-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
টাস্ক ফোর্স ৭: টুওয়ার্ডস রিফর্মড মাল্টিল্যাটেরালিজম: ট্রান্সফর্মিং গ্লোবাল ইনস্টিটিউশনস অ্যান্ড ফ্রেমওয়ার্কস
বিপর্যয় ঝুঁকি হ্রাস বর্তমানে জি২০-র সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলির একটি অংশ। এটি ভারতকে বর্তমান জি২০ সভাপতিত্বের অধীনে বহুপাক্ষিক স্তরে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিকাশের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং গঠনমূলক পর্যায়ে এই উদ্যোগের নেতৃত্ব দেওয়ার একটি অনন্য সুযোগ প্রদান করে। বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের মধ্যে আঞ্চলিক বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভারত যে চ্যালেঞ্জগুলির সম্মুখীন হয়েছে, সেগুলি গুরুত্বপূর্ণ। এই সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠতে এবং অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনস-এর মতো আরও কার্যকর বহুপাক্ষিক সংস্থা থেকে যে শিক্ষা অর্জন করা যেতে পারে তা তাত্পর্যপূর্ণ। গ্লোবাল সাউথের একটি বিপর্যয়-প্রবণ অঞ্চলের এই অভিজ্ঞতাগুলি জি২০-এর জন্য একটি আদর্শ কেস স্টাডি হতে পারে। এই পলিসি ব্রিফটির লক্ষ্য হল এই কেস স্টাডিকে জি২০ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশনের জন্য সুপারিশ তৈরি করার কাজে ব্যবহার করা, যাতে গোষ্ঠীটি আরও কার্যকর ভাবে আন্তঃসহযোগিতায় অংশ নিতে পারে। প্রধানত, এটি সদস্য দেশগুলির মধ্যে সর্বোত্তম অনুশীলন ভাগ করে নেওয়ার জন্য একটি প্রক্রিয়া বিকাশের সুপারিশ করে।
জীবন ও জীবিকার উপর প্রভাব বিস্তারকারী প্রাকৃতিক দুর্যোগের রূপান্তরমূলক ঝুঁকিগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের সূত্রপাতের সঙ্গে সঙ্গেই শক্তি অর্জন করছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অংশীদারিত্ব তাই সারা বিশ্বের সমমনস্ক দেশগুলির মধ্যে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। ভারতের জি২০ সভাপতিত্বের অধীনে গোষ্ঠীটির আন্তঃসহযোগিতার ক্ষেত্রে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকে (ডিআরআর) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বহুপাক্ষিক স্তরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ঝুঁকির অনিয়মিত প্রকৃতি এবং জড়িত দেশগুলির সার্বভৌমত্বের মতো বেশ কিছু সমস্যা থাকায় আন্তঃসহযোগিতার বিষয়গুলি জটিলতর হয়ে উঠতে পারে।
ভারত যেহেতু এই উদ্যোগে গঠনমূলক পর্যায়ের নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বহুপাক্ষিক সহযোগিতা গড়ে তোলার অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে বেশ কিছু পরামর্শ করা শ্রেয়। সেই অনুসারে, এই নীতি সংক্ষেপটির লক্ষ্য হল শুধুমাত্র বঙ্গোপসাগর সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক সংস্থা বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন-এর (বিমস্টেক)(ক) মতো বহুপাক্ষিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভারতের সামনে যেসব প্রতিবন্ধকতা এসেছিল সেগুলিকে শনাক্ত করা এবং এইসব বাধা অতিক্রম করার জন্য অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনস-এর (আসিয়ান)(খ) মতো অধিক কার্যকর আঞ্চলিক সংস্থাগুলি থেকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করা। এর পাশাপাশি, গ্লোবাল সাউথ থেকে বহুপাক্ষিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সতর্কতা এবং ভাল অনুশীলনের এই সামগ্রিক প্রয়াস ডিআরআর-এ জি২০ ওয়ার্কিং গ্রুপের জন্য একটি দিক নির্দেশকারী কেস স্টাডি হিসেবে কাজ করবে।
বঙ্গোপসাগর তার উত্তাল প্রকৃতির জন্য কুখ্যাত এবং ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় তার উপকূলীয় রাজ্যগুলিতে প্রায়ই ধ্বংসলীলা চালায়। আন্দামান-সুমাত্রা সাবডাকশন জোনের(গ) নিকটস্থ হওয়ার দরুন এই অঞ্চলটি সুনামির প্রতি আরও সংবেদনশীল। শুধু মাত্র ১৯৯৬ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে অঞ্চলটিতে বিপর্যয়ের দরুন আনুমানিক ৩,১৭,০০০ মানুষ প্রাণ হারান, ১ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হন এবং উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি নথিভুক্ত করা হয়।(১) দুর্যোগের প্রবণতার এই মাত্রা এবং বিমস্টেকের দীর্ঘ অস্তিত্ব সত্ত্বেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার একটি কার্যকর বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা খুব সামান্যই ফলপ্রসূ হয়েছে।(২) বহুপাক্ষিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি শক্তিশালী মঞ্চ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার ক্ষেত্রে বিমস্টেকের সামনে যে প্রতিবন্ধকতাগুলি উঠে এসেছে, তা নিম্নরূপ:
