Author : Navdeep Suri

Published on Jul 03, 2023 Updated 0 Hours ago

প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বৈচিত্র্য ইঙ্গিত দেয় যে দীর্ঘ বিরতির পরে বিশ্বের দুটি প্রাচীন সভ্যতার মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে

মোদীর সফর ভারত–মিশর সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন উদ্দীপনা আনতে পারে

২৪–২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মিশর সফরটি গত এক বছর বা তারও বেশি সময় ধরে ভারতের তরফে সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পিত উদ্যোগের একটি অংশ ছিল। এর মধ্যে ছিল ইউএই ও ওমান–সহ মিশরকে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন এবং ভারতের সভাপতি থাকাকালীন আয়োজিত অন্যান্য অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত। ২০২২–এর সেপ্টেম্বরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং অক্টোবরে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কায়রো সফরের সময় এই উদ্যোগের গোড়াপত্তন করেন। এগুলি ভারতের তরফে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতা আল সিসিকে প্রধান অতিথি হিসাবে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণের পথ প্রশস্ত করেছিল।

এই ধরনের ধারাবাহিক যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বিগত চার দশকে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কোনও দিশার অভাবে এলোমেলো হয়ে পড়েছিল। তবে সম্পর্ককে উজ্জীবিত করতে এবং নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে চালিত করতে দুপক্ষই বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু কিছু ভাল পদক্ষেপ করেছিল। সম্পৃক্ততা কিন্তু দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের জন্য মিশরের ১১০ মিলিয়ন জনসংখ্যা দেশটিকে আরব বিশ্বের বৃহত্তম দেশ করে তোলে, আর সেইসঙ্গে এশিয়া ও আফ্রিকার মাঝামাঝি জায়গা বরাবর এর ভূ–রাজনৈতিক অবস্থান এবং বিশ্ব বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধমনী হিসাবে সুয়েজ খালের উপস্থিতি দেশটির গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তোলে। দেশটির কাছে ওই অঞ্চলের বৃহত্তম স্থায়ী সেনাবাহিনী রয়েছে;‌ লিগ অফ আরব স্টেটস–এর সদর দফতর এই দেশটিতে অবস্থিত;‌ দেশটির কূটনৈতিক প্রভাব যথেষ্ট বিস্তৃত, যা তাকে তার প্রকৃত ক্ষমতার উর্ধ্বে উঠে শক্তি প্রয়োগে সক্ষম করে। দেশটি ইউএনএসসি সংস্কারের বিষয়ে ভারতের অবস্থানের ভাগীদার নাও হতে পারে, তবে ধর্মীয় চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে দু’‌দেশের শক্তিশালী ঐকমত্য রয়েছে। অন্যদিকে মিশরের জন্য ভারত এক পুরনো বন্ধু এবং একটি নতুন উদীয়মান শক্তি, প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ উভয়েরই সম্ভাব্য উৎস, এবং বহুমেরু বিশ্বে এক পছন্দসই অংশীদার৷ প্রধানমন্ত্রী মোদীকে মিশরের সর্বোচ্চ পুরস্কার অর্ডার অফ নাইল–এ ভূষিত করা এবং প্রধানমন্ত্রীর অধীনে একটি মন্ত্রী-পর্যায়ের ‘‌ইন্ডিয়া–ইউনিট’‌ গঠনের সিদ্ধান্ত সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর করার অভিপ্রায়ের লক্ষণ।

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ছে, এবং বিমানবাহিনী ও স্পেশাল অপস অনুশীলন এবং উচ্চ পর্যায়ের সফর‌–সহ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ক্ষেত্রে যথেষ্ট উদ্যোগ দেখা গেছে।

সফরের সময় স্বাক্ষরিত কৌশলগত অংশীদারি চুক্তিটি আরও বহুমুখী সম্পর্কের চালক হতে পারে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ছে, এবং বিমানবাহিনী ও স্পেশাল অপস অনুশীলন এবং উচ্চ পর্যায়ের সফর‌–সহ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ক্ষেত্রে যথেষ্ট উদ্যোগ দেখা গেছে। ভারত যেহেতু প্রতিরক্ষা রপ্তানির দিকে মনোনিবেশ করেছে, তাই মিশর একটি সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ বাজার হতে পারে।

তবে সুয়েজ খাল অর্থনৈতিক অঞ্চলের (এসসিজোন) আকারে আরও উদ্দীপক সুযোগ রয়েছে, যার মাধ্যমে ইউরোপ, আফ্রিকা ও উপসাগরীয় অঞ্চলের বাজারে এফটিএ–এর জালিকার সূত্রে সহজে প্রবেশাধিকার পাওয়া সম্ভব। সানমার, আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠী এবং আরও বেশ কয়েকটি ভারতীয় সংস্থা ইতিমধ্যেই স্থানীয় বাজারকে সরবরাহ করতে, এবং তাদের পণ্যগুলি ইউরোপ ও তুর্কিয়েতে রপ্তানি করতে একটি উৎপাদনকেন্দ্র হিসাবে মিশরকে ব্যবহার করে। এমনকি ভারত যখন মেক ইন ইন্ডিয়া প্রচারে মনোনিবেশ করছে, তখন এসসিজোন–সহ মিশরে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি একটি রপ্তানিমুখী ‘‌মেড বাই ইন্ডিয়া ফর দ্য ওয়ার্ল্ড’‌ প্রকল্পের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক হতে পারে।

ভূ–অর্থনীতি ও ভূ–রাজনীতির এই প্রয়োজনীয়তার বাইরে আরও একটি মাত্রা রয়েছে। মিশর মুসলিম বিশ্বে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে, এবং দশম শতকে ফাতেমীয় খিলাফতের সময় প্রতিষ্ঠিত কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামি শিক্ষার জন্য বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসাবে ব্যাপকভাবে গণ্য হয়। এটি ইসলামি আইনশাস্ত্রের প্রধান কেন্দ্র, এবং এর অনেক প্রাক্তন ছাত্র এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে উলেমা হয়ে যান। গত এক দশকে, এবং বিশেষ করে ২০১৩ সালে স্বল্পকালীন মুসলিম ব্রাদারহুড সরকারের পতনের পর, আল আজহার আল কায়দা ও আইএসআইএস–এর মতো সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির প্রচারিত জগাখিচুড়ি ধর্মতাত্ত্বিক মতবাদের মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আল আজহারের বাণিজ্য, প্রকৌশল, মেডিসিন ইত্যাদির মতো নিয়মিত বিভাগগুলিতেও ছাত্র রয়েছে;‌ এবং ২০১৩ সালে, আমার মিশরে থাকার সময়কালে স্বাক্ষরিত একটি এমওইউ–র অংশ হিসাবে, ভারত এই সম্মানিত প্রতিষ্ঠানে আইটি ক্ষেত্রে একটি সেন্টার ফর এক্সেলেন্স প্রতিষ্ঠা করে একটা ভাল কাজ করেছে।

মিশরের গ্