Published on Aug 02, 2023 Updated 0 Hours ago

এডটেক–কে নিশ্চিত করতে হবে যে শিক্ষার ভবিষ্যৎ যেন ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নিরাপদ হয়, এবং অতি–নিয়ন্ত্রণের জন্য যেন উদ্ভাবন বাধাগ্রস্ত না হয়

দায়িত্বশীল এডটেক নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা

অতিমারি বিশ্বজুড়ে সামাজিক যোগাযোগগুলির প্রকৃতিতে আমূল পরিবর্তন এনেছে।  যেহেতু লকডাউনের ‌সময় মানুষ তাঁদের বাড়িতে আটকা পড়েছিলেন, তাই বিভিন্ন বিকল্প ব্যবস্থা অবলম্বন করে দ্রুত স্বাভাবিকতা আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। যোগাযোগ ও কাজ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য ও বাণিজ্য পর্যন্ত প্রেক্ষাপট জুড়ে এই ঘটনা দেখা গিয়েছিল। ডিজিটাল প্রযুক্তি এই পরিবর্তনে, বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

অতিমারিটি কর্মী ব্যবস্থাপনা থেকে শিক্ষাদান প্রক্রিয়া ও মূল্যায়ন পর্যন্ত শিক্ষাগত ক্ষেত্রের সমস্ত দিকগুলিতে ডিজিটাল সরঞ্জামগুলির একীকরণকে ত্বরান্বিত করেছে। প্রকৃতপক্ষে, এর সুবিধা বহুগুণ। প্রবক্তারা দাবি করেন যে শিক্ষাদানকে আরও স্বচ্ছ করতে, এবং অগমেন্টেড/ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (এ/ভিআর)–র মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণমূলক শিক্ষায় সম্পৃক্ত করে শেখার অভিজ্ঞতা বাড়াতে, এডটেক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তা ছাড়া এই জাতীয় সমাধানগুলি সমস্ত বয়স ও লিঙ্গের জন্য শিক্ষার সুযোগ উন্মুক্ত করে শিক্ষাকে গণতান্ত্রিক করতে সাহায্য করতে পারে, এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে ইচ্ছুকদের জন্য প্রবেশের প্রাতিষ্ঠানিক বাধাগুলি দূর করে একটি সক্ষম ও চটপটে কর্মী বাহিনী তৈরি করতে পারে৷ এগুলি সামগ্রিকভাবে বৈষম্য কমাতে এবং বৃহত্তর সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আসতে সাহায্য করতে পারে।

তবে, এডটেকের ঝুঁকির আলোকে এই দাবিগুলি খতিয়ে দেখা গুরুত্বপূর্ণ। পাণ্ডিত্যপূর্ণ লেখায় ‘‌এডটেক সলিউশনিজম’‌–এর এই আখ্যানটিকে বরং হ্রাসবাদী বা রিডাকশনিস্ট হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হচ্ছে প্রযুক্তিগত হস্তক্ষেপ ও ভাল শিক্ষার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের সরলীকরণ করা হচ্ছে। এভাবে শেখানো ও শেখার প্রক্রিয়ার জটিলতাগুলিকে নামিয়ে আনা হচ্ছে নিছক বিষয়বস্তু উৎপাদনের স্তরে, এবং একটি কর্মসম্পাদনমূলক শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। বর্তমান এডটেক সমাধানগুলি শিক্ষাবিজ্ঞানের বহুরৈখিক চরিত্রকে প্রতিফলিত করে না। বরং এর বল্গাহীন বৃদ্ধি ‘‌মেশিন আচরণবাদ’‌ (‌মেশিন বিহেভিয়ারিজম)‌–এর সংস্কৃতির দিকে পরিচালিত করতে পারে, যেখানে শিক্ষা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও চরম আচরণগত অনুশীলন দ্বারা পরিচালিত হয় যা ছাত্রদের শিক্ষার উদ্দেশ্য সংকীর্ণ করতে পারে। উপরন্তু, এডটেক–এর কার্যকারিতা সম্পর্কে খুব কম প্রমাণ আছে, এবং দায়িত্বশীল নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই একটি বাজারচালিত পদ্ধতি ডিজিটাল বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, যার সুবিধা পাবেন শুধু ইতিমধ্যেই সম্পন্ন মানুষেরা।

