-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
সিপিসি এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলি যাতে কোভিড-পরবর্তী যুগের দাবি মেটাতে পারে, সেজন্য তাদের পুনর্গঠন নিয়ে চিনের অভিজাতদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে
‘চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা’ এবং ‘পরিবর্তনের মধ্যে ধারাবাহিকতা’ হল চিনের ‘দুই অধিবেশন’ অর্থাৎ ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের বার্ষিক সংসদীয় অধিবেশন এবং চাইনিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনসাল্টেটিভ কনফারেন্সের মূল ভাবনা। এই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের কার্যপ্রণালী এবং তার অভিজাতদের বক্তৃতাগুলি চিনের নীতির গতিপথ বোঝার জন্য এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ ভাবে প্রতি দশকে একবার নেতৃত্বে পরিবর্তনের জন্য অনুধাবন করা হয়।
শি-এর অর্থনীতি থেকে দূরে সরে যাওয়া
চিন যে চ্যালেঞ্জগুলির সম্মুখীন, তা তারই নীতিগত ভুল পদক্ষেপের পরিণতি। শি-প্রবর্তিত অর্থনীতির প্রাধান্যের ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে চিরাচরিত গুরুত্ব দেওয়া থেকে চিন দূরে সরে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, কোভিড-১৯-এর কথা ধরা যেতে পারে, যে ক্ষেত্রে দেশটি বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের ধাক্কার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালে শি জিনপিং নির্দেশিত শূন্য-কোভিড নীতি কঠোরভাবে মেনে চলার রাজনৈতিক পরিকল্পনা দেশটির বৃদ্ধিকে ব্যাহত করে। শূন্য-কোভিড নীতির অধীনে কঠোর অন্তরিনমূলক নিষেধাজ্ঞা এবং বিচ্ছিন্নতার প্রবিধান ব্যবসা প্রায় বন্ধ করে দেয়, যা পরিবারগুলির আয় এবং কর্মসংস্থানের সুযোগগুলিকে প্রভাবিত করেছিল। ২০২২ সালে চিনের অর্থনীতি কয়েক দশকের তুলনায় সর্বাপেক্ষা ধীর বৃদ্ধির সম্মুখীন হয় এবং এমনকি বর্তমান পার্লামেন্টারি কনক্লেভও দুর্বল বৈশ্বিক চাহিদার প্রেক্ষিতে এ বছরের জন্য প্রায় ৫ শতাংশের একটি পরিমিত বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে। চিরাচরিত ভাবে, দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য চিনের প্রয়াস লক্ষ লক্ষ মানুষকে দারিদ্র থেকে মুক্তি দিলেও বৈষম্যের প্রসারও ঘটিয়েছে। শি ‘সাধারণ সমৃদ্ধি’র প্রতি মনোনিবেশ করেছিলেন এবং এটিকে একটি রাজনৈতিক প্রচারে উন্নীত করেন, যার ফলে চিনের বৃহৎ প্রযুক্তি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে কোপ নেমে আসে, এবং বিনিয়োগকারীদের মনোভাব প্রভাবিত হয়। আর একটি কারণ শি-কে প্রযুক্তি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে পরিচালিত করেছিল। তাঁর ধারণা ছিল, পর্যাপ্ত আর্থিক ক্ষমতা হাতে পাওয়ার ফলে চিনের বেসরকারি খাত সিদ্ধান্ত গ্রহণে আরও বেশি ভূমিকা নিতে চাইবে, যা আদতে এখনও পর্যন্ত সিপিসি-রই কুক্ষিগত রয়েছে। ২০২০ সালের শেষের দিকে আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা চিনের নিয়ন্ত্রকদের সমালোচনা করার পরে তাঁকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
শি ‘সাধারণ সমৃদ্ধি’র প্রতি মনোনিবেশ করেছিলেন এবং এটিকে একটি রাজনৈতিক প্রচারে উন্নীত করেন, যার ফলে চিনের বৃহৎ প্রযুক্তি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে কোপ নেমে আসে এবং বিনিয়োগকারীদের মনোভাব প্রভাবিত হয়।
অতিমারি প্রতিরোধের কৌশলটি চিনের সামাজিক পরিসরেও প্রভাব বিস্তার করেছে, যেখানে দেশের নাগরিকরা অর্থনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে তাদের নিজস্ব অধিকার ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে বাড়ি বন্ধকের অর্থ প্রদান না করা এবং শূন্য-কোভিড নীতি বাতিলের দাবি জানিয়ে একাধিক শহর জুড়ে ছাত্র আন্দোলন দেখা গেলে তা সিপিসি-র বিরুদ্ধে একটি উত্তেজনাপূর্ণ অসন্তোষ প্রকাশ্যে নিয়ে আসে। এই প্রতিটি ক্ষেত্রে সিপিসি সংশোধনী পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়, যা একটি ধারণা তৈরি করেছিল যে, আপাতদৃষ্টিতে দুর্বলদের আন্দোলন শক্তিশালী পার্টির উপরেও প্রভাব ফেলতে সক্ষম। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সিপিসি-র মূল্যায়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি আসলে নতুন যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠেছে এবং পরবর্তী প্রজন্মের অর্থনৈতিক অসুবিধা বৃদ্ধি পেলে ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আরও প্রতিবাদ তৈরি হতে পারে।
