Author : Navdeep Suri

Published on Jun 12, 2024 Updated 0 Hours ago

কৌশলগত স্বার্থের সম্মিলন এবং নিয়মিত সম্পৃক্ততা ভারতের জন্য সবচেয়ে গতিশীল ফলপ্রসূ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অন্যতম হয়ে উঠেছে।

পুরনো ধাঁচের বিশ্বাস ও বিশ্বাসযোগ্যতা ভারত-সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সম্পর্ককে আকার দিয়েছে

এটি এমন একটি বন্ধন, যেখানে আস্থা বিশ্বাসযোগ্যতা কূটনৈতিক পারস্পরিক আদান-প্রদান এবং নিয়মাবলিকে ছাপিয়ে যায় এবং যেখানে ভারতের সবচেয়ে গতিশীল ফলপ্রসূ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপনের জন্য নিয়মিত সম্পৃক্ততা কৌশলগত স্বার্থের সংমেলকে সশক্ত করেছে।

মাত্র আট মাসের মধ্যে তৃতীয় বারের জন্য নরেন্দ্র মোদীর সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সফরের সময় এই আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতাই প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি ২০২৩ সালের জুলাই মাসে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে একটি দ্বিপাক্ষিক সফর করেছিলেন এবং তার পরে সেই বছরের নভেম্বর মাসে কপ২৮-এর সফরেও যান, যেখানে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার জন্য সফরকারী বিশিষ্ট ব্যক্তির সম্মান প্রদান করা হয় তাঁকে। ভারতের বিশেষ আমন্ত্রিতদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে শেখ মোহাম্মদ সেপ্টেম্বর মাসে জি২০ সম্মেলনের জন্য নয়াদিল্লি সফরে আসেন। এর পরে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধান অতিথি হিসাবে ভাইব্র্যান্ট গুজরা গ্লোবাল সামিটে অংশ নিতে এসেছিলেন।

 

সারবত্তামূলক সফর

এই সফরের সময়টি এক অর্থে অনন্য কারণ এই সফরেই আবু ধাবিতে বিশাল হিন্দু মন্দিরের উদ্বোধনের জন্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী মোদীর উপস্থিতি এ কথাও মনে করিয়ে দেয় যে, ২০১৫ সালের অগস্ট মাসে তাঁর প্রথম সফরের সময় তিনি সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বৃহৎ হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক চাহিদার কথা মাথায় রেখে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য দেশটির নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করেছিলেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি হিন্দু মন্দিরের উদ্বোধন যে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ৩.৫ মিলিয়ন ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আবু ধাবির জায়েদ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়ামে আহলান (স্বাগত) মোদী নামে একটি বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়।

 

এই সফরের সময়টি এক অর্থে অনন্য কারণ এই সফরেই আবু ধাবিতে বিশাল হিন্দু মন্দিরের উদ্বোধনের জন্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল।

 

মন্দিরের উদ্বোধন এবং আহলান মোদীর দর্শন নিঃসন্দেহে খবরের শিরোনামে উঠে এলেও তা এই সফরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষিত থেকে নজর সরিয়ে দেয় না। এর মধ্যে রয়েছে দুবাইয়ে ১১তম ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে সম্মানিত অতিথি হিসাবে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভাষণ।

প্রায়ডাভোসের দুবাই সংস্করণ বলে পরিচিত এই সম্মেলনটি এমন এক প্রধান বার্ষিক সমাবেশ, যা সারা বিশ্ব থেকে সরকারি নেতা, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান, শিল্পপতি এবং চিন্তাশীল নেতাদের আকৃষ্ট করে। এই বছরের শীর্ষ সম্মেলনের মূল ভাবনা ছিল ভবিষ্যৎ প্রশাসনকে আকার দেওয়া’ এবং এটি প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক দর্শকদের সামনে ভারতকে নিজস্ব মতামত তুলে ধরার একটি মঞ্চ প্রদান করেছিল।

 

অর্থনৈতিক সম্পর্ক সশক্ত করা

মোদী বহুল প্রত্যাশিত ভারত মার্টেরও সূচনা করেন, যা দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড এবং ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের তরফে গৃহীত একটি উদ্যোগ। এর লক্ষ্য হল ভারতীয় স্বল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের রফতানি বৃদ্ধির জন্য দুবাইয়ের জেবেল আলী ফ্রি জোন এরিয়ায় তাদের খুচরো বিক্রি, গুদামজাতকরণ এবং পণ্য সরবরাহের সুযোগ প্রদান রা। ভারতীয় যন্ত্রপাতি, বৈদ্যুতিক ও বৈদ্যুতিন পণ্য, স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রাংশ, চিকিৎসা  সরঞ্জাম, আসবাবপত্র, পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ওষুধ, প্রসাধনী ও হস্তশিল্প প্রস্তুতকারকদের অনুমতি দেওয়ার জন্য ডিপি ওয়ার্ল্ড আগামী ২৪ মাসে প্রায় ৮০০টি শোরুম এবং ১৮টি গুদাম তৈরি করবে। এর লক্ষ্য হল পণ্যগুলিকে জনসমক্ষে তুলে ধরা এবং ইরান, মধ্য এশিয়া, আফ্রিকা মধ্যপ্রাচ্যের ক্রেতা এবং বাজারে প্রবেশাধিকার সুনিশ্চিত করা।

 

সিইপিএ এবং ভারত মার্টের অনন্য জোটের ভারতে উৎপাদিত পণ্য রফতানি করার জন্য এক শক্তিশালী অনুপ্রেরণা প্রদান করার সম্ভাবনা রয়েছে। এর পাশাপাশি লেনদেনের খরচ কমানোর জন্য জাতীয় মুদ্রায় ব্যবসা শুরু করার প্রাথমিক পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কথাও বলা হয়েছে।

 

ভারত মার্ট প্রকল্পটি উচ্চাভিলাষী ভারত-ইউএই ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তির (সিইপিএ) পরপরই প্রকাশ্যে আসে। চুক্তিটি ২০২৩ সালে তার প্রথম বর্ষ পূরণ করেছে এবং ইতিমধ্যেই ১৬% বৃদ্ধি ঘটিয়ে ইউএই-এর সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যকে ৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছে। এমনটা করার মাধ্যমে তা ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি গন্তব্য হিসাবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে।

সিইপিএ এবং ভারত মার্টের অনন্য জোটের ভারতে উৎপাদিত পণ্য রফতানি করার জন্য এক শক্তিশালী অনুপ্রেরণা প্রদান করার সম্ভাবনা রয়েছে। এর পাশাপাশি লেনদেনের খরচ কমানোর জন্য জাতীয় মুদ্রায় ব্যবসা শুরু করার প্রাথমিক পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কথাও বলা হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকটি ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।

এ ছাড়াও একগুচ্ছ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে, যার কৃতিত্ব দুই পক্ষই দাবি করতে পারে। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অ টেকনোলজি দিল্লি আবু ধাবিতে তার অন্তর্বর্তী ক্যাম্পাসে জ্বালানি রূপান্তর ও স্থিতিশীলতার বিষয়ে স্নাতকোত্তর কর্মসূচি শুরু করেছে। ইউএই থেকে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ এটিকে ২০২২-২৩ সালে ভারতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের চতুর্থ সর্বোচ্চ উত্স করে তুলেছে। আবুধাবি ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি (এডিআইএ) দ্রুতই গুজরাতের গিফট সিটিতে একটি কার্যালয় চালু করবে। ২০২৬-৩৯ সালের মধ্যে আবু ধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি থেকে প্রতি বছর ১.২ মিলিয়ন মেট্রিক টন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস কেনার জন্য ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেডের সঙ্গে একটি ১৪ বছর ব্যাপী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এটি ভারতের শক্তি নিরাপত্তাকে সশক্ত করবে। এর পাশাপাশি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংক্রান্ত একাধিক সংবেদনশীল ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে।

 

ইউএই থেকে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ এটিকে ২০২২-২৩ সালে ভারতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের চতুর্থ সর্বোচ্চ উত্স করে তুলেছে।

 

আঞ্চলিক সমস্যা

মোদী এবং শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদের মধ্যে আলোচনা গাজায় বিদ্যমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই অঞ্চলের অবনতিশীল পরিস্থিতি, লোহিত সাগরে জাহাজের উপর হুতিদের আক্রমণ এবং স্পষ্ট বর্তমান বিপদের প্রেক্ষিতে পর্যালোচনা করার সুযোগ করে দিয়েছে। দীর্ঘ রফতানি সময়, উচ্চ মালবাহী খরচ এবং তেলের দামের সম্ভাব্য বৃদ্ধি ভারতের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে এটি গুরুত্বপূর্ণ যে, সরকার সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে সমন্বয় সাধন করে। এর পাশাপাশি সৌদি আরব ও মিশরের মতো দেশগুলিতে যাতে ভারতের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে, সরকার সে কথাও সুনিশ্চিত করছে।


এই ভাষ্যটি প্রথম দ্য হিন্দু  প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.