-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ভারত-মার্কিন অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর আমেরিকা সফর গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হতে পারে
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ২১ জুন থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় সফর নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। কেউ কেউ বলছেন, এটি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর। অন্যরা এটিকে মোদীর দেং জিয়াওপিং মুহূর্ত বলে অভিহিত করেছেন, অর্থাৎ যা ভারতের ভূ-অর্থনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে।
সব দিক থেকে দেখলে এই সফর ভারত-মার্কিন অর্থনৈতিক, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করবে।
জানুয়ারি মাসের শেষ নাগাদ ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল মার্কিন ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইসর জেক সুলিভানের সঙ্গে ইনিশিয়েটিভ ফর ক্রিটিক্যাল অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনোলজিস-এর (আইসিইটি) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জন্য ওয়াশিংটনে গেলে এ নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হয়। ২০২২ সালের মে মাসে টোকিওতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মোদীর সঙ্গে দেখা করার সময় এই উদ্যোগের ঘোষণা করা হয়।
আইসিইটি চালু করার সময় হোয়াইট হাউসের একটি বিবৃতিতে বলা হয় যে, দুই দেশ শুধু সরকারের মধ্যেই নয়, বরং দুই দেশের বাণিজ্য এবং শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও ‘কৌশলগত প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব এবং প্রতিরক্ষা শিল্প সহযোগিতা’ সম্প্রসারণ করতে প্রস্তুত।
এই সফরের মূল উদ্দেশ্যে হবে ভারতীয় যোদ্ধাদের শক্তি জোগানোর জন্য জিই-৪১৪ জেট ইঞ্জিন তৈরির লাইসেন্স সংক্রান্ত ঘোষণা।
এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হবে ভারতীয় যোদ্ধাদের শক্তি জোগানোর জন্য জিই-৪১৪ জেট ইঞ্জিন তৈরির লাইসেন্স সংক্রান্ত ঘোষণা। ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতীয় প্রতিরক্ষা উদ্ভাবন বিভাগের মধ্যে অংশীদারিত্ব’র প্রচারের জন্য উভয় পক্ষই আনুষ্ঠানিক ভাবে ইন্দাস টেন ইনিশিয়েটিভও চালু করবে। ১৮ এমকিউ-৯ রিপার আর্মড ড্রোন পাওয়ার ব্যাপারেও একটি ঘোষণা হতে পারে। গোয়েন্দা তথ্য ভাগ করে নেওয়া এবং কিছু যৌথ প্রতিরক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত অবশ্য এই পর্যায়ে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
পরিকল্পনা
এই সফরের সঙ্গেই ইতিমধ্যে সম্পৃক্ত রয়েছে নানাবিধ পরিকল্পনা এবং একাধিক প্রচেষ্টা। এই মাসের শুরুর দিকে ইউএস সেক্রেটারি অব ডিফেন্স বা মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্প সহযোগিতার জন্য একটি পথনির্দেশিকা প্রসঙ্গে আলোচনা শেষ করতে নয়াদিল্লি সফরে এসেছিলেন। নিরাপত্তা, বিশেষ করে মহাকাশ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই সম্পর্কিত সমস্ত পরিসরে সহযোগিতা সম্প্রসারণের জন্য মে মাসে অনুষ্ঠিত অ্যাডভান্সড ডোমেন ডিফেন্স ডায়লগের কথাও উল্লেখ করেন দু’জন।
