Published on Jan 16, 2025 Updated 0 Hours ago

ফোরাম অন চায়না-আফ্রিকা কোঅপারেশন ২০২৪ (এফওসিএসি) কি ব্যাপক বৃদ্ধি-পরবর্তী চরম সঙ্কোচনের পরিস্থিতিতে চিন-আফ্রিকা সম্পর্কের একটি যুগের সমাপ্তিকেই দর্শায়? এবং আফ্রিকান নেতারা কি চিনের ব্যাপারে হতাশ?’

পরিবর্তনের মাঝে পথ খুঁজে নেওয়া: চিন কি আফ্রিকার উপর তার নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে?

Image Source: Getty

সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে যখন আফ্রিকান নেতারা বেজিংয়ে নবম ফোরাম অন চিন-আফ্রিকা কোঅপারেশনের (এফওসিএসি) জন্য মিলিত হন, তখন কথা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, চিনের প্রতি আফ্রিকার মোহভঙ্গ হয়েছে। শীর্ষ সম্মেলনটি বরাবরের মতোই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল, যেখানে আফ্রিকার ৫১ জন রাষ্ট্রপ্রধান উপস্থিত ছিলেন এবং আগামী তিন বছরের জন্য চিন থেকে ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন। এটি চিনের অব্যাহত প্রতিশ্রুতিকে চিহ্নিত করলেও খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, অন্তরালে একাধিক সমস্যা রয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, প্রতিশ্রুত ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে মাত্র ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নতুন বিনিয়োগের অংশ। এই পরিমাণটি তিন বছরের তুলনায় তুলনামূলক ভাবে কম, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর মানবিক সহায়তার জন্য বরাদ্দ করা বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনায় তো বটেই। উপরন্তু, এই বিনিয়োগের বেশির ভাগ বেসরকারি খাত থেকে আসবে। এই অঙ্কের পরিমাণ আর্থিক ভাবে দুর্বল আফ্রিকার দেশগুলির জন্য উল্লেখযোগ্য হলেও তা চিনের প্রেক্ষিতে নিতান্তই নগণ্য। এই পরিবর্তন আফ্রিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়ে চিনের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনেরও ইঙ্গিত দেয়।

সর্বোপরি, এফওসিএসি ২০২৪ আগেকার বছরের তুলনায় আফ্রিকাতে উল্লেখযোগ্য ভাবে কম গণমাধ্যমের নজর আকর্ষণ করেছে, যার ফলে চিন-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনটি তার আকর্ষণ হারিয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আগ্রহে এ হেন  ঘাটতি মহাদেশের সঙ্গে চিনের সম্পৃক্ততার একটি পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে, যা ২০১০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়কালের আক্রমণাত্মক মনোভাব থেকে অনেকটাই আলাদা। সম্পদ সংক্রান্ত ব্যাপক চুক্তি, বড় ঋণ সুবিশাল অবকাঠামো প্রকল্পের যুগটি আর্থিক পরিবেশগত স্থিতিশীলতার উপর নতুন মনোযোগ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে।

বছরের পর বছর ধরে এফওসিএসি আংশিক ভাবে দেখনদারির কারণে উল্লেখযোগ্য প্রভাব অর্জন করেছে। এই শীর্ষ সম্মেলনটি ৫৪টি দেশ বনাম একটি দেশের অন্তর্নিহিত ভারসাম্যহীনতাকে দর্শালেও মনটা সম্ভব হয় চিনের সূক্ষ্ম ক্ষুদ্র দেশের কূটনৈতিক অবকাঠামোর জন্য। তাঁদের চিন সফরের সময় আফ্রিকান নেতারা প্রায়শই চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক-সহ বিশেষ আতিথ্য পান। এই পদ্ধতিটি আফ্রিকা প্লাস ওয়ান শীর্ষ সম্মেলন অবকাঠামোর ভারসাম্যহীনতার ভাবমূর্তিকে খর্ব করে।

এফওসিএসি-তে সম্মত হওয়ার আগে অনেক নেতা প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করেন এবং বেজিং, সাংহাই, শেনজেন গুয়াংঝো-এর মতো প্রধান চিনা শহরগুলি সফর করেন।

আফ্রিকার হাদেশের মাথায় ১৭০ বিলিয়ন ডলারের বেশি চিনা ঋণের বোঝা থাকা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের উদ্বোধনী ভাষণে আশ্চর্যজনক ভাবে এই সমস্যার কোন উল্লেখ করা হয়নি। পরিবর্তে, চিন পূর্ববর্তী প্রতিশ্রুতির তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে বড় ঋণ প্যাকেজের কথা ঘোষণা করেছে। পরবর্তী কালে, এসসিএমপি-র একটি প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে যে, চিন এই বছরের শেষ নাগাদ ৩৩টি আফ্রিকান দেশের জন্য আন্তঃসরকারি সুদ-মুক্ত ঋণ মকুব করার পরিকল্পনা করছে।

