-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
মালে সম্ভবত চিন সংক্রান্ত ভারতের বিস্তৃত কৌশলগত উদ্বেগের প্রতি সংবেদনশীল থাকলেও বেজিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টাও অব্যাহত রাখবে।
মলদ্বীপের মানুষ ৩০ সেপ্টেম্বর নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছেন এবং তিনি তদানীন্তন ক্ষমতাধর ইব্রাহিম সোলি নন। বরং তাঁর প্রাপ্ত ৪৮ শতাংশ ভোটের বিপরীতে বিরোধী প্রার্থী মোহাম্মদ মুইজ্জু পান ৫৪ শতাংশ। মলদ্বীপে নেতৃত্বের পরিবর্তনের সাথে সাথে বেশ কিছু বিষয়ের পুনর্গঠন ঘটবে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় চিন-ভারত প্রতিদ্বন্দ্বিতার সমীকরণ ফের এক বার প্রকাশ্যে উঠে আসবে। প্রোগ্রেসিভ পার্টি অফ মলদ্বীপ (পিপিএম) এবং পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস-এর (পিএনসি) জোট প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্সের নেতা মুইজ্জুকে চিনপন্থী বলে মনে করা হয় এবং ধারণা করা হয় যে, মলদ্বীপের বিদেশনীতিতে দ্রুতই চিনপন্থী পরিবর্তন লক্ষ করা যাবে। এই অবস্থাকে কেউ কেউ ভারতের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করছেন। ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রেসিডেন্ট হিসাবে ক্ষমতায় থাকা সোলি মলডিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির (এমডিপি) সদস্য। সোলি ভারতকে এক বন্ধু ও অংশীদার বলে মনে করেন এবং মালেকে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা থেকে শুরু করে দ্বীপরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও বৃহত্তর উন্নয়ন পর্যন্ত একাধিক ক্ষেত্রে সহায়তা করবেন। ভারতের জন্যও মলদ্বীপ ভারত মহাসাগর অঞ্চলে তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক অংশীদার। কিন্তু ভারত মহাসাগরে মলদ্বীপের কৌশলগত অবস্থানের কারণেই চিন সেখানে তার প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। একটি সক্রিয় শক্তি হিসেবে ভারত মহাসাগরে চিনের আগ্রাসী মনোভাবের জন্য বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সি লাইনস অব কমিউনিকেশনস-এর (এসএলওসিএস) উপস্থিতি অত্যন্ত অপরিহার্য।
সোলি ভারতকে এক বন্ধু ও অংশীদার বলে মনে করেন এবং মালেকে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা থেকে শুরু করে দ্বীপরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও বৃহত্তর উন্নয়ন পর্যন্ত একাধিক ক্ষেত্রে সহায়তা করবেন।
মুইজ্জুর প্রচারের অন্যতম মূল বিষয় ছিল ‘ইন্ডিয়া আউট’ স্লোগান। এটি ছিল সোলির বিদেশনীতির একেবারে উলটো, যেখানে সোলি ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ নীতি গ্রহণ করেছিলেন। মলদ্বীপের সামুদ্রিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে ভারত মলদ্বীপের জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (এমএনডিএফ) একটি ল্যান্ডিং ক্রাফট অ্যাসল্ট জাহাজ-সহ একটি দ্রুত টহলদারি জাহাজ প্রদান করেছে। গত এক দশকে ভারত দু’টি হেলিকপ্টার এবং একটি ছোট বিমান-সহ আরও বেশ কিছু প্রতিরক্ষা সামগ্রী প্রদান করেছে। উপরন্তু, ভারতীয় বিমান পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মলদ্বীপে প্রায় ৭৫ জন ভারতীয় সামরিক কর্মী ছিলেন। এটি প্রকৃতপক্ষে বিরোধী দলগুলির ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারকে উস্কে দিয়েছে এবং তাঁরা ভারতীয় সামরিক কর্মীদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার দাবি করেছেন। ভারত এমএনডিএফ কোস্ট গার্ড ফ্লিটকে সাহায্য প্রদান করছে। ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মলদ্বীপে যান এবং একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যেখানে ভারত মলদ্বীপের একটি জাহাজ মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধার উন্নয়নে অর্থায়ন করবে। জয়শঙ্কর পরে টুইট করে বলেন যে, এই চুক্তি ‘মলদ্বীপের কোস্ট গার্ডের দক্ষতাকে শক্তিশালী করবে এবং আঞ্চলিক এইচএডিআর (মানবিক সহায়তা এবং দুর্যোগ ত্রাণ) প্রচেষ্টাকে সহজতর করবে। উন্নয়নমূলক অংশীদার, নিরাপত্তারও অংশীদার।’ মলদ্বীপের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী তাঁর প্রশংসা করে টুইট করেছেন যে, ‘সিফাভারুর কোস্ট গার্ড হারবার এবং ডকইয়ার্ড আর একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক স্পর্শ করবে।’ তবে সাম্প্রতিক সময়ে মলদ্বীপের বিদেশনীতি একটি পক্ষপাতমূলক অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যা হয়ে উঠেছে, যেখানে দল এবং মতামত চিন অথবা ভারতের দিকে ঝুঁকেছে। মলদ্বীপের বিদেশনীতিতে চিনপন্থী ঝোঁক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিন গাইয়ুমের অধীনে শুরু হয়েছিল, যিনি ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ইয়ামিনের চিন সফরের সময় মলদ্বীপ চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এ (বিআরআই) যোগ দিতে সম্মত হয়েছিল। ইয়ামিন এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং উভয়ই বলেছেন যে, সব বিষয় এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তখন থেকেই দৃঢ় হয়েছে, যখন ইয়ামিন বলেছেন যে, মালে বেজিংকে ‘আমাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু, সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য অংশীদারদের মধ্যে’ অন্যতম বলে মনে করে। তিনি যোগ করেছেন যে, ২০১৪ সালে দ্বীপরাষ্ট্রে হওয়া শি-র সফরই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটিয়েছে এবং মলদ্বীপের জন্য চিনের অব্যাহত সমর্থনকে স্বাগত জানিয়েছে।
