Published on Jul 31, 2024 Updated 0 Hours ago

ইউরোপের বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক ভূচিত্রকে ন্যাটো প্রতিষ্ঠার পরের বছরগুলির পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করলে, একথা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে খুব সামান্য পরিবর্তন হয়েছে।

ন্যাটোর জয় ও দুর্ভোগ: সংগঠনটি রাজনৈতিক, আর্থিক এবং নিরাপত্তা পরিসরজুড়ে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন

এপ্রিল মাসে উত্তর আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) তার ৭৫তম বার্ষিকী চিহ্নিত করার সময় উদযাপনগুলির মধ্যে একটি গভীর বাস্তবতা যুক্ত ছিল — জোটের অস্তিত্বের লক্ষ্য আপাতদৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ছাড়াই তার উৎসে ফিরে গিয়েছে। ন্যাটো শুরুর সময়কার সেক্রেটারি-জেনারেল লর্ড ইসমে বিখ্যাতভাবে বলেছিলেন যে "রাশিয়ানদের বাইরে রাখতে, আমেরিকানদের ভিতরে এবং জার্মানদের নিচে রাখতে" এই জোট গঠন করা হয়েছিল।

এক শতাব্দীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ পরে জার্মান ফ্যাক্টর বাদ দিয়ে ইসমে-র বর্ণিত মৌলিক উদ্দেশ্যটি অনেকাংশে অপরিবর্তিত রয়েছে। "ইউরোপে সোভিয়েত আক্রমণের খুব বাস্তব সম্ভাবনার" প্রতিক্রিয়া হিসাবে ৪ এপ্রিল, ১৯৪৯-এ প্রতিষ্ঠিত ন্যাটো আবার নিজেকে একটি সম্ভাব্য হুমকি হিসাবে রাশিয়ার মোকাবিলা করতে দেখছে, যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা (‌ডেটারেন্স)‌ প্রয়োজন।

ইউরোপের বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক ভূচিত্রকে ন্যাটো প্রতিষ্ঠার পরের বছরগুলির পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করলে, এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে খুব সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। রাশিয়া ইউরোপে একটি উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি বজায় রাখে, আর ন্যাটো আরও সম্প্রসারিত হওয়ার লক্ষ্য রাখে। উপরন্তু, বিশ্বব্যাপী নতুন জোট ও পার্টনার ক্লাস্টারগুলি আবির্ভূত হতে পারে, যা বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা ভূচিত্রের পুনর্নির্মাণ করে।

নীতিগতভাবে, একটি মহাশক্তি প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে, যৌথ নিরাপত্তা সংস্থাগুলি সব সময় স্থিতিশীল শক্তি হিসাবে কাজ নাও করতে পারে। সর্বোত্তমভাবে, তারা সামরিকভাবে উচ্চতর সমষ্টির আধিপত্যের মাধ্যমে প্রতিরোধ প্রতিষ্ঠা করে।


সবচেয়ে খারাপভাবে, তারা অস্থিতিশীল হতে পারে, যার প্রভাব ব্যাপকভাবে প্রতিফলিত হয় এবং কয়েক দশক ধরে চলতে থাকে। ১৯৪৯ সালে ন্যাটোর প্রতিষ্ঠা সোভিয়েত ইউনিয়নকে ১৯৫৫ সালে একটি প্রতিশোধমূলক পারস্পরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ওয়ারশ চুক্তি তৈরি করতে প্ররোচিত করে। বিশেষ করে ন্যাটোতে পশ্চিম জার্মানির অন্তর্ভুক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নকে একটি পাল্টা পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

ইতিহাস জুড়ে, বৈশ্বিক সংকটগুলি প্রায়শই যৌথ সুরক্ষা সংস্থাগুলিকে শক্তিশালী করতে কাজ করেছে, এবং মৌলিকভাবে তাদের প্রকৃতি পরিবর্তন করেছে। ন্যাটো, যা প্রাথমিকভাবে ছিল একটি রাজনৈতিক সমিতির চেয়ে সামান্য বেশি কিছু, ১৯৫০-‌৫৩ সালে কোরিয়ান যুদ্ধের প্রাদুর্ভাবের সময় তার ভূমিকায় একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছিল।

শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য এর প্রচেষ্টা প্রথমে ১৯৯৯ সালে কসোভোতে এবং পরে রাষ্ট্রপুঞ্জের পৃষ্ঠপোষকতায় দুই দশক ধরে 
আফগানিস্তানে বিতর্ক এবং মিশ্র ফলাফলের সম্মুখীন হয়েছে। ২০১৪ সালের আগে, ন্যাটো তার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছিল এবং ইউরোপীয় নিরাপত্তায় তার ভূমিকা পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টায় হিমসিম খাচ্ছিল। ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়াকে সংযুক্ত করা, তারপরে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া চলতি সংঘাত ন্যাটোকে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

ইউক্রেন সংকট তার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সদস্যদের কাছ থেকে নতুন প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসায়, এবং আরও উল্লেখযোগ্যভাবে ট্রান্স-আটলান্টিক সংহতির একটি পুনরুজ্জীবিত যুগ শুরু হওয়ায়, ন্যাটোতে নতুন প্রাণশক্তি সঞ্চারিত হয়েছে। অন্যদিকে চলতি সংঘাত ইউরোপকে আর একটি বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। ইউক্রেনের দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের মধ্যে একটি অনুমানযোগ্য বিষয় হল কোনও পক্ষই আলোচনার জন্য প্রস্তুত নয়।


২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়াকে সংযুক্ত করা, তারপরে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া চলতি সংঘাত ন্যাটোকে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছে।



২০১৪ সালের আগের স্থিতাবস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য ইউক্রেনের দাবি রাশিয়ার মেনে নেওয়া অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, পশ্চিমী সমর্থন হ্রাস এবং ইউক্রেনে গোলাবারুদের ঘাটতির মধ্যে রাশিয়া একটি সুযোগ উপলব্ধি করতে পারে।

চলতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ন্যাটো সদস্য দেশগুলির উপর উল্লেখযোগ্য আর্থিক চাপ সৃষ্টি করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বর্তমানে ২০২৩ সালে সংস্থার মোট ব্যয়ের ৬৫% বহন করে, তারা ন্যাটোর সবচেয়ে বড় অবদানকারী। দেশটি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেনকে ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি প্রদান করেছে। অন্য ইউরোপীয় সদস্যদের তুলনায় দেশটি একটি কাঠামোগত অসামঞ্জস্যের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পায়।

ফলস্বরূপ, ২০২৩ সালের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত ন্যাটোর ভিলনিয়াস শীর্ষ সম্মেলনের একটি প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল সদস্য দেশগুলির বার্ষিক প্রতিরক্ষা খাতে তাদের জিডিপির কমপক্ষে ২% ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি। এই প্রতিশ্রুতির লক্ষ্যটি হল বিদ্যমান অসামঞ্জস্যপূর্ণ দায়ভাগের মডেল থেকে স্থানান্তর। যদিও এই বিষয়ে কিছু অগ্রগতি হয়েছে, তবে চ্যালেঞ্জগুলি রয়ে গিয়েছে।

ন্যাটো রাজনৈতিক, আর্থিক এবং নিরাপত্তা পরিসরে বিস্তৃত বিশাল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। রাজনৈতিকভাবে, ন্যাটো এবং ইউরোপ নভেম্বরে আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে রেখেছেন যে তিনি দ্রুত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারেন, এবং সতর্ক করেছেন যে ইউরোপীয় ন্যাটো সদস্যরা যদি অবদান না বাড়ায় তাহলে তিনি রাশিয়াকে ন্যাটোর বিষয়ে যেমন খুশি কাজ করতে উত্সাহিত করতে পারেন। ফলে ট্রান্স-আটলান্টিক সংহতির উপর সংশয়ের মেঘ ঘনিয়েছে।