বড় মাত্রার কোনও দুর্যোগ না ঘটলে বঙ্গোপসাগরের মতো বিশ্বের অধিকাংশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ-প্রবণ অঞ্চলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় আসলে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জীবনের একটি অংশ হয়ে ওঠে। বড় আকারের দুর্যোগের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে, আঞ্চলিক পর্যায়ে দুর্যোগ প্রস্তুতির বিকাশের প্রচেষ্টা বা দীর্ঘমেয়াদি এবং স্থিতিশীল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে বহুপাক্ষিক পরিকাঠামো প্রণয়ন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিথিল হয়ে পড়ে। তার পরিবর্তে এককালীন তহবিল নির্মাণের সংস্কৃতির উদ্ভব হয় এবং আঞ্চলিক ডিআরআর গড়ে তোলার জন্য সম্মিলিত জোরালো উদ্যোগকে আর অগ্রাধিকার দেওয়া হয় না। যেমনটা বিমস্টেকে দেখা গিয়েছে, যেখানে ২০০৪ সালের সুনামির পরে আন্তঃসহযোগিতার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উপক্ষেত্র গঠিত হলেও দু’বছরের মধ্যেই তা গতিশীলতা হারাতে শুরু করে। সুনামির স্মৃতি ম্লান হতে শুরু করলে ক্ষেত্রটির সক্রিয়তা হ্রাস পায়, বিশেষ করে সদস্যরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কোনও চুক্তিতে অংশ নেয় না।(৩) পরবর্তী কালে গুরুতর দুর্যোগের পরিস্থিতিতে এটি সদস্য দেশগুলির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ভাবে মানবিক সহায়তা এবং দুর্যোগ ত্রাণ (এইচএডিআর)(ঘ) সংক্রান্ত একটি অনুশীলন হয়ে ওঠে, যা বিমস্টেকের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি বহুপাক্ষিক ডিআরআর উদ্যোগ গ্রহণকে প্রতিহত করে।
এককালীন প্রবণতার সঙ্গে সংযুক্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় শক্তিশালী বহুপাক্ষিক আন্তঃসহযোগিতা গড়ে তোলার আর একটি প্রতিবন্ধকতা হল প্রাকৃতিক দুর্যোগের অনিশ্চিত প্রকৃতি। মারাত্মক মাত্রার প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ঝুঁকি হ্রাসে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করলেও সাধারণত এগুলি স্বল্পস্থায়ী হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এবং ব্যাপক মাত্রার বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তির অভাবে এই ধরনের উদ্যোগগুলি প্রায়শই তাদের স্পৃহা হারাতে থাকে এবং বিদ্যমান প্রচেষ্টাগুলি দীর্ঘমেয়াদি আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জড়িয়ে পড়ে বহুপাক্ষিক উদ্যোগকে স্তব্ধ করে দেয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, বিমস্টেকের মধ্যে ২০০৫ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্র অন্তর্ভুক্ত করার পরপরই একগুচ্ছ প্রাণবন্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল, যেমন বিমস্টেক সেন্টার অন ওয়েদার অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ স্থাপনা (২০০৫ সালে প্রস্তাবিত এবং ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত), দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস এবং ব্যবস্থাপনার জন্য (২০০৬) বিমস্টেক দেশগুলির মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে একটি কর্মশালা এবং কার্যকর আঞ্চলিক আন্তঃসহযোগিতার জন্য একটি কর্মসূচির নির্মাণ (২০০৬)। যদিও কার্যকলাপ সংক্রান্ত এ হেন তীব্রতা স্বল্পস্থায়ী ছিল। জলবায়ু কেন্দ্র স্থাপন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আন্তঃসহযোগিতার প্রাথমিক উদ্দেশ্য অপূর্ণই রয়ে গিয়েছে।(৪) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিমস্টেকের সহযোগিতার পরিধি তাই কোনও অবিরাম উদ্দীপনার অভাবে খুবই সীমিত।(ঙ) জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ক্রমবর্ধমান সচেতনতা গড়ে তোলার পাশাপাশি কোভিড-১৯ অতিমারি জি২০-র জন্য ডিআরআর-এ আন্তঃসহযোগিতা চালানোর এক জরুরি প্রণোদনা হিসেবে কাজ করেছে। সেই কারণে এ কথা সুনিশ্চিত করতে হবে যে, ডিআরআর-এ বহুপাক্ষিক উদ্যোগগুলি যেন অতিমারি-পরবর্তী যুগে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিথিল না হয়ে পড়ে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যে কোনও বহুপাক্ষিক সহযোগিতা সফল হওয়ার জন্য সদস্য দেশগুলির মধ্যে জ্ঞান ও সর্বোত্তম অনুশীলন ভাগ করে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আঞ্চলিক প্রেরণার অভাব, আন্তঃদেশীয় সম্পর্কের