এটি এমন একটি কারণ যা বেসরকারি ক্ষেত্রের প্রতি সিপিসি-র মনোভাব পরিবর্তনের জন্য প্ররোচিত করেছে। এ বছরের গোড়ার দিকে চিনের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের পার্টি সেক্রেটারি গুও শুকিং চিনের বৃহৎ প্রযুক্তি সংস্থার বিরুদ্ধে ‘সংশোধনী প্রচারাভিযান’ চালালেও তা মাঠে মারা যায় এবং এখন এই সংস্থাগুলিকে চাকরি সৃষ্টিতে আরও বড় ভূমিকা পালন করতে সহায়তা বাড়ানো হবে। এটি দেশটির দু’টি অধিবেশনের ভাষণে শি-র আক্রমণাত্মক বক্তৃতা দ্বারা অনুসৃত হয়েছে, যেখানে তিনি বলেছিলেন যে, উদ্যোক্তারা পরিবারের সদস্যদের মতো এবং একটি শক্তিশালী চিন গড়ার লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে আমাদের পার্টির জন্য বেসরকারি ক্ষেত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শক্তি। এ ভাবে মনোভাবের একটি বড় পরিবর্তন ঘটিয়ে নিম্নগামী অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং বেকারত্ব নিয়ে সিপিসি-র উদ্বেগগুলি বেসরকারি ক্ষেত্রের দিকে শি-র সাম্প্রতিক উদ্যোগের নেপথ্যে প্রধান কারণ।
ধারাবাহিকতা এবং পরিবর্তন
বর্তমানে চিনের অভিজাতদের মধ্যে পার্টি এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন নিয়ে বিতর্ক চলছে, যাতে তারা নতুন পরিস্থিতির দাবিতে সাড়া দিতে পারে। প্রথমত, ঋণ প্রসঙ্গে বর্তমানে চিনের ব্যাপক ঋণপ্রদান সামাল দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আরও বেশি সচেতনতা দেখা যাচ্ছে। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ কাও ইউয়ানঝেং ঋণের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছেন যে, পাকিস্তান, নেপাল, তুর্কিয়েএবং কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলি এই বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেছে। কাও যুক্তি দিয়েছিলেন যে, পূর্বোল্লিখিত দেশগুলির অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সর্বাপেক্ষা বৃহৎ ঋণপ্রদানকারী হওয়ার দরুন চিন নিজস্ব অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় বাহ্যিক ঝুঁকি তৈরি করেছে। গত বছরের শুরুর দিকে কিছু গ্রামীণ ব্যাঙ্কে নিজেদের সঞ্চিত অর্থ ব্যবহারে বাধা পাওয়ার পরে চিনের আমানতকারীরা রাস্তায় নেমে আসেন। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে পার্টি কংগ্রেসে তাঁর বক্তৃতায় শি ‘গ্রে রাইনো ইভেন্টস’-এর সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন, যা আর্থিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে। চিনের ব্যাঙ্কিং এবং বিমা সম্পদ তত্ত্বাবধানের জন্য একটি প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠন করার পরিকল্পনা চলছে। পাশাপাশি (আইন প্রয়োগকারীর দায়িত্বে থাকা) মিনিস্ট্রি অব পাবলিক সিকিউরিটি এবং (গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা) মিনিস্ট্রি অব স্টেট সিকিউরিটিকে স্টেট কাউন্সিল থেকে পৃথক করা এবং সেগুলিকে সরাসরি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনে ইন্টারনাল অ্যাফেয়ার্স কমিটি নামক একটি নতুন সুপারবডির অধীনস্থ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
চিনের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের পার্টি সেক্রেটারি গুও শুকিং চিনের বৃহৎ প্রযুক্তি সংস্থার বিরুদ্ধে ‘সংশোধনী প্রচারাভিযান’ চালালেও তা মাঠে মারা যায় এবং এখন এই সংস্থাগুলিকে চাকরি সৃষ্টিতে আরও বড় ভূমিকা পালন করতে সহায়তা বাড়ানো হবে।
