জেনারেল অ্যাটমিকস-এর তৈরি দূরবর্তীভাবে চালিত ৩১টি প্রিডেটর ড্রোন এমকিউ-৯বি পাওয়ার জন্য ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। দুই দেশের মধ্যে সরকারের-সঙ্গে-সরকারের বোঝাপড়া ড্রোন চুক্তিটিকে সহজতর করেছে। ২০২৩ সালে স্বাক্ষরিত এবং সম্প্রতি নিরাপত্তা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি দ্বারা অনুমোদিত চুক্তিটি মূল্যের দিক থেকে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ইতিহাসে বৃহত্তমগুলির মধ্যে একটি। সার্বিক বোঝাপড়ার মধ্যে ভারতে এই ড্রোনগুলির রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও ঢেলে সাজানোর সুবিধা (এমআরও)-ও অন্তর্ভুক্ত। পরবর্তী পদক্ষেপগুলির জন্য, একটি বিশ্বব্যাপী ড্রোন উৎপাদন কেন্দ্র তৈরির প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে ইউএভি উপাদানগুলি তৈরি করতে ভারতীয় সংস্থা ভারত ফোর্জ লিমিটেডের সঙ্গে জেনারেল অ্যাটমিক্সের অংশীদারিত্বকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। মার্কিন ও ভারতীয় সংস্থাগুলির মধ্যে অংশীদারিত্ব পরবর্তী প্রজন্মের যুদ্ধের ড্রোন তৈরিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শমূলক সহায়তার ভিত্তি প্রদান করবে, যা ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে দুটি চলতি যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ভারত-মার্কিন যৌথ সামরিক প্রযুক্তি পূরণের জন্য একটি দ্রুত বিকশিত পরিসরে পরিণত হয়েছে।
২০২৩ সালে স্বাক্ষরিত এবং সম্প্রতি নিরাপত্তা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি দ্বারা অনুমোদিত চুক্তিটি মূল্যের দিক থেকে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ইতিহাসে বৃহত্তমগুলির মধ্যে একটি।
এই ৩১টি সিস্টেম সশস্ত্র বাহিনীর তিনটি শাখার মধ্যে বিতরণ করা হবে। ভারতীয় নৌবাহিনী সম্ভবত ১৫টি ড্রোন পাবে, যা ৩১টি ড্রোনের বর্তমান ব্যাচের মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ। বাকি ১৬টি সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর মধ্যে সমানভাবে ভাগ করা হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ভারতীয় নৌবাহিনী ইতিমধ্যে দুটি এমকিউ-৯বি পরিচালনা করছিল, যার মধ্যে একটি সেপ্টেম্বরে বঙ্গোপসাগরে ভেঙে পড়ে। ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য ড্রোনগুলি ভারত মহাসাগরের বিশাল বিস্তৃতি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি শক্তিশালী ব্যবস্থা হিসাবে কাজ করেছে। সশস্ত্র বাহিনীর তিনটি শাখাই নৌবাহিনী ইজারা নেওয়ার পর থেকে সিস্টেমটির কার্যগত সক্ষমতা ও অভ্রান্ততার উপর গভীর নজর রেখেছিল। নৌবাহিনী যে পরবর্তীকালে দুটি ড্রোনের এক বছরের ইজারা পুনর্নবীকরণ করেছে, তা সিস্টেমটির সফল চালনার দিকে ইঙ্গিত করে। তাছাড়া, লক্ষণীয় যে সম্প্রতি চালনা করার সময় একটি ড্রোনের ভেঙে পড়ার ঘটনাটি উভয় পক্ষকে, বিশেষ করে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে, বৃহত্তর চুক্তিতে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত করেনি। এটি সিস্টেমটির কার্যগত স্থিতিস্থাপকতাকে প্রমাণ করে, এবং ইতিমধ্যে দুর্ঘটনার জন্য অন্যান্য কারণকে দায়ী করা হয়েছে।
এমকিউ-৯বি: ইউএসপি
