Published on Oct 25, 2024 Updated 0 Hours ago

সফরটি পারস্পরিকভাবে উপকারী হয়েছে, বিশেষ করে সমঝোতাপত্র  স্বাক্ষর/ নবায়ন, ব্যাপক অর্থনৈতিক ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা অংশীদারিত্বের দৃষ্টিভঙ্গি, এবং ভারতের আর্থিক সহায়তার প্রস্তাবের মাধ্যমে।

ভারত-মলদ্বীপ সম্পর্কের নতুন সূচনা এবং পুরনো জটিলতা

মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার এক বছর পর মোহাম্মদ মুইজ্জু ভারতে তাঁর প্রথম সরকারি রাষ্ট্রীয় সফর করেছেন। প্রথম দিন থেকেই মুইজ্জু প্রশাসন ভারতের উপর নির্ভরতা কমাতে, অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে, এবং চিনের সঙ্গে সহযোগিতা সম্প্রসারণে আগ্রহী ছিল। মুইজ্জু ভারতকে "ভীতি-‌প্রদর্শনকারী" বলেও অভিহিত করেছেন এবং দীর্ঘকাল ধরে তাঁর দলের সেইসব কর্মীকে আড়াল করেছেন যারা ভারত ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বর্ণবাদী  মন্তব্য করেছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে এই সফরের লক্ষ্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে কিছু নতুন শক্তি যোগ করা। এটি উভয় দেশের জন্য পারস্পরিক সুবিধার প্রস্তাব দিয়েছে, মলদ্বীপ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় আর্থিক ত্রাণ পেয়েছে, এবং ভারত দেশটিতে আরও বেশি গভীরে প্রবেশ করেছে। এই সফর সম্ভবত উভয় দেশের মধ্যে আরও সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করবে। বলা হয়েছে, সমস্ত বাস্তবসম্মত উদ্দেশ্যে মলদ্বীপ ভারত ও চিনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।


প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু যখন তাঁর দলের দীর্ঘায়িত "ইন্ডিয়া আউট" প্রচারণার পর ক্ষমতায় নির্বাচিত হন, তখন তাঁর প্রশাসন আশা করেছিল যে চিন নতুন ঋণ দেবে, বিদ্যমান ঋণের পুনর্গঠন করবে, এবং তহবিল ও বিনিয়োগের মাধ্যমে তাদের প্রচারাভিযানের প্রতিশ্রুতি পূরণে সহায়তা করবে। জানুয়ারিতে, যখন মুইজ্জু তাঁর প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে চিন গেলেন, তখন তিনি ২০টি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর করেন, এবং সম্পর্ককে একটি ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করেন। এছাড়াও তিনি গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ-এ যোগ দেন এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) ও বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সম্মত হন। পরের সপ্তাহগুলিতে তিনি একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেন এবং মালেতে একটি গুপ্তচর জাহাজের ডকিংয়ের অনুমতি দেন। তিনি চিনকে উথুরু থিলা ফালহু দ্বীপে একটি কৃষি অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে দেন যেখানে ভারত একটি নৌ-‌বন্দর তৈরি করছে, এবং কাধধু
বিমানবন্দর আপগ্রেড করার জন্য একটি চিনা সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেন যেখানে ভারতীয় প্রযুক্তিবিদরা একটি হেলিকপ্টার সার্ভিস পরিচালনা করছেন।


কাঠামোগত সমস্যা, বেসরকারি পাওনাদারদের ও চিনের পরিশোধের সময় হয়ে-‌যাওয়া ঋণ, মুইজ্জুর প্রাথমিক বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি এবং পরবর্তী রাজনৈতিক নিয়োগ সংকট আরও বাড়িয়ে তুলেছে।



মতাদর্শগত ঝোঁক ছাড়াও, মলদ্বীপের
অর্থনীতি আগেই খারাপ অবস্থায় ছিল। এমনকি তাঁর প্রাথমিক বৈঠকেও মুইজ্জু ভারতীয় ও চিনা রাষ্ট্রদূতদের ঋণ পুনর্গঠন করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কাঠামোগত সমস্যা, বেসরকারি পাওনাদারদের ও চিনের পরিশোধের সময় হয়ে-‌যাওয়া ঋণ, মুইজ্জুর প্রাথমিক বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি, এবং পরবর্তী রাজনৈতিক নিয়োগ সংকট আরও বাড়িয়ে তুলেছে। মার্চ পর্যন্ত মলদ্বীপের ঋণ-জিডিপি অনুপাত ছিল ১১০%, এবং সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (এক মাসের আমদানি মূল্য)। কিন্তু অর্থনৈতিক অসুবিধা এবং চিনের ক্রমাগত প্ররোচনা সত্ত্বেও বেজিং নতুন ঋণ দিতে দ্বিধা করছে এবং ঋণ পুনর্গঠনে ধীরে চলছে। এখন মলদ্বীপের (দেশটির মোট ঋণের পরিমাণ ৮ বিলিয়ন ডলার) কাছ থেকে চিনের প্রায় ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওনা রয়েছে।


