Published on Feb 01, 2023 Updated 0 Hours ago

তাই সরকারকে তাদের ভূখণ্ডে প্রবেশ ও বসবাসকারী অভিবাসীদের সাহায্য করার জন্য একটি সর্বাঙ্গীন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অভিবাসন নীতি প্রণয়ন করতে হবে

তাইল্যান্ডের প্রয়োজন একটি অভিবাসন নীতি

ক্রমবর্ধমান বিশ্বায়নের পৃথিবীতে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের মধ্যে অভিবাসী শ্রমিকদের প্রয়োজনীয়তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কথা তাইল্যান্ডের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সত্যি। গত কয়েক দশকে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির দরুন তাইল্যান্ড একটি আঞ্চলিক অভিবাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে মায়ানমার ও কম্বোডিয়ার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এবং লাও পিপলস ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকের মতো প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা অভিবাসী শ্রমিকরা ব্যাংকককে তার অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বজায় রাখতে সাহায্য করে।

পরিসংখ্যানগত ভাবে তাইল্যান্ডের কৃষি, মৎস্য শিকার এবং উত্পাদন ক্ষেত্রে নিযুক্ত অভিবাসীদের ৮০ শতাংশ মায়ানমার থেকে আসেন। ২০২২ সালের তাইল্যান্ডের মিনিস্ট্রি অব লেবার বা শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্র অনুযায়ী, বিদেশে কর্মরত মায়ানমারের ১০ শতাংশ শ্রমশক্তির মধ্যে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মায়ানমারের অভিবাসী কর্মী তাইল্যান্ড এবং  মালয়েশিয়ায় কর্মরত। এভাবে ব্যাংকক এবং নেপিডোর অর্থনীতি অভিবাসী শ্রমিকদের শ্রম এবং দেশে অর্থ প্রেরণের জন্য তাঁদের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

১৯৮০ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত অভিবাসন প্রথা প্রচলিত রয়েছে। তাইল্যান্ডের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং শ্রমিকের ঘাটতি প্রতিবেশী দেশগুলির শ্রমিকদের জন্য কর্মসংস্থানে প্রলুব্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মায়ানমারের ভৌগোলিক নৈকট্য, দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা এই বিষয়টিকে ত্বরান্বিত করার অতিরিক্ত কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা সে দেশের হাজার হাজার অদক্ষ কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে একটি স্থিতিশীল ও নিরাপদ পরিবেশের আশায় তাইল্যান্ডে চলে যেতে প্ররোচিত করছে।

মায়ানমারের সঙ্গে তাইল্যান্ডের ২২০২ কিলোমিটার অভিন্ন সাধারণ চলাচলযোগ্য সীমান্ত রয়েছে। অভিবাসীরা বেশিরভাগই মোন স্টেট, কাইন স্টেট, শান স্টেট এবং তানিনথারি প্রদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে আসেন। সব স্থায়ী চেকপয়েন্টে সড়কপথে প্রবেশ করা যেতে পারে, শুধু নৌকাপথে সংযুক্ত আছে রানং-কাউথং চেকপয়েন্ট। বেশ কয়েকটি অনানুষ্ঠানিক সীমান্ত চেকপয়েন্টও রয়েছে, বিশেষ করে মায়ে সোটের কাছে, যেখান দিয়ে নথিবিহীন অভিবাসনও ঘটে থাকে।

মায়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা

তাইল্যান্ড তাদের দেশে কর্মরত অভিবাসীদের বিষয়ে মায়ানমার সরকারের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে কোনও চুক্তি করেনি। ১৯৯২ সালে মায়ানমার থেকে আসা অভিবাসীদের কোনও প্রকার চুক্তি বা পদ্ধতি ছাড়াই শুধুমাত্র তাইল্যান্ডের চারটি প্রদেশে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। অবশেষে ২০০৩ সালে তাইল্যান্ডে কর্মরত অদক্ষ শ্রমিকদের আনুষ্ঠানিক ভাবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া করার জন্য মায়ানমার এবং তাইল্যান্ড সরকারের মধ্যে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানে সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যা তাঁদের অন্যান্য প্রদেশেও দুই বছর কাজ করার অনুমতি প্রদান করে। এই মউ ২০০৯ সালের পরে কার্যকর হয় এবং ২০১৬ সালে একটি নতুন মউ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। নতুন মউ অনিয়মিত অভিবাসন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এবং অভিবাসীদের নিয়োগের উপর মনোনিবেশ করলেও এটি মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষাকে উল্লেখযোগ্য ভাবে উপেক্ষা করে গিয়েছে।

