-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
সমষ্টিগতভাবে পশ্চিমের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক খণ্ড খণ্ড হয়েছে এবং অ-পশ্চিমী শক্তিগুলির সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে, যার মধ্যে পশ্চিমের কাছে অচ্ছুত বলে বিবেচিত রাষ্ট্রগুলিও অন্তর্ভুক্ত।
বিভিন্ন প্রতিবেদন বলছে, উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের একাংশ ইউক্রেনে যুদ্ধ করছে এবং তাদের মধ্যে প্রায় ১২৫০০ সৈনিক রাশিয়ার পূর্বতম অংশের চারটি সামরিক ঘাঁটিতে ছড়িয়ে আছে। সাধারণভাবে মনে করা হচ্ছে, এরা কেউই তেমন প্রশিক্ষিত নয়, অথচ সামরিক সাজে সজ্জিত করে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রেরণ করা হয়েছে। এরা পর্যাপ্ত খাবারও পাচ্ছে না। কিন্তু রাশিয়া-উত্তর কোরিয়া অংশীদারিত্বের এই ইউরোকেন্দ্রিক মনোভাব এ হেন ঘটনাপ্রবাহের বাস্তবতাকে প্রশ্ন করা থেকেই মনোযোগ সরিয়ে নেয়: কেন উত্তর কোরিয়া মস্কোতে সেনা পাঠাচ্ছে এবং কেনই বা রাশিয়া পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে তার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সব কিছু হারানোর ঝুঁকি নিচ্ছে।
সম্মিলিত পশ্চিমের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে এবং অ-পশ্চিমী শক্তিগুলির সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের উন্নতি করেছে, যার মধ্যে উত্তর কোরিয়া, ভেনেজুয়েলা, আফগানিস্তান, মায়ানমার ও আফ্রিকা মহাদেশের অভ্যুত্থানপ্রবণ দেশগুলির মতো পশ্চিমের দ্বারা বিবেচিত পারিয়া দেশগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। রাশিয়ার পুনর্সমন্বয়, যৌথ সর্বাত্মক কর্মপরিকল্পনা থেকে ওয়াশিংটনের প্রত্যাহার এবং ২০১৯ সালে ইরানের বিরুদ্ধে তার নিষেধাজ্ঞার অভিযান পুনরায় শুরু করার ফলে তেহরানের পশ্চিমের প্রতি আস্থা হারানোর ফলে আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের আলোকে আসলে মস্কো ও বেজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত হয়েছে। একই ভাবে, কিউবা, সিরিয়া, পাকিস্তান ও মঙ্গোলিয়ার মতো বেশ কয়েকটি দেশ রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্কের উন্নতি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে উত্তর কোরিয়াও। ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে দুই দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও মন্ত্রীরা উত্তর কোরিয়া সফর করেছেন। কিম জং উন ২০২৩ সালে ভ্লাদিভোস্টক সফরে যান এবং প্রেসিডেন্ট পুতিন এই বছরের জুনে পিয়ংইয়ং সফর করেছিলেন।
চুক্তিটি একটি সামরিক-প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব, হুমকির ক্ষেত্রে সামরিক সহায়তা, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রচার, শ্রম গতিশীলতা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সহযোগিতাকে দৃঢ় করেছে।
পুতিনের সফরের সময় উভয় দেশই একটি বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, যা ১৯৬১ ও ২০০০ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলিকে প্রতিস্থাপিত করে এবং এই নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে। চুক্তিটি একটি সামরিক-প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব, হুমকির ক্ষেত্রে সামরিক সহায়তা, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রচার, শ্রম গতিশীলতা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সহযোগিতাকে দৃঢ় করেছে। ইউক্রেনের সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে পিয়ংইয়ং মস্কোর জন্য অস্ত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী হয়ে ওঠে। যদিও কুইড প্রো কুয়ো ছাড়াও এই দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বে অন্যান্য আঙ্গিক রয়েছে।
নতুন বাজারের সন্ধান
