Published on Aug 01, 2022 Updated 0 Hours ago

চিনের সাম্প্রতিক দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের লক্ষ্য চিনের জাতীয় নিরাপত্তায় তৈরি হওয়া ছিদ্র ভরাট করা।

চিনের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নতুন অভিমুখ

চিনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি) এই প্রবাদের সতর্কতাকে অনেক বেশি গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে যে সিজারের স্ত্রীকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে থাকতে হবে। সিসিপি–র সাধারণ সম্পাদক শি জিনপিংয়ের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অভিমুখ থেকেই এই বিষয়টি স্পষ্ট।

সিসিপি মনে করে যে তার বর্মের দুর্বলতা হল ক্যাডারদের আত্মীয়রা। সিসিপি নতুন যে নির্দেশিকা  জারি করেছে তা পার্টির কর্মকর্তাদের পত্নী, সন্তান এবং তাদের পত্নীদের ব্যবসায়িক স্বার্থ সম্পর্কিত। এর উদ্দেশ্য হল আধিকারিকদের নিকটতম আত্মীয়দের নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির জন্য সিসিপি–কে কাজে লাগানো সীমিত করা। কর্মকর্তাদের তাঁদের আত্মীয়দের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পার্টির কাছে পুরোপুরি প্রকাশ করতে হবে, এবং তথ্য গোপন করলে তাঁদের কঠোর শাস্তি হতে পারে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে সিসিপি মন্ত্রী–পর্যায়ের কর্মকর্তাদের স্ত্রী এবং সন্তানদের বিদেশে রিয়েল এস্টেটের বা বিদেশে নিবন্ধিত ইক্যুইটির মালিকানা নিষিদ্ধ করেছিল। তাঁরা বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্ট খুলতেও পারবেন না।

কর্মকর্তাদের তাঁদের আত্মীয়দের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পার্টির কাছে পুরোপুরি প্রকাশ করতে হবে, এবং তথ্য গোপন করলে তাঁদের কঠোর শাস্তি হতে পারে।

সিসিপি–র মুখপত্র পিপলস ডেইলিতে একটি ভাষ্য নতুন প্রবিধানকে ন্যায্যতা দিয়েছে এই ভিত্তিতে যে পার্টির লক্ষ্য জনগণের সেবা করা, কোনও বিশেষ স্বার্থগোষ্ঠীর নয়। আরও বলা হয়েছে যে অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাঁদের আত্মীয়দের অবৈধ মুনাফা অর্জনে সহায়তা করছেন, যা পার্টির ভাবমূর্তি খারাপ করছে। ১৭ জুন পলিটব্যুরোর এক সভায় শি জোর দিয়ে বলেছিলেন যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে চিন যখন ‘‌বিশাল’‌ বিজয়ের দোরগোড়ায়, সেই সময় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেছিলেন এই সময়ের প্রয়োজন এটা নিশ্চিত করা যে কর্মকর্তারা দুর্নীতির ফাঁদে পড়বেন না, কারণ তাঁরা ‘সাহস করবেন না, সক্ষম হবেন না, এবং পড়তে চাইবেনও না’‌।

বিভিন্ন কারণের একটি জটিল জাল এই দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে প্রভাবিত করে থাকতে পারে। এমন ক্রমবর্ধমান উপলব্ধি রয়েছে যে হাই–প্রোফাইল ঘুষের  উদাহরণ জনগণকে ক্ষুব্ধ করে, এবং রাজনৈতিক বৈধতাকে বিপন্নতার মুখে ফেলে। বিষয়টি অন্যান্য কর্তৃত্ববাদী শাসনে সংঘটিত ঘটনাগুলির দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছে। ২০১১ সালে তিউনিসিয়ায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিবাদের পর একজন ভেন্ডারের নিজেকে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার একটি ঘটনা সে দেশে দুই দশকের পুরনো একদলীয় শাসনের পতন ঘটা‌য়, আর সেই পর্বে অনুঘটকের ভূমিকায় ছিল  দুর্নীতি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি। হোসনি মোবারক এবং মুয়াম্মার গদ্দাফির একদলীয় শাসনের পতনের সঙ্গে সঙ্গেই মিশর ও লিবিয়ায় তোলপাড়ের পরবর্তী অভিঘাত অনুরণিত হয়েছিল। ঘটনাটি সিরিয়ায় বাশার আল–আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সূচনা করে এবং মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। ক্রমাগত অন্যান্য স্বৈরাচারী রাষ্ট্রগুলির ঘটনাসমূহ অধ্যয়ন করে নিজের বেঁচে থাকার কৌশল যে নতুন করে তৈরি করে, তেমন একটি অভিযোজিত কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার প্রধান হিসেবে ২০১২ সালে ক্ষমতায় এসেই শি–র প্রাথমিক উদ্যোগগুলির মধ্যে একটি ছিল আর্থিক দুর্নীতিতে লিপ্ত ব্যক্তিদের বিদায় করা।

২০১১ সালে তিউনিসিয়ায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিবাদের পর একজন ভেন্ডারের নিজেকে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার একটি ঘটনা সে দেশে দুই দশকের পুরনো একদলীয় শাসনের পতন ঘটা‌য়, আর সেই পর্বে অনুঘটকের ভূমিকায় ছিল দুর্নীতি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি।