২০১৭ সালের জুন মাসে তাই সরকার অনিবন্ধিত অভিবাসী কর্মীদের নিয়োগ বাজেয়াপ্ত করার জন্য বিদেশি শ্রমিকদের কর্মসংস্থান ব্যবস্থাপনা ঘোষণা করেছিল। এই খবরটি প্রায় ৬০,০০০ কর্মীকে মায়ানমারে ফিরে যেতে প্ররোচিত করে। তাই সরকার অবিলম্বে ২০১৮ সালে এই আইন কার্যকর করার বিধান এবং তারিখগুলি সংশোধন করে। সংশোধিত সংস্করণে ২০০৩ সালে মায়ানমারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত মউ-এর মাধ্যমে সংস্থাগুলির তরফে অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়োগের প্রয়োজনকেই স্পষ্ট করা হয়। যদিও এটিতে দুঃসহ পরিবেশে কর্মরত হাজার হাজার অনিবন্ধিত শ্রমিকের গুরুত্বপূর্ণ অংশটির কথা উল্লেখ করা হয়নি।

অতিমারি এবং তার পরবর্তীতে মায়ানমারে অভ্যুত্থান তাইল্যান্ডে কাজের খোঁজে যাওয়া মানুষ এবং আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা বাড়িয়েছে।

অতিমারিজনিত কারণে ২০২০ সালে স্থগিত হলেও সমঝোতাপত্রের (মউ) মাধ্যমে তাইল্যান্ডে নিয়মিত শ্রমিক অভিবাসন ২০২২ সালের মে মাসে পুনরায় শুরু হয়। তারপর থেকে এবং ৩০ জুন পর্যন্ত ২৫০০ শ্রমিক কাইন রাজ্যের মায়াওয়াদ্দি এবং তানিনথারি অঞ্চলের কাও থাউং, এই দু’টি সীমান্ত পার করে তাইল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছেন।

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং তারপর অভ্যুত্থান-পরবর্তী যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা মায়ানমারের নাগরিকরা নিরাপত্তার আশায় তাইল্যান্ডে প্রবেশ করেছেন। দেশটিকে এই অসহায় মানুষদের সমন্বিত করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

তবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং তারপর অভ্যুত্থান-পরবর্তী যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা মায়ানমারের নাগরিকরা নিরাপত্তার আশায় তাইল্যান্ডে প্রবেশ করেছেন। তাই সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য একটি উপযুক্ত উপায় খুঁজে বের করতে দিশাহারা হয়ে পড়েছে। ভিড়-ঠাসা আশ্রয়শিবিরে যাঁদের ঠাঁই হচ্ছে না তাঁদের দেশে ফেরত পাঠাতে ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। তাইল্যান্ড ১৯৫১ রিফিউজি কনভেনশনের অংশ নয় এবং এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য দেশটির উপযুক্ত নীতির অভাব রয়েছে। দেশটি ইতিমধ্যে অ্যান্টি টর্চার ল বা নিপীড়ন-বিরোধী আইন প্রণয়ন করেছে যা প্রিভেনশন অ্যান্ড সাপ্রেশন অফ টর্চার অ্যান্ড এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স অ্যাক্ট বি.ই.২৫৬৫ (২০২২) নামে পরিচিত। এই নতুন আইনে অ-পুনরুদ্ধারের নীতির একটি বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা একজন ব্যক্তিকে এমন একটি দেশে জোরপূর্বক ফিরিয়ে দেওয়া নিষিদ্ধ করে, যেখানে তাঁরা নির্যাতন বা অন্যান্য ধরনের খারাপ আচরণের মুখোমুখি হতে পারেন। সুতরাং, দেশটিকে অসহায় মানুষদের সমন্বিত করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। একটি উপায় হতে পারে এই মানুষদের দেশটির শ্রমিক প্রয়োজনীয়তা পূরণ করার কাজে লাগানো। শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে অনিয়মিত অভিবাসীদের ‘নিয়মিত অভিবাসী’ পরিসরে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে কিছু ঘাটতি এখনও রয়ে গিয়েছে।

পদ্ধতিগত সমস্যা

ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন-এর (এনভি) নিবন্ধন ও পুনঃনিবন্ধনের জটিল, সময়সাপেক্ষ এবং অত্যধিক ব্যয়বহুল প্রক্রিয়াটির ক্লান্তিকর প্রকৃতির কারণে অভিবাসীদের জন্য নিবন্ধীকরণ ছাড়াই কাজ করা সুবিধাজনক হয়ে ওঠে। মায়ানমার থেকে অভিবাসনকারী বহু লোক সঠিক পথে অভিবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ব্যবস্থা করতে দালালদের উপর নির্ভর করে। এতে পদ্ধতিটি আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে এবং জালিয়াতির সুযোগও করে দেয়।