তবে, এই মকুবের বিষয়টি আফ্রিকা মহাদেশে চিন দ্বারা প্রদত্ত মোট ঋণের মাত্র পাঁচ শতাংশ

আর্থিক সাহায্যের ঊর্ধ্বে উঠে চিনের কৌশল এখন নতুন ক্ষেত্রগুলিতেও দেখা গিয়েছে এবং সেগুলি হল রাজনৈতিক নিরাপত্তা সহযোগিতা। নতুন পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে আফ্রিকান সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ, শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা। ঘটনাপ্রবাহের নাটকীয় মোড় গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ-এর (জিএসআই) জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বেজিং রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে বিনিময় বৃদ্ধি করার সদিচ্ছা প্রকাশ করেছে। এ ভাবে, তানজানিয়ায় একটি রাজনৈতিক দলের প্রশিক্ষণ স্কুল প্রতিষ্ঠার পর সিসিপি কেনিয়ায় আর কটি স্কুল খোলার পরিকল্পনা করেছে। এই পদক্ষেপ এ হেন উদ্বেগকেই তুলে ধরে যে, এমনটা করার মাধ্যমে চিসম্ভবত অংশগ্রহণকারী আফ্রিকান সরকারগুলির মধ্যে নিজের কর্তৃত্ববাদী মডেলের প্রচার করতে চায়

এ ছাড়াও কতগুলি সূক্ষ্ম অথচ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনও ঘটেছে। এই বছরের সম্মেলনটি প্রথম চারটি উচ্চ পর্যায়ের অধিবেশনে বিভক্ত ছিল: রাষ্ট্র প্রশাসন, শিল্পায়ন কৃষি আধুনিকীকরণ, শান্তি ও নিরাপত্তা এবং উচ্চ মানের বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতা। এই বিভাজনের সুনির্দিষ্ট কারণগুলি এখনও স্পষ্ট না হলেও এটি চিনকে তার অর্থায়নের বিষয়ে কিছু অস্পষ্টতা বজায় রাখার সুযোগ করে দিতে পারে। এর বিপরীতে ভবিষ্যৎ প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে অসংখ্য সুস্পষ্ট ঘোষণার মধ্যে রয়েছে পূর্ববর্তী ভাবে বিদ্যমান প্রকল্পগুলির সংমিশ্রণে পুরনো তহবিলগুলি পুনরায় প্যাকেজ করা বা নতুন প্রচেষ্টার সঙ্গে সেগুলিকে সংযুক্ত করা, যার মধ্যে কিছু প্রকল্পের এখনও বাস্তবায় হয়নি।

অবশেষে চিপ্রথম বারের মতো ইউয়ানে তার সহায়তা অনুদান প্রদান ও ঋণের কথা ঘোষণা করেছে। বর্তমানে, আরএমবি-তে আন্তর্জাতিক অর্থপ্রদান সমস্ত মুদ্রা লেনদেনের শতাংশকেই প্রতিনিধিত্ব করে, যা ইউরোর ৫.৩ শতাংশ ভাগের তুলনায় বেশি। এটি ডি-ডলারাইজেশন এবং চিনা ইউয়ানের প্রচারের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ

আফ্রিকায় চিনের নতুন বাস্তবতা

অতএব, দুটি প্রশ্নই উঠে আসে। ফোরাম অন চায়না-আফ্রিকা কোঅপারেশন ২০২৪ (এফওসিএসি) কি ব্যাপক বৃদ্ধি-পরবর্তী চরম সঙ্কোচনের পরিস্থিতিতে চিন-আফ্রিকা সম্পর্কের একটি যুগের সমাপ্তিকেই দর্শায়? এবং আফ্রিকান নেতারা কি চিনের ব্যাপারে হতাশ?’ প্রকৃত পক্ষে বিগত ১৫ বছর ধরে চিন-আফ্রিকা আখ্যানটিকে উইন-উইন ডেভেলপমেন্ট’ বা ‘উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক’ এবং স্থিতিশীল ভাবে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ ও ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্পর্ক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। চিরাচরিত দাতারা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় পর চিন আফ্রিকান সরকারগুলিকে অবকাঠামো অন্যান্য চাপের আর্থিক প্রয়োজনীয়তাগুলির জন্য অর্থায়নের বিকল্প উপায়গুলি সন্ধান করার সুযোগ করে দিয়েছে। বিনিময়ে, আফ্রিকা তার উৎপাদন ক্ষেত্রের জন্য চিনকে কাঁচামাল সরবরাহ করে এবং চিনের তৈরি পণ্যের জন্য নতুন বাজার খুলে দিয়েছে। যখন আফ্রিকা সরকারগুলি এই আর্থিক সুবিধাগুলি সুরক্ষিত করতে আগ্রহী ছিল, চিতখন তার বৃদ্ধির ইঞ্জিনকে সচল রাখায় সন্তুষ্ট ছিল।