নিষেধাজ্ঞার কারণে পশ্চিমে বাজারের ক্ষতির ফলে রাশিয়ার রফতানির জন্য বাজার সন্ধানের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। নিজের দেশের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে ও অভ্যন্তরীণ শিল্পকে কার্যকর রাখতে মস্কোর নতুন দেশের প্রয়োজন। উৎপাদিত রুশ পণ্যের জন্য চিনে কোনও বাজার নেই। কারণ চিন নিজেই একটি উৎপাদনের পরাশক্তি। তাই এ ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়া গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ রাশিয়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশটির অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে, তার যুদ্ধকালীন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে প্রতিরক্ষা রফতানি এবং শ্রমের জন্য তার পণ্য ও প্রযুক্তির বিনিময় করতে পারে। ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত অংশীদারদের তুলনায় মস্কোতে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য অর্থনৈতিক যুক্তিকে খাটো করে দেখা হচ্ছে। এ দিকে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে নিজের সম্পর্ককে মস্কো খাটো করে দেখাতে চায়। কারণ রাশিয়া এখনও এমন অ-পশ্চিমী দেশগুলির সমর্থন চায়, যাদের সঙ্গে পশ্চিমের সম্পর্ক ভাল।
রাশিয়া ও পশ্চিমের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামিতি। রাশিয়ার কুরস্কে ইউক্রেনের অনুপ্রবেশের পর যুদ্ধক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়ার বাহিনীর ব্যবহারের খবর প্রথম প্রকাশ পায় যখন কিয়েভ রাশিয়ার গভীরে আঘাত হানার জন্য দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি চায়। সহজ কথায় বললে, ন্যাটো দেশগুলির প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের অনুমতি চায়। কারণ এই অস্ত্রগুলি ব্যবহারের জন্য ইউক্রেনীয় বাহিনীকে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ও গোয়েন্দাদের প্রয়োজন হবে।
ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত অংশীদারদের তুলনায় মস্কোতে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য অর্থনৈতিক যুক্তিকে খাটো করে দেখা হচ্ছে।
প্রতিক্রিয়াস্বরূপ রাশিয়া এ হেন দাবিগুলি অস্বীকার করলেও রাশিয়ায় কোরীয় বাহিনীর ব্যবহার অবশ্যই সামান্য ব্যবহারিকতার ঊর্ধ্বে। পিয়ংইয়ং থেকে সৈন্যদের কুরস্কে মোতায়েন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে এবং এটি মস্কোর পক্ষ থেকে সংঘাতে সম্পৃক্ততার নতুন নিয়ম তৈরি করার এক ইঙ্গিত বটে। এর মাধ্যমে রাশিয়া তার বিপদ সীমা আঁকছে। এই ঘটনাপ্রবাহ ধীরে ধীরে ঘটেছে এবং এটি আকস্মিক নয়। কারণ পুতিন হঠাৎ চমকে বিশ্বাসী নন। সুতরাং, উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের ব্যবহার ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভূখণ্ডের মধ্যে হামলা শুরু করা বা রাশিয়ার ভূখণ্ডে প্রবেশের চেষ্টা থেকে বিরত রাখার জন্য একটি ভয় উদ্রেককারী কৌশল।
কুরস্কে কিম জং উনের সেনার উপস্থিতি যুদ্ধের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে রাশিয়ার ডুমা এবং ফেডারেশন কাউন্সিলে এই বছরের জুলাই মাসে স্বাক্ষরিত ও অক্টোবর মাসে অনুমোদিত চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যে কোনও পক্ষের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আগ্রাসনের ঘটনায় পারস্পরিক পরামর্শ ও সহায়তার কথা বলা হয়েছে। কুরস্কে কিয়েভের অনুপ্রবেশ পিয়ংইয়ং থেকে সৈন্য মোতায়েন করার জন্য ভিত্তি তৈরি করে এবং রাশিয়ার অভ্যন্তরে পশ্চিম-সমর্থিত ইউক্রেনীয় দূরপাল্লার আক্রমণের সুযোগকে সম্ভাব্য ভাবে প্রতিহত করে। যদি ইউক্রেনীয় অঞ্চলের (রুশ-অধিকৃত অঞ্চল-সহ) অভ্যন্তরে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের ব্যাপক আকারে মোতায়েন করা হয়, তা হলে যুদ্ধের গতি দ্রুত বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টা রূপে বিবেচিত হবে। যদিও এমনটা হওয়া খানিক অসম্ভবই বটে। কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতির পট পরিবর্তন করেছে, যিনি ইউক্রেনীয় সংঘাতের অবসানের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ডেকান হেরাল্ড-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Rajoli Siddharth Jayaprakash is a Research Assistant with the ORF Strategic Studies programme, focusing on Russia's domestic politics and economy, Russia's grand strategy, and India-Russia ...
Read More +