এমকিউ-৯বি-এর কৌশলগত ও কার্যগত ক্ষমতা ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর জন্য অত্যন্ত কাজের। এগুলি উপগ্রহ যোগাযোগ (স্যাটকম) সক্ষম, যা এমকিউ-৯বি-কে যথেষ্ট কার্যগত অন্তর্ভুক্তি (অপারেশনাল কভারেজ) দেয়, বিশেষ করে বৃহৎ পৃষ্ঠ অঞ্চলে, ভূমি বা সমুদ্রের উপরে, এবং তা দীর্ঘ সময়ের জন্য। একটি ওপন আর্কিটেকচার সিস্টেম দিয়ে নির্মিত এই রিপারগুলিকে বিভিন্ন ধরনের বিদেশি এবং এমনকি দেশীয়ভাবে নির্মিত পেলোডের সঙ্গে একীভূত করা যেতে পারে, যার মধ্যে আছে সেন্সর, গতিশীল পেলোড, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং টিকে থাকার ক্ষমতা। ভারত চাইলে কৌশলগত ও কার্যগত জটিলতার সমাধানে এইভাবে এতে বিভিন্ন পেলোড ব্যবহার করতে পারে। এমকিউ-৯বি ৪০ ঘণ্টা ধরে এবং ৪০,০০০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত উড়তে পারে, যা একে ভারত মহাসাগরে এবং হিমালয়ের চ্যালেঞ্জিং উচ্চতায় নজরদারির জন্য আদর্শ করে তোলে। সমুদ্র ও স্থল জুড়ে ক্রমাগত নজরদারি ছাড়াও, রিপারগুলি অভ্রান্তভাবে লক্ষ্য সনাক্ত করতে এবং আক্রমণ করতে পারে। এগুলি চারটি হেলফায়ার মিসাইল, ৪৫০ কেজি জিবিইউ-৩৯বি প্রিসিশন-গাইডেড গ্লাইড বোমা, নেভিগেশন সিস্টেম, সেন্সর স্যুট ও মোবাইল গ্রাউন্ড কন্ট্রোল সিস্টেম দিয়ে সজ্জিত। ভারতীয় বিমান বাহিনী (আইএএফ) ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর (আইএ) জন্য প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) এবং তিব্বত মালভূমি জুড়ে ক্রমাগত বা অবিরাম নজরদারি একটি প্রধান দুর্বলতা হিসাবে থেকে গিয়েছে। স্কাইগার্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্টের এমকিউ-৯বি গণপ্রজাতন্ত্রী চিন (পিআরসি)-এর সঙ্গে আইএএফ বা আইএ-র ইন্ট্যালিজেন্স, সার্ভেল্যান্স ও রিকনাইস্যান্স (আইএসআর) ব্যবধান পূরণ করবে। ফলে চিনের স্থাবর সামরিক স্থাপনাগুলিকে এবং এলসি-র আশেপাশে বা আরও অভ্যন্তরে সচল বাহিনীকে নির্ভুলভাবে আক্রমণ করা সম্ভব হবে। ভারত ও চিনকে বিভক্ত-করা পাহাড়ী ভূখণ্ডে স্কাইগার্ডিয়ান-এর অবিরাম নজরদারি আইএএফ-কে চিনা বাহিনীর নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম করবে।
এমকিউ-৯বি ৪০ ঘণ্টা ধরে এবং ৪০,০০০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত উড়তে পারে, যা একে ভারত মহাসাগরে এবং হিমালয়ের চ্যালেঞ্জিং উচ্চতায় নজরদারির জন্য আদর্শ করে তোলে।
এমকিউ-৯বি-এর ন্যাভাল ভেরিয়েন্ট সিগার্ডিয়ান-এর ৮ মিলিয়নেরও বেশি উড়ান ঘণ্টা সক্ষমতা আছে, এবং এটি একটি মনুষ্যবাহী বিমানের চেয়ে ৮৬ শতাংশ কম ব্যয়বহুল৷ এর কার্যগত মূল্য লুকিয়ে রয়েছে এর সর্ব-আবহাওয়া কর্মক্ষমতা, বেসামরিক বিমান ট্রাফিক, পৃষ্ঠ যুদ্ধ, বৈদ্যুতিন যুদ্ধ (ইডাবলু), এবং প্রতিরক্ষামূলক কাউন্টার-এয়ার অপারেশনের বিরামহীন একীকরণের মধ্যে। সাবমেরিন-বিরোধী যুদ্ধের (এএসডাবলু) সঙ্গে জড়িত অত্যন্ত চাহিদাপূর্ণ ও জটিল অভিযানগত পরিবেশে একে ব্যবহার করা যেতে পারে সমন্বিত মিশনের জন্য, যার মধ্যে থাকতে পারে স্যাটকম-সক্ষম সিগার্ডিয়ানের সঙ্গে ভারতীয় নৌবাহিনীর (আইএন) বর্তমানে ব্যবহৃত এমএইচ-৬০ রোমিও মাল্টি-মিশন চপারের মতো এএসডাবলু হেলিকপটার। পরেরটি সমুদ্রে যেখানে প্রতিপক্ষ সাবমেরিনগুলি রয়েছে, সেখানে সোনোবয় নামাতে পারে এবং সিগার্ডিয়ান সেই সাবমেরিনগুলির উপস্থিতি ও গতিবিধি সনাক্ত করে তার সেন্সরগুলির সাহায্যে অনুসন্ধান এলাকাটি পর্যবেক্ষণ করতে পারে। সিগার্ডিয়ান ড্রোন থেকে প্রাপ্ত সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অ্যাটাক হেলিকপ্টার দ্বারা লক্ষ্যবস্তুকে আক্রমণ করা সম্ভব হয়।
