Published on Jun 08, 2023 Updated 0 Hours ago

চিনের সহায়তায় মায়ানমারের কোকো দ্বীপে সিগইন্ট ক্ষমতাবৃদ্ধি নয়াদিল্লির উদ্বেগ বাড়াচ্ছে

গোপন ষড়যন্ত্রে মায়ানমার ও চিন: কোকো দ্বীপে সিগইন্ট ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে

এমন প্রমাণ রয়েছে যে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত ভারতের ট্রাই–সার্ভিস বেস থেকে ৫৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত মায়ানমারের কোকো দ্বীপপুঞ্জে সিগন্যাল ইনটেলিজেন্স (সিগইন্ট) ক্ষমতা জোরদার করা হচ্ছে। তাতমাদাও (মায়ানমারের সেনাবাহিনী)চিনাদের সাহায্য করার কথা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে, কিন্তু  ম্যাক্সার প্রকাশিত সর্বশেষ স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে সামরিক জমানা রানওয়ের দৈর্ঘ্য প্রসারিত করে এবং একটি শক্তিশালী সিগইন্ট স্থাপত্য স্থাপন করে কোকো দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত ঘাঁটি প্রসারিত করছে। সরকারিভাবে সামরিক জুন্টার ক্ষমতাসীন স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল–এর একজন মুখপাত্র  এই সংক্রান্ত ভারতীয় উদ্বেগ খণ্ডন করে বলেছেন যে নেপিডও কোকো দ্বীপপুঞ্জে পরিকাঠামো সম্প্রসারণের অংশ হিসাবে বিদেশি সৈন্য, বা আরও বিশেষভাবে চিনা বাহিনী, মোতায়েনের অনুমতি দিচ্ছে না। নেপিডও–র ভারতীয় উদ্বেগ প্রত্যাখ্যান সত্ত্বেও বেজিংয়ের প্রণোদনা ব্যতিরেকে কোকো দ্বীপপুঞ্জের সিগইন্ট স্থাপনাগুলি প্রসারিত করার কোনও স্বতন্ত্র কৌশলগত বা সুরক্ষাগত যুক্তি পাওয়া যাচ্ছে না। সম্ভবত কোকো দ্বীপপুঞ্জ মায়ানমার নিয়ন্ত্রিত একটি ঘাঁটি, কিন্তু তা গণপ্রজাতন্ত্রী চিন (পিআরসি)–এর সহায়তায় তৈরি করা হচ্ছে, এবং সেখানে চিনা সামরিক কর্মীদের, বিশেষ করে পিপলস লিবারেশন আর্মি স্ট্র্যাটেজিক সাপোর্ট ফোর্স (পিএলএএসএসএফ)–এর প্রযুক্তিকর্মীদের প্রবেশাধিকার আছে।

মায়ানমারের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার ফলে নেপিডও–র সঙ্গে চিনের একটি অত্যন্ত দৃঢ় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, এবং নেপিডও অস্ত্র, অস্ত্র উৎপাদন স্থাপনা ও নতুন সামরিক সরঞ্জামের বিনিময়ে চিনকে ইনটেলিজেন্স, সারভেয়লেন্স অ্যান্ড রিকনাইসেন্স (আইএসআর) স্থাপনা তৈরি করার জন্য উপকূলীয় ও অফ–শোর সুবিধা প্রদান করে। শুধু গ্রেট কোকো দ্বীপেই নয়, চিনা সিগইন্ট স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে আরাকানের উপকূলে অবস্থিত রামরি দ্বীপে, ইরাওয়াড্ডি বদ্বীপের প্রবেশপথে হ্যাঙ্গি দ্বীপ সুবিধাকেন্দ্রে; রেঙ্গুনের মাঙ্কি পয়েন্টে, এবং ক্রা উপদ্বীপের কাছাকাছি জাদেটকি কিয়ুন নামক একটি দ্বীপে। তা ছাড়া ১৯৯০–এর দশকের গোড়ার দিক থেকে ইরাওয়াড্ডিতে চিনাদের একটি উল্লেখযোগ্য ট্রাই–সার্ভিস বেস রয়েছে।

সর্বশেষ ঘটনার আগে, ২০১৭ সালে, কোকো দ্বীপপুঞ্জে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভূমি পুনরুদ্ধার হয়েছিল, যার ফলে কোকো দ্বীপের এয়ারস্ট্রিপ ১,৩০০ মিটার থেকে সম্প্রসারিত হয়ে ২,৩০০ মিটার হয়েছিল, যা ২,৫০০ মিটার পর্যন্ত সম্প্রসারণযোগ্য। চিত্র ১–এ দেখানো গ্রেট কোকোর দক্ষিণতম প্রান্তে খুব ভালভাবে অতিরিক্ত রানওয়ে তৈরি করা যেতে পারে (চিত্র ২)। এই ব্যবস্থাগুলিকে এখন আরও সুবিধাকেন্দ্র নির্মাণের সম্পূরক করা হয়েছে, যার মধ্যে আছে বিমানের হ্যাঙ্গার (চিত্র ৩), একটি রাডার স্টেশন (চিত্র ৪), একটি আবাসন, এবং পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) ও তার সহযোগী সার্ভিসগুলির জন্য একটি সম্ভাব্য মঞ্চায়ন স্থল ও অগ্রগামী ঘাঁটি। খুব কম করে দেখলেও, চিনারা যে উন্নত সিগইন্ট পেতে পারে তা তাদের আন্দামান–নিকোবর থেকে কথাবার্তা, ভারতীয় সামরিক নজরদারি ফ্লাইট এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর স্থাপনার ধরনগুলি ট্র্যাক করতে সাহায্য করবে৷

