্রশান্ত মহাসাগরে জলবায়ু পরিবর্তনের নিরাপত্তা প্রভাবগুলি সবচেয়ে কঠোর। পাপুয়া নিউ গিনিতে (‌পিএনজি)‌ পারিবারিক গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মধ্যে, বা প্রতিবেশী উপজাতি গোষ্ঠীগুলির মধ্যে, উত্তেজনা এমনভাবে বিস্ফোরিত হতে পারে যা আন্তর্জাতিক কৌশলবিদদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম না–হলেও ব্যাপক সামাজিক ক্ষতি করতে পারে। পিএনজি–এর জাতীয় রাজধানী ও অন্য শহুরে কেন্দ্রগুলির বস্তিগুলিতে বা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি ঐতিহ্যবাহী গ্রামগুলিতে সংঘাত পারিবারিক ও লিঙ্গভিত্তিক হিংসার রূপ নিতে পারে, অথবা দুর্লভ সম্পদের জন্য আদিবাসীদের লড়াইয়ের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে।[২১] যাঁরা একটি বিস্তৃত কৌশলগত ক্যানভাসে কাজ করতে অভ্যস্ত তাঁদের এই ধরনের ‘‌তলার স্তরের’‌ দ্বন্দ্বগুলিকে দেখতে না–পাওয়ার প্রবণতা রয়েছে।

প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন অংশীদারি

প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলির প্রকৃত মূল্যবান অংশীদার হিসাবে বিবেচিত হওয়ার জন্য বিশ্ব উষ্ণায়ন সম্পর্কে কথায় ও কাজে এই অঞ্চলের উদ্বেগের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানানো প্রয়োজন। অংশীদার দেশগুলি এই কাজটি করতে পারে নিজের দেশে নির্গমন হ্রাস করে, আগামী বছরগুলিতে বৃহত্তর বৈশ্বিক হ্রাস ঘটানোর জন্য কাজ করে, এবং আঞ্চলিক প্রভাবগুলির সঙ্গে লড়াই করার জন্য পিআইসি–গুলিকে সমর্থন করার মাধ্যমে। এই ধরনের উদ্যোগগুলিকে এই অঞ্চলের দেশগুলি সামরিক অংশীদারি ও সমর্থনের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখবে।

কেন প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে এই ধরনের সম্পৃক্ততাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত?

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অভিজ্ঞতা সম্ভবত গ্রহের বাকি অংশের জন্য কী হতে চলেছে তার পূর্বাভাস দেবে। এই কারণেই আমাদের সকলের মৌলিক স্বার্থ এই অঞ্চলের সঙ্গে জড়িত থাকা উচিত। তা ছাড়া বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র জুড়ে জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষা তার নিজের কারণেই একটি মূল্যবান উদ্দেশ্য হিসাবে গণ্য হওয়া উচিত।

সম্পৃক্ততার জন্য যুক্তিগুলিকে কৌশলগত দিক থেকেও সহজেই প্রকাশ করা যেতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে এই অঞ্চলটি সমুদ্রজুড়ে বিস্তৃত সরবরাহ লাইনগুলিকে রক্ষা করার জন্য, এবং অস্ট্রেলিয়াকে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংযুক্ত রাখার প্রয়োজনের কারণে, প্রাথমিক কৌশলগত উদ্বেগের বিষয়। দক্ষিণ–পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অবৈধ অভিবাসন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত ঝুঁকিও উপস্থাপন করতে পারে, যার জন্য অস্ট্রেলিয়ার মতো সমুদ্রতীরবর্তী দেশের সতর্ক ও প্রাত্যহিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। ঐতিহাসিকভাবে তারা যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা নাগরিক সংঘাতের মুখে পড়েছে তখনই ক্যানবেরা পিআইসি–কে সমর্থন করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে।

