Author : Hari Bansh Jha

Published on Dec 18, 2023 Updated 0 Hours ago

প্রধানমন্ত্রী দাহাল তাঁর সাম্প্রতিক সফরে চিনের সঙ্গে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করলেও নেপালের অভ্যন্তরে সমালোচকরা এ বিষয়ে বেশ হতাশ যে, নেপাল চিনের কাছ থেকে তেমন সুনির্দিষ্ট কিছুই পাচ্ছে না।

চিনের সঙ্গে নেপালের সতর্ক চুক্তি

প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল সম্প্রতি আট দিনের চিন সফর শেষ করেছেন। এই উপলক্ষ্যে নেপাল ও চিন বিস্তৃত অঞ্চল সংক্রান্ত একটি ১৩ দফার যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে, যেখানে তারা দুই দেশের মধ্যে সমস্ত সীমান্ত ক্রসিংগুলি পুনরায় চালু করতে, সীমান্তে চেকপয়েন্টগুলিকে পুনরায় সক্রিয় করতে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে (বিআরআই) মজবুত করার পাশাপাশি চিন-নেপাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোঅপারেশন প্ল্যান চূড়ান্ত করা এবং জলবিদ্যুৎ, বায়ুশক্তি, সৌরশক্তি ও বায়োমাস শক্তি বিকাশে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে। এ ছাড়াও, তারা নেপালে ইয়াক, গরু এবং অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণীর প্রজনন করতে এবং চিনে কৃষি পণ্য রফতানি করতে সম্মত হয়েছে। এর ঊর্ধ্বে উঠে দুই দেশ নেপালের প্ল্যানিং কমিশন এবং চিনের ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফর্ম কমিশনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা স্থাপনে এবং ডিজিটাল অর্থনীতি, কৃষি, মৎস্যসম্পদ এবং দূষণহীন ও নিম্ন কার্বন উন্নয়নের মতো ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।

 

এ ছাড়াও, তারা নেপালে ইয়াক, গরু এবং অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণীর প্রজনন করতে এবং চিনে কৃষি পণ্য রফতানি করতে সম্মত হয়েছে।

 

নেপাল ও চিনের মধ্যে সাংস্কৃতিক যোগসূত্র উন্নীত করার জন্য চিন নেপালে আরও বেশি সংখ্যক চিনা ভাষার শিক্ষক ও স্বেচ্ছাসেবক পাঠানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর পাশাপাশি চিন নেপালে চায়না কালচারাল সেন্টার এবং কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের মতো প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা এবং প্রাচীন গ্রন্থের অনুবাদ ও প্রকাশনার সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

নেপাল ও চিন জিলং-কেরুং (চিন)- রাসুওয়াগাধি-চিলিমে (নেপাল) ২২০ কেভি ক্রস-বর্ডার ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে। একবার এই প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে তা দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ বাণিজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ প্রদান করবে। প্রত্যাশা এই যে, এই ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে চিনে তার উদ্বৃত্ত শক্তি রফতানি করে নেপাল তার জ্বালানির বাজারে বৈচিত্র্য আনতে এবং বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য শুধু ভারতের উপর তার নির্ভরতা কমাতে সক্ষম হবে।

পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং চিনের মধ্যে নিয়মিত উড়ানও পরিচালিত হবে। বিমানবন্দরটি চিনের এক্সিম ব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় নির্মিত হয়েছিল এবং ১ জানুয়ারি উদ্বোধন করা হয় কিন্তু তার পর থেকে সেখানে একটিও আন্তর্জাতিক উড়ান নেই এবং এটি বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

দাহাল হিন্দুদের সবচেয়ে পবিত্র ধর্মীয় স্থান তিব্বতের কৈলাস-মানসরোবরও পরিদর্শন করেন। নেপাল নেপালি এবং ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের ভ্রমণের সুবিধার্থে নেপালের সিমকোট এবং কৈলাস-মানসরোবরের জনপ্রিয় হিন্দু মন্দিরগুলির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ নির্মাণ করতে আগ্রহী। এটি করার মাধ্যমে নেপাল ভারত-সহ সারা বিশ্ব থেকে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের আকৃষ্ট করবে বলে আশা করা হচ্ছেমানসরোবর হ্রদ নেপালের উত্তরাঞ্চলের হুমলা জেলার সদর দফতর সিমকোট থেকে মাত্র ১৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মানসরোবর যাওয়ার এই পথটি নেপালি এবং ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের জন্য ভ্রমণ খরচ, দূরত্ব, সময় এবং ভিসার দিক থেকে সবচেয়ে সুবিধাজনক বলে প্রমাণিত হলেও সিমকোট থেকে মানসরোবর হ্রদ পর্যন্ত রাস্তাটি ভ্রমণকারীদের জন্য অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতাময়।

 

নেপাল নেপালি এবং ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের ভ্রমণের সুবিধার্থে নেপালের সিমকোট এবং কৈলাস-মানসরোবরের জনপ্রিয় হিন্দু মন্দিরগুলির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ নির্মাণ করতে আগ্রহী।

 

চিন সফরের ফলাফল সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী দাহাল সেটিকে অত্যন্ত সফল বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, ‘এই সফরটি শীর্ষ রাজনৈতিক পর্যায়ে পারস্পরিক আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে এবং আরও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য একটি অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করাপাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ, জনগণের পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক সহযোগিতাও জোরদার করেছে।