এডটেক নিয়ে আলোচনাটি প্রধানত কেন্দ্রবিন্দুতে রাখে উদ্ভাবন অর্থনীতিকে অনুঘটক হিসাবে কাজ করার সম্ভাবনাকে। এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হলেও ‘‌শিক্ষায় যা কিছু ভাঙা পড়েছে  ’‌ তা সব এডটেক ঠিক করে দেবে বলে গৌরবান্বিত করার প্রয়াসটি কিন্তু মানব সমাজ, স্বায়ত্তশাসন, গোপনীয়তা ও মানবকল্যাণের উপর এর অন্তর্নিহিত প্রযুক্তিগুলির সৃষ্ট ঝুঁকিগুলি থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেয়। অন্যান্য ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মের মতোই এডটেক প্ল্যাটফর্মগুলি ডেটা সংগ্রহ করে, এবং একজন শিক্ষার্থীর অভিজ্ঞতাকে ব্যক্তিগতকৃত করতে অ্যালগরিদম তৈরি করে। এদিকে এডটেক নির্দিষ্ট ডেটার সংগ্রহ ও ব্যবহার সংক্রান্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা বর্তমান প্রবিধানগুলিতে অনেকাংশে অনুপস্থিত। এর ফলে এই ধরনের অনুশীলন গ্রাহকের ক্লিনিক্যাল প্রোফাইলিং করার পাশাপাশি তাঁদের ক্রমাগত পরিবর্তনশীল ধাক্কা (‌হাইপার–নাজ)‌ দেওয়া এবং চাতুর্যের সঙ্গে প্রভাবিত করার সম্ভাবনাকে প্ররোচিত করে। কিছু এডটেক পণ্য মেজাজ ও মানসিক চাপের মাত্রা নিরীক্ষণ ও অনুমান করার জন্য বায়োমেট্রিক ডেটা (যেমন হার্টবিট ও রেটিনার মুভমেন্ট) সংগ্রহ করেছে বলে প্রকাশিত রিপোর্টগুলি একটি  বৃহত্তর শিক্ষার্থী নজরদারি সংস্কৃতির লক্ষণ, যা প্রতিহত না–করা হলে সমস্যাযুক্ত প্রভাব ফেলতে পারে।

এআই ও মেটাভার্স জনপ্রিয় হতে থাকায় ইন্টারনেট যেহেতু একটি মূলগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাই নীতিনির্ধারক ও প্রযুক্তিবিদদের অবশ্যই গভীর অনিশ্চয়তার পরিস্থিতিতে এডটেক গভর্নেন্সের ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করতে হবে।

যেহেতু শিশু ও কিশোর–কিশোরীরা এই জাতীয় অ্যাপ্লিকেশনগুলির প্রাথমিক সুবিধাভোগী, তাই নাবালক ও যুব সুরক্ষার সাধারণ ব্যবস্থার অভাব (পণ্যক্ষেত্রে এবং নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে) তাদের ক্ষতির ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। ব্রিটেনের শিশু অধিকার সংস্থা ফাইভরাইটস ফাউন্ডেশন   এডটেক প্ল্যাটফর্মের ঝুঁকির তিনটি বিস্তৃত শ্রেণি  শনাক্ত করে: বিষয়বস্তুর ঝুঁকি (‌অর্থাৎ অসঙ্গত বিষয়বস্তুর সামনে পড়া)‌, যোগাযোগের ঝুঁকি (অসামাজিক ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি)‌, এবং চুক্তির ঝুঁকি (‌ব্যাপক হারে ডেটা সংগ্রহ সংক্রান্ত উদ্বেগ)‌। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের এক–তৃতীয়াংশ শিশু হওয়া সত্ত্বেও বেশিরভাগ এডটেক সমাধানে অপ্রাপ্তবয়স্ক–কেন্দ্রিক নকশার অভাব আজ ডিজিটাল শিক্ষার ভবিষ্যতের একটি উদ্বেগজনক চিত্র তৈরি করছে।

তাছাড়া, সরকারগুলি যেহেতু এডটেক ব্যবহার অব্যাহত রাখে, তাই তাদের বৃহৎ আকারের সংগ্রহ, বিক্রেতাদের ন্যূনতম প্রয়োজন, এবং যথাযথ তদারকি প্রক্রিয়াগুলিকে নীতি পরিকল্পনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। এই ধরনের ব্যবস্থা এডটেক বাজারটিকে প্রতিযোগিতামূলক করে তোলার উপর দীর্ঘমেয়া্দি প্রভাব ফেলবে, এবং ভার্চুয়াল একচেটিয়া বাজার সৃষ্টিকে রোধ করবে। অবশেষে, এআই ও মেটাভার্স জনপ্রিয় হতে থাকায় ইন্টারনেট যেহেতু একটি মূলগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাই নীতিনির্ধারক ও প্রযুক্তিবিদদের অবশ্যই গভীর অনিশ্চয়তার পরিস্থিতিতে এডটেক গভর্নেন্সের ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করতে হবে।

