Published on Jul 02, 2022 Updated 0 Hours ago

ভারতে গার্হস্থ্য গ্যাসের দাম বৃদ্ধি এবং এর উৎপাদন ও ব্যবহারের উপর তার প্রভাব।

ভারতের প্রাকৃতিক গ্যাস ‌ক্ষেত্র: মূল্য নিয়ন্ত্রণের মূল্য

এই নিবন্ধটি ‘‌কম্প্রিহেনসিভ এনার্জি মনিটর: ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য ওয়র্ল্ড’‌ সিরিজের অংশ


গার্হস্থ্য গ্যাসের মূল্য সংশোধন

৩১ মার্চ ২০২২-এ, ভারত সরকার গার্হস্থ্য গ্যাসের দাম মার্কিন ডলার ২.৯/এম এম বিটিইউ  (মেট্রিক মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) থেকে বাড়িয়ে মার্কিন ডলার ৬.১০/এম এম বিটিইউ করেছে, যা ১১০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি। এ ছাড়া সরকার গভীর জল, অতি–গভীর জল, উচ্চ তাপমাত্রা, এবং উচ্চ-চাপযুক্ত গ্যাসের মূল্যসীমা মার্কিন ডলার ৬.১৩/এম এম বিটিইউ থেকে বাড়িয়ে মার্কিন ডলার ৯.৯২/এম এম বিটিইউ করেছে, যা ৬১ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি। দামের ঊর্ধ্বমুখী সংশোধনের উপর নানা ভাষ্য এসেছে দেশীয় উৎপাদকদের লাভের উপর প্রভাব থেকে শুরু করে অ-জীবাশ্ম জ্বালানিতে সরে যাওয়ার প্রেরণা হিসেবে গ্যাসের চড়া দামকে ব্যবহার করা নিয়ে। বিস্তৃততর ক্ষেত্রে নীতির তাৎপর্য হল শক্তি নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং উপভোগের সম্ভাব্য বৃদ্ধি যা ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের প্রাথমিক শক্তির ঝুড়িতে প্রাকৃতিক গ্যাসের অংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশে নিয়ে গিয়ে ভারতকে গ্যাস-ভিত্তিক অর্থনীতিতে পরিণত করার নীতিগত লক্ষ্যপূরণে অবদান রাখতে পারে।

উৎপাদন  আমদানি

সূত্র: পিপিএসি

প্রাকৃতিক গ্যাসের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, বিশেষ করে বেসরকারি ও যৌথ উদ্যোগ সংস্থাগুলির উৎপাদন, মূল্য সংশোধনের ঘোষণার আগেই উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও নেট গার্হস্থ্য প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন ২০১১-১২ সালের ৪৬,৪৫৩ এম এম এস সি এম ডি (মেট্রিক মিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড কিউবিক মিটার প্রতি দিন) থেকে ২০২১-২২ সালে ৩৩,১৩১ এম এম এস সি এম ডি-তে নেমে এসেছে, এটি কিন্তু প্রাক-অতিমারি ৩০,২৫৭ এম এম এস সি এম ডি উৎপাদনের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলির উৎপাদন ২০১৯-২০ সালে ২৫,৭২৬ এম এম এস সি এম ডি থেকে ২০২১-২২  সালে ২২,৭৭৪ এম এম এস সি এম ডি-তে নেমে এলেও বেসরকারি ও যৌথ উদ্যোগ সংস্থাগুলির উৎপাদন ২০১৯-২০ সালের ৪৫৩১ এম এম এস সি এম ডি–র থেকে ১২৮ শতাংশের বেশি বেড়ে ২০২১-২২ সালে ১০,৩৫৭ এম এম এস সি এম ডি হয়েছে। এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি ২০১১-১২ সালের ১৭,৯৯৭ এম এম এস সি এম ডি   থেকে বেড়ে ২০২১-২২ সালে ৩১,৯০৬ এম এম এস সি এম ডি হয়েছে।