উল্লেখযোগ্য ভাবে, নতুন নির্দেশিকাগুলি সিসিপি–র জাতীয় কংগ্রেসের আগে নিয়ে আসা হচ্ছে, যে কংগ্রেস ক্ষমতা পরিবর্তনের সাক্ষী হবে। যদিও শি অভূতপূর্ব তৃতীয় মেয়াদে পদে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে, অনেক শূন্যপদে নতুন নেতারা বসবেন।

জিরো–কোভিড কৌশলের অর্থনৈতিক প্রভাবের এবং তাঁর নিজের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার ফলে কিছু কর্মকর্তার রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার আকস্মিক বিপর্যয়ের কারণে সিসিপি–র একটি অংশ শি–র বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ। এই অবস্থায় নতুন বিধিবিধান তাঁকে চিনের নতুন অভিজাতদের প্রভাবিত করতে সাহায্য করবে।

আরেকটি কারণ যেটি সিসিপি‌‌–কে তার বিপথগামী কাডারদের বিরুদ্ধে শক্ত হতে বাধ্য করেছে তা হল পশ্চিমের সঙ্গে তার চলতি উত্তেজনা। সিসিপি কর্মকর্তাদের আত্মীয়রা সম্পদ রাখার জন্য বিদেশি সংস্থা ব্যবহার করেন বলে জানা যায়। ইন্টারন্যাশনাল কনসর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস একটি প্রতিবেদনে বলেছে, আইনি সংস্থা মোসাক ফনসেকা অ্যান্ড কোম্পানির মাধ্যমে মাও জে ডং–এর আত্মীয়েরা, শি জিনপিং–এর শ্যালক, এবং সিসিপি–র সাবেক সাধারণ সম্পাদক হু ইয়াওবাং-এর আত্মীয়েরা  বিদেশে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করলে চিনের এই অভিজাতরা অরক্ষিত হয়ে যাবেন। জিনজিয়াং প্রদেশ ও হংকং–এ মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিসিপি অভিজাতদের সেদেশে রাখা যে কোনও সম্পদ আটক করতে চেয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে অভিজাত পলিটব্যুরোর সদস্য ওয়াং চেন এবং জিনজিয়াং পার্টির প্রাক্তন প্রধান চেন কোয়ানগুও এই ধরনের কর্মকাণ্ডের লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন। পার্টির সদস্যদের জন্য সততার নতুন প্রবিধানগুলি ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরও কঠোর পদক্ষেপের মুখে একটি সুরক্ষা কবচ।

জিনজিয়াং প্রদেশ ও হংকং–এ মানবাধিকার লঙ্ঘনের আলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিসিপি অভিজাতদের সেদেশে থাকা যে কোনও সম্পদ আটক করতে চেয়েছে।

সবশেষে, এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, ২০২২ সালের পার্টি কংগ্রেসের প্রস্তুতিপর্বের ঘটনাপ্রবাহ নতুন নৈতিক বিধিগুলি চালু করার একটি বড় কারণ বলে মনে হচ্ছে। ব্রিটেনের ব্যবসায়ী নীল হেউডের বিষক্রিয়ায় তাঁর স্ত্রীর হাত রয়েছে, এ কথা চংকিং পুলিশ প্রধান ওয়াং লিজুন পলিটব্যুরো সদস্য বো শিলাইকে জানানোর পর একটি বিবাদের পরিণতিতে ওয়াং চেংদুস্থিত মার্কিন কনস্যুলেটে আশ্রয় চাইতে বাধ্য হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের সম্পর্ক তখনও তুলনামূলক ভাবে ভাল ছিল বলে ওয়াংকে চিনা কর্তৃপক্ষের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। মিডিয়া রিপোর্টে প্রকাশ, হেউড পশ্চিমি কর্পোরেট ও সিসিপি পাওয়ার এলিটদের মধ্যে সংযোগকারী ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু সিসিপি–র জন্য অস্বস্তিকর ভাবে মিডিয়া রিপোর্ট হেউডকে ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের সঙ্গে যুক্ত করে, যদিও তিনি যে সিক্রেট সার্ভিসে নিযুক্ত ছিলেন সে কথা ইউ কে সরকার অস্বীকার করেছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চিন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। শি সতর্ক করে দিয়েছেন যে চিন তার ইতিহাসে সবচেয়ে ‘‌জটিল অভ্যন্তরীণ এবং বহির্দেশীয় কারণগুলির’‌ মুখোমুখি হচ্ছে, এবং এই চ্যালেঞ্জগুলি ‘‌অন্তর্বদ্ধ ও পারস্পরিক ভাবে সক্রিয়’‌। সিসিপি আশঙ্কা করছে যে পশ্চিমি শক্তিগুলো দেশে জমানার পরিবর্তন ঘটাতে ইন্ধন জোগাতে পারে। এই পটভূমিতে সিসিপি–র চিন্তাধারায় দুর্নীতিকে শুধুই সামাজিক মন্দ হিসেবে দেখার বিষয়টিতে উল্লেখযোগ্য পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছে বলে মনে হয়। এই উদ্বেগও রয়ে গেছে যে গু কাইলাইয়ের ক্ষেত্রে যেমন ঘটেছিল, সেই ভাবে মানুষের লোভ বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে চিনের রাজনৈতিক ব্যবস্থার অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে এবং ভেতর থেকে অস্থিতিশীল করতে সহায়তা করতে পারে। সদস্যদের জন্য সততার নিয়মগুলি এই ভাবে চিনের জাতীয় নিরাপত্তায় একটি বড় রকমের ছিদ্র পূরণ করতে চায়।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.