Published on Jun 03, 2023 Updated 0 Hours ago

উত্তর কোরিয়ার মতো অন্যান্য নিষেধাজ্ঞাধীন দেশের উপর রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা বুঝিয়ে দেয় যে রুশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তার নিজের প্রয়োজন মেটাতে আক্ষম।

মস্কো খাদ্য সরবরাহের বিনিময়ে উত্তর কোরিয়া থেকে অস্ত্র নিচ্ছে

উত্তর কোরিয়া বা ডেমোক্র্যাটিক পিপলস রিপাবলিক অফ কোরিয়া (ডিপিআরকে)–র সঙ্গে রুশ ফেডারেশনের একটি চুক্তির বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যে অস্ত্রের বিনিময়ে পিয়ংইয়ংকে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। ইউক্রেনে মস্কোর বর্তমান অভিযানের বাইরেও এই চুক্তির প্রভাব রয়েছে। রুশ ফেডারেশনের সামরিক সহায়তার প্রয়োজন বা উত্তর কোরিয়ার খাদ্য জোগাড়ের চেষ্টার মধ্যে আশ্চর্যজনক কিছু নেই। উত্তর কোরিয়া ঐতিহাসিকভাবে একটি ‘‌বাস্কেট কেস’‌, এবং ১৯৯০–দশকে দেশটি বিধ্বংসী দুর্ভিক্ষের শিকার হয়েছিল এবং এটি একটি অতিরিক্ত রকমের সামরিক রাষ্ট্র। খাদ্যের জন্য অস্ত্রের বিনিময় ডিপিআরকে–র জন্য অর্থপূর্ণ। আর রাশিয়ার ক্ষেত্রেও তাদের অস্ত্রের ক্ষয়প্রাপ্ত ভান্ডার পূরণ করতে উত্তর কোরিয়ার কাছে যাওয়ার মধ্যেও কোনও বিস্ময়ের উপাদান নেই। এটি সুবিদিত ও নথিভুক্ত যে রাশিয়ার ওয়াগনার গ্রুপ ভাড়াটে সৈন্যদের জন্য পিয়ংইয়ং থেকে সামরিক সরবরাহ আসে, এবং যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেটও সরবরাহ করা হয়। ওয়াগনার গ্রুপটি ইউক্রেনে, এবং বর্তমানে সেখানকার বাখমুতে, অভিযানের মধ্যে রয়েছে।

রুশ ফেডারেশনের সামরিক সহায়তার প্রয়োজন বা উত্তর কোরিয়ার খাদ্য জোগাড়ের চেষ্টার মধ্যে আশ্চর্যজনক কিছু নেই।

অন্যদিকে, সরবরাহে উত্তর কোরিয়ার সম্পৃক্ততার প্রয়োজন এই কারণেই পড়ছে যে ইউক্রেনের যুদ্ধে রুশ বাহিনীর অভিযানগত ও সরবরাহের চাহিদা মেটাতে রুশ প্রতিরক্ষা শিল্প অক্ষম। যদিও এটি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান সংঘাতে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য রাশিয়ার মরিয়া দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিতবাহী, তবুও বিষয়টি ভবিষ্যতের একটি অশুভ লক্ষণ উপস্থাপন করছে।