গত ৬ জুন ওয়াশিংটন ডিসিতে ইন্ডিয়া-ইউএস স্ট্র্যাটেজিক ট্রেড ডায়লগ বা ভারত-মার্কিন কৌশলগত বাণিজ্য সংলাপের সূচনার সময়েই একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের কথা তুলে ধরা হয়েছিল। বিদেশসচিব ভি এম কোয়াত্রা ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন, যার উদ্দেশ্য ছিল ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত পরিসরে’ উন্নয়ন ও বাণিজ্যকে সহজতর করা এবং এর আওতায় রয়েছে সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহী, মহাকাশ, টেলিকম, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি, এআই, প্রতিরক্ষা, বায়োটেক ইত্যাদি। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের শক্তিশালী ব্যুরো অফ ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সিকিউরিটিতে রফতানি নিয়ন্ত্রণ এবং সম্মতি ক্ষেত্রে কর্মরত শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা অ্যালান এস্তেভেজ দ্বারা পরিচালিত এই আলোচনার লক্ষ্য ছিল, মার্কিন প্রবিধানের বাহুল্য যেন প্রক্রিয়াটির দম বন্ধ না করে দেয় তা সুনিশ্চিত করা।
মোদীর সফরের এক সপ্তাহ আগে জেক সুলিভান নয়াদিল্লিতে ছিলেন শুধু মাত্র শেষ পর্যায়ের কিছু আলোচনার জন্য। পরে তিনি এবং ভারতীয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল আইসিইটি-র অগ্রগতির বিষয়ে কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই) আয়োজিত একটি সিম্পোজিয়ামে অংশ নেন। ডোভাল এ প্রসঙ্গে ভারতীয় চিন্তাভাবনার কথা সংক্ষেপে তুলে ধরেন। তিনি প্রাথমিক ভাবে তাঁর সংশয়ের কথা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি নিশ্চিত ছিলাম না যে, ধারণাটি ঠিক ভাবে বাস্তবায়িত হবে কি না।‘ কিন্তু সরকার, শিল্প, বিজ্ঞানী এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিক্রিয়া দেখার পর ‘আমি অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং আশাবাদীও।’ তিনি আরও বলেন যে আইসিইটি ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘অরবিটাল জাম্প’ হয়ে উঠবে।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের শক্তিশালী ব্যুরো অফ ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সিকিউরিটিতে রফতানি নিয়ন্ত্রণ এবং সম্মতি ক্ষেত্রে কর্মরত শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা অ্যালান এস্তেভেজ দ্বারা পরিচালিত এই আলোচনার লক্ষ্য ছিল, মার্কিন প্রবিধানের বাহুল্য যেন প্রক্রিয়াটির দম বন্ধ না করে দেয় তা সুনিশ্চিত করা।
আইসিইটি এবং ওয়াশিংটনের নয়া ঐকমত্য
প্রযুক্তি-বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধশতাব্দীব্যাপী প্রচেষ্টার আলোকে বর্তমান উন্নয়নগুলির উপর নজর দেওয়া জরুরি। গান্ধী-রেগান সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনিশিয়েটিভ এবং ১৯৮৪ সালের টেকনোলজি ট্রান্সফার বা প্রযুক্তি হস্তান্তর সংক্রান্ত সমঝোতাপত্র (মউ) দিয়ে শুরু করে ইন্ডিয়া-ইউএস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি জয়েন্ট কমিশন (২০০৫) এবং ডিফেন্স টেকনোলজি অ্যান্ড ট্রেড ইনিশিয়েটিভ-এর (২০১২) ক্ষেত্রে এই সম্পর্ক বিশেষ আশাব্যঞ্জক থাকেনি।
এর নেপথ্যে প্রধান কারণ ছিল উভয় পক্ষের লক্ষ্যের ভিন্নতা। এ ছাড়াও কিছু ছিল দুই দেশের মধ্যকার সুবিশাল অসাম্যের স্বাভাবিক ফলাফল। অর্থাৎ যখন ভারত অর্থনীতির সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে মার্কিন প্রযুক্তি ও বাণিজ্যের অন্বেষণে থেকেছে, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে তার বিশ্বজোড়া বাণিজ্যিক কাঠামোয় সংযুক্ত করতে চেয়েছে। যদিও বর্তমানে চিনকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা সম্পর্কের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে।