জটিলতা বা বহুপাক্ষিক ব্যবস্থায় একটি দেশের আধিপত্যের কারণে প্রতিটি সদস্য দেশের স্বতন্ত্র সর্বোত্তম অনুশীলনগুলি প্রায়শই কাজে লাগানো হয় না। এটি শুধু মাত্র দক্ষতা নয়, সম্পদের একটি আঞ্চলিক ভাণ্ডার তৈরিতেও বাধা দেয়। এর ফলে একটি বহুপাক্ষিক ডিআরআর সিস্টেমের সুদক্ষ কার্যকারিতা বাধা পায়। বিমস্টেকের প্রেক্ষিতে সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার প্রচেষ্টা খুবই সীমিত থেকেছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ২০০৬ সালে একটি প্রাথমিক কর্মশালার পরে – যেখানে সদস্য দেশগুলি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিক উপস্থাপন করেছিল – পরবর্তী কর্মশালাগুলি ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।(চ)(৫) ২০২২ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত বিমস্টেক এক্সপার্ট গ্রুপ অন ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কোঅপারেশন-এর প্রথম অধিবেশনে সকল সদস্য দেশের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অঞ্চলটিতে বিপর্যয় প্রস্তুতি উন্নত করার জন্য একটি কর্ম পরিকল্পনা গড়ে তোলার বিষয়ে সহমত পোষণ করা হয়।(৬)
যেহেতু দুর্বল সম্প্রদায়গুলি প্রায়শই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং যে কোনও দুর্যোগে সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে তাঁরাই পদক্ষেপ করেন, তাই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়ায় তাঁদের সম্পৃক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আঞ্চলিক পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগগুলি প্রায়শই সরকারি কর্মকর্তা ও সশস্ত্র বাহিনীর স্তরে সীমাবদ্ধ থাকে এবং সেটি এনজিওগুলির পরীক্ষামূলক অভিজ্ঞতা অথবা শিক্ষা খাত ও বেসরকারি ক্ষেত্রের দক্ষতাকে কাজে লাগায় না। বহুস্তরীয় সম্পৃক্ততার অভাব এই অঞ্চলে ডিআরআর-এর সংস্কৃতিকে প্রোথিত হতে বাধা দেয়, যা সরেজমিনে বহুপাক্ষিক উদ্যোগের কার্যকারিতাকে খর্ব করে। বিমস্টেকের উদ্যোগগুলি সরকারি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ এবং মহড়াগুলি সশস্ত্র বাহিনী দ্বারাই পরিচালিত হয়। স্বাভাবিক ভাবেই দুর্যোগ প্রস্তুতিতে বিমস্টেকের প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি। বিমস্টেক ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (২০২২)(৭) সম্পর্কিত আর্থিক বিশেষজ্ঞ অথবা বিমস্টেকের সঙ্গে কাজ করা থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলির(ছ) মধ্যে বৈঠকের মতো উদ্যোগগুলি সাম্প্রতিক ঘটনা।
এ হেন পরিস্থিতিতে যেখানে দুর্যোগ-আক্রান্ত দেশগুলি তাদের সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে সংবেদনশীল – যেমনটা বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে দেখা যায় – প্রায়শই দাতা দেশগুলির সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা প্রদত্ত এইচএডিআর সহায়তা প্রত্যাখ্যান করে, যেগুলি সম্পর্কে তারা যথেষ্ট শঙ্কিত। একটি বহুপাক্ষিক সংস্থার সদস্য হিসাবে সার্বভৌমত্বের প্রতি এই সংবেদনশীলতা দেশগুলিকে তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে একত্র করে একটি ঐক্যবদ্ধ আঞ্চলিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বাহিনী তৈরিতে বাধা দেয়। যাই হোক, একটি বহুপাক্ষিক সংস্থার এইচএডিআর – যা দেশ নির্দিষ্ট নয় – সঙ্কটের সময়ে আরও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। বহুপাক্ষিক সংস্থার জন্য এই ধরনের একটি দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরতাকে সশক্ত করতে সাহায্য করবে এবং এর ফলে দুর্যোগ প্রস্তুতির প্রচেষ্টারও প্রচার চালানো সম্ভব হবে।
সঙ্কটের পরিস্থিতিতে এই সংবেদনশীলতা বিমস্টেক দেশগুলিতে পরিলক্ষিত হয় এবং এর সদস্যরা আঞ্চলিক সংস্থার আওতার বাইরে দ্বিপাক্ষিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। স্বাভাবিক ভাবেই একটি দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী ছাড়া বিমস্টেক বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে ঘটে যাওয়া কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাড়া দিতে পারেনি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার একটি বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিমস্টেকের সম্মুখীন এই প্রতিবন্ধকতাগুলি জি-২০-এর জন্য তাদের নিজস্ব ডিআরআর ব্যবস্থাকে সংশোধন সংক্রান্ত সমস্যার ক্ষেত্রে সাবধান করতে পারে। জলবায়ু বিপর্যয় খারাপতর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব জুড়ে সক্রিয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্কৃতি চালু করার জন্য জি২০-র একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