যাই হোক, নেপালে অভ্যন্তরের সমালোচকরা এ বিষয়ে বেশ হতাশ যে, বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও চিনের কাছ থেকে নেপাল নির্দিষ্ট কিছু অর্জন করতে পারেনি। তাঁদের মতে, নেপাল চিনকে তার বিতর্কিত নতুন মানচিত্র পুনর্বিবেচনা করতে রাজি করার জন্য বিশেষ কিছুই করেনি, যা দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে ক্ষুণ্ণ করেছে। জিলং-কেরুং-রসুওয়াগাধি-চিলিমে ট্রান্সমিশন লাইনের চুক্তির ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও সমালোচকরা সন্দিহান কারণ এর অর্থায়নের পদ্ধতিতে স্পষ্টতার অভাব রয়েছে। চিন পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ঋণকে অনুদানে রূপান্তর না করায় সমালোচকরা যথেষ্ট চিন্তিত। এর পরিবর্তে, নেপাল জিলং/কেরুং-কাঠমান্ডু ক্রস বর্ডার রেলওয়ের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে অধ্যয়ন চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে, যদিও এটি এমন প্রকল্পের তালিকাভুক্ত হতে পারে, যা দেশে আর একটি বহুল খরচসাপেক্ষ প্রকল্প হয়ে উঠবে।

 

নেপাল জিলং/কেরুং-কাঠমান্ডু ক্রস বর্ডার রেলওয়ের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে অধ্যয়ন চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে, যদিও এটি এমন প্রকল্পের তালিকাভুক্ত হতে পারে, যা দেশে আর একটি বহুল খরচসাপেক্ষ প্রকল্প হয়ে উঠবে।

 

চিনে এই ধরনের পণ্য রফতানিতে কৃষি ও শিল্প পণ্যের উৎপত্তির প্রমাণ এবং গুণমান সংক্রান্ত শংসাপত্র কঠোর ভাবে আরোপ করার বিষয়ে অ-শুল্ক বাধাগুলি হঠানো সম্পর্কে চিনাদের বোঝাতে ব্যর্থ হওয়াকারণেও প্রধানমন্ত্রী দাহাল সমালোচিত হয়েছেন প্রতি বছর দ্রুত হারে বেড়ে চলা চিনের সঙ্গে নেপালের বাণিজ্য ঘাটতির জন্যও এ হেন একটি কারণ দায়ী২০১৩-১৪ সালে নেপাল চিন থেকে ৪৯.৫ বিলিয়ন ভারতীয় টাকা মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে। যা ২০২২-২৩ সালে প্রায় তিনগুণ বেড়ে ১৩৮.৭৫ বিলিয়ন টাকায় দাঁড়িয়েছে একই সময়ে চিনে নেপালের রফতানি ১.৫৭ বিলিয়ন ভারতীয় টাকা থেকে হ্রাস পেয়ে ১.১ বিলিয়ন ভারতীয় টাকায় দাঁড়িয়েছেনেপাল চিনে যা রফতানি করে, তার চেয়ে প্রায় ১৫০ গুণ বেশি আমদানি করে। নেপাল প্রধানত চিন থেকে বৈদ্যুতিক পণ্য, কাপড়, খাদ্য, ফলমূল, যানবাহন, মোবাইল, ল্যাপটপ এবং যন্ত্রপাতি আমদানি করেএবং নেপাল চিনে ভেষজ দ্রব্য, কার্পেট, আসবাবপত্র, হস্তনির্মিত কাগজ এবং ইয়ারসাগুম্বা (কর্ডিসেপস বা এক ধরনের কীটনাশক) রফতানি করে।

 

বিষয়টিতে নেপালি জনগণকে প্রায় প্রত্যাখ্যানই করা হয়েছে কারণ দেশটি চিনে নেপালি পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা অপসারণের জন্য এবং পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো প্রকল্পের জন্য ঋণ রূপান্তর করার বিষয়ে চিনের পক্ষ থেকে কোনও দৃঢ় আশ্বাস পেতে সক্ষম হয়নি

 

নেপালের প্রধানমন্ত্রী দাহালের চিন সফরের প্রাক্কালে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও তা নেপালের উন্নয়নে কোনও বাস্তব প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়নি।  বিষয়টিতে নেপালি জনগণকে প্রায় প্রত্যাখ্যানই করা হয়েছে কারণ দেশটি চিনে নেপালি পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা অপসারণের জন্য এবং পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো প্রকল্পের জন্য ঋণ রূপান্তর করার বিষয়ে চিনের পক্ষ থেকে কোনও দৃঢ় আশ্বাস পেতে সক্ষম হয়নি তা সত্ত্বেও চিনের বিআরআই সম্পর্কে নেপালের অবস্থান সুস্পষ্ট করার জন্য দাহালকে কিছু কৃতিত্ব দেওয়া যেতে পারেতিনি এ কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, সংশ্লিষ্ট উদ্যোগের অধীনস্থ প্রকল্পগুলিকে নেপালে তখনই স্বাগত জানানো হবে, যদি সেগুলি অনুদানসাপেক্ষ হয়। দুই দেশের স্বার্থের এই সংঘর্ষের কারণেই কয়েক দশক ধরে নেপাল চিনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত তিন ডজনেরও বেশি চুক্তির বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এ ছাড়াও, দাহাল যে ভাবে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ এবং গ্লোবাল কালচারাল ইনিশিয়েটিভের মতো উদ্যোগে - যা নেপাল এবং অন্য দক্ষিণ এশীয় দেশগুলির উপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে - স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থেকেছেন, তার জন্যও তাঁর কৃতিত্ব প্রাপ্য। অবশ্য এ কথা স্বীকার করে নিতেই হবে যে, তিনি আন্তর্জাতিক উন্নয়নের উদ্যোগে  স্বাক্ষর করেছিলেন।

 


হরি বংশ ঝা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভিজিটিং ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.