২১ শতকে একটি ব্যাঙ্ক বলতে কী বোঝায়? এটি কি বড় রাস্তার উপর কোনও বহুতলের একতলায় ঝকঝকে অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জাসহ একটি বাণিজ্যিক স্থান, যেখানে ব্র্যান্ডের সাইনেজ গর্বের সঙ্গে নিজেকে ‘ব্যাঙ্ক’ বলে? নাকি এটির ভেতরে ঢুকলে চারিদিকে সেলস প্রোমোশন পোস্টারে ভরা দেখা যায়? অথবা এটি কি ঢিলেঢালা মনোভাবের কর্মীতে ভরা, যাঁদের উৎসাহ শুধু তাঁরা জোর করে বিক্রি করতে চান এমন পণ্যের গ্রাহকদের নিয়ে? ব্যাঙ্ক বলতে কি ক্যাশ কাউন্টার, এটিএম এবং উপভোক্তাদের ভিড় বোঝায়?
আজকের ভারতীয় ব্যাঙ্কিংয়ের বাস্তবতা এই সবগুলো এবং আরও অনেক কিছুর মিশ্রণ। কিন্তু অকথিত সত্যটি হল যে ভারতে উপভোক্তারা ডেটা পরিষেবা গ্রহণের পর থেকে ব্যাঙ্কিং (এবং নন–ব্যাঙ্কিং আর্থিক পরিষেবাগুলি) হয়ে গিয়েছে অনলাইন ব্যাঙ্কিং বা অ্যাপের আকারে গ্রাহকদের ফোন–হ্যান্ডসেট দেখা এবং সেই সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা।
অমীমাংসিত আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য আমরা ব্যাঙ্কের শাখার যে ধারণা এতদিন পোষণ করে আসছি, তা আপাতদৃষ্টিতে একটি বড় ও অস্বস্তিকর প্রশ্নচিহ্ন। বেশি গ্রামীণ শাখার জন্য চাপ দেওয়ার অর্থ কি সেই ভৌগোলিক অঞ্চলের বাসিন্দাদের আরও বেশি ঋণের লভ্যতার ব্যবস্থা করা? ভোক্তাদের আর্থিক সমস্যা সমাধানে প্রবেশাধিকার দেওয়ার জন্য ‘ডেটা–ডিসিশন’ ও প্রযুক্তির ব্যবহার আর্থিক ক্ষেত্রকে আরও বেশি ধাক্কা দিতে চলেছে, এবং একটি ভোক্তা–বাজার হিসাবে আমাদের সক্রিয় প্রবিধান তৈরি করে নিজেদেরকে প্রস্তুত করা উচিত একটি স্থিতিশীল আগামীকালের জন্য। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সন্ধানে অতীতে আমরা যে ক্ষেত্রগত লাইসেন্সের স্তূপ তৈরি করেছি, তা দিয়ে এ কাজ হবে না। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বলতে শুধুই আর্থ–সামাজিক প্রভাব বোঝায় না। যাই হোক না কেন, ভারতীয় ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে অন্য ধরনের একটি চ্যালেঞ্জও রয়েছে: কর্পোরেটগুলি, যেগুলি অন্যান্য অর্থনীতিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বন্ড বাজার থেকে ঋণ নেয়, এখানে খুচরো ও ছোট ব্যবসাকে বঞ্চিত করে ব্যাঙ্কের ঋণ শোষণ করে। চাইলে একে অলস ব্যাঙ্কিং বলুন, আমাদের ঋণ/বন্ড বাজারের প্রকৃতি এমনই।
সর্বজনীন ব্যাঙ্কিংয়ের হাওয়া
শুধু ‘সর্বজনীন’ শব্দটির কারণে একটি সাধারণ ভুল ধারণা রয়েছে যে সর্বজনীন ব্যাঙ্কিং লাইসেন্সপ্রাপ্ত সত্তাগুলির বড় ব্যালেন্স শিট থাকা উচিত, ভৌগোলিকভাবেও বিতরণের ক্ষেত্র বিস্তৃত হওয়া উচিত, এবং অনেক ভোক্তা–বিভাগের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উচিত। এটি একটি ক্লাসিক কেস যা আমাদের অনেক ব্যাঙ্ককে দুর্বল হিসাবে দেখিয়েছে, যদিও সেরা স্কুল থেকে উঠে আসা অনেক বুদ্ধিবৃত্তিক মন এই সংস্থাগুলির কৌশলগুলিকে চূড়ান্ত রূপ দিয়েছেন৷ সাধারণ কৌশল (ব্লেজি) হল আরও ভাল সিএএসএ এবং সারা ভারতজুড়ে উপস্থিতি সহ একটি বড় ব্যাঙ্ক হতে চাওয়া৷ তাদের বেশিরভাগই একই ভোক্তা–অংশের পিছনে ছুটতে থাকে এবং ব্যবসার লাভ পায় না। এবং তারপরেও, যতক্ষণ না ফিনটেকগুলি তাদের নাড়া দেয়, তারা সামান্যই পণ্য উদ্ভাবন করে বা গ্রাহক সুবিধা দিতে পারে। যে যুবাদের ব্যাঙ্কিং বা অন্যান্য আর্থিক পরিষেবা ব্যবসা সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না, তারা উপভোক্তাদের চাহিদার সমাধান দিতে শুরু করে।