মলদ্বীপের বিদেশনীতিতে চিনপন্থী ঝোঁক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিন গাইয়ুমের অধীনে শুরু হয়েছিল, যিনি ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন।
চিনের জন্য মলদ্বীপের গুরুত্ব ভারত মহাসাগরে দেশটির অবস্থানের দরুন এবং এটি এমন একটি অঞ্চল যেখানে চিন তার উপস্থিতি ও প্রভাব বিস্তার করতে আগ্রহী। ইয়ামিনের অধীনে মলদ্বীপ একটি উপযুক্ত সুযোগ প্রদান করেছে। বিআরআই-তে যোগদানের পর থেকে মলদ্বীপ চিনের কাছ থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ২০১৮ সালে যখন ইয়ামিন পরাজিত হন এবং এমডিপি ক্ষমতায় আসে, তখন পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ নাশিদ বলেছিলেন যে, চিনের প্রদত্ত ঋণের পরিমাণ ৩.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেছিলেন যে, চিন প্রকল্পগুলির ব্যয় বৃদ্ধি করেছে, এই ভাবে মলদ্বীপ প্রকৃতপক্ষে যা পেয়েছিল, তার চেয়ে কাগজ-কলমে চিনের পাওনা অর্থের পরিমাণ অনেক বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মলদ্বীপের প্রাক্তন সরকারি আধিকারিক এবং চিনা প্রতিনিধিরা এই পরিসংখ্যানটি সংশোধন করে বলেন যে, মলদ্বীপ চিনের কাছে ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ গ্রহণ করেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর সোলি ক্ষমতায় আসেন এবং ভারতের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক পুনর্গঠনকে অগ্রাধিকার দেন। উভয় দেশই সাগর (অঞ্চলে সকলের জন্য নিরাপত্তা ও উন্নয়ন), ভারতের ‘নেবারহুড ফার্স্ট’ নীতি এবং মলদ্বীপের ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ মনোভাব তাদের নিজ নিজ নীতিগুলিকে সাযুজ্যপূর্ণ করার চেষ্টা করেছে। ২০১৯ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মলদ্বীপ সফরের সময় সোলি তাঁর সরকারের ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ মনোভাবের পুনরাবৃত্তি করেন এবং ‘ভারত ও মলদ্বীপের মধ্যে বহুমুখী পারস্পরিক ভাবে উপকারী অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করে তোলার জন্য তাঁর সরকারের পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যে সম্পর্ক চিরাচরিত ভাবে বিশ্বাস, স্বচ্ছতা, পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সংবেদনশীলতা দ্বারা চিহ্নিত।’
ইয়ামিনের অধীনে মলদ্বীপ একটি উপযুক্ত সুযোগ প্রদান করেছে। বিআরআই-তে যোগদানের পর থেকে মলদ্বীপ চিনের কাছ থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এই সম্পর্ককে চালিত করার অন্তর্নিহিত নীতিগুলির পাশাপাশি ভারত ও মলদ্বীপ তাদের সম্পর্কের সম্প্রসারণকে গভীরতর করে তোলার প্রয়াস চালিয়েছে। প্রতিরক্ষার দিক থেকে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং মালেতে দিয়ে মলদ্বীপের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পাশাপাশি বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছিলেন। দুই মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়ম-ভিত্তিক শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন। মন্ত্রীরা তাঁদের অবকাঠামো এবং সংযোগমূলক অংশীদারিত্বের কথাও বলেছেন। ভারত গ্রেটার মালে কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-সহ (জিএমসিপি) একাধিক অবকাঠামো ও সংযোগমূলক প্রকল্পে নিযুক্ত রয়েছে।
মলদ্বীপে ভারতের চিরাচরিত বহুল পরিচিত অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভবত মালে চিন সংক্রান্ত ভারতের বিস্তৃত কৌশলগত উদ্বেগের প্রতি কিছুটা সংবেদনশীল থাকলেও সম্ভবত বেজিংয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও দ্বীপদেশে চিনের অবকাঠামো ও সংযোগ প্রকল্পগুলিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। তা সত্ত্বেও, মলদ্বীপে চিন-ভারত রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকতে পারে, যেমনটা ভারতের অন্য প্রতিবেশী দেশগুলিতে দেখা গিয়েছে। এ ক্ষেত্রে চিন হয়তো সামান্য সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু মালে নিশ্চিত ভাবেই স্বীকার করে নিয়েছে যে, মলদ্বীপের সকল তুরুপের তাস বেজিংয়ের কাছে অর্পণ করা মলদ্বীপের স্বার্থের অনুকূল নয়।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য ডিপ্লোম্যাট-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Dr Rajeswari (Raji) Pillai Rajagopalan was the Director of the Centre for Security, Strategy and Technology (CSST) at the Observer Research Foundation, New Delhi. Dr ...
Read More +