আগামী দিনের পথ
প্রযুক্তির উৎপাদক প্রকৃতি, যা আজকে পাওয়ার এডটেক–কে শক্তি জোগাচ্ছে, তা নির্দেশ করে যে ইতিবাচক উদ্ভাবনের পাশাপাশি ঝুঁকিগুলিও প্রসারিত হতে থাকবে। আবার ক্ষতি কমানোর অভিপ্রায়ে নানা রকম বাধা স্থাপন করা হলে তা তাদের সম্ভাব্য ক্ষমতাকে কাজে লাগানোর সম্ভাবনাকে বাধা দেবে। সমান্তরালভাবে, আমরা শুধু ক্ষতি–পরবর্তী ব্যবস্থাদির উপর নির্ভর করতে পারি না, কারণ তা শুধু ইতিমধ্যেই যা সব ক্ষতি হয়েছে তা মেরামত করে পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে আনতে চায়। এই সময়ের প্রয়োজন হল আরও ভাল ফল পাওয়ার জন্য পুনরাবৃত্তিমূলক ও সহযোগিতামূলক পথ তৈরি করা, যা এই উদ্দেশ্যগুলির উপলব্ধিতে সহায়তা করে। তাই আমাদের অবশ্যই দায়িত্বের সঙ্গে এডটেক উদ্ভাবনের চেষ্টা করতে হবে।

আরও প্রমাণ তৈরি করা এবং এডটেক গভর্ন্যান্সে এই ধরনের কাঠামোকে একীভূত করার জরুরি প্রয়োজন আছে, যাতে শিক্ষার ভবিষ্যৎ ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নিরাপদ হয়, এবং অতি–নিয়ন্ত্রণের জন্য যেন উদ্ভাবন বাধাগ্রস্ত না হয়।

এ কথা বলার অর্থ এই নয় যে পদক্ষেপ করা হয়নি। ইন্সটিটিউট অফ ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইইই)–এর বয়সোপযোগী ডিজাইন ও ডেটা গভর্নেন্স ফ্রেমওয়ার্ক, ব্রিটেনের বয়সোপযোগী ডিজাইন কোড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিলড্রেন অনলাইন প্রাইভেসি প্রোটেকশন অ্যাক্ট, এবং অস্ট্রেলিয়ান ই–সেফটি কমিশনার’‌স সেফটি–বাই–ডিজাইন প্রিন্সিপ্যালস–এর তৈরি করা মান এই বিষয়ে প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন উদাহরণ। সকলের কাছে পৌঁছনোর মতো মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য একটি স্ব–নিয়ন্ত্রক আচরণবিধি বিকাশে ইন্ডিয়ান এডটেক কনসোর্টিয়াম–এর প্রচেষ্টা এই ক্ষেত্রটির জন্য প্রয়োজনীয় একটি অভিনব শাসন পদ্ধতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। অধিকন্তু, এআই ও ডিজিটাল পরিষেবাগুলিতে ইইউ–এর বৃহত্তর ঝুঁকিভিত্তিক কাঠামোও এই বিকাশশীল নিয়ামক উদ্যোগকে রূপ দিতে সহায়তা করে।

তবে সমন্বিত পদক্ষেপের সুযোগ রয়েছে। দায়িত্বশীল উদ্ভাবনচালিত পন্থাগুলি উদ্দেশ্যসাধনের উপযুক্ত কাঠামো তৈরি করতে উৎসুক নীতিনির্ধারক ও প্রযুক্তিবিদদের জন্য পথপ্রদর্শক হিসাবে কাজ করতে পারে। নীচে দেওয়া চারটি মাত্রা বিবেচনা করে: অনুমান, রিফ্লেক্সিভিটি, অন্তর্ভুক্তি ও প্রতিক্রিয়াশীলতা‌। এডটেক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হলে এটি নিরাপদ ডিজিটাল শিক্ষার সক্ষম পথ তৈরি করতে পারে।

প্রকৃতপক্ষে, এটি নীতির গতিপথ নির্ধারণের প্রশ্নে নি‌য়ামকদের জন্য একটি টেমপ্লেট হিসাবে কাজ করে, এবং একটি দেশের প্রেক্ষাপটে সতর্কতার সঙ্গে বিশ্লেষণের পরে এটি গ্রহণ করা উচিত। তবে, আরও প্রমাণ তৈরি করা এবং এডটেক গভর্ন্যান্সে এই ধরনের কাঠামোকে একীভূত করার জরুরি প্রয়োজন আছে, যাতে শিক্ষার ভবিষ্যৎ  ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নিরাপদ হয়, এবং অতি–নিয়ন্ত্রণের জন্য যেন উদ্ভাবন বাধাগ্রস্ত না হয়।


সিদ্ধান্ত চ্যাটার্জি একজন পলিসি কনসালটেন্ট।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.