যাঁরা ভারত-মার্কিন প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্বের জন্য নতুন শর্তাবলি তৈরি করতে আগ্রহী, তাঁরা এই বিষয়ে গভীর ভাবে সচেতন। এবং আলঙ্কারিকভাবে এই সম্পর্ককে ‘সীমাহীন অংশীদারিত্ব’-এর তকমা দেওয়া হলেও, বাস্তবিক স্তরে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে; বিশেষত কিছু প্রযুক্তি ব্যবহারে ভারতের অক্ষমতা এবং অন্য দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা সেই প্রযুক্তিগুলির কয়েকটিকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা সংক্রান্ত প্রযুক্তি হস্তান্তর থেকে উদ্ভূত সমস্যাগুলি।
তাই উচ্চাকাঙ্ক্ষী ফলাফলকে বাস্তব থেকে আলাদা করে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। এর জন্য ভারতীয় ও আমেরিকান নীতি নির্ধারকদের আরও গভীরে প্রবেশ করে নিরীক্ষণ করা জরুরি। বর্তমানে নয়াদিল্লি ওয়াশিংটনের ভূ-রাজনৈতিক বিশ্বদৃষ্টিতে একটি পছন্দসই পরিসরে আসীন হলেও তেমনটা ভারত করতে পেরেছে এমন এক বৃহত্তর মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গির আওতায়, যেটি ওয়াশিংটনের নতুন ঐকমত্য রূপে বিকশিত হচ্ছে। যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক শক্তি হিসাবে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে, তাই চিনের ছুড়ে দেওয়া ভয়ঙ্করতম চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে মার্কিন আন্তর্জাতিক শ্রেষ্ঠত্বকে তুলে ধরার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নীতি পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার উপর বেশি মনোনিবেশ করছে।
বর্তমানে নয়াদিল্লি ওয়াশিংটনের ভূ-রাজনৈতিক বিশ্বদৃষ্টিতে একটি পছন্দসই পরিসরে আসীন হলেও তেমনটা ভারত করতে পেরেছে এমন এক বৃহত্তর মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গির আওতায়, যেটি ওয়াশিংটনের নতুন ঐকমত্য রূপে বিকশিত হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা নীতির ক্ষেত্রে কী কী পরিবর্তনমূলক পদক্ষেপ করতে পারে, তা নিরাপত্তা সংক্রান্ত গুরুত্বের উপর নির্ভর করছে। এপ্রিল মাসে ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনে দেওয়া একটি বক্তৃতায় জেক সুলিভান একটি আধুনিক মার্কিন শিল্প কৌশলের উপর ভিত্তি করে নতুন ঐকমত্য গঠনের আহ্বান জানান।
এটি সর্বাগ্রে সেমিকন্ডাক্টর, ক্লিন এনার্জি টেকনোলজি ইত্যাদি ক্ষেত্রে উদ্ভাবন এবং প্রতিযোগিতার উপর মনোনিবেশ করবে। দ্বিতীয়ত, এতে সক্ষমতা এবং স্থিতিস্থাপকতা তৈরিতে মার্কিন অংশীদারদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তৃতীয়ত, এটি বিদ্যমান ট্রেডিং সিস্টেম বা বাণিজ্যিক ব্যবস্থাকে ‘উদ্ভাবনী নতুন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব’র মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করতে চাইবে, যা শুধু মাত্র শুল্কের উপর জোর দেবে না। চতুর্থত, বিদ্যমান উন্নয়নমূলক ব্যাঙ্কগুলির অপারেটিং মডেলের সংস্কার করে শক্তি, ভৌত এবং ডিজিটাল পরিকাঠামো বিকাশের জন্য উদীয়মান অর্থনীতিতে ব্যাপক হারে বিনিয়োগ করা হবে।
সুলিভানের পরিকল্পনার শেষ এবং মূল স্তম্ভটি ছিল আমেরিকার ‘একটি ছোট পরিসরে এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মৌলিক প্রযুক্তিগুলিকে’ রক্ষা করা। সমস্ত উচ্চ-প্রযুক্তি এবং বিদেশি বিনিয়োগকে কঠোর জাতীয় নিরাপত্তা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
ভারতের প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠা
এটি একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা এবং কী ভাবে তা কাজ করবে ও ভারত কী ভাবে বা আদৌ এর মধ্যে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারবে কি না, তা দেখার বিষয়। সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিস্থাপকতা এবং দূষণহীন শক্তি প্রযুক্তি সম্পর্কিত নানাবিধ মূল উদ্যোগের অংশীদার হিসাবে নয়াদিল্লিকে দেখা হয়। এটি তাৎপর্যপূর্ণ বিনিয়োগের আশা রাখলেও সেগুলি মার্কিন বিধি ও প্রবিধানের পরিধির মধ্যেই সম্ভব এবং মার্কিন প্রয়োজনীয়তা তাকে রূপ দান করবে৷ মার্কিন প্রযুক্তি বা মার্কিন বাজার উভয় ক্ষেত্রেই কোনও সরাসরি বিশেষ প্রবেশাধিকার থাকবে না, যা ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