একাধিক জি২০ দেশই নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ দ্বারা প্রভাবিত এবং গোষ্ঠীটির পাঁচটি সদস্য দেশ ২০২২ সালের ওয়ার্ল্ড ডিজাস্টার রিস্ক ইনডেক্স বা বিশ্ব দুর্যোগ ঝুঁকি সূচকে বিশ্বের ১৫টি সর্বোচ্চ দুর্যোগপ্রবণ দেশের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে (দ্রষ্টব্য সারণি ১)।
চিত্র ১: বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির ডিজাস্টার রিস্ক ইনডেক্স বা দুর্যোগ ঝুঁকি সূচক (২০২২)
দেশ | ডিজাস্টার রিস্ক স্কোর |
ফিলিপিন্স | ৪৬.৮২ |
ভারত | ৪২.৩১ |
ইন্দোনেশিয়া | ৪১.৪৬ |
কলম্বো | ৩৮.৩৭ |
মেক্সিকো | ৩৭.৫৫ |
মায়ানমার | ৩৫.৪৯ |
মোজাম্বিক | ৩৪.৩৭ |
চিন | ২৮.৭ |
বাংলাদেশ | ২৭.৯ |
পাকিস্তান | ২৬.৭৫ |
রাশিয়া | ২৬.৫৪ |
ভিয়েতনাম | ২৫.৮৫ |
পেরু | ২৫.৪১ |
সোমালিয়া | ২৫.০৭ |
ইয়েমেন | ২৪.২৬ |
দ্রষ্টব্য: এই তালিকায় পাঁচটি জি২০ সদস্য দেশকে হলুদ কালিতে তুলে ধরা হয়েছে।
উত্স: ‘কান্ট্রিজ উইথ দ্য হাইয়েস্ট ডিজাস্টার রিস্ক ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন ২০২২’, স্ট্যাটিস্টা ২০২৩(৮)
জি২০ সদস্য দেশগুলির মধ্যে জাপান এবং ভারত ২০১৯ সালে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি দেশের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। (দ্রষ্টব্য সারণি ২)।
চিত্র ২: ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি দেশের ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স বা জলবায়ু ঝুঁকি সূচক
দেশ | ক্লাইমেট রিস্ক স্কোর |
মোজাম্বিক | ২.৬৭ |
জিম্বাবোয়ে | ৬.১৭ |
বাহামা | ৬.৫ |
জাপান | ১৪.৫ |
মালাউয়ি | ১৫.১৭ |
আফগানিস্তান | ১৬ |
ভারত | ১৬.৬৭ |
দক্ষিণ সুদান | ১৭.৩৩ |
নাইজেরিয়া | ১৮.১৭ |
বলিভিয়া | ১৯.৬৭ |
দ্রষ্টব্য: এই তালিকায় দু’টি জি২০ সদস্য দেশকে হলুদ রঙে দেখানো হয়েছে।
সূত্র: গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০১৯: জার্মান ওয়াচ(৯)
স্বাভাবিক ভাবেই, জলবায়ু সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে এবং তাদের অঞ্চলের সীমানার মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে এই দেশগুলির মধ্যে ক্রমবর্ধমান সচেতনতা লক্ষ করা যায়। ২০২৩ ক্লাইমেট চেঞ্জ পারফরমেন্স ইনডেক্স(১০) জি২০ দেশগুলির জলবায়ু সুরক্ষা সংক্রান্ত ফলাফলকে এ ভাবে তালিকাভুক্ত করেছে: উচ্চ— ভারত, ব্রিটেন, জার্মানি; মধ্য— ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মিশর, স্পেন, ইন্দোনেশিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড; নিম্ন— ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, আর্জেন্টিনা; এবং সর্বাধিক নিম্ন— জাপান, চিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সৌদি আরব।
সমস্ত জি২০ সদস্য দেশ সেন্ডাই ফ্রেমওয়ার্ক অন ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন মেনে চলে।(জ) একই সঙ্গে অতিমারির বিপর্যয়কর প্রকৃতি দ্বারা চালিত হয়ে এই দায়বদ্ধতা জি২০ এবং ওয়ার্কিং গ্রুপের গঠনের আওতায় ডিআরআর-এর অভিযোজনের আন্তঃসহযোগিতার এক ক্ষেত্র রূপে তুলে ধরেছে। প্রকৃত পক্ষেই রাষ্ট্রপুঞ্জ বলেছে: ‘জলবায়ু এবং অন্যান্য দুর্যোগ ঝুঁকির বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নকে সুরক্ষা জোগাতে আমাদের এখনই বিনিয়োগ শুরু করতে হবে। এমনটা করার জন্য বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির সমর্থন অপরিহার্য।’(১১)
সেই অনুসারে, ওয়ার্কিং গ্রুপটি প্রারম্ভিক সতর্কতা ব্যবস্থার আন্তর্জাতিক সুরক্ষা, দুর্যোগ প্রতিরোধী পরিকাঠামো, শক্তিশালী আর্থিক পরিকাঠামো, দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা এবং ডিআরআর-এ বাস্তুতন্ত্রভিত্তিক পদ্ধতির বর্ধিত প্রয়োগের বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছে। এটি সেন্ডাই ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যমেয়াদি পর্যালোচনার জন্য বিবেচনাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করতে, ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক নীতি ও ডিআরআর সম্পর্কিত উদ্যোগগুলি সম্পর্কে অবহিত করতে এবং সকল স্তরে বহুপাক্ষিক সহযোগিতা পুনর্নবীকরণ করতে আগ্রহী।(১২) এই প্রচেষ্টায় জি২০-র জন্য গ্লোবাল সাউথ থেকে বহুপাক্ষিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সতর্কতা এবং সর্বোত্তম অনুশীলনের জন্য একটি সামগ্রিক কেস স্টাডি অপরিহার্য।
