আফগান সমাজ ও জনজীবনে নারীর অংশগ্রহণ সীমিত করার ক্রমাগত প্রয়াসে তালিবান ডিসেম্বরের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক সংস্থায় নারী কর্মচারীদের কাজ করা নিষিদ্ধ করেছে। বলা হয়েছে ‘সব মহিলা কর্মচারী যাঁরা তাদের নিজ নিজ বিভাগে কাজ করছেন তাঁদের পরবর্তী নির্দেশ না–দেওয়া পর্যন্ত কাজ করা বন্ধ করতে হবে’। তালিবান দাবি করেছে এই নির্দেশের কারণ মহিলা ত্রাণকর্মীরা হিজাব না–পরে ড্রেস কোড ভঙ্গ করেছিলেন। এই ঘোষণা এসেছে আফগান নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার উপর সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার পরেপরেই। এর আগে মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল।
জীবনরক্ষাকারী সহায়তা প্রদানের উপর এর প্রভাবের বাইরে, এই নির্দেশ এক বিশাল অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে হাজার হাজার কাজের সুযোগের ক্ষতি করবে।
ফলস্বরূপ, অন্তত ছয়টি আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংস্থা আফগানিস্তানে মানবিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে, যার মধ্যে তিনটি—সেভ দ্য চিলড্রেন, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল ও কেয়ার একটি যৌথ ঘোষণায় বলেছে, ‘‘আমরা আমাদের মহিলা কর্মীদের ছাড়া আফগানিস্তানে কার্যকরভাবে শিশু, নারী ও পুরুষদের কাছে জরুরি প্রয়োজনের সময় পৌঁছতে পারছি না। মহিলারা আমাদের কার্যক্রম না–চালালে আমরা ২০২১ সালের অগাস্ট থেকে যৌথভাবে লক্ষ লক্ষ আফগানের কাছে পৌঁছতে পারতাম না। জীবনরক্ষাকারী সহায়তা প্রদানের উপর এর প্রভাবের বাইরে, এই নির্দেশ এক বিশাল অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে হাজার হাজার কাজের সুযোগের ক্ষতি করবে। যদিও আমরা এই ঘোষণার বিষয়ে স্পষ্ট করে বোঝার চেষ্টা করছি, (ইতিমধ্যে) আমরা আমাদের প্রোগ্রামগুলি স্থগিত করছি, এবং দাবি করছি যে পুরুষ ও মহিলাদের যেন সমানভাবে আফগানিস্তানে আমাদের জীবনরক্ষাকারী সহায়তার কাজ চালিয়ে যেতে দেওয়া হয়।’’ অন্য তিনটি সংস্থা, ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি, আফগান এইড , ও রাষ্ট্রপুঞ্জ (এর বিভিন্ন সংস্থা সহ) একই রকমের কিন্তু পৃথক পৃথক বিবৃতি দিয়েছে।
পূর্ববর্তী অনেক নিষেধাজ্ঞার মতোই এ ক্ষেত্রেও যুক্তি দেওয়া যেতে পারে যে তালিবানকে ব্যাখ্যার সুবিধা দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত শব্দবন্ধ ইচ্ছাকৃতভাবে অস্পষ্ট রাখা হয়েছে। দুটি মূল অস্পষ্টতা রয়েছে: প্রথমত, এই নিষেধাজ্ঞা শুধু আফগান মহিলাদের জন্য প্রযোজ্য হবে নাকি আফগানিস্তানের সমস্ত মহিলাদের জন্য (আগের অনুরূপ নিষেধাজ্ঞা শুধু আফগান মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল); দ্বিতীয়ত, তালিবানের বিভিন্ন মন্ত্রকের মধ্যেও স্পষ্টতার অভাব রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। অর্থনীতি মন্ত্রক বলেছে যে নতুন নীতি লঙ্ঘন করলে তারা যে কোনও সংস্থার কাজের পারমিট বাতিল করবে, তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রক রাষ্ট্রপুঞ্জকে বলছে মহিলারা স্বাস্থ্যসম্পর্কিত পরিষেবাগুলিতে কাজ চালিয়ে যেতে পারেন।