পার্টি ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের এই সংস্কার পার্টি-রাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে। ১৯৮০-র দশকে চিনের সর্বোচ্চ নেতা দেং শিয়াওপিং ‘রাষ্ট্র এবং পার্টির পৃথগীকরণ’-এর পক্ষে সওয়াল করেন। কিন্তু শি বিপরীত পথে হেঁটেছেন এবং প্রশাসনের দুই স্তম্ভের মধ্যে বৃহত্তর সমন্বয় অর্জনের লক্ষ্যে ব্রতী হয়েছেন। বিশেষত কোভিড-১৯ যুগে চিনের রাজনৈতিক ব্যবস্থার আপাতদৃষ্টিতে অস্বচ্ছতা থাকা সত্ত্বেও শি (পার্টির প্রতিনিধিত্বকারী) এবং সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত প্রিমিয়ার লি কেকিয়াং-এর (সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী) মধ্যে নীতি নিয়ে মতপার্থক্য প্রকাশ্যে এসেছে। প্রারম্ভিক দিনগুলিতে যখন ২০২০ সালে চিন করোনাভাইরাসের জ্বরে কাঁপছিল – যা লকডাউনের সূচনা করে – তখন লি কেকিয়াং একটি ‘স্ট্রিট-স্টল অর্থনীতি’র ধারণা প্রচার করেন, যেখানে বিক্রেতারা হস্তচালিত গাড়ি ব্যবহার করে জনপরিসরে পণ্য বিক্রির চেষ্টা করেন এবং এটি চিনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে তীর্যক সমালোচনার সম্মুখীন হয়। আবার শি যখন ঘোষণা করেন যে, তিনি চিন থেকে নিরঙ্কুশ দারিদ্র নির্মূল করতে সমর্থ হয়েছেন, তখন লি কেকিয়াং এই বাস্তবতা দর্শিয়ে তাঁর দাবি খারিজ করেন যে, পরিযায়ী মানুষরা শহরে জীবনধারণের উচ্চ খরচের সঙ্গে যুঝতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। বর্তমানে ক্ষমতাসীন প্রিমিয়ার লি কিয়াং-এর দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা শুধু মাত্র পার্টির হাতেই সীমিত থাকবে, যেখানে স্টেট কাউন্সিল (সরকার) তার বাস্তবায়নের দায়িত্ব পাবে।
নতুন অভিজাত
লি কিয়াং-এর ডেপুটিরা হলেন ভাইস-প্রিমিয়ার হে লাইফেং, ঝাং গুওকিং, লিউ গুওঝং এবং ডিং জুয়েশিয়াং, যিনি কমিউনিস্ট পার্টির সেন্ট্রাল কমিটির জেনারেল অফিসের ডিরেক্টর এবং পলিটব্যুরোর স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য। লিউ কুন এবং ই গাং অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কার হিসাবে তাঁদের অবস্থান বজায় রাখার ফলে চিনের অর্থনৈতিক নেতৃত্ব অপরিবর্তিত রয়েছে। রাষ্ট্রীয় পরিষদের ২৬টি মন্ত্রক ও কমিশনের মধ্যে মাত্র দু’টিতে পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। ঝেং শানজি ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফর্ম কমিশনের নেতৃত্ব প্রদান করছেন এবং লি শাংফু প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এই সকল ঘটনাপ্রবাহ বৃহত্তর কেন্দ্রীকরণের প্রবণতাকেই দর্শায়, যেখানে শি (তাঁর তৃতীয় মেয়াদে) নীতিনির্ধারণের কেন্দ্রে রয়েছেন এবং নির্বাচিত টেকনোক্র্যাটরা খুঁটিনাটি দিকগুলি খতিয়ে দেখছেন।
প্রারম্ভিক দিনগুলিতে যখন ২০২০ সালে চিন করোনাভাইরাসের জ্বরে কাঁপছিল – যা লকডাউনের সূচনা করে – তখন লি কেকিয়াং একটি ‘স্ট্রিট-স্টল অর্থনীতি’র ধারণা প্রচার করেন, যেখানে বিক্রেতারা হস্তচালিত গাড়ি ব্যবহার করে জনপরিসরে পণ্য বিক্রির চেষ্টা করেন এবং এটি চিনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়।
উপসংহার
প্রথমত চিনের শাসনব্যবস্থা এবং রাজনীতির প্রকৃতি টপ-ডাউন হওয়ার দরুন, চিনের মতো একটি সুবিশাল দেশে উত্তরাধিকার পরিকল্পনার অভাব শি-পরবর্তী যুগে রাজনৈতিক লড়াইয়ের সম্ভাবনাকে সূচিত করে। চিনের প্রবৃদ্ধির অভিমুখ সমগ্র বিশ্ব দ্বারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষিত হবে। চিনের সাফল্য এখনও পর্যন্ত নীতিগত অনুমানযোগ্যতারই ফল, যা শি যুগে ক্রমশ নড়বড়ে হয়ে পড়ছে। দুই অধিবেশনের কয়েক দিন আগে কোটিপতি প্রযুক্তি ব্যাঙ্কার বাও ফান তদন্তে সহযোগিতা করার সময়ে নিখোঁজ হয়ে যান। উদ্যোগপতিদের প্রতি শি-র আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ ফাঁকা আওয়াজ হয়েই রয়ে যাবে, যদি তা সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ দ্বারা সমর্থিত না হয়।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Kalpit A Mankikar is a Fellow with Strategic Studies programme and is based out of ORFs Delhi centre. His research focusses on China specifically looking ...
Read More +