চতুর্থত, বিদ্যমান উন্নয়নমূলক ব্যাঙ্কগুলির অপারেটিং মডেলের সংস্কার করে শক্তি, ভৌত এবং ডিজিটাল পরিকাঠামো বিকাশের জন্য উদীয়মান অর্থনীতিতে ব্যাপক হারে বিনিয়োগ করা হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই ভারতের একটি প্রধান বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ অংশীদার। নয়াদিল্লি সর্বদা মার্কিন উচ্চ প্রযুক্তি সংস্থার বৃহত্তর প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানিয়েছে, তা সে লাভের জন্য বা সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিস্থাপকতার নামেই হোক। একই ভাবে ভারতীয় ও চিনের ব্যাপক রাষ্ট্রীয় শক্তির মধ্যে ব্যবধান মেটাতে মার্কিন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির প্রয়োজন রয়েছে।
এই আলোকে জিই ৪১৪ ইঞ্জিনের ‘লাইসেন্স ম্যানুফ্যাকচার’ অনুমোদন ১০০ শতাংশ প্রযুক্তি স্থানান্তরের প্রতিশ্রুতি হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ। এফ ৪১৪ প্রকল্পটি বেশ চাহিদাপূর্ণ হবে এবং শুধু ইঞ্জিন আমদানি করা ও এএমসিএ-র জন্য একটি ইঞ্জিন তৈরি করতে জিই-র প্রযুক্তি সহায়তা প্রদান করার নিরিখে অনেকটাই সস্তা হতে পারে। এখনও পর্যন্ত ভারত শুধু মাত্র ১৯৬০-এর দশকে ন্যাট-এর জন্য অর্ফিয়ুস ইঞ্জিন, মিগ২১-এর জন্য আরডি ৩৩ এবং এসইউ-৩০ এমকেআই-এর জন্য এএল ৩১পি তৈরি করেছে৷ একাধিক ক্ষেত্রে এগুলি বিদেশ থেকে সরবরাহকৃত যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে সম্ভব হয়েছে। এলসিএ তেজসকে শক্তি প্রদানকারী কাবেরী ইঞ্জিন নির্মাণের জন্য ভারতের অভ্যন্তরীণ কর্মসূচি ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে।
সমস্যা হল ভারতের আত্মনির্ভর প্রযুক্তির উচ্চাকাঙ্ক্ষা তার সামর্থ্যের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে। এগুলি অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। ভারতীয় সংস্থাগুলি সাফল্যের সঙ্গে কর্ম সম্পাদনে অক্ষম। এ কথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, যে কোনও ক্ষেত্রে উত্পাদনের লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও ইঞ্জিন সম্পর্কিত কিছু প্রযুক্তির স্থানান্তরের বিষয়ে সীমাবদ্ধতা থাকবে।
নয়াদিল্লি মার্কিন প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা, বিশেষ করে চিন প্রসঙ্গে বড় রকমের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে যথেষ্ট চিন্তিত। মার্কিন কংগ্রেস সদস্য মাইক গ্যালাঘারের নেতৃত্বে মার্কিন হাউস সিলেক্ট কমিটি অন স্ট্র্যাটেজিক কম্পিটিশনের দেওয়া মে মাসের প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় এ কথা সুস্পষ্ট হয়েছিল। এই প্রস্তাবে ভারতকে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) প্লাস ৫ গ্রুপিং-এ সদস্যপদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এই গোষ্ঠীতে ন্যাটো এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের পাঁচটি মার্কিন মিত্র দেশ রয়েছে— অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান, ইজরায়েল এবং দক্ষিণ কোরিয়া।
এই মাসের শুরুতে, প্রধানমন্ত্রী মোদী সরকারের ন’বছরের যাত্রার কথা বলতে গিয়ে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর স্পষ্টতই এই ধারণা খারিজ করে দেন। তিনি বলেন, ‘ন্যাটোর পদ্ধতি ভারতের জন্য প্রযোজ্য নয়।’ এর আগেও ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে রাইসিনা ডায়লগে বক্তব্য রাখার সময়ে জয়শঙ্কর বলেছিলেন যে, কোয়াড ‘এশিয়ার ন্যাটো’ নয় এবং ভারতের কখনওই ‘ন্যাটো মানসিকতা’ ছিল না।