অন্যদিকে, ভারতের প্রতিক্রিয়া এবং সহানুভূতিমূলক নীতি, যেমন উচ্চস্তরের সম্পৃক্ততা, প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে সামরিক কর্মীদের প্রতিস্থাপন, উন্নয়ন সহায়তা বৃদ্ধি এবং সংশোধিত রপ্তানি কোটা, মালেকে আবার ভারতের কাছে যেতে অনুপ্রাণিত করেছিল। মে মাসে মলদ্বীপের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী মুসা জমিরের সফর সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার ইঙ্গিত দেয়। গতিবেগ টিকে ছিল বারবার উচ্চস্তরের সফরের মাধ্যমে, এবং এরপর ভারত ১০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের দুটি ট্রেজারি বিলের জন্য বাড়তি সময় দিয়েছে। সম্পর্কের অসুবিধা সত্ত্বেও ভারত ২০২৪ সালের গোড়ার দিকে ২৯ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণের প্রস্তাব দিয়েছে। তাছাড়া, ৬৫% ভারতীয় ঋণ এখনও বণ্টন করা হয়নি। এই অবস্থায় মলদ্বীপ ভারতের সঙ্গে জড়িত হওয়াকে অপরিহার্য হিসাবে দেখেছে, যা সফরের পথ প্রশস্ত করে।

এই সফরটি পারস্পরিকভাবে উপকারী হয়েছে, বিশেষ করে সমঝোতাপত্র  স্বাক্ষর/ নবায়ন, ব্যাপক অর্থনৈতিক ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা অংশীদারিত্বের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভারতের আর্থিক সহায়তার প্রস্তাবের মাধ্যমে। ভিশন ডকুমেন্ট দ্বারা নির্দেশিত উভয় দেশের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা অবশ্যই উন্নয়ন অংশীদারিত্ব, সক্ষমতা বৃদ্ধি, জনগণের মধ্যে সম্পর্ক, ব্যবসায়িক ব্যস্ততা এবং ডিজিটাল সংযোগ বাড়াবে।


ভারতের ক্রেডিট লাইন এবং এফটিএ-র সঙ্গে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেনের সম্ভাবনা মলদ্বীপের জন্য বাণিজ্য সহজ এবং সস্তা করে তুলবে।



অর্থনৈতিকভাবে সংগ্রামরত মলদ্বীপের জন্য, ভারতের ৭৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মুদ্রার অদলবদল (৪০০ মিলিয়ন ডলার এবং ৩০ বিলিয়ন রুপি) একটি বিশাল স্বস্তি। মলদ্বীপের অনুরোধে ভারতও এফটিএ নিয়ে এবং স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করতে সম্মত হয়েছে। ভারত মলদ্বীপে রপ্তানির শীর্ষ উৎসগুলির মধ্যে একটি হওয়ায়, এফটিএ মলদ্বীপকে সবচেয়ে বেশি লাভবান করতে পারে৷ তার উপর, ভারতের ক্রেডিট লাইন এবং এফটিএ-র সঙ্গে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেনের সম্ভাবনা মলদ্বীপের জন্য বাণিজ্য সহজ এবং সস্তা করে তুলবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তৈরি ও ব্যবহারের বোঝাও কমবে। ভারতের জন্যও এই সফর অতিরিক্ত সুবিধা তৈরি করেছে। এটি বেশ কয়েকটি উদ্যোগ, ক্ষেত্র এবং প্রকল্প পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে, যা মুইজ্জু ভারত থেকে দূরে সরে যেতে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, ভারত মলদ্বীপকে
স্বাস্থ্য সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা প্ল্যাটফর্ম, নজরদারি ক্ষমতা, তথ্য-আদানপ্রদান এবং হাইড্রোগ্রাফিক সমীক্ষায় সাহায্য করবে। একইভাবে, ভারত থিলাফুশি বন্দর উন্নয়ন, অর্থনৈতিক গেটওয়ে প্রকল্পে বিনিয়োগ এবং বৃহত্তর মালে সংযোগসেতু প্রসারিত করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ভারতের এখন মলদ্বীপের দক্ষিণতম প্রবালদ্বীপ আদ্দুতে একটি কনস্যুলেট থাকবে, যা উন্নয়ন এবং কৌশলগত উদ্দেশ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। বিরোধী দলে থাকাকালীন মুইজ্জুর দল দ্বারা এই উদ্যোগটি নিয়েও বেশি রকম রাজনীতি করা হয়েছিল।


এই পরিপ্রেক্ষিতে এই সফর ভারত-মলদ্বীপের সম্পর্ককে সঠিক পথে নিয়ে এসেছে। ভারতের সময়মত সহায়তা প্রথম সংবেদনশীল এবং নির্ভরযোগ্য অংশীদার হওয়ার একটি চিত্র তৈরি করেছে, এবং এটি মুইজ্জুকে ভারতের উদ্বেগ এবং স্বার্থের প্রতি আরও সংবেদনশীল হতে বাধ্য করবে, যার ফলে আরও সহযোগিতার পথ প্রশস্ত হবে। এরপর মলদ্বীপ তার নিরাপত্তা, কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুশীলন চালিয়ে যাবে। দেশটি উপলব্ধি করে যে চিনের তরফে বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে এবং চিনা ঋণের পুনর্গঠন মলদ্বীপের জন্য একটি সংকট থেকে বাঁচতে গুরুত্বপূর্ণ হবে। ফলস্বরূপ, বাস্তব রাজনীতি মলদ্বীপের বিদেশনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে, এবং ভারত-চিন প্রতিযোগিতা তীব্র হওয়ার সাথে সাথে এটি উভয় দেশের থেকে তার সুবিধা ও স্বার্থ সর্বাধিক করার উপায়গুলি অন্বেষণ করবে৷



এই ভাষ্যটি প্রথম ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসে প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.