Author : Apoorva Lalwani

Published on Aug 08, 2022 Updated 0 Hours ago

একটি ন্যায্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বৈশ্বিক ডিজিটাল অর্থনীতি তৈরি করতে আন্তর্জাতিক কর ব্যবস্থার সংস্কার করা গুরুত্বপূর্ণ যা উন্নয়নশীল দেশগুলির অর্থনীতির উন্নয়নের উপরেই জোর দেয়।

ও ই সি ডি-র বৈশ্বিক কর চুক্তি: ভারতের উপর এর প্রভাব এবং সামনের পথ

ক্রমপ্রসারিত ডিজিটাল অর্থনীতির নিরিখে কর্পোরেশনগুলি কী ভাবে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে, তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বহু গুণে বিকশিত হয়েছে। বর্তমানে উত্পাদনের প্রাথমিক উপাদানটি প্রকৃত কারখানার পরিবর্তে ডেটা আকারে ক্লাউডে জমা হয়। ব্যবসার ক্রমপরিবর্তনশীল প্রকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে, আন্তর্জাতিক কর ব্যবস্থা তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। এবং এর সুযোগ নিয়ে বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৃহৎ প্রযুক্তি সংস্থাগুলি কর ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়েছে। একে ‘বেস ইরোসন অ্যান্ড প্রফিট শিফটিং’ও (বি ই পি এস) বলা হয়। ফেয়ার ট্যাক্স মার্কের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১০  থেকে ২০১৯-এর মধ্যে সমস্ত অফশোর পরিকাঠামো-সহ ডিজিটাল পরিসরে বহুজাতিক সংস্থাগুলি তাদের প্রকৃত প্রদেয় করের তুলনায় ১৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কম কর দিয়েছে। সর্বোপরি মার্কিন ডিজিটাল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলি অন্যান্য দেশের তুলনায় আমেরিকাকে প্রায় চার গুণ বেশি কর প্রদান করে, যে ক্ষেত্রে তাদের উল্লেখযোগ্য আয়ের অংশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য দেশগুলি থেকে সংগৃহীত হয়। এই কারণেই দেশগুলি ডিজিটাল পরিষেবা কর (ডি এস টি) আরোপ করেছে যাতে ডিজিটাল সংস্থাগুলি সেই সব দেশে ন্যায্য পরিমাণ কর দিতে বাধ্য হয়, যারা তাদের মুনাফার মুখ দেখিয়েছে। যদিও এই বিষয়ে কোনও বৈশ্বিক ঐকমত্য ছিল না, তাই দেশগুলি নির্বিচারে তাদের করের হার নির্ধারণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ কেনিয়ার ১.৫ শতাংশ কর জারি করা এবং ইউরোপের অন্য দেশগুলির ৫শতাংশ পর্যন্ত ডি এস টি আরোপ করার কথা তুলে ধরা যায়। একই ভাবে ভারত সরকার ভারতে ২ কোটি টাকার বেশি বার্ষিক লেনদেন-সহ অনাবাসী ডিজিটাল পরিষেবা প্রদানকারীদের দ্বারা উত্পন্ন রাজস্বের উপর ২ শতাংশ লেভি আরোপ করেছে, শুল্কের সামঞ্জস্য  বিধানের সম্ভাবনাকে প্রসারিত করেছে, যা ২০২০ সাল পর্যন্ত শুধু মাত্র ডিজিটাল বিজ্ঞাপন পরিষেবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ছিল। কেন্দ্রীয় বাজেটে প্রবর্তিত নতুন আইনটি ২০২১ সালের ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে।

সর্বোপরি মার্কিন ডিজিটাল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলি অন্যান্য দেশের তুলনায় আমেরিকাকে প্রায় চার গুণ বেশি কর প্রদান করে, যে ক্ষেত্রে তাদের উল্লেখযোগ্য আয়ের অংশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য দেশগুলি থেকে সংগৃহীত হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া

ডি এস টি-র বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিক্রিয়া স্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারত-সহ একাধিক দেশের বেশ কিছু পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রতিক্রিয়ামূলক শুল্ক জারি করেছে। দি ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউ এস টি আর) ভারতের এই আইন সম্পর্কে একটি তদন্তমূলক প্রতিবেদনে বলেছে, এটি একাধিক ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক। প্রথমত, আইনটিতে অ-ভারতীয় সংস্থাগুলির উপরে দ্বিগুণ করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হলেও ভারতীয় সংস্থাগুলিকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। বিতর্কের দ্বিতীয় বিষয়টি হল, ভারতে প্রত্যক্ষ উপস্থিতি না থাকা সত্ত্বেও সংস্থাগুলির উপরে ডি এস টি-র নির্ধারিত কর আন্তর্জাতিক কর রীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়। সর্বোপরি, ইউ এস টি আর-এর মতে, ১১৯টি সংস্থা সম্ভবত ডি এস টি-র আওতায় দায়বদ্ধ, যার মধ্যে ৮৬টি (৭২ শতাংশ) মার্কিন সংস্থার উপস্থিতি ডি এস টি-কে মৌলিক ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী করে তোলে। যদিও এই সব যুক্তি ডি এস টি প্রবর্তনের যৌক্তিকতাকে উপেক্ষা করে। ডি এস টি-র লক্ষ্য হল এটি সুনিশ্চিত করা যে অনাবাসী ডিজিটাল পরিষেবা প্রদানকারীরা ভারতীয় ডিজিটাল বাজার থেকে উদ্ভূত মুনাফার নিরিখে যেন ন্যায্য কর প্রদান করে। অতিমারি চলাকালীন কর প্রদানের ব্যাপারটি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে যখন বৃহৎ প্রযুক্তি সংস্থাগুলি ফুলে ফেঁপে ওঠে এবং ভারতের মতো বড় বাজারে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা বৃদ্ধি করে। বিদ্যমান সঙ্কটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারার নিরিখে উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য এই কর অত্যন্ত অপরিহার্য।

ডিজিটাল করকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী বিতর্কের সমাধানে অর্গানাইজেশন ফর ইকনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ও ই সি ডি) সারা বিশ্বে ডিজিটাল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলির সমানুপাতে কর প্রদানের একটি মডেল তৈরি করতে উদ্যত হয়েছে। কর প্রক্রিয়াটি দু’টি স্তম্ভের মাধ্যমে ডিজিটাল কর প্রদান সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। স্তম্ভ ১-এ বলা হয়, ২০ বিলিয়ন ইউরোর বেশি পরিমাণ আন্তর্জাতিক বিক্রয় এবং ১০ শতাংশ মুনাফা-সহ বহুজাতিক সংস্থাগুলিকে যেখানে তারা ব্যবসা করছে সেখানেই কর প্রদান করতে হবে, সে তাদের দেশীয় বাজার যেখানেই হোক না কেন। এবং দ্বিতীয় স্তম্ভটি আন্তর্জাতিক স্তরে ন্যূনতম ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদানের কথা বলে, তা সে সংস্থাটির মূল কেন্দ্র যেখানেই হোক না কেন।

ডি এস টি-র লক্ষ্য হল, এ কথা সুনিশ্চিত করা যে অনাবাসী ডিজিটাল পরিষেবা প্রদানকারীরা ভারতীয় ডিজিটাল বাজার থেকে উদ্ভূত মুনাফার নিরিখে যেন ন্যায্য কর প্রদান করে।

সামনের পথ

যদিও ভারত ১ বিলিয়ন ইউরোর মাত্রা বেঁধে দিতে চায়, যার আওতায় ৫০০০টি আন্তর্জাতিক সংস্থা পড়ছে, সেখানে এই নতুন চুক্তির মধ্যে পড়বে কেবল ডিজিটাল এম এন ই-গুলির ১০০টি শীর্ষ সংস্থা। অতিমারি-পরবর্তী  অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, কর দানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং করদানের উন্নত হারের ফলে ভারতের ডি এস টি সংগ্রহ ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪,০০০ কোটি ভারতীয় টাকায় পৌঁছেছে। আশংকার কথা, ও ই সি ডি কর চুক্তির ফলে ডিজিটাল কর সংগ্রহের পরিমাণ কমে যেতে পারে। তা সত্ত্বেও ভারত চুক্তিটি অনুমোদন করেছে। কারণ জি২০-র বিন্যাস ও ই সি ডি এবং জি২০ দেশগুলির মধ্যে সদস্যপদ অভিন্নতার দরুন এ বিষয়ে অ-ও ই সি ডি দেশগুলির মধ্যে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেছে৷ কর রাজস্ব হ্রাস এড়াতে রাষ্ট্রপুঞ্জের মডেল ট্যাক্স কনভেনশনের জন্য ভারতকে অবশ্যই জোর দিতে হবে৷ ইউ এন ট্যাক্স মডেলের অনুচ্ছেদ ১২বি এই নীতিই নির্ধারণ করে যে, আয়ের সুবিধাভোগী মালিক অন্য চুক্তিবদ্ধ রাষ্ট্রের আওতায় পড়লেও এবং কর উৎসস্থল রাজ্য অন্য হলেও, দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে কর প্রদেয় রাজ্য দ্বারা আরোপিত করের পরিমাণ মোট পরিমাণের সর্বাধিক নির্দিষ্ট শতাংশের বেশি হতে পারে না। ডিজিটালি-সক্ষম পরিষেবাগুলিতে ভারতের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন এবং কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের মতো সীমিত সংখ্যক অংশীদারের নিরিখে একটি দ্বিপাক্ষিক কর নির্ধারণ করা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। যদিও ১৫ শতাংশ ন্যূনতম করের হার নির্ধারণ করার জন্য ও ই সি ডি-র কর চুক্তিতে এ হেন কোনও নমনীয়তা দেখানো হয়নি এবং করের এই সীমা অতিক্রম করলে আলাপ-আলোচনা চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। এর পাশাপাশি রাষ্ট্রপুঞ্জের মডেলে ‘যোগ্য মুনাফা’কে করের আওতায় আনার কথা ভাবা হয়, যেখানে যে রাজ্য আয়ের উৎস সেখান থেকে পাওয়া স্বয়ংক্রিয় ডিজিটাল পরিষেবাজাত মোট বার্ষিক রাজস্বের পরিমাণের সঙ্গে সুবিধাভোগী মালিকের লাভের অনুপাত বা তার স্বয়ংক্রিয় ডিজিটাল ব্যবসার অংশের লাভের অনুপাত প্রয়োগ করার ফলে প্রাপ্ত পরিমাণের ৩০ শতাংশ কর দেওয়ার কথা। এই ধারাটি বড় বা ছোট সমস্ত প্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে করের আওতায় নিয়ে আসে। যদিও ও ই সি ডি কর চুক্তি শুধুমাত্র সেই সংস্থাগুলির উপর কর আরোপ করে, যাদের বিশ্বব্যাপী বিক্রয়ের ন্যূনতম পরিমাণ ২০ বিলিয়ন ইউরো। ফলে এটি বহু মাঝারি আকারের প্রযুক্তি কোম্পানিকে করের আওতার বাইরে রাখে।

প্রথমত ও ই সি ডি-র বৈশ্বিক কর চুক্তির পথে না হেঁটে ইউ এন মডেলটি নমনীয়তার নিরিখে বেশি ভাল ফল করে, রাজস্ব উৎপাদনের উত্স দেশকে অংশীদারদের সঙ্গে একজোটে করের হার নির্ধারণে প্রাধান্য দেয়, যার ফলে এক ন্যায্য বণ্টন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। দ্বিতীয়ত, ইউ এন মডেলে মাঝারি আকারের সংস্থাগুলিকেও করের আওতায় আনা হয়। অর্থাৎ রাষ্ট্রপুঞ্জের মডেলটি আরও বেশি করে উন্নয়নশীল দেশকেন্দ্রিক। কারণ এটি দ্বৈত কর এড়ানোর পরিবর্তে রাজস্ব উৎপাদনকারী দেশের কর নির্ধারণের অধিকারের ব্যাপারে অধিক গুরুত্ব দেয়। এটি উন্নয়নশীল দেশগুলিকে তাদের নাগরিকরা বৃহৎ আকারের প্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে যে পরিমাণ লাভ করতে সাহায্য করে তার একটি অংশ সংগ্রহ করার সুযোগ দেয়।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Apoorva Lalwani

Apoorva Lalwani

Apoorva Lalwani was an Associate Fellow with ORFs Geoeconomic Studies Programme. Her research focuses on data localisation multi-modal connectivity and WTO issues and their impact ...

Read More +