চিত্র ১

সূত্র: ডামিয়েন সায়মন

চিত্র ২

সূত্র: ম্যাক্সার টেকনোলজিস

চিত্র ৩

চিত্র ৪

সূত্র: ম্যাক্সার টেকনোলজিস

কোকো দ্বীপপুঞ্জের এই নতুন ঘটনাবলি চিনের ভারত মহাসাগরের কৌশলকে উচ্চতর পর্যায়ে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। চিনের উদ্দেশ্য কী তা নির্ণয় করা বিপজ্জনক ও কঠিন কাজ, তবে শি জিনপিংয়ের অধীনে পিআরসি ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা দেখিয়েছে, এবং ক্রমবর্ধমানভাবে নিজের জন্য এমন ধারণা তৈরি করেছে যে তার সক্ষমতা চিনা সামরিক বাহিনীকে প্রতিপক্ষের প্রস্তুতির পরীক্ষা নেওয়া এবং তা খতিয়ে দেখার সুযোগ দেয়। যাই হোক, মায়ানমারের সম্ভাব্য চিনা সামরিক দুঃসাহসিকতার একটি হাতিয়ার হয়ে ওঠা দ্ব্যর্থহীনভাবে নয়াদিল্লির জন্য একটি অশুভ লক্ষণ। পাকিস্তানের গোয়াদর ও করাচির কথা বাদ রাখলেও, শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটায় ভারতের জন্য কী অপেক্ষা করে আছে তারও ইঙ্গিত দেয় চিনের সামরিক শক্তি। চিনা সৈন্যরা ইতিমধ্যেই ভারতের দাবি করা অঞ্চলে বসে আছে, এবং নেপিডও–র সঙ্গে যোগসাজসে পিআরসি–র সর্বশেষ প্রস্তুতি চলছে আন্দামান ও নিকোবরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় সামরিক ঘাঁটির কাছাকাছি, যেখানে একক ইউনিফায়েড কমান্ডের অধীনে ভারতের তিনটি বাহিনীই আছে। এভাবে চিনের সামরিক উপস্থিতি আরও শক্তিশালী হচ্ছে। কোকো দ্বীপপুঞ্জে অতিরিক্ত চিনা সামরিক পরিকাঠামো নির্মাণ নিশ্চিত করে যে বেজিংয়ের সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাইওয়ান, দক্ষিণ চিন সাগর, পূর্ব চিন সাগর ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের উপর দাবির বাইরেও বিস্তৃত

নয়াদিল্লির উপর প্রভাব এবং ভারতের প্রতিক্রিয়া

চিনের উদ্দেশ্য নির্বিশেষে, এ কথা এখন স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে যে বেজিং তার পরিকাঠামো ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের ক্ষেত্রে সমুদ্রে ভারতের প্রতিক্রিয়া সীমিত করার জন্য তার সামরিক সক্ষমতা এবং শক্তি প্রক্ষেপণের  একটি সুযোগ দেখছে। নয়াদিল্লিকে নেপিডও–র উপর আরও অনেক বেশি চাপ তৈরি করতে হবে, এবং সামরিক জুন্টাকে বোঝাতে হবে যে মায়ানমারের কোকো দ্বীপ অঞ্চল বা মায়ানমারের ভূখণ্ডের কোনও অংশ ভারতীয় ভূখণ্ড বা ভারতীয় অফ–শোর ও অন–শোর সামরিক ঘাঁটির বিরুদ্ধে চিনাদের সামরিক অভিযান শুরু করা বা পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি যদি কোকো দ্বীপপুঞ্জ ভারতের বিরুদ্ধে চিনের নৌ, বিমান ও উভচর মিশনের জন্য একটি মঞ্চায়ন ঘাঁটি হিসাবে কাজ না–ও করে, একটি চিনা সহায়তায় সিগইন্ট সংগ্রহের সুবিধাকেন্দ্র হিসাবে এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আন্দামান ও নিকোবরে ভারতের ট্রাই–সার্ভিস কমান্ডের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। নয়াদিল্লিকে আন্দামান ও নিকোবরে বিদ্যমান সক্ষমতার পর্যাপ্ততা পর্যালোচনা করতে হবে, এবং চিনা সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে তার ক্ষমতা বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তার উপর বেজিং যেহেতু মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করতে সফল হয়েছে, তাই চিনা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক সীমিত রাখতে হবে বলে তাদের সতর্ক করার জন্য ভারতকে অবশ্যই জাপান ও অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান)–এর সদস্য রাষ্ট্রগুলির মতো এমন কিছু এশীয় অংশীদারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে যাদের মায়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। সংক্ষেপে, নেপিডও–কে বেজিংয়ের কাছে এটা স্পষ্ট করে দিতে হবে যে ভারত ও অন্যদের নিরাপত্তা স্বার্থের জন্য যা ক্ষতিকর  তেমন সামরিক লক্ষ্যগুলির জন্য পিআরসি–র মায়ানমারকে প্রক্সি হিসাবে ব্যবহার করা চলবে না।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.