ভারত–সহ অন্য আরও দূরবর্তী ইন্দো–প্যাসিফিক শক্তিগুলির জন্য প্রশান্ত মহাসাগরে সম্পৃক্ত হওয়ার যুক্তিগুলি কম প্রতিভাত ও তাৎক্ষণিক হতে পারে, তবে সেগুলিও যথেষ্ট স্পষ্ট। এই অঞ্চলে চিনের ক্রমবর্ধমান কার্যকলাপ বৈশ্বিক কৌশলগত ভারসাম্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এই লেখক যেমন পূর্বে যুক্তি দিয়েছেন,[২২] গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গণতান্ত্রিক ‘মান’ রক্ষার এবং দুটি মূল্যবোধ–ব্যবস্থার মধ্যে ক্রমবর্ধমান কঠিন সংগ্রামের মধ্যে এই অঞ্চলকে বিজড়িত রাখার দায়িত্ব শুধু অস্ট্রেলিয়ার হাতে ছেড়ে দিতে পারে না।

তার নতুন, আরও প্রগতিশীল জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত অবস্থানের কারণে অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান সরকার প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততার পথপ্রদর্শনে সহায়তা করার প্রশ্নে তার পূর্বসূরির চেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে। দেশটি ২০৩০ সালের মধ্যে সামগ্রিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ৪৩ শতাংশ হ্রাস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এবং ২০৫০ সালের মধ্যে নেট–শূন্য নির্গমনে পৌঁছনোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। অন্য কিছু উন্নত দেশ আরও উচ্চাভিলাষী জলবায়ু উদ্দেশ্য অনুসরণ করলেও পূর্ববর্তী অস্ট্রেলীয় প্রশাসনের চেয়ে এটি আরও দূরদর্শী পদ্ধতি নিয়েছে। এর ফলে ক্যানবেরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি গুরুতরভাবে নিচ্ছে বলে প্রশান্ত মহাসাগরকে সংকেত দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজের অবস্থান আরও দৃঢ় করেছে। এই অঞ্চলে সফররত অস্ট্রেলীয় মন্ত্রীরা এই ইস্যুতে সংহতির উপর জোর দিয়ে চলেছেন, এবং অস্ট্রেলিয়া শার্ম–এল–শেখ–এ কপ২৭–এর সুযোগ ব্যবহার করে এই অঞ্চলে রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন আয়োজন করার জন্য লবি করেছে। জীবাশ্ম জ্বালানি ত্যাগ করার বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার সংকল্প নিয়ে এই অঞ্চলে কিছু সংশয় থেকে গেলেও এর প্রতীকী মূল্য আছে।[২৩]

এই উদ্যোগটি জলবায়ু পরিবর্তনের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে উন্নয়ন সহায়তার একটি উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক কর্মসূচি দ্বারা সমর্থিত। অস্ট্রেলিয়া ইন্দো–প্যাসিফিকের উন্নয়নশীল দেশগুলিকে ২০২০–২৫ সালের মধ্যে জলবায়ু অর্থায়নে ২ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার দিয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ৭০০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার শুধু প্রশান্ত মহাসাগরে যাচ্ছে এই অঞ্চলের বিশেষ দুর্বলতার কারণে। উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য জনসম্প্রদায়ের স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে, আর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার শিকার ব্যক্তিদের সরাসরি মানবিক সহায়তা প্রদান করে।

জলবায়ু পরিবর্তনের আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া সমর্থন করতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়া কিছু সক্ষমতা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্স ফোর্স (এডিএফ) স্বীকার করেছে যে এই অঞ্চলে জলবায়ু–প্ররোচিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্রমবর্ধমান ঘটনাগুলি এবং সংঘাতকে বাড়িয়ে তোলার ঝুঁকি সম্মিলিতভাবে অস্ট্রেলিয়ার সামরিক সক্ষমতা ও স্থাপনার উপর চাপ তৈরি করছে।[২৪] ২০২৩ সালের প্রথম সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ার কিছু অংশে ব্যাপক বন্যাও একটি অনুস্মারক যে এডিএফ ও অন্য জরুরি প্রতিক্রিয়া সংস্থাগুলি দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলির মোকাবিলা করতে কঠোরভাবে চাপে থাকবে।