মানবিক সহায়তা স্থগিত করা শুধু সমস্যাটিকেই বাড়িয়ে তুলবে না, নারী সহায়তা কর্মীদের বাদ দিয়ে কাজ চালিয়ে গেলেও আফগান সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দরিদ্র থেকে যাবে।
যেহেতু আফগানিস্তান তীব্র শীতের কবলে রয়েছে এবং ২০২১ সালের অগাস্টে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সেনা প্রত্যাহার করার পর একটি মানবিক সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে, তাই নিষেধাজ্ঞা জারি এবং তার ফলস্বরূপ কাজ বন্ধ হওয়ার এর চেয়ে বেশি দুর্ভাগ্যজনক সময় আর কিছু হতে পারত না। ২০২১ সালে আফগান অর্থনীতি ২০.৭ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে, যার ফলে জনসাধারণের ব্যয়ের ক্ষমতা হ্রাস, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি এবং ব্যাপকভাবে তীব্র বঞ্চনা দেখা দিয়েছে। মানবিক সহায়তা স্থগিত করা শুধু সমস্যাটিকেই বাড়িয়ে তুলবে না, নারী সহায়তা কর্মীদের বাদ দিয়ে কাজ চালিয়ে গেলেও আফগান সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দরিদ্র থেকে যাবে। আফগানিস্তানের মতো অত্যন্ত রক্ষণশীল সমাজে প্রায়শই মহিলা ও শিশুরা শুধু অন্য মহিলাদের সঙ্গে কথা বলতে বা কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, বিশেষ করে যখন চিকিৎসার প্রশ্ন আসে। তালিবানের নিয়মগুলি পুরুষদের মহিলাদের সঙ্গে কাজ করার অনুমতি দেয় না, এবং গোঁড়া ইসলামি আইন আত্মীয় না–হলে পুরুষ ও মহিলাদের একের অপরের সঙ্গে যোগাযোগ নিষিদ্ধ করে। অনেক মহিলা সহায়তা কর্মীর জন্য এই কাজগুলি আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা যোগ করেছিল, যার মধ্যে তাদের দক্ষতা কাজে লাগানোর একটি জায়গা ছিল এবং বড় ধরনের অনিশ্চয়তার সময়ে উপার্জন করার (অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হিসাবে) সুযোগ ছিল। আফগানিস্তানের নারী ও শিশুরা সম্ভবত আফগানিস্তানে প্রথম তালিবান আমলের নীতির সবচেয়ে বড় শিকার ছিল। প্রাক–তালিবান আফগান সমাজে নারীরা সমতা ও ভোটের অধিকার ভোগ করতেন, এবং অনেকেই স্কুল শিক্ষক, সরকারি কর্মী বা ডাক্তার হিসেবে কাজ করতেন। দুর্ভাগ্যবশত, ১৯৯৫–এর মাঝামাঝি সময়ে তালিবান ক্ষমতায় আসার পর ইসলামের তালিবানি ব্যাখ্যা দিয়ে এই অধিকারগুলি কেড়ে নেওয়া হয়। মেয়েদের শুধু আট বছর বয়স পর্যন্ত স্কুলে যাওয়ার অধিকার ছিল। কোনও মহিলার স্বাস্থ্যসেবার প্রাথমিক সুযোগটুকুও ছিল না (যেহেতু ডাক্তাররা পুরুষ, কারণ মহিলাদের তো কাজ করতে দেওয়া হত না, তাই শুধু সম্পূর্ণ পোশাক পরা অবস্থায় মহিলাদের মেডিকেল পরীক্ষা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল)। ঘরের জানালায় রং করা হয়েছিল, এবং একটি পুরু শরীর ঢাকা পোষাক বাধ্যতামূলক ছিল। শুধু পুরুষ অভিভাবকদের সঙ্গে মহিলাদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। নিয়ম লঙ্ঘনের শাস্তি ছিল কঠোর: জনসমক্ষে বেত্রাঘাত, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন, এবং মৃত্যুদণ্ড।
শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা এমনকি জনজীবনে প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত আফগান নারীদের বেশ কয়েকটি প্রজন্ম আক্ষরিক অর্থে পর্দার আড়ালে বড় হয়ে উঠেছে, আর তাদের চারপাশের বিশ্ব অনেক এগিয়ে গিয়েছে। দুই তালিবান শাসনের মধ্যবর্তী সময়ে শিক্ষাগত হারে উন্নতি হয়েছিল। ইউনেস্কোর তথ্য অনুযায়ী উচ্চশিক্ষায় নারীদের উপস্থিতির হার বিশ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। সেই সময়কালেও উন্নয়নের জন্য তহবিল সীমিত ছিল, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি ছিল, এবং সরকার উন্নয়নের চেয়ে নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল — কিন্তু সব কিছুর পরেও তখনকার আফগানিস্তান এখনকার চেয়ে ভাল ছিল।
১৯৯৫–এর মাঝামাঝি সময়ে তালিবান ক্ষমতায় আসার পর ইসলামের তালিবানি ব্যাখ্যা দিয়ে এই অধিকারগুলি কেড়ে নেওয়া হয়।
আফগান নারীদের একটি সম্পূর্ণ প্রজন্ম যেমন শিক্ষাগত ও অন্যান্য সুযোগ হারিয়েছেন, তেমনি আজ তাঁদের বংশধরেরাও একই ধরনের পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালে তালিবান যখন ক্ষমতায় ফিরে আসে, তখন তারা বলেছিল যে তাদের শাসন অনেক দিক থেকেই তাদের আগের শাসনকালের তুলনায় নরম হবে। কিন্তু তারা ধীরে ধীরে এই বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে, এবং নারীদের অনেক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এবং তাঁর গোষ্ঠী সাধারণভাবে আধুনিক শিক্ষা এবং নির্দিষ্টভাবে মেয়ে ও মহিলাদের শিক্ষার বিরুদ্ধে হলেও তালিবানের বেশ কয়েকটি গোষ্ঠী একই বিষয়ে আরও মধ্যপন্থী অবস্থান নিয়েছে। যদিও বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে, তবুও নারীদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
২০২১ সালের আগস্টে কেউ কেউ বিশ্বাস করেছিলেন যে তালিবানের এই জমানা, তালিবান ২.০, ভিন্ন হবে। ১৯৯০–এর শাসনকালের চেয়ে তালিবানের আরও মধ্যপন্থী ও আরও আধুনিক হওয়ার প্রতিশ্রুতি অনেকেই বিশ্বাস করেছিলেন। ফলস্বরূপ বিশ্বের অনেক দেশ আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন বা এমনকি ‘নতুন তালিবান’–এর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য অপেক্ষা করছিল এই আশায় যে এই দর–কষাকষি নারী অধিকার, মানবিক সহায়তা ও হিংস্রতার বিষয়ে তালিবানদের অবস্থানকে সংযত করার প্রচেষ্টায় ভূমিকা রাখবে। কিন্তু মনে হচ্ছে এই ধরনের কৌশল কাজের ক্ষেত্রে উল্টো ফল দিয়েছে। ভারতের মতো দেশগুলি আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক স্বীকৃতি ছাড়াই তালিবানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে, তবে পার্থক্যের মূল বিষয়গুলিতে তাদের অবস্থানও স্পষ্ট রেখেছে কারণ এটা বোঝাই যাচ্ছে যে তালিবান ২.০ তার পূর্বসূরির থেকে খুব বেশি আলাদা নাও হতে পারে। ভারত এবং এই দেশগুলি সঠিক বলে প্রমাণিত হচ্ছে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.