Author : Samir Saran

Published on Mar 20, 2024 Updated 0 Hours ago

আজ ভারত ঠিক সেই মুহূর্তে ও জিডিপি-তে এসে দাঁড়িয়েছে, যেমনটা ২০০৭ সালে চিনের ছিল। তাই কি ভারতের ক্ষেত্রেও ঠিক একই রকমের আভাস দেওয়া যায়?

মুহূর্ত, গতিবেগ এবং অনুপ্রেরণা: গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর থেকে গ্লোবাল সাউথের ব্যাঙ্ক হয়ে ওঠার সফর

২০০৭ সালে চিনের জিডিপি ছিল প্রায় ৩.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। আজ ভারতের জিডিপি ৩.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং সম্ভবত আরও বেশি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারতীয় কূটনীতি যে মুহূর্তটিকে স্বীকৃতি দিচ্ছে তা বোঝার জন্য এই সমান্তরাল সময়রেখার দিকে আলোকপাত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এটি এমন এক মুহূর্ত, যা ভারতের জনগণ, সংস্থা এবং রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা সমর্থিত হলে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে নতুন আকার দেবে। এই মুহূর্তটিকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং প্রাপ্ত শিক্ষাকে সুদৃঢ় কাজে রূপান্তরিত করাই ২০২৩-এর সবচেয়ে বড় উত্তরাধিকার কারণ ভারত একটি রূপান্তরমূলক কূটনৈতিক বছর হিসেবে ২০২৩ সালে জি২০ সভাপতিত্বের দায়িত্ব পালন করেছে।

ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকানো জরুরি। ভূ-অর্থনৈতিক দিক থেকে ২০০৭ সালে চিআজকের মতো বৃহৎ শক্তি হয়ে ওঠেনি। এবং সেই সময়ে চিনের জিডিপি ছিল ভারতের আজকের তুলনায় কম। এর এক বছর পরে বিশ্বব্যাপী আর্থিক সঙ্কটের সময় দেশটি সকলের একমাত্র গন্তব্য হয়ে ওঠে। প্রতিটি দেশ বেজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে এবং গণপ্রজাতন্ত্রটির জন্য তাদের কূটনীতিতে একটি বিশেষ স্থান সৃষ্টি করতে আগ্রহী হয়ে পড়ে। ডাভোস ও অন্য ব্যবসায়িক মঞ্চগুলিতে চিনা নেতারা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসেন। চিন প্রাতিষ্ঠানিক এবং ভূ-অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া প্রদান করেছে অর্থাৎ একটি ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক নির্মাণ, একটি আন্তঃ-মহাদেশীয় ঋণদান কর্মসূচির পরিকল্পনা যা পশ্চিমী সংস্থাগুলির উত্তরাধিকারের সীমাবদ্ধতা ছাড়াই অবকাঠামোগত বৃদ্ধিকে সূচিত করেছে এবং একগুচ্ছ অর্থনৈতিক প্রকল্পের সূচনা… যা অবশেষে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে একত্রিত হয়েছে… চিন এ সবের মাধ্যমে নিজের প্রতিক্রিয়া দর্শিয়েছে।

কথা ত্যি যে, এর মধ্যে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীনও হয়েছে। তবুও বাস্তবতা হল এই যে, চি২০০৮ সালে তার অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি ব্যবহার করে বড় আকারের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব আদায়ের চেষ্টা চালায় এবং নিজেকে একটি ভাল জায়গায় দাঁড় করিয়েছে। বিশ্ব শৃঙ্খলার জন্য একটি অত্যাবশ্যক অতিরিক্ত শক্তি হিসাবে নিজেকে তুলে ধরে চিন নিজের জায়গা করে নিয়েছে। মনে রাখতে হবে, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর্থিক সঙ্কট থেকে নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে যথেষ্ট সংগ্রাম করছিল এবং ইউরোজোন প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল, ঠিক তখন চিন স্থিতিশীলতা অর্থনৈতিক গতিশীলতার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছিল। সমগ্র বিশ্ব বৃদ্ধির একটি অতিরিক্ত চালিকাশক্তি এবং বিনিয়োগের একটি অতিরিক্ত উৎসের প্রত্যাশী ছিল এবং এমনটা ছিল সে সময়ের প্রয়োজন তাই ভূ-রাজনৈতিক শক্তির একটি অতিরিক্ত কেন্দ্র হিসেবে চিনকে সে সময়ে গোটা বিশ্ব স্বাগত জানিয়েছে।