যে মুহূর্তে নিয়ামকেরা ফিনটেক ও নন–ব্যাঙ্কগুলিকে আরও বেশি করে নিয়মবিধির আওতায় আনতে শুরু করবেন, এই অন্যায্য ব্যবধান অদৃশ্য হয়ে যাবে।
অবশ্যই, অগভীর ঋণ–বাজার ব্যাঙ্ককে সাহায্য করে। উপরন্তু, ব্যাঙ্কগুলির ব্যবসায়িক মূল্যায়ন ধরে রাখার জন্য একটি বাণিজ্যিক কৌশল হিসাবে নিয়ামক লক্ষ্মণরেখা রয়েছে। যে মুহূর্তে নিয়ামকেরা ফিনটেক ও নন–ব্যাঙ্কগুলিকে আরও বেশি করে নিয়মবিধির আওতায় আনতে শুরু করবেন, এই অন্যায্য ব্যবধান অদৃশ্য হয়ে যাবে। উপকৃত হবেন ভোক্তারা। সম্ভবত এমনটা তখন ঘটবে যখন বর্তমান ডিজিটাল প্রযুক্তির কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে গভীর অনুধাবনের পাশাপাশি নিয়ামক ক্ষেত্রে মেধাসম্পন্ন মানুষ বেশি করে আসবেন। এটি বর্তমান নিয়ন্ত্রিত সত্তাগুলির অনুক্রম থেকে দূরে সরে গিয়ে ফিনটেকগুলিকে অর্থ–ব্যবসায় ন্যায্য প্রবেশাধিকার দিতে পারে। জাতপাতের প্রসঙ্গ না-টেনেও আমরা সম্ভবত এইভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি যে এই ব্যাঙ্কিং–ব্রাহ্মণ অনুক্রমে ব্যাঙ্কগুলির (তারা যতই দুর্বল বা নম্র হোক না কেন) বাড়তি সুবিধা রয়েছে।
ভারতে ভালভাবে পরিচালিত ছোট আঞ্চলিক ব্যাঙ্কের যথেষ্ট উদাহরণ রয়েছে যেগুলি লাভজনক এবং মূল্য–বৃদ্ধিমূলক। তারা সারা দেশজুড়ে সম্পদ সংগ্রহের প্রয়াস থেকে দূরে থেকেছে; পরিবর্তে তারা গভীরভাবে বোঝে এমন ভোক্তা বিভাগ ও ভৌগোলিক এলাকায় মনোনিবেশ করেছে। যখন একটি ছোট শহর শিক্ষিত ও যোগ্য মেধা আকর্ষণ করতে পারে, তখন তো মুম্বই বা নয়াদিল্লির সদর দফতরকে ন্যায্যতা দিতে রিয়েল এস্টেটের জন্য প্রতিযোগিতায় নামার প্রয়োজন নেই। চেনা চেনা মনে হচ্ছে? আশ্চর্যের কিছু নেই যে পুরনো লক্ষ্য অনুসরণকারী ব্যাঙ্কগুলি এখনও মৌলিক কার্যক্রম সমস্যা সমাধান ও ব্যবসায় টিকে থাকার জন্য লড়াই করে।
ছোট ব্যাঙ্কের জন্য বৃদ্ধির চালক
পরিবার ছোট হওয়া এবং ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে আর্থিক খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। মিলেনিয়ালদের অর্থ ও ব্যাঙ্কিংয়ের প্রতি আলাদা মনোভাব রয়েছে। একটি বিশেষ এবং আঞ্চলিক ব্যাঙ্কিং ব্র্যান্ড হওয়ার মাধ্যমে ব্যাঙ্কগুলি অনুগত উপভোক্তা–ভিত্তিকে ব্যবহার করতে পারে, এবং চিহ্নিত উপভোক্তা–সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলির কাছে উপস্থাপনযোগ্য মূল্য–সংবৃদ্ধিমূলক পণ্য ও পরিষেবা বিকাশের মাধ্যমে টেকসই মুনাফার ব্যবস্থা করতে পারে। ভোক্তা–সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলির এবং তাদের কাছে সরবরাহ করা পণ্যগুলির সনাক্তকরণ ভোক্তাপ্রতি আয়ের পাশাপাশি কর্মচারীপ্রতি আয়ও বাড়াতে পারে। এই ধরনের ব্যাঙ্কের প্রযুক্তিগত এবং ডিজিটাল সক্ষমতাকে অন্যান্য ব্যাঙ্কের সমান করার প্রক্রিয়া স্থগিত করা যাবে না।