জলবায়ু পরিবর্তন যে সময়ের সঙ্গেসঙ্গে উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার স্থানচ্যুতি ঘটাতে পারে, সেই বিষয়টি অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার অঙ্কের একটি ফ্যাক্টর হতে পারে। সর্বোপরি, ব্যাপক অভিবাসনকে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব হিসাবে ধরা হয়। এটা নিছক তত্ত্ব নয়; অনুমান করা হয় যে ২৪ মিলিয়ন মানুষ ২০০৮ থেকে প্রতি বছর জলবায়ু প্রভাবের ফলে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।[২৫] জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জনসংখ্যার বাস্তুচ্যুতি অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ–পূর্ব এশীয় প্রতিবেশী অঞ্চলে আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হলেও প্রশান্ত মহাসাগরীয় সম্প্রদায়ের আকার তুলনামূলকভাবে ছোট, আর তাই প্রশান্ত মহাসাগর থেকে জলবায়ু শরণার্থীদের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া দায়িত্বের আরও উল্লেখযোগ্য অংশ নেবে বলে আশা করা হবে।

অন্য অনেক দেশের জলবায়ু প্ররোচিত জনসংখ্যার স্থানচ্যুতির অনেক বেশি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা রয়েছে। ভারত একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ইউনাইটেড নেশনস হাইকমিশন ফর রিফিউজিস (ইউএনএইচসিআর) অনুসারে, ২০২১ সালে জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পাঁচ মিলিয়ন ভারতীয় বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।[২৬] ভারত নিজেই যে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে পড়ে তা নিয়ে ব্যাপক ঐকমত্য আছে। এ দেশে জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ এমন অঞ্চলে বসবাস করেন যেগুলি সম্ভাব্যভাবে চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলির সংস্পর্শে আসে।[২৭] ভারত কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কেও অনেক কিছু শিখেছে। এই সবের কারণে ভারতের প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে একটি তথ্যসমৃদ্ধ ও সহানুভূতিশীল অংশীদারির জন্য তৈরি হওয়া উচিত। এই অঞ্চলের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের অংশীদারি বিবেচনার মধ্যে ভারত তার দীর্ঘ উপকূলরেখা বরাবর এবং তার নিজস্ব ১,৩০০টি ছোট দ্বীপ জুড়ে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব মোকাবিলায় নিজস্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারে।

বেশ কয়েকটি প্রধান গণতান্ত্রিক দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রশান্ত মহাসাগরকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত করার আগ্রহের ইঙ্গিত দিয়েছে। জাপান, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রভাবের জন্য নীতিগত উদ্যোগ ঘোষণা করেছে। ফ্রান্স হল একটি উল্লেখযোগ্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় শক্তি যার এই অঞ্চলে তিনটি ভূখণ্ড এবং একটি উল্লেখযোগ্য সহায়তা কর্মসূচি ও সামরিক উপস্থিতি আছে।[২৮] এই দেশগুলির প্রত্যেকেরই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে এই অঞ্চলের নিজস্ব উদীয়মান ‘‌পলিক্রাইসিস’‌ প্রশমিত করতে সাহায্য করার জন্য, যা একটি তীব্র জলবায়ু বিপদ, ক্ষতিকারক অতিমারির অবশিষ্ট প্রভাব, এবং একটি সম্প্রসারণবাদী চিনা জমানার সম্ভাব্য ক্ষতিকারক প্রভাবগুলিকে একত্র করে। ভারত তার চিত্তাকর্ষক উন্নয়ন আখ্যান, প্রধান শক্তির মর্যাদা, এবং এই অঞ্চলের সঙ্গে সাংস্কৃতিক যোগসূত্রের কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।

গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দেশ হিসাবে পিআইসি–গুলি ভারতের নিজস্ব শংসাপত্রের প্রতি আগ্রহী হলেও উন্নয়নের গতিপথে ভারতের ভিন্ন অবস্থানের কারণে তাদের প্রত্যাশাগুলি স্বাভাবিকভাবেই অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য তার থেকে ভিন্ন হবে। এই অঞ্চলের নীতিনির্ধারকেরা ভারতের হালনাগাদ করা জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ২০৭০ সালের নেট–শূন্য লক্ষ্য এবং ২০৩০ সালের মধ্যে নির্গমনের তীব্রতা ৪৫ শতাংশ হ্রাস করা। অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে যা বলা হয়েছে তার অনুরূপভাবে কিছু মানুষ যুক্তি দেবেন যে এই লক্ষ্যগুলি যথেষ্ট নয়। তবে প্রশান্ত মহাসাগরের উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ যে ভারত স্বীকার করেছে যে তারও কাজ করার দায়িত্ব রয়েছে।

ভারত ইতিমধ্যেই কৃষি, স্বাস্থ্য, তথ্যপ্রযুক্তি ও শক্তির মতো ক্ষেত্রে পিআইসি–র জন্য কিছু উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছে। ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ প্যাসিফিকের রমেন্দ্র প্রসাদ জলবায়ু–পরিবর্তন এলাকায় এই সহযোগিতা প্রসারিত করার জন্য একটি প্রয়োজনীয় রোডম্যাপ প্রস্তাব করেছেন।[২৯] নবায়নযোগ্য শক্তি ও স্থিতিশীল উন্নয়ন কৌশল অনুসরণ করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে স্থিতিস্থাপকতা তৈরির জন্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলিকে সামগ্রিক কৌশল তৈরি করতে সহায়তা করার ক্ষেত্রে এটি ভারতের প্রযুক্তিগত ও নীতিগত উন্নয়নের অভিজ্ঞতার সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করে। প্রসাদ ভারতকে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন, স্থিতিস্থাপকতা এবং অভিযোজন সমর্থনে যুক্ত হওয়ার কথা বলেছেন। উল্লেখ্য যে চিন এই জায়গাটিতে কাজ করতে শুরু করেছে।

অভিযোজন ও স্থিতিস্থাপকতা নিয়ে যে কাজ ভারতে স্থানীয় পর্যায়ে চলছে, তা এই ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য কার্যকরী হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে কিছু শহরে ‘‌ঠান্ডা ছাদ’‌ স্থাপনের কর্মসূচি, নবায়নযোগ্য শক্তিকে আরও সহজলভ্য করার জন্য কিছু ফ্রন্ট–লাইন জনসম্প্রদায়ের কাজ, এবং রাজ্যস্তরের ‘‌তাপ কর্ম–পরিকল্পনা’‌। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উপযুক্ত আয়তনে জড়িত হওয়ার উপায়গুলি খুঁজে বার করা ভারতের জন্য অপরিহার্য, এবং সেক্ষেত্রে এই স্থানীয়, জনসম্প্রদায়–নেতৃত্বাধীন উদ্যোগগুলির সুবিধা শেয়ার করার উপর ফোকাস সম্ভবত ‘‌সার্বিক’‌ জাতীয় নীতি দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে বেশি সফল হবে।

সম্মানই সাফল্যের চাবিকাঠি

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা প্রায়শই উল্লেখ করেছেন যে ছোট দ্বীপ জনসম্প্রদায়গুলি জলবায়ু চ্যালেঞ্জের মুখে হাজার হাজার বছর ধরে[৩০] তাদের পরিবেশ ও সামাজিক ব্যবস্থাকে খাপ খাইয়ে নিয়েছে;‌ এবং এই অত্যন্ত ভঙ্গুর দ্বীপগুলিতে বসতি স্থাপন ও তা অব্যাহত রাখতে প্রকৃতির মেজাজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে কাজ করেছে। এই ‘‌প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান’‌গুলির মধ্যে ছিল উপকূলরেখা স্থিতিশীল করতে বৃক্ষ ও ম্যানগ্রোভ রোপণ, উৎপাদনশীল ভূমি ও জল ব্যবস্থা পুনরায় পূরণ করা, আগ্রাসী সমুদ্রের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক প্রতিবন্ধক হিসাবে প্রাকৃতিক বেড়া তৈরি করা, এবং কৃষি অনুশীলনকে আরও ভালভাবে সমর্থন করার জন্য ভূমি গঠন দৃঢ় করা।