একই রকমের জিডিপিসম্পন্ন হওয়ার দরুন ভারত একই ধরনের এক মুহূর্তের সম্মুখীন। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে কি একই রকম পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব? ২০২৪-এ প্রবেশ করার সময় ভারতীয়দের এঅবকাঠামো সম্পর্কে অবশ্যই অবগত হতে হবে, যা তাঁদের বর্তমান বিশ্বে জায়গা করে দিয়েছে। সাম্প্রতিক অতীত আমাদের শিক্ষা দিয়েছে যে, প্রায় ট্রিলিয়ন ডলারসম্পন্ন ভারতীয় অর্থনীতি সুবিশাল প্রভাব ফেলতে পারে। দূরদৃষ্টি দক্ষ কূটনীতির মাধ্যমে, ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং চিনের মতো চার বা পাঁচ গুণ বড় অর্থনীতির পাশাপাশি নিজের জন্য একটি স্থান তৈরি করে নিতে পারে।

২০২৪ সালটি আক্ষরিক অর্থেই ভারতের জন্য সুযোগের দরজা উন্মোচিত করেছে, যখন এক দিকে ইউরোপ স্থবির হয়ে পড়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে জর্জরিত এবং অন্য দিকে চিন অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলির মোকাবিলার চেষ্টায় রত বিশ্ব অর্থনীতিতে তার অংশীদারিত্ব প্রায় সব দিক থেকেই সঙ্কুচিত হয়ে চলেছে। ভারতের পরবর্তী সরকারের কর্মসূচি কেবলমাত্র এমনটাই হওয়া উচিত যে: তা ভারতের নিজেদের সম্ভাবনাকে তুলে ধরবে এবং আন্তর্জাতিক বৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠান এবং নিরাপত্তার জন্য নিজেই এক নতুন শক্তি হয়ে উঠবে।

নতুন শক্তি হয়ে ওঠার জন্য কোনও অসাধারণত্বের প্রয়োজন নেই। সর্বোপরি, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চিনের প্রবৃদ্ধি অসাধারণ ছিল না। কিন্তু তাতে গতি ছিল, যেমনটা আজ ভারতের রয়েছেভারতের নিজস্ব গতিপথ এবং উদ্দেশ্যমূলক শক্তি রয়েছে, যা এক দূষণহীন এবং ডিজিটাল ভবিষ্যতের জন্য উপযুক্ত। চিনের যদি ২০১০-এর দশকের বৃদ্ধির চালিকাশক্তি গণ উত্পাদন হয়ে থাকে, তা হলে ভারতের রয়েছে প্ল্যাটফর্ম ইকোনমি বা মঞ্চ অর্থনীতি, যা ২০২০-র দশকের প্রাণশক্তি।

কিন্তু নতুন শক্তি হয়ে উঠতে গেলে কিছু বৈশিষ্ট্য অবশ্যই থাকতে হবে। ১৫ বছর আগে বেজিং যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা কোনও অপূর্ণ প্রতিশ্রুতি ছিল না। চিনের প্রস্তাবে একটি ব্যবস্থা, একটি প্রকল্পের কথা বলা হয়েছিল। এই পথনির্দেশিকা চিনের অংশীদারদের উৎসাহিত করে তুলেছিল। একটি সম্পূর্ণ ভবিষ্যৎ-কেন্দ্রিক কাঠামো এই উচ্চতর সম্ভাবনাকেই দর্শায় যে, ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারসম্পন্ন অর্থনীতিও দরকার পড়লে ১৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারসম্পন্ন অর্থনীতিকে টেক্কা দিতে পারে।

 

সমমনস্ক অংশীদারদের সঙ্গে একজোটে ভারতের মানচিত্রভিত্তিক অগ্রাধিকারমূলক পরিকাঠামো, সংযোগপথ, ব্যবসা
বাণিজ্যকেন্দ্র এবং উন্নয়নমূলক প্র
কল্পের প্রয়োজন। ভারতকে সাহস দৃঢ়তার সঙ্গে এমনটা করতে হবে এবং একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ক্ষেত্রগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে, যেখানে ভারত নিজের উপস্থিতি বৃদ্ধি করতে পারবে। ২০২৪ সালটি হল বিশ্বে তার ভূমিকার জন্য ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা বর্ণিত বিশ্ব মানচিত্রে নিজের উপস্থিতি তুলে ধরার বছর।