এই ব্যাঙ্কগুলির সম্পদ সংগ্রহ, এফডি–র আয়তনবৃদ্ধি,পরিষেবা দেওয়ার জন্য নতুন ভোক্তা গোষ্ঠীগুলিকে চিহ্নিত করা, এবং বর্ধিত ফি আয়ের জন্য অন্যান্য নন–ব্যাঙ্কিং আর্থিক পণ্য বিক্রি করার ক্ষেত্রে সহযোগিতার উপায় নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা প্রয়োজন। নতুন ব্যাঙ্কিং ভোক্তাদের বেশিরভাগই তরুণ এবং ডিজিটাল ব্যবস্থা ব্যবহারে দক্ষ। তাঁরা ডিজিটাল দুনিয়ার বাসিন্দা, এবং ব্যাঙ্কের শাখাগুলিকে আর্থিক লেনদেনের কেন্দ্র হিসাবে দেখেন না। তাঁরা তাঁদের ফোনে ওয়ান–টাচ সমাধান চান। আমাদের কাছে প্রাক–ডিজিটাল চিন্তার যুগে খসড়া করা গোছা গোছা নিয়ম ও প্রবিধান রয়েছে। তাই ব্যাঙ্কের ‘আসুন চটপটে হই’ বা ‘আমরা গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে চটপটে হব’ গোত্রের কথায় অন্যদের, বিশেষ করে গ্রাহকদের কিছু যায়–আসে না। আর্থিক পরিষেবাগুলিকে দ্রুত শিখতে হবে কীভাবে নতুন ডিজিটাল যোগাযোগের উপায়গুলি সাধারণভাবে সামাজিকীকরণের অভ্যাসকে প্রভাবিত করে। এগুলি পণ্য ও পরিষেবার ব্যবহার, এবং ফলস্বরূপ অর্থের ব্যবসায়িক মডেলগুলির উপর প্রভাব ফেলে।
যে ব্যাঙ্কগুলি গ্রাহকদের আকর্ষণ করে তারা তাদের গ্রাহকদের চাহিদার প্রতি উদ্বেগ ও সম্মান প্রদর্শন করেছে। সফল ছোট ব্যাঙ্কগুলি এটি বহুবার প্রমাণ করেছে।
উত্তরাধিকার দিয়ে কিছু হয় না। একজন অল্পবয়স্ক গ্রাহককে আপনার ব্যাঙ্কের ৭০ বছর ধরে টিকে থাকার বিষয়ে বলার চেষ্টা করুন। তা ভোক্তাদের কোনও স্বস্তি দেয় না। পরিবর্তে এই জাতীয় ভোক্তার জন্য ডিজিটাল সুবিধা–সহ উপযুক্ত একটি পণ্য দেওয়ার চেষ্টা করুন; দেখবেন আপনি সেই ভোক্তাকে জয় করেছেন। ব্যাঙ্কগুলি ‘রিলেশনশিপ ব্যাঙ্কিং’ শব্দটি ব্যবহার করে যখন তাদের দেখানোর খুব বেশি প্রয়োজন হয় যে সেই সম্পর্কটিকে তারা গুরুত্ব সহকারে নেয়। কিন্তু আরএম–এর ভূমিকা গ্রাহকদের যত্ন নেওয়ার পরিবর্তে বিক্রয় বাড়ানোর জন্য কাজে লাগানো হয়। যে ব্যাঙ্কগুলি গ্রাহকদের আকর্ষণ করে তারা তাদের গ্রাহকদের চাহিদার প্রতি উদ্বেগ ও সম্মান প্রদর্শন করেছে। সফল ছোট ব্যাঙ্কগুলি এটি বহুবার প্রমাণ করেছে।
বিশেষত্ব একটি নিরাপত্তা–জালিকা হতে পারে
একটি ব্যাঙ্ক জনগণের নির্দিষ্ট অংশকে টার্গেট করতে পারে, যেমন মিলেনিয়াল, জেনারেল জেড, মধ্যবয়সী ইত্যাদি। একইভাবে, একটি ব্যাঙ্ক নির্বাচিত শিল্পের চাহিদা মেটাতে উপভোক্তাদের উপর গভীর মনোযোগ দিয়ে তার পণ্যের মিশ্রণ সামনে আনতে পারে। একটি ব্যাঙ্ক নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের জন্য তার পণ্যগুলি তৈরি করতে পারে, যেমন ব্যাঙ্কের সঙ্গে সম্পর্কবিহীন বা কম-সম্পর্কিত মানুষদের পরিষেবা দেওয়া। বিশেষত্ব (নিশ) ব্যাঙ্কিং বলতে বর্তমান ব্যাঙ্কিং লাইসেন্সপ্রাপ্তদের সম্ভাবনা বা তার অভাব নিয়ে টিকাটিপ্পনী বোঝায় না। সবকিছুর পরে উপভোক্তারা ও পুঁজিবাজারই সবচেয়ে ভাল বিচারক। কিন্তু বিশেষত্ব ব্যাঙ্কিং সব অংশীদারের জন্য লাভজনক হতে পারে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.