বহিরাগত অংশীদারদের জন্য এগিয়ে যাওয়ার সর্বোত্তম উপায় হল সম্পৃক্ততার এমন একটি পদ্ধতি গ্রহণ করা যা অভিজ্ঞতার এই সম্পদকে সম্মান করে, এবং আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশলগত জ্ঞান কীভাবে ঐতিহ্যগত পদ্ধতির সর্বোত্তম পরিপূরক হতে পারে তা নিয়ে সতর্কভাবে চিন্তা করে। এই এলাকার চিন্তাশীল বিশেষজ্ঞরা আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় উদ্যোগীদের মধ্যে অংশীদারির উপর ভিত্তি করে একটি ‘‌সহ–উৎপাদন’‌ মডেলের পক্ষে যুক্তি দেন। এই প্রস্তাবিত পদ্ধতিটি স্বচ্ছ সামাজিক, পরিবেশগত ও প্রকৌশলগত মান প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করে; স্পষ্ট পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে; এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির বিনিয়োগ ও সমর্থনের পথ তৈরি করে৷

একটি পরিণত পদ্ধতির মধ্যে থাকবে বিদেশি উন্নয়ন সহায়তার ক্ষেত্রে এই অঞ্চলে প্রদর্শিত দীর্ঘস্থায়ী সংবেদনশীলতা থেকে শিক্ষা নেওয়া। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতোই পিআইসি–গুলিও ক্ষুব্ধ হয় যদি তারা দেখে বহিরাগত শক্তিরা নিজেদের উদ্ধারকারী হিসাবে মনে করছে, বা তারা স্থানীয় দৃষ্টিভঙ্গি খারিজ করে তাদের নিজস্ব সমাধান চাপিয়ে দিতে চাইছে।

এই দ্বীপরাষ্ট্রগুলির মধ্যে কিছু হয়তো সঙ্কুচিত হচ্ছে, কিন্তু তারা সার্বভৌম।


এন্ডনোট

[১] ইনিয়া সেরুরিরাতু (বক্তৃতা, শাংরি-লা ডায়ালগ, সিঙ্গাপুর, জুন ১২, ২০২২)। এটি ব্যাপকভাবে রিপোর্ট করা হয়েছে, যেমন পিটা লিগাইউলা, “জলবায়ু পরিবর্তন যুদ্ধের চেয়ে বড় হুমকি, ফিজি নিরাপত্তা সামিটকে বলেছে,” পিআইএন এ প্যাসিফিক নিউজ সার্ভিস, ১৩ জুন, ২০২২।

[২]  প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জ ফোরাম সচিবালয়

[৩] জেমাইমা গ্যারেট, “চিন, প্রশান্ত মহাসাগরে মিডিয়া স্বাধীনতা, এবং অস্ট্রেলিয়ার বিশাল নীরবতা,” লোই ইনস্টিটিউট ইন্টারপ্রেটার, ২০ নভেম্বর, ২০১৯।

[৪] প্যাট্রিসিয়া ও’ব্রায়েন, “দ্য ডোমেস্টিক পলিটিক্স অফ সোগাভার’‌স চায়না-সলোমনস ট্রিস্ট,” দ্য ডিপ্লোম্যাট, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২।

[৫] উদাহরণস্বরূপ, সলোমন দ্বীপপুঞ্জের বিরোধী ব্যক্তিত্ব এবং সম্প্রদায়ের নেতারা। ইমানুয়েল স্টোকস, “চিনা পুলিশ সলোমন দ্বীপপুঞ্জের বিরোধীদের দমন করতে পারে,” ফরেন পলিসি, ৯ আগস্ট, ২০২২।