এলএনজি আমদানির অর্থ দাঁড়িয়েছে মূল্যের ব্যাপক অস্থিরতার মুখোমুখি হওয়া। এশিয়ার স্পট এলএনজি আমদানির মানদণ্ড জাপান-কোরিয়া মার্কার মূল্য ২০২০ সালের এপ্রিলে অতিমারি প্রভাবিত অর্থনৈতিক মন্দার কারণে প্রায় মার্কিন ডলার ২/এম এম বিটিইউ-তে নেমে আসে, কিন্তু ইউক্রেন সংকট এবং সংশ্লিষ্ট প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ ঝুঁকির পরিণতিতে ১৬৫০ শতাংশ বেড়ে মার্চ ২০২২-এ মার্কিন ডলার ৩৫/এম এম বিটিইউ-এর বেশি হয়। ভারত যদি মার্কিন ডলার ৩৫/এম এম বিটিইউ-এর বেশি দামে এলএনজি-র ২৫ শতাংশ কিনে থাকে, তা হলে তার দাম পড়েছে ৯৮০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি। যাই হোক, যদি এই চাহিদা গার্হস্থ্য গ্যাস দিয়ে পূরণ করা হয়, এমনকি জটিল গভীর-জলের ক্ষেত্র থেকেও, তা হলে খরচ এক–তৃতীয়াংশেরও কম হবে। যুক্তির অন্য দিকটি হল, দেশীয় উৎপাদকেরা কার্যকর ভাবে কম উৎপাদনের মাধ্যমে আমদানিতে ভর্তুকি পেয়েছে, যার অর্থ শুধু উল্লেখযোগ্য রাজস্ব ক্ষতিই নয়, অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টিরও ক্ষতি।

মাটির নিচে থাকা হাইড্রোকার্বন সম্পদ কমে যাচ্ছে, এবং সেই কারণে বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহ আনার প্রান্তিক খরচ প্রায় সব সময়ই গড় খরচকে ছাপিয়ে যায়।

উৎপাদনের উপর প্রভাব

ভারতে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য নিয়ন্ত্রণ বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণের মতো, এবং তার প্রভাবও শহুরে ভাড়াবাড়ির ঘাটতির থেকে ভিন্ন নয়। এটি সরবরাহে সাহায্য না করে চাহিদাকে অনুকরণ করেছে। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান ঠিক সেই অর্থে একটি ইউটিলিটি ফাংশন নয়, যেখানে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অর্থ অন্যান্য শিল্পের মতো সরবরাহ বৃদ্ধি নয়। ‌তেল ও গ্যাস  অনুসন্ধান হল সম্ভাবনা ও সম্ভাব্যতার একটি খেলা, যার জন্য ঝুঁকি নেওয়ার বড় ধরনের খিদে প্রয়োজন। মাটির নিচে থাকা হাইড্রোকার্বন সম্পদ কমে যাচ্ছে, এবং সেই কারণে বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহ আনার প্রান্তিক খরচ প্রায় সব সময়ই গড় খরচকে ছাপিয়ে যায়। বর্তমান পদ্ধতি, যা অতিরিক্ত সরবরাহ আনার প্রান্তিক খরচ বিবেচনা করে না, তা ঝুঁকি নেওয়া এবং আবিষ্কারকে দমিয়ে দিয়েছে। নিয়ন্ত্রিত মূল্য ব্যবস্থার অধীনে রাজস্ব ও প্রতিস্থাপন খরচের মধ্যে ব্যবধান সময়ের সঙ্গে বেড়েছে, এবং একটি ‘‌পুরনো’‌‌ মূল্যের মধ্যে আটকে যাওয়ার ভয় উৎপাদকদের নতুন রিজার্ভের জন্য কনট্র‌্যাক্ট কেনার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহী  করেছে। এমনকি যদি নিয়ন্ত্রিত মূল্যগুলি উচ্চ স্তরে নির্ধারিত হয় এবং নমনীয়তার জন্য বিস্তৃত মার্জিনের অনুমতি দেওয়া হয়, তা হলেও তা প্রান্তিক মূল্য বরাবর পৌঁছবে না এবং যেখানে ঝুঁকি বেশি তেমন প্রান্তিক অঞ্চলের জন্য বিনিয়োগ টানবে না।

উপভোগের উপর প্রভাব

কয়লা, তেল, ও প্রাকৃতিক গ্যাস শিল্প সবই বাজারের অস্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়েই জন্ম নিয়েছিল, এবং সেই কারণে বিশ্বব্যাপী নিয়ন্ত্রণের অধীন ছিল। যদিও কয়লা শিল্পে হস্তক্ষেপগুলি মূলত কয়লা শ্রমিকদের দাবি মেনে করা হয়েছিল, এবং তেল শিল্পের ক্ষেত্রে শিল্পের দাবি মেনে, প্রাকৃতিক গ্যাস সেক্টরে হস্তক্ষেপগুলি সব সময়েই প্রাকৃতিক গ্যাসের গ্রাহকদের দাবি অনুসারে করা হয়েছিল, কারণ ক্রয়ের জায়গাটিতে তাদের স্বাভাবিক মনোপলি বা একচেটিয়াপনা ছিল। ভারতও এই নিয়মের ব্যতিক্রম নয়। প্রায় তিন দশক আগে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন শুরু হওয়ার পর থেকে শিল্পটি ক্রমাগত ক্ষতিপূরণমূলক প্রবিধানের অধীন রয়েছে, যা ভোক্তাদের অনুকূলে যায়। ফলস্বরূপ, ক্ষেত্রটির অভ্যন্তরে এবং বাইরে সম্পদ বরাদ্দে অনেক অনুৎপাদনশীল বিকৃতি তৈরি হয়েছে।