এই অবস্থান শুধুমাত্র রাজনৈতিক, আর্থিক এবং সামরিকভাবে ইউক্রেনের পিছনে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে জো বাইডেন প্রশাসনের অর্জনকে বিপন্ন করে না, বরং ট্রান্স-আটলান্টিক ঐক্যকে ব্যাহত করারও হুমকি দেয়।

ন্যাটো নিঃসন্দেহে সময়ের সাথে সাথে তার স্থিতিস্থাপকতা প্রমাণ করেছে, এবং একটি ব্যাপক ও বৈচিত্র্যময় যৌথ নিরাপত্তা জোট বজায় রেখেছে। শুরুতে ১২ সদস্যের জোটটি এখন ৩২-‌এ প্রসারিত হয়েছে। ফিনল্যান্ড ও সুইডেন এর সর্বশেষ সংযোজন। যাইহোক, সময়ের সাথে সাথে সম্প্রসারণ সংগঠনের কার্যকারিতার একমাত্র পরিমাপ নাও হতে পারে ।


ন্যাটো রাজনৈতিক, আর্থিক এবং নিরাপত্তা পরিসরে বিস্তৃত বিশাল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। রাজনৈতিকভাবে, ন্যাটো এবং ইউরোপ নভেম্বরে আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি।



সবচে্যে গুরুত্বপূর্ণ হল ঐক্য ও সমষ্টিগত পদক্ষেপকে সমুন্নত রাখার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক স্বার্থ ও দৃষ্টিভঙ্গি সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলার ক্ষমতা, বিশেষ করে সংকটের সময়ে।

উপরন্তু, ন্যাটো উদীয়মান প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং তাদের প্রয়োগের দ্বারা সৃষ্ট নতুন হুমকির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। ন্যাটো যেহেতু আগামী দশকে ইন্দো-প্যাসিফিকের দিকে তাকাচ্ছে, এটি অনিবার্য যে হুমকির প্রকৃতি তার ঐতিহ্যগত দায়িত্বের ক্ষেত্র ছাড়িয়ে প্রসারিত হবে। সাইবার যুদ্ধ, সন্ত্রাসবাদ ও হাইব্রিড যুদ্ধের কৌশলসহ উদীয়মান নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জোটকে ক্রমাগত বিকশিত করতে হবে। এই পরিসরগুলিতে ন্যাটোর বিকাশ এবং মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতাই নির্ধারণ করে দেবে পশ্চিমী জোট কার্যকরভাবে বিশ্বের বিভিন্ন অংশে চিন এবং অন্যান্য প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একটি প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা বজায় রাখতে পারে কি না।

অবশেষে, সম্প্রতি ইউএস সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন যেমন ইঙ্গিত করেছেন, সেইভাবে ইউক্রেনের সম্ভাব্য সদস্যপদ ন্যাটোর জন্য শেষ এবং সম্ভাব্য সবচেয়ে পরিণতিমূলক পদক্ষেপ হয়ে উঠতে চলেছে, যা ইউরোপীয় নিরাপত্তা ভূচিত্রকে নিশ্চিতভাবে পুনর্নির্মাণ করতে সক্ষম। এটি রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আসতে বাধ্য করা, বা পারমাণবিক সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে ইউরোপকে বিপজ্জনকভাবে ঠেলে দেওয়ার, ক্ষমতা রাখে। এখন যখন ন্যাটো এইসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের চৌহদ্দিতে হিমসিম  খাচ্ছে, এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করার ক্ষমতা তার ভূমিকা এবং বিশ্ব নিরাপত্তা ক্ষেত্রের প্রভাবকে আগামী সময়ের জন্য সংজ্ঞায়িত করবে।



এই ভাষ্যটি প্রথম 
ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস
 -‌এ প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Vivek Mishra

Vivek Mishra

Vivek Mishra is a Fellow with ORF’s Strategic Studies Programme. His research interests include America in the Indian Ocean and Indo-Pacific and Asia-Pacific regions, particularly ...

Read More +