[৬] সাইমন কোফে, “আমরা ডুবে যাচ্ছি,” (বক্তৃতা, কপ২৬, নভেম্বর ৮, ২০২১)। এই ভাষণটি ব্যাপক মিডিয়া কভারেজ পেয়েছে।

[৭] জন বার্নেট ও অন্যরা, “নেচার বেসড সলিউশনস ফর অ্যাটল হ্যাবিটেবিলিটি,” ফিলজফিকাল ট্র‌্যানজাকশনস অফ দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি. ৩৭৭, নং। ১৮৫৪ (জুলাই ২০২২)। লেখকেরা যা থেকে সাহায্য নিয়েছেন তা হল জলবায়ু পরিবর্তন ২০২১: ভৌতবিজ্ঞান ভিত্তি: আইপিসিসি ষষ্ঠ মূল্যায়ন রিপোর্টে ওয়ার্কিং গ্রুপের অবদান, যাতে বলা হয়েছে প্রশমন পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২৬ থেকে ১১৪ সেন্টিমিটারের মধ্যে বাড়বে বলে ধরা হচ্ছে।

[৮] নিল এল অ্যান্ড্রু ও অন্যরা, “২২টি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র ও অঞ্চলগুলিতে জনসংখ্যার উপকূলীয় নৈকট্য,” পাবলিক লাইব্রেরি অফ সায়েন্স ১৪, নং। ৯ (সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৯)।

[৯] ভলকার বোয়েজ, “ক্লাইমেট চেঞ্জ, কনফ্লিক্ট অ্যান্ড পিস ইন দ্য প্যাসিফিক: চ্যালেঞ্জস অ্যান্ড অ্যা প্যাসিফিক ওয়ে ফরওয়ার্ড,” পিস রিভিউ ৩৪, নং। ১ (মে ৬, ২০২২): ১।

[১০] ক্যাথরিন সেটো ও অন্যরা, “জলবায়ু পরিবর্তন টুনাকে পরিযায়ী করছে, যা তাদের উপর নির্ভরশীল ছোট দ্বীপগুলির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে,” দ্য কনভারসেশন, আগস্ট ২, ২০২১।

[১১] ডেলয়েট।  এশিয়া প্যাসিফিকের টার্নিং পয়েন্ট: কীভাবে জলবায়ু সক্রিয়তা আমাদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতকে চালিত করতে পারে , আগস্ট ২০২১।

[১২] ওয়েসলি মরগান, অ্যানিকা ডিন ও সাইমন ব্র্যাডশ, আ ফাইট ফর সারভাইভাল: ক্লাইমেট ক্রাইসিস ইজ কি টু সিকিউরিটি ইন ব্লু প্যাসিফিক, ক্লাইমেট চেঞ্জ সেন্টার, ৮ই জুলাই, ২০২২।

[১৩] ” ভানুয়াটু, বিভিন্ন দেশের গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে, জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে রাষ্ট্রগুলির আন্তর্জাতিক আইনগত দায়িত্বগুলি স্পষ্ট করার জন্য বিশ্বের সর্বোচ্চ আদালতকে আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে প্রস্তাব জমা দিয়েছে,” সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ল, ৩০ নভেম্বর, ২০২২।

[১৪] “ভানুয়াটু, একটি বৈচিত্র্যময় গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় রাষ্ট্রগুলির আন্তর্জাতিক আইনগত দায়িত্বগুলি স্পষ্ট করার জন্য বিশ্বের সর্বোচ্চ আদালতকে আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে প্রস্তাব জমা দিয়েছে”।

[১৫] ব্যাপকভাবে রিপোর্ট করা হয়েছে, যেমন, অ্যান্ড্রু ব্রাউন ও অ্যালেক্স মিচেল, “প্রধানমন্ত্রী: জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ,” দ্য নিউ ডেইলি, নভেম্বর ৮, ২০২২।

[১৬] ক্রিস ব্যারি, “জলবায়ু পরিবর্তন অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি ‘সরাসরি বিপদ’ তৈরি করেছে। এটি অবশ্যই একটি রাজনৈতিক অগ্রাধিকার হতে হবে,” দ্য কনভারসেশন, অক্টোবর ৮, ২০১৯।