২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরের সুনামি আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম মারাত্মক বিপর্যয় যেটি ভারত মহাসাগর অঞ্চলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পুনর্বিবেচনার সূত্রপাত করে। এটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিমস্টেকের সম্পৃক্ততারও সূচনা করে এবং স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলির সংযুক্তি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আসিয়ানের বর্তমান বহুস্তরীয় ব্যবস্থায় অনুঘটক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। আসিয়ান-এর সামগ্রিক আঞ্চলিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকাঠামোর মধ্যে এখনও উন্নতির অবকাশ রয়েছে, যা জি২০-র জন্য একটি সূচনা বিন্দু এবং গোষ্ঠীটির বহুপাক্ষিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য এক উদাহরণ হিসাবে কাজ করতে পারে।
তবে সম্ভাব্য সমস্যাগুলি সম্পর্কে সচেতন হওয়া যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই জরুরি সেই সম্পর্কিত সেরা অনুশীলনগুলি অর্জন করা। সেই অনুসারে, বহুপাক্ষিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উপর নিম্নলিখিত সুপারিশগুলি বিমস্টেকের সম্মুখীন প্রতিবন্ধকতা এবং আসিয়ান থেকে তাদের সংশ্লিষ্ট পাঠের উপর ভিত্তি করে উঠে আসে। এটির লক্ষ্য হল ডিআরআর-এ জি২০-র ওয়ার্কিং গ্রুপকে আরও কার্যকর ভাবে সহযোগিতা প্রদান।
জি২০-র মাধ্যমে সম্মিলিত ডিআরআর-এর পথ প্রশস্ত করার জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে একটি চুক্তি গড়ে তোলা দরকার, যা বহুপাক্ষিক সম্পৃক্ততার মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করতে পারে। দুর্যোগের তীব্রতা ও পৌনঃপুনিকতা বৃদ্ধি এবং ঘন ঘন সীমান্ত পেরিয়ে তার প্রভাবের দরুন সাময়িক দ্বিপাক্ষিক অনুশীলন – যেমনটা বিমস্টেক অঞ্চলে বিদ্যমান – দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আর কার্যকর না-ও হতে পারে। তাই আরও প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতির প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া, ভারত এবং ব্রাজিলের সমন্বয়ে গঠিত জি২০ ত্রয়ীকে – যা সেন্ডাই ফ্রেমওয়ার্ক দ্বারা নির্ধারিত লক্ষ্যগুলি অর্জনের প্রচেষ্টাকে ইন্ধন দেওয়ার উদ্দেশ্যে একত্র হয়েছিল(১৩) – এই চুক্তি প্রণয়নে নেতৃত্ব দিতে হবে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, আসিয়ান এগ্রিমেন্ট অন ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইমার্জেন্সি রেসপন্স (এএডিএমইআর) এই অঞ্চলের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বাস্তুতন্ত্রের ভিত্তি গঠন করে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিকে এমন ভাবে আনুষ্ঠানিক করার মাধ্যমে আসিয়ান এই অঞ্চলে দুর্যোগ মোকাবিলায় একটি সম্মিলিত প্রতিক্রিয়া্র প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে সক্ষম হয়েছে, যার ফলে এর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
দ্রুত পরিবর্তনশীল ঝুঁকির নিরিখে জি২০-র ডিআরআর পদক্ষেপগুলির ক্রমাগত অভিযোজন সুনিশ্চিত করতে গোষ্ঠীটিকে অবশ্যই তার উদ্যোগগুলির সঙ্গে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকাঠামো এবং প্রোটোকলগুলির সমন্বয়কে সুনিশ্চিত করতে হবে। এটি জি২০-কে শুধু মাত্র তার বিভিন্ন উদ্যোগের উপর নজর রাখতেই সক্ষম করবে না, তার পাশাপাশি নির্দিষ্ট অগ্রাধিকার, ফলাফল ও লক্ষ্যগুলির সঙ্গে বিশ্বব্যাপী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বাস্তুতন্ত্রেও অবদান রাখতে সাহায্য রাখবে। এর পাশাপাশি, এটি জি২০ ডিআরআর ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরির মাধ্যমে সৃষ্ট গতিশীলতাকে ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, আসিয়ান-এর দুর্যোগ সম্পর্কিত উদ্যোগগুলির এএডিএমইআর-এর সঙ্গে সংযোগ রয়েছে এবং তাই একটি সার্বিক আঞ্চলিক পরিকাঠামোর সঙ্গে ‘সমন্বয়’ করা হয়েছে।(১৪) এ ছাড়াও, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিশ্বব্যাপী আলাপ-আলোচনার সঙ্গে সমন্বয়কে সুনিশ্চিত করার জন্য এই নথিতে সেন্ডাই ফ্রেমওয়ার্কের মতো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।(১৫) একই ভাবে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক প্রোটোকলের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য জি২০-তে এই ধরনের একটি প্রবিধান শুধু মাত্র তার সদস্যদের কাছ থেকেই নয়, অন্য অংশীদারদের অংশগ্রহণকেও সুনিশ্চিত করবে।
সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে জ্ঞান, তথ্য বা প্রযুক্তিগত জ্ঞানের আদান-প্রদান বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন। জি২০ দ্বারা ‘জি২০-র সম্মিলিত কাজকে উত্সাহ জোগানো, দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসের জন্য
বহুস্তরীয় গবেষণা ও সর্বোত্তম অনুশীলনগুলির আদানপ্রদান’-এর লক্ষ্যে একটি ডিআরআর ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করার(১৬) পাশাপাশি এমন একটি ব্যবস্থার প্রয়োজন, যার মাধ্যমে সদস্য রাষ্ট্রগুলি পরস্পরের মধ্যে জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার জন্য একত্রে কাজ করতে পারে। প্রারম্ভিক সতর্কতা ব্যবস্থার আন্তর্জাতিক সমন্বয় অগ্রাধিকারে অগ্রসর হতে, পরিকাঠামো ব্যবস্থাকে আরও দুর্যোগ প্রতিরোধী করে তুলতে এবং শক্তিশালী জাতীয় ডিআরআর আর্থিক পরিকাঠামো তৈরিতে এটি সাহায্য করবে।
আসিয়ানে আসিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের সভা (এডিএমএম) এবং এডিএমএম প্লাসের(ঝ) মতো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জ্ঞান ভাগ করে নেওয়া হয়। এগুলি আসিয়ান সদস্য দেশ এবং তাদের আলাপচারিতার অংশীদারদের মধ্যে বাস্তব সহযোগিতার এক কার্যকর মঞ্চ হিসেবে কাজ করে।(১৭) ওয়ার্কিং গ্রুপের মাধ্যমে আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলির সামরিক বাহিনী মানবিক প্রতিক্রিয়াকে সমর্থন জোগানোর জন্য রসদ, পরিকাঠামো নির্মাণ, পরিবহণের পাশাপাশি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের মতো ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ সক্ষমতা বাড়াতে একত্রে কাজ করার ব্যাপারে সমর্থ হয়েছে।
সরকার এবং সামরিক বাহিনীকে বাদ দিয়ে নাগরিক সামাজিক সংস্থা, শিক্ষাক্ষেত্র, বেসরকারি খাত এবং স্থানীয় সম্প্রদায়গুলিও বহুপাক্ষিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই শান্তির সময়ে বেসামরিক-সামরিক সম্পর্কের মধ্যে আন্তঃসহযোগিতার বিকাশ প্রয়োজন, যাতে তারা মানবিক জরুরি পরিস্থিতিতে একে অপরের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া চালাতে সক্ষম হয়। এই শক্তিগুলির মধ্যে একটি আন্তঃসহযোগিতামূলক সম্পর্কের নানাবিধ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার মধ্যে একে অন্যের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানকে সম্ভব করে তোলার পাশাপাশি একে অন্যের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করার ক্ষমতা প্রদান করবে। আসিয়ান বেসামরিক-সামরিক সমন্বয়ের সঙ্গে অপরিচিত নয়, যেমনটা আসিয়ান স্ট্যান্ডবাই অ্যারেঞ্জমেন্টস ফর ডিজাস্টার রিলিফ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি রেসপন্স-এর (এসএএসওপি) অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে দেখা গিয়েছে। এএডিএমইআর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এসএএসওপি সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে ‘সামরিক ও বেসামরিক সম্পদ এবং ক্ষমতার ব্যবহার সহজতর করা’সহ যৌথ দুর্যোগ কার্যকলাপের পদ্ধতি প্রদান করে।(১৮)
ডিআরআর-এর জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের কার্যালয় ইতিমধ্যেই জি২০ ডিআরআর ওয়ার্কিং গ্রুপকে সমর্থন করলেও সেই ক্ষেত্রে আরও জাতীয় এবং স্থানীয় সুশীল সমাজ গোষ্ঠীগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এএডিএমইআর অংশীদার গোষ্ঠীর মতো এই ধরনের একটি প্রক্রিয়া, যাতে সুশীল সমাজ অন্তর্ভুক্ত, তা জি২০ এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি সেতুবন্ধনের কাজ করবে এবং ব্যাপকতর বাস্তব জ্ঞানকে সুনিশ্চিত করে।(১৯)
অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ভারত-সহ জি২০-র বেশ কয়েকটি দেশের বর্ধিত বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে সদস্য রাষ্ট্রগুলির আঞ্চলিক মানবিক শক্তি হিসাবে তাদের ভূমিকাকে আরও সংজ্ঞায়িত করার প্রয়োজন রয়েছে, বিশেষ করে একটি রেসপন্স ফোর্সের পরিপ্রেক্ষিতে। যাই হোক, এই জাতীয় বাহিনী তৈরি করার সময় সার্বভৌমত্বের সংবেদনশীলতার বিষয়টিও মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। সদস্য রাষ্ট্রগুলির সামরিক বাহিনীগুলিকে তাদের জাতীয় পরিচয় বজায় রাখার পাশাপাশি বহুপাক্ষিক প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসাবে একত্রে কাজ করতে সক্ষম হতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করার সময় জি২০-কে অবশ্যই এ বিষয়ে বিশেষ ভাবে সচেতন হতে হবে।(২০)