তাঁদের চিন সফরের সময় আফ্রিকান নেতারা প্রায়শই চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক-সহ বিশেষ আতিথ্য পান। এই পদ্ধতিটি আফ্রিকা প্লাস ওয়ান শীর্ষ সম্মেলন অবকাঠামোর ভারসাম্যহীনতার ভাবমূর্তিকে খর্ব করে। এফওসিএসি-তে সম্মত হওয়ার আগে অনেক নেতা প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করেন এবং বেজিং, সাংহাই, শেনজেন গুয়াংঝো-এর মতো প্রধান চিনা শহরগুলি সফর করেন।

যাই হোক, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আফ্রিকা বুঝতে পেরেছে যে, চিনের সঙ্গে তার সম্পর্ক সর্বদাই অসম ছিল। চিন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল দেশ। আফ্রিকার তুলনামূলক ভাবে ছোট অর্থনৈতিক ভাবে সুবিধাবঞ্চিত দেশগুলির সঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রে চিন সর্বদা একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা বজায় রেখেছে। আফ্রিকান দেশগুলির ক্রমবর্ধমান সংখ্যার জন্য বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার হওয়া সত্ত্বেও সমগ্র আফ্রিকা চিনের কাছে তুলনামূলক ভাবে নগণ্যই থেকেছে। বাণিজ্য যুদ্ধের প্রকোপ প্রকট আকার ধারণ করলে চিনের বাণিজ্য প্রবাহ আমেরিকা, ইউরোপ এবং এমনকি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবাহিত হয়, যা আফ্রিকায় চিনা পণ্যের প্রবাহের তুলনায় উল্লেখযোগ্য রকমের বেশি। আফ্রিকায় চিনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিমাণ পাঁচ শতাংশেরও কম।

চিন-আফ্রিকা বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়তে থাকলেও অতিমারি পরবর্তী সময়ে গতি হ্রাস পেয়েছে। সর্বোপরি, বেজিং এখন ধীরে ধীরে আফ্রিকার সঙ্গে তার আর্থিক প্রতিশ্রুতি হ্রাস করছে। মনে হচ্ছে আরও আফ্রিকান দেশগুলি চিনের প্রতি মোহভঙ্গ হয়ে উঠছে এবং দ্রুতই আরও অনুকূল শর্তাবলি প্রদান করে চিন অন্যান্য অংশীদার খুঁজে নেবে।

এই পরিবর্তন সত্ত্বেও চিন আফ্রিকার শীর্ষ ব্যবসায়িক অংশীদার রয়ে গিয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে দ্বিমুখী বাণিজ্যের পরিমাণ ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ ২৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেকর্ড মাত্রা স্পর্শ করেছে। আফ্রিকায় প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) ৪.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দ্বিগুণ। উপরন্তু, চিআফ্রিকা মহাদেশের জন্য অগ্রণী ঋণদাতার ভূমিকা পালন করে। সুনিশ্চিত ভবিষ্যদ্বাণী করার সময় এখনও না এলেও একদা সম্ভাবনাময় এই সম্পর্কটি নিঃসন্দেহে তার জৌলুস হারিয়েছে এবং তুলনামূলক ভাবে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সম্মুখীন হয়েছে।

এ দিকে, আরও বেশি সংখ্যক আফ্রিকা +শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন হচ্ছে। কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, এমনকি সৌদির মতো নতুন শক্তিগুলিও একই ধরনের শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন শুরু করেছে। আগামিদিনে আফ্রিকান দেশগুলির জন্য ব্যক্তিগত ভাবে এবং সম্মিলিত ভাবে প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে, তারা এই শীর্ষ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক দিকগুলি অতিক্রম করে অনুকূল চুক্তির জন্য আলোচনা করতে, তাদের নিজস্ব শর্তাবলি নির্ধারণ করতে এবং তাদের স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে কি না। চিন আফ্রিকায় তার বিনিয়োগ থেকে স্পষ্টতই লাভবান হয়েছে। কিন্তু আফ্রিকার দেশগুলিচিনের কাছ থেকে ন্যায়সঙ্গত সুবিধা পায় কি না, তা দেখার বিষয়।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ইস্ট-ওয়েস্ট সেন্টার-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.