 

এ ছাড়াও, একটি নতুন সহযোগিতামূলক কাঠামো স্থাপন করা জরুরি। কারণ ভারত খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বেশ অনেকটা পরিমাণ অর্থ ব্যয় করবে। বেসরকারি ক্ষেত্রগুলি বিশ্ব জুড়ে সংযোগ, সরবরাহ শৃঙ্খল এবং সংস্থান স্থিতিস্থাপকতা প্রকল্পগুলিকে সমর্থন করার জন্য একত্রিত হচ্ছে। কিন্তু জন উন্নয়ন তহবিলের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে এবং প্রকৃতপক্ষে তা ভারতের অর্থনীতির চেয়ে দ্রুততর হারেই ঘটবে

এটি ভারতের নতুন শক্তি হয়ে ওঠার নেপথ্যে সারবত্তা। এমনকি যদি ধরে নেওয়া হয় যে, ভারত বর্তমান ডলারের নিরিখে বছরে মাত্র ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায় – যা তার সাম্প্রতিক বেঞ্চমার্কের চেয়ে কম – তা হলেও তা হবে উন্নয়ন অর্থায়নের একটি প্রধান নতুন উত্স। যদি ভারত ধীরে ধীরে অথচ স্থির ভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে তার উন্নয়ন সহযোগিতা বাজেট নিজের জিডিপি-০.৫ শতাংশের কম করে, তা হলে ভারত বিশ্বব্যবস্থায় প্রায় ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ প্রদান করতে পারবে। ভারত ইতিমধ্যেই গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে; এ বার সময় এসেছে ভারতের গ্লোবাল সাউথের ব্যাঙ্ক হয়ে ওঠার।

ভারতের অনন্য প্রস্তাব, তার নিজস্ব পথনির্দেশিকা এবং বিশ্বের কাছে তার নিজস্ব প্রস্তাবনাকে অর্থায়ন দ্বারা চালিত হতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে একটি বহির্মুখী-কেন্দ্রিক উন্নয়ন আর্থিক সংস্থার প্রয়োজন, যা বিশ্বব্যাপী প্রকল্পগুলিকে ত্বরান্বিত করতে পারে। এটির এমন একটি ব্যাঙ্ক দরকার, যা চিনা ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের ভারতীয় সংস্করণ স্বরূপ এবং যেটি শুধু বাণিজ্য অর্থায়নের ঊর্ধ্বে উঠে বিশ্বব্যাপী কর্পোরেট চাহিদার উপর মনোনিবেশ করবে। এবং এমনটা করার জন্য সকলের জন্য বোধগম্য এক ভাবমূর্তি ভারতকে গড়ে তুলতে হবে।

 

যদি ভারত ধীরে ধীরে অথচ স্থির ভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে তার উন্নয়ন সহযোগিতা বাজেট নিজের জিডিপি-০.৫ শতাংশের কম করে, তা হলে ভারত বিশ্বব্যবস্থায় প্রায় ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ প্রদান করতে পারবে। ভারত ইতিমধ্যেই গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে; এ বার সময় এসেছে ভারতের গ্লোবাল সাউথের ব্যাঙ্ক হয়ে ওঠার।

 

ভারত সরকার স্বদেশে এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রদর্শন করেছে। প্রধানমন্ত্রীর গতি শক্তি উদ্যোগ একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে ভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পগুলিকে সংযুক্ত করে। একই ভাবে ভারতের একটি বাহ্যিক সম্পৃক্ততামূলক পদ্ধতির প্রয়োজন। সমমনস্ক অংশীদারদের সঙ্গে একজোটে ভারতের মানচিত্রভিত্তিক অগ্রাধিকারমূলক পরিকাঠামো, সংযোগ পথ, ব্যবসা বাণিজ্য কেন্দ্র এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্পের প্রয়োজন। ভারতকে সাহস দৃঢ়তার সঙ্গে এমনটা করতে হবে এবং একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ক্ষেত্রগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে, যেখানে ভারত নিজের উপস্থিতি বৃদ্ধি করতে পারবে। ২০২৪ সালটি হল বিশ্বে তার ভূমিকার জন্য ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা বর্ণিত বিশ্ব মানচিত্রে নিজের উপস্থিতি তুলে ধরার বছর।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.