বোয়িং পি ৮আই পসাইডন এবং সি গার্ডিয়ান ড্রোনের মতো মার্কিন সরঞ্জামগুলিও এলএসি বরাবর গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে এমন অন্যান্য স্তরও রয়েছে যেখানে ভারত-মার্কিন আধা-জোট কাজ করতে পারে এবং সেগুলি নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানা গিয়েছে। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলির সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য ভাগ করে নেওয়ার ব্যবস্থাও বিদ্যমান। ইতিমধ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক সামুদ্রিক পরিসরে তথ্য আদান-প্রদানের একটি নির্দিষ্ট স্তর রয়েছে। বোয়িং পি ৮আই পসাইডন এবং সি গার্ডিয়ান ড্রোনের মতো মার্কিন সরঞ্জামগুলিও এলএসি বরাবর গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন গোয়েন্দারা গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ইয়াংটসে-তে ভারতীয় ঘাঁটিগুলি দখল করার চিনা পরিকল্পনা সম্পর্কে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সতর্ক করেন। চিনা প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতীয় সাফল্যের নেপথ্যে মার্কিন তথ্য অমূল্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এমনও বলা হয়েছে, গোয়েন্দা তথ্য এমন একটি পরিসর হয়ে উঠতে পারে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত মিথস্ক্রিয়া গভীরতর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইউএস কংগ্রেসের সাবকমিটি অন ইন্টেলিজেন্স অপারেশনস ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের মার্কিন ডিরেক্টরকে ফাইভ আইজ ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিং সিস্টেম এবং ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও জার্মানির সঙ্গে ব্যবস্থা সম্প্রসারণের সুযোগ ও সুবিধাগুলি সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন পেশ করতে বলে। আশা করা যায়, ২০২২ সালের মে মাসের মধ্যে যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল, তা ইতিমধ্যেই লেখা হয়েছে এবং সেটি গুপ্ত রাখা হয়েছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী যৌক্তিক পদক্ষেপটি হতে পারে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এবং ন্যাশনাল টেকনিক্যাল রিসার্চ অফিস (এনটিআরও) দ্বারা চিন-ভারত সীমান্তে যৌথ সিগন্যালের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের সাইটগুলি প্রতিষ্ঠা করা। এর কিছু পূর্ব ইতিহাসও রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিন ১৯৮০-র দশকে জিনজিয়াং এবং অন্তর্মঙ্গোলিয়ায় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে লক্ষ্য করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের সুবিধা স্থাপন করেছিল। ১৯৬০-এর দশকে নন্দাদেবী অভয়ারণ্যে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব উদ্যোগ ছিল, যেখানে চিনা টেলিমেট্রি ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহের জন্য একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত ডিভাইস ব্যবহার করা হত।
মনোজ জোশী অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিস্টিঙ্গুইশড ফেলো
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Manoj Joshi is a Distinguished Fellow at the ORF. He has been a journalist specialising on national and international politics and is a commentator and ...
Read More +