এ কথা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের অনুমতি-সহ নিবন্ধিত হওয়ার গুরুত্ব এই বিষয়টিকেই খর্ব করে যে, একজন অভিবাসীর নিবন্ধনের স্থিতি তাঁর মত বা ইচ্ছে ছাড়াই নিয়োগকর্তার সঙ্গে সংযুক্ত। নিয়োগকর্তা পরিবর্তন করাও কঠিন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিয়োগকারীরা অভিবাসীদের রেজিস্ট্রেশন ফি বা নিবন্ধীকরণের মূল্য প্রদান করে। এর ফলে এক ধরনের ঋণ বন্ধন তৈরি হয়, যা নিয়োগকারীদের প্রয়োজনীয় নথি, ভ্রমণ এবং কাজের অনুমতি আটকে রাখার অধিকার প্রদান করে। অভিবাসীদের কম মজুরি দেওয়া হয়, তাঁদের সঙ্গে অমানবিক আচরণও করা হয়।

তাইল্যান্ড আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার কনভেনশন ৮৭ বা ৯৮ সমর্থন করেনি। সেই কারণে অভিবাসী শ্রমিকদের ইউনিয়ন গঠনের অধিকার নেই। তাই সরকার অনির্দিষ্ট ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’র কথা উল্লেখ করে মায়ানমার থেকে অভিবাসীদের সংঘবদ্ধকরণের বিষয়ে তার আশঙ্কা ও আপত্তিকে বৈধতা দেয়। নাগরিক সংগঠনগুলি এই বিষয়টি এবং এর প্রতিকারের প্রক্রিয়ার উপর মনোনিবেশ করলেও তাই সরকার সেগুলিকে বেআইনি বলে মনে করে।

যে অভিবাসীরা নিবন্ধিত নন বা ব্যবস্থার বাইরে রয়েছেন, তাঁরা অবৈধ বলে বিবেচিত হন। এ ভাবে যে কোনও সময় তাঁদের গ্রেফতার করা হতে পারে এবং তাঁদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে। এটি অভিবাসীদের দুর্বলতাকেই বাড়িয়ে দেয়, কারণ তাঁরা সহজেই আইন  প্রয়োগকারী সংস্থার অপব্যবহারের শিকার হয়ে ওঠেন।

অভিবাসী জনসংখ্যার প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে অর্থনীতির চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে তাই সরকারকে তাদের ভূখণ্ডে প্রবেশ ও বসবাসকারী অভিবাসীদের সাহায্য করার জন্য একটি সর্বাঙ্গীন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অভিবাসন নীতির সূচনা করতে হবে। একটি শক্তিশালী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কাঠামো নির্মাণ সুনিশ্চিত করতে নীতি প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় অভিবাসীদের দৃষ্টিভঙ্গিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

একটি শক্তিশালী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কাঠামো নির্মাণ সুনিশ্চিত করতে নীতি প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় অভিবাসীদের দৃষ্টিভঙ্গিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

অভিবাসন প্রক্রিয়া পরিচালনাকারী প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক উভয় ক্ষেত্রেই কর্মীদের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধি অপরিহার্য। কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতি মোকাবিলা করার জন্য যে কোনও অনিয়মিত আর্থিক লেনদেনকে চিহ্নিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার দরকার রয়েছে। আন্তঃসংস্থা সমন্বয় বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। সর্বোপরি, অভিবাসী জনসংখ্যার প্রয়োজনের জন্য সহজেই লব্ধ এবং নিরপেক্ষ একটি শক্তিশালী আইনি ব্যবস্থা জরুরি। তাইল্যান্ড এবং মায়ানমারের অভিবাসীদের মধ্যে শ্রম অধিকার সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো তাঁদের বিশ্বাসঘাতক মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছ থেকে সুরক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হবে।

সরকার নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত অভিবাসীদের থাকার মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাড়ালেও তাইল্যান্ডে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক বৃদ্ধি অর্জনের জন্য অভিবাসন এবং শ্রম অভিবাসন সংক্রান্ত সমস্যাগুলিকে কৌশলগত কাঠামোর মধ্যে সমন্বিত করা অপরিহার্য।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.