এই প্রেক্ষিতে ‘ওয়ান আসিয়ান, ওয়ান রেসপন্স’ নীতি অনুসারে দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া কার্যকলাপের সময় আসিয়ান তার সদস্য দেশগুলিকে নিজস্ব জাতীয় পতাকার পাশাপাশি আসিয়ান-এর পতাকার ব্যবহারকেও সমর্থন জোগায়। কার্যকর ভাবে, এটি প্রতিটি আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিপর্যয় সংক্রান্ত কার্যকলাপের সময় একটি ‘ওয়ান আসিয়ান’ প্রতিক্রিয়া বজায় রাখে।(২১)
আরোপণ: সোহিনী বোস এবং এস নন্থিনী, ‘মাল্টিল্যাটেরালিজম অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ইন দ্য গ্লোবাল সাউথ: আ কেস স্টাডি ফর দ্য জি২০’, টি২০ পলিসি ব্রিফ, জুন ২০২৩
ক) ভারত বিমস্টেক বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা উপক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয়।
খ) যেহেতু আসিয়ান বিমস্টেকের কাছাকাছি অবস্থিত, তাই এটি তার কিছু ভৌগোলিক দুর্বলতাও ভাগ করে নেয়, যা বিমস্টেককে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে সাহায্য করে।
গ) আন্দামান-সুমাত্রা সাবডাকশন জোন হল সুন্দা সাবডাকশন জোনের উত্তরতম প্রান্ত। ভারতীয় এবং ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের ধাক্কার কারণে এটি বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাগুলির মধ্যে অন্যতম।
ঘ) হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড ডিজাস্টার রিলিফ (এইচএডিআর) হল এমন এক সাহায্য, যা একটি সংস্থা (সাধারণত সরকার) দ্বারা বিপর্যয়গ্রস্তদের প্রদান করা হয়। সাধারণত, এর মধ্যে রয়েছে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা এবং খাদ্য, পোশাক ও ওষুধের আকারে ত্রাণ সহায়তা প্রদান।
ঙ) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিমস্টেকের অনুশীলন (২০১৭, ২০২০ এবং ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত) একটি সাম্প্রতিক ঘটনা এবং এর উৎসের নেপথ্যে রয়েছে উপকূলীয় দেশগুলির পারস্পরিক রাজনৈতিক স্বার্থে নিজেদের মধ্যে পুনঃসম্পৃক্ত হওয়া, বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত গুরুত্বের কারণে। তা সত্ত্বেও এই অনুশীলনগুলি এখনও নিয়মিত করা হয়নি।
চ) ২০১৯ সালে ঝুঁকি-অবহিত নগর পরিকল্পনার উপর একটি বিমস্টেক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় এবং বিমস্টেক দেশগুলির জন্য কোভিড-১৯-এর সময় দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশাসন সংক্রান্ত আর একটি কর্মশালা ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হয়। সম্প্রতি শুরু হওয়া বিমস্টেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুশীলনগুলিও জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার এক মঞ্চ প্রদান করে।
ছ) বিমস্টেক নিয়ে কাজ করা থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলির মধ্যে আদান-প্রদান স্বাধীন থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলি দ্বারা চালিত হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, আরআইএস (রিসার্চ অ্যান্ড ইনফর্মেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজ) ভারত বিমস্টেক নেটওয়ার্ক অব পলিসি থিঙ্ক ট্যাঙ্কস দ্বারা প্রতিষ্ঠা করেছে। আজ পর্যন্ত এর পাঁচটি সংস্করণ অনুষ্ঠিত হয়েছে: ২০১০, ২০১৫, ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০২০। ভারতের বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে বিমস্টেক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ডায়লগ অন রিজিওনাল সিকিউরিটি-র আয়োজন করেছে।
জ) সেন্ডাই ফ্রেমওয়ার্ক ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন (২০১৫-২০৩০) তার স্বাক্ষরকারীদের বিপর্যয়ের ঝুঁকি থেকে উন্নয়ন লাভ রক্ষা করার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ প্রদান করে।
ঝ) এডিএমএম প্লাস আসিয়ান এবং তার আটটি অংশীদার – অস্ট্রেলিয়া, চিন, ভারত, জাপান, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (সম্মিলিত ভাবে ‘প্লাস’ নামে পরিচিত) এই অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের জন্য নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষামূলক সহযোগিতাকে সশক্ত করার এক মঞ্চ।
১) মিনিস্ট্রি অব হোম অ্যাফেয়ার্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া
২) সোহিনী বোস, ‘বিমস্টেক অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট: ফিউচার প্রস্পেক্টস ফর রিজিওনাল কোঅপারেশন’, ইস্যু ব্রিফ নম্বর ৩৮৩, জুলাই ২০, ২০২০, অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন
৩) বোস, ‘বিমস্টেক অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট: ফিউচার প্রস্পেক্টস ফর রিজিওনাল কোঅপারেশন’
৪) ডেভিড ব্রিউস্টার প্রমুখ, ‘অস্ট্রেলিয়া-ইন্ডিয়া ইন্দো-প্যাসিফিক ইনিশিয়েটিভ: রিজিওনাল কোলাবরেটিভ অ্যারেঞ্জমেন্টস ইন মেরিং ইকোলজি ইন দ্য ইন্দো-প্যাসিফিক’, ক্যানবেরা, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, জুলাই ২০২২
৫) ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন অ্যান্ড গুজরাত ইনস্টিটিউট ফর ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, হ্যান্ডবুক অন রিস্ক ইনফর্মড আর্বান প্ল্যানিং ফর বিমস্টেক মেম্বার কান্ট্রিজ, ডিসেম্বর ১৭-২০, ২০১৯, গান্ধীনগর, গুজরাত ইনস্টিটিউট ফর ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, ২০১৯
৬) ‘বিমস্টেক এক্সপার্ট গ্রুপ এগ্রিজ টু ডেভেলপ দ্য প্ল্যান অফ অ্যাকশন টু ইমপ্রুভ প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড কোঅর্ডিনেশন ফর রেসম্পন্ডিং টু ন্যাচরাল ডিজাস্টারস ইন দ্য রিজিয়ন’, বিমস্টেক, মে ১২, ২০২২
৭) ‘ফিন্যান্সিয়াল এক্সপার্টস ফ্রম বিমস্টেক মেম্বার স্টেটস মিট টু ডিসকাস দি এস্টাবলিশমেন্ট অব দ্য বিমস্টেক ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’, বিমস্টেক, ডিসেম্বর ১৯, ২০২২
৮) ‘কান্ট্রিজ উইথ দ্য হাইয়েস্ট রিস্ক ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন ২০২২’, স্ট্যাটিস্টা ২০২৩, অ্যাকসেসড মে ১২, ২০২২
৯) ‘দ্য টেন মোস্ট অ্যাফেক্টেড কান্ট্রিজ ইন ২০১৯’, গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স: জার্মান ওয়াচ, ২০১৯, অ্যাকসেসড মে ১২, ২০২২
১০) জেন বুর্ক, থিয়া উলিচ, ক্রিস্টোফার বলস, নিকলাস হোন এবং লেওনার্দো নাশিমেন্তো, ক্লাইমেট চেঞ্জ পারফরম্যান্স ইনডেক্স, জার্মানি, ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক, জার্মান ওয়াচ এবং নিউ ক্লাইমেট ইনস্টিটিউট, নভেম্বর ১৪, ২০২২, ৭
১১) মামি মিজোতোরি, ‘স্টেটমেন্ট অন দি এস্টাবলিশমেন্ট অফ আ জি২০ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন’, ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন, জানুয়ারি ১২, ২০২৩
১২) জি২০
১৩) মিনিস্ট্রি অব হোম অ্যাফেয়ার্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া
১৪) আসিয়ান, আসিয়ান এগ্রিমেন্ট অন ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইমার্জেন্সি রেসপন্স (এএডিএমইআর) ওয়ার্ক প্রোগ্রাম ২০১৬-২০২০, সেমারং, আসিয়ান সেক্রেটারিয়েট, এপ্রিল ২০১৬
১৪) আসিয়ান, আসিয়ান এগ্রিমেন্ট অন ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইমার্জেন্সি রেসপন্স (এএডিএমইআর) ওয়ার্ক প্রোগ্রাম ২০২১-২০২৫, জাকার্তা, আসিয়ান সেক্রেটারিয়েট, ডিসেম্বর ২০২০
১৫) ‘ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ’, জি২০ ইন্ডিয়া ২০২৩, অ্যাকসেসড মে ১৩, ২০২২
১৭) ‘অ্যাবাউট এডিএমএম প্লাস’, আসিয়ান ডিফেন্স মিনিস্টারস মিটিং, জানুয়ারি ১০, ২০২৩
১৮) আসিয়ান, স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর ফর রিজিওনাল স্ট্যান্ডবাই অ্যারেঞ্জমেন্টস অ্যান্ড কোঅর্ডিনেশন অব জয়েন্ট ডিজাস্টার রিলিফ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি রেসপন্স অপারেশনস, জাকার্তা, আসিয়ান কোঅর্ডিনেটিং সেন্টার ফর হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাসিস্ট্যান্স অন ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, অ্যাকসেসড মে ২৩, ২০২২
১৯) কার্লা বুদিয়ার্তো, ‘এএডিএমইআর পার্টনারশিপ গ্রুপ (এপিজি)’, দ্য কলাম, আসিয়ান কোঅর্ডিনেটিং সেন্টার ফর হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাসিস্ট্যান্স অন ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, অ্যাকসেসড মে ২০, ২০২২
২০) মিনিস্ট্রি অব হোম অ্যাফেয়ার্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া
২১) আসিয়ান, ডিক্লেয়ারেশন অন ওয়ান আসিয়ান, ওয়ান রেসপন্স, লাও পিডিআর, আসিয়ান কোঅর্ডিনেটিং সেন্টার ফর হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাসিস্ট্যান্স অন ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৬
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Sohini Bose is an Associate Fellow at Observer Research Foundation (ORF), Kolkata with the Strategic Studies Programme. Her area of research is India’s eastern maritime ...
Read More +