প্রথমত, অস্ত্রের প্রয়োজনে উত্তর কোরিয়ার মতো রাষ্ট্রের ওপর রাশিয়ার নির্ভরতা বৃদ্ধি  হল মূল সমস্যার একটি লক্ষণ মাত্র। তার সামরিক প্রয়োজনীয়তার পূর্ণ বহরের ক্ষেত্রে না–হলেও ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে তার সামরিক প্রয়াসকে সমর্থন করার জন্য মস্কো এখন ডিপিআরকে ও ইরানের মতো নিষেধাজ্ঞাধীন রাষ্ট্রগুলির উপর ব্যাপকভাবে ও বিস্তৃতভাবে নির্ভরশীল। এই বিষয়টি এখন ভয়ঙ্করভাবে প্রতীয়মান যে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্প ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রয়াস টিকিয়ে রাখতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, যদিও মনে হবে পিপলস রিপাবলিক অফ চায়না (পিআরসি) যেহেতু রাশিয়ার নিকটতম মহাশক্তিধর মিত্র, তাই তারাই রাশিয়ার প্রধান সরবরাহকারী। বাস্তবে কিন্তু তা নয়। পশ্চিমী শক্তি, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, বেজিংয়ের উপর মস্কোকে সামরিক সহায়তা দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য সমন্বিত চাপ, এবং বেজিংয়ের নিজস্ব সূক্ষ্ম হিসাবনিকাশ মিলে দেশটিকে মস্কোকে সরাসরি সরবরাহ থেকে বিরত রেখেছে। এই অবস্থায় পিয়ংইয়ং যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহকারী হিসাবে উঠে এসেছে। ডিপিআরকে চিনের প্রক্সি হিসাবে রাশিয়াকে সামরিক সরবরাহের জন্য বেজিংয়ের বাহক হিসেবে কাজ করছে। বেজিংকে যাতে রাশিয়ার যুদ্ধ প্রয়াসকে সরাসরি সহায়তার জন্য দায়ী না–করা যায়, সে জন্য পিয়ংইয়ং–এর মাধ্যমে সামরিক সরবরাহ চিনকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়;‌ এবং এর ফলে অন্যথায় পশ্চিম থেকে নিষেধাজ্ঞা–সম্পর্কিত যে চাপ আসত তা বেজিং এড়িয়ে যেতে পারে। বেজিং ও পিয়ংইয়ং–মস্কোর এই বিনিময় বাণিজ্য ব্যবস্থায় নগদ অর্থ, বাণিজ্যিক বিমান, পণ্যসামগ্রী এবং পিয়ংইয়ংয়ের অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহের বিনিময়ে কাঁচামাল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর বাইরে ভারতের প্রতিরক্ষা চাহিদার প্রেক্ষাপটে চিন–রাশিয়ার সম্পর্ক একটি বিপজ্জনক চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে।

বেজিংকে যাতে রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে সরাসরি সহায়তার জন্য দায়ী না–করা যায়, সে জন্য পিয়ংইয়ং–এর মাধ্যমে সামরিক সরবরাহ চিনকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়;‌ এবং এর ফলে অন্যথায় পশ্চিম থেকে নিষেধাজ্ঞা–সম্পর্কিত যে চাপ আসত তা বেজিং এড়িয়ে যেতে পারে।

ভারতের জন্য প্রভাব
রাশিয়ার নিজস্ব যুদ্ধ প্রচেষ্টার জন্য পর্যাপ্ত সরবরাহের ব্যবস্থা করতে না–পারা রুশ সমর–শিল্প ভিত্তির একটি ক্রমবর্ধমান দুর্বলতাকে তুলে ধরে। ভারত ও চিনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে ভারতকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করার জন্য রুশ সামরিক শিল্পের কোনও উদ্বৃত্ত ক্ষমতা অবশিষ্ট নেই। ইউক্রেন সঙ্কটের ফলে রাশিয়া ও চিনের মধ্যে বন্ধনও অর্থনৈতিক চাহিদা মেটানোর জন্য চিনের ওপর মস্কোর গভীর নির্ভরতায় রূপান্তরিত হয়েছে। সর্বোত্তম ভূ–রাজনৈতিক সমর্থন সুরক্ষিত করতে, বা ন্যূনতম পর্যায়ে ডিপিআরকে–র মতো চিনা প্রক্সিগুলির মাধ্যমে গোপন ও প্রকাশ্য সামরিক সহায়তা অর্জনের জন্য, মস্কো এখন বেজিংয়ের উপর নির্ভরশীল। এই ঘটনাটি ভারতের জন্য মস্কো থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজের সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ বৈচিত্র্যময় করার দিকে আরও জরুরি ভিত্তিতে এবং জোরালোভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন সূচিত করে। ডিপিআরকে–রাশিয়ার বাণিজ্য নয়াদিল্লির জন্য এই অপরিহার্যতাকে তুলে ধরে যে তাকে মস্কোর উপর সামরিক প্রয়োজনের জন্য ব্যাপক নির্ভরতা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হবে। একজন প্রাক্তন ভারতীয় বিদেশসচিব যেমন সম্প্রতি বলেছেন, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর হাতে রুশ-নির্মিত যা অস্ত্র ব্যবস্থা আছে, তা টিকিয়ে রাখার জন্য সামরিক সরঞ্জাম, গোলাবারুদ ও অতিরিক্ত সামগ্রী সরবরাহের বিরুদ্ধে মস্কোর উপর চাপ দেওয়ার ক্ষমতা বেজিংয়ের এখন অনেক বেশি।