প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে বেশিরভাগই হল ক্রমিক সিদ্ধান্ত, যা গ্যাস ব্যবহারের সমকালীন ধরন দ্বারা ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত হয়। যে সব শিল্প প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারে অগ্রাধিকার পেয়েছে, তারা এটিকে এমন ভাবে ব্যবহার করেছে যা অর্থনৈতিক ভাবে অদক্ষ, কারণ তারা যে মূল্য–সংকেত পেয়েছে তা বিভ্রান্তিকর। যে সব শিল্প উচ্চ মূল্য দিতে ইচ্ছুক হলেও গ্যাসের সঙ্গে সংযুক্ত নয়, তারা পরিবর্তে অন্যান্য জ্বালানি ব্যবহার করে এবং তার ফলে তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার বিকৃত হয়। স্বল্পমেয়াদে, যাদের সংযোগ আছে তারা  উপকৃত হয়েছে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সমস্ত গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর একটি কারণ হল সম্ভাব্য সরবরাহকারীদের বাজারে গ্যাস আনার অনিচ্ছা, এবং আর একটি কারণ হল নিয়ন্ত্রণের দ্বারা সৃষ্ট দর কষাকষির প্রক্রিয়ার ফলে নতুন গ্যাসের উচ্চমূল্যের আশা, যা কি না প্রতিযোগিতামূলক অবস্থার অধীনে যা দাম হত তার চেয়ে বেশি।

জ্বালানি ক্ষেত্রের সংস্কারের প্রসঙ্গে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মন্তব্য করেছিলেন যে ‘‌প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতি‘‌ এবং ‘‌বিভক্ত জনমত’‌-এর কারণে ‘‌প্রকাশ্য ভাবে স্পষ্ট ’‌ নীতিগুলির বাস্তবায়ন করা কঠিন। প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতি এবং বিভক্ত জনমতের অর্থ হল, যে ‘‌নীতিগুলি’‌ আজ শক্তি ক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে তা নিছক ক্রমিক সিদ্ধান্তের একটি সেট, যার কিছু সরকার নিয়েছে, আর বাকি কিছু শিল্পের শরিকেরা নিয়েছে। কিন্তু এই সবই শক্তি সরবরাহের প্রচলিত ধরন এবং উপভোগের দ্বারা ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত হয়েছে।

ভর্তুকির জন্য কোনও চলতি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয় না, এবং তা জনসাধারণের মন থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। কিন্তু মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং প্রাকৃতিক গ্যাস পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা বার বার নতুন করে করতে হয়, এবং এই ভাবে তা রাজনৈতিক স্বার্থের ক্ষেত্রে আরও আরও দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। এই ধরনের জমানায় সর্বনিম্ন মূল্যে অতিরিক্ত সরবরাহ আনার জন্য অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার পরিবর্তে ব্যবসায়িক সংস্থাগুলিকে সরকারের কাছে অগ্রাধিকার পাওয়ার জন্য লড়াই করতে হয়। দীর্ঘমেয়াদে এর ফলে পুরো ব্যবস্থাটি যে কারণে গড়ে উঠেছিল, অর্থাৎ দীর্ঘতম সম্ভাব্য সময়ে সর্বনিম্ন খরচে প্রচুর পরিমাণে শক্তির সরবরাহ নিশ্চিত করা, সেই লক্ষ্যগুলি পূরণের ক্ষমতাই হ্রাস পেয়েছে।

সূত্র: দেশের ভেতরে দামের জন্য পিপিএসি, জেকে মার্কারের জন্য বিপি
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Vinod Kumar Tomar

Vinod Kumar Tomar

Vinod Kumar, Assistant Manager, Energy and Climate Change Content Development of the Energy News Monitor Energy and Climate Change. Member of the Energy News Monitor production ...

Read More +
Lydia Powell

Lydia Powell

Ms Powell has been with the ORF Centre for Resources Management for over eight years working on policy issues in Energy and Climate Change. Her ...

Read More +
Akhilesh Sati

Akhilesh Sati

Akhilesh Sati is a Programme Manager working under ORFs Energy Initiative for more than fifteen years. With Statistics as academic background his core area of ...

Read More +