[১৭] ইলাইশা স্টোকস, “সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের আগের খরাটি সম্ভবত ৯০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ছিল,” ভাইস ব্লগ, মার্চ ৪, ২০১৬।

[১৮] কেট হিগিন্স, “ফিজিতে শান্তি স্থাপন ও জলবায়ু পরিবর্তন  ,” কনসিলিয়েশন রিসোর্সেস।

[১৯] বোয়েজ, “জলবায়ু পরিবর্তন, প্রশান্ত মহাসাগরে দ্বন্দ্ব ও শান্তি: চ্যালেঞ্জ এবং একটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় পথ ধরে এগিয়ে”

[২০] বোয়েজ, “জলবায়ু পরিবর্তন, প্রশান্ত মহাসাগরে দ্বন্দ্ব ও শান্তি: চ্যালেঞ্জ এবং একটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় পথ ধরে এগিয়ে”

[২১] বোয়েজ, “জলবায়ু পরিবর্তন, প্রশান্ত মহাসাগরে দ্বন্দ্ব ও শান্তি: চ্যালেঞ্জ এবং একটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় পথ ধরে এগিয়ে”

[২২] ইয়ান কেমিশ, ওআরএফ রাইসিনা ডিবেটস, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, ডিসেম্বর ১৯, ২০২২-এ “গ্রেট পাওয়ারস অ্যান্ড স্মল আইল্যান্ডস:‌ দ্য ডেমোক্র‌্যাটিক পাওয়ারস নিড টু ‘‌লিন ইন’‌”।

[২৩] উদাহরণস্বরূপ, ভানুয়াটুর বিদেশমন্ত্রীর মন্তব্য, অ্যাডাম মর্টন যেভাবে রিপোর্ট করেন, “অস্ট্রেলিয়াকে নতুন জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকি বন্ধ করতে বলা হয়েছে যদি দেশটি জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজনে প্রশান্ত মহাসাগরীয় সহায়তা চায়,” দ্য গার্ডিয়ান, নভেম্বর ১৭, ২০২২।

[২৪] মেলিসা ক্লার্ক, “জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের ক্ষমতাকে প্রসারিত করতে পারে, প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানের বক্তৃতা সতর্ক করে,” এবিসি নিউজ, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯।

[২৫] “জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগের কারণে স্থানচ্যুতি,” ইউএনএইচসিআর।

[২৬] “বৈশ্বিক প্রবণতা: ২০২১–এ বাধ্য হয়ে স্থানত্যাগ,” ইউএনএইচসিআর, জুন ২০২২।

[২৭] অ্যান্থনি লেইসরোউইটজ ও অন্যরা, ভারতীয় মননে জলবায়ু পরিবর্তন, ২০২২, ইয়েল প্রোগ্রাম অন ক্লাইমেট চেঞ্জ কমিউনিকেশন, ১৯ অক্টোবর, ২০২২।

[২৮] প্রশান্ত মহাসাগরে ফ্রান্সের অব্যাহত গুরুত্বের একটি প্রয়োজনীয় সংক্ষিপ্তসারের জন্য, গাই সি চার্লটন ও জিয়াং গাও দেখুন, “কেন প্রশান্ত মহাসাগরের জন্য ফ্রান্স-মার্কিন সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ,” দ্য ডিপ্লোম্যাট, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২।

[২৯] রমেন্দ্র প্রসাদ, “আ রোডম্যাপ ফর ইন্ডিয়া’‌জ ক্লাইমেট কোঅপারেশন উইথ প্যাসিফিক স্মল আইল্যান্ড ডেভলপিং স্টেটস,” ওআরএফ ইস্যু ব্রিফ নং ৫৫৯, জুলাই ২০২২।

[৩০] বার্নেট ও অন্যেরা, “নেচার বেসড সলিউশনস ফর অ্যাটল হ্যাবিটেবিলিটি”।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.