আরও এগিয়ে, যদি নয়াদিল্লি রুশ সামরিক হার্ডওয়্যারের উপর নির্ভরতার বিরূপ ফলাফল এড়াতে চায়, তবে তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম ইউরোপ, ইজরায়েল, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত হতে হবে, এবং দেশের মধ্যে সামরিক সরঞ্জামের বৃহত্তর উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে। এই প্রচেষ্টাগুলির পাশাপাশি প্রয়োজন বিপরীত প্রকৌশলের (‌রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং)‌ মতো অন্যান্য ব্যবস্থা করা, যা কোনওভাবেই সহজ নয় যেহেতু এতে সামরিক প্রযুক্তি পুনর্গঠন ও পুনরুৎপাদন জড়িত। ভারতীয় সশস্ত্র পরিষেবাগুলির ভান্ডারে রুশ-নির্মিত অস্ত্র ব্যবস্থা ও প্ল্যাটফর্মের উপাদান ও খুচরা যন্ত্রাংশের বিপরীত প্রকৌশল ও উৎপাদনের জন্য সরকারকে শুধু প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও) বা তার সহযোগী সংস্থা ও প্রতিরক্ষা রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রের (‌ডিপিএসইউ)‌ উপর নয়, সমানভাবে ভারতীয় বেসরকারি ক্ষেত্রের উদ্যোগের উপর নির্ভর করতে হবে ।

ইউক্রেন সঙ্কটের ফলে রাশিয়া ও চিনের মধ্যে বন্ধনও অর্থনৈতিক চাহিদা মেটানোর জন্য চিনের ওপর মস্কোর গভীর নির্ভরতায় রূপান্তরিত হয়েছে।

নিশ্চিতভাবে এই প্রচেষ্টার কিছু ইতিমধ্যেই চলছে। হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্যাল লিমিটেড (হ্যাল)–এর নাসিক প্ল্যান্ট ভারতীয় বায়ুসেনার (আইএএফ) কমপক্ষে ২০টি সুখোই–৩০ এমকেআই বিমান মেরামত ‌ও ঢেলে সাজার (আরওএইচ)‌ কাজ সম্পন্ন করেছে। তবুও তা অপ্রতুল, কারণ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও তিনটি সেনা শাখাই এখনও রাশিয়ার থেকে ডাউনস্ট্রিম সরবরাহের সীমাবদ্ধতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হিমসিম খাচ্ছে। ভারতকে ক্রেমলিনকেও একটি কথা জানিয়ে দিতে হবে:‌ তা হল ভারতের বিশাল রুশ-নির্মিত সামরিক রসদাগার রক্ষণাবেক্ষণ ও তার কার্যকারিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিকল্প যন্ত্রাংশ ও সরবরাহ অন্য বিদেশি শক্তি বা দেশীয় সূত্রে সংগ্রহ করতে হচ্ছে শুধু রুশ প্রতিরক্ষা শিল্পের নিজস্ব অক্ষমতা এবং সরবরাহের সীমাবদ্ধতার কারণে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.