এই সিস্টেমগুলি সরবরাহের জন্য কমপক্ষে চার থেকে ছয় বছর সময় লাগবে, এবং এর কার্যকারিতার উপর ভিত্তি করে একটি বিবর্তনশীল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এর সরবরাহ নির্ধারণ করা হবে। আগামী দশকে ভারতের চ্যালেঞ্জগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে এমন অঞ্চলগুলিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ সক্ষমতার অভাব পূরণ করতে পারে। ভারত সম্প্রতি মার্কিন নেতৃত্বাধীন ৪৫টি দেশের একটি আলগা জোট কমবাইন্ড মেরিটাইম ফোর্স (সিএমএফ)-এর সদস্য হয়েছে, যা পশ্চিম ভারত মহাসাগরে একটি নিরাপত্তা জোট গঠন করেছে এবং এখন এই অঞ্চলটিকে তার প্রত্যক্ষ স্বার্থের একটি এলাকা করে তুলেছে৷ এমকিউ-৯বি মোতায়েনের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের (আইওআর) শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কোয়াড দেশগুলি এবং গণতান্ত্রিক দেশগুলির বৃহত্তর সম্প্রদায়ের সঙ্গে ভারতও এখন তার এইচএডিআর কাজে লাগিয়ে অনুসন্ধান ও উদ্ধার, বায়ুবাহিত প্রাথমিক সতর্কতা, অ্যান্টি-সাবমেরিন যুদ্ধ, এবং বৃহত্তর শক্তি-সহ অন্যান্য সম্পর্কিত ভূমিকা পালন করতে পারে। এমকিউ-৯বি আরব সাগর ও উত্তর-পশ্চিম ভারত মহাসাগরের মতো দূরবর্তী ভৌগোলিক এলাকায় হামলা চালানোর ক্ষেত্রে ভারতের ওভার-দ্য-হাইজোন ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করবে। আন্তর্জাতিক শিপিং লাইনে হুথি-নেতৃত্বাধীন আক্রমণ তুঙ্গে উঠলে ভারতীয় নৌবাহিনী উপসাগরে একটি উপযুক্ত কার্যগত ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারে। এমকিউ-৯বি-গুলি ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য দূর সমুদ্রে অবৈধ চলাচলে বাধা দেওয়ার ক্ষমতার সঙ্গে একটি প্রাণঘাতী উপাদান যোগ করতে পারে।
ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি স্থায়ী সমস্যা হল প্রযুক্তি হস্তান্তর (টিওটি), যা আমলাতন্ত্র এবং সাধারণত একটি আনুষ্ঠানিক জোটের অনুপস্থিতির দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়।
যদিও অধিগ্রহণ চুক্তিটি ভারতকে আইএসআর পরিসরে বিদ্যমান সক্ষমতার ফাঁকগুলি পূরণ করার জন্য সিস্টেম সরবরাহ করবে, এমআরও চুক্তিটি ইউএভি ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রকৃত দীর্ঘমেয়াদি লাভ এনে দিতে পারে। ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি স্থায়ী সমস্যা হল প্রযুক্তি হস্তান্তর (টিওটি), যা আমলাতন্ত্র এবং সাধারণত একটি আনুষ্ঠানিক জোটের অনুপস্থিতির দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়। ইউএভি উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণের একটি বাস্তুতন্ত্র তৈরি করা গেলে তা টিওটি-তে কিছু প্রযুক্তিগত বাধা পার হতে সহায়তা করতে পারে। মেজর ডিফেন্স পার্টনার (এমডিপি) মর্যাদার মতোই, ইউএভি চুক্তিটি যেমন আনুষ্ঠানিক জোট ছাড়াই ভারতে কিছু সংবেদনশীল প্রযুক্তি নিয়ে আসতে পারে (যার জন্য কখনও কখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেসনাল ক্লিয়ারেন্সের প্রয়োজন হয়) বা কৌশলগত সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে পারে।
বিবেক মিশ্র স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ডেপুটি ডিরেক্টর
কার্তিক ব্যোমকান্তি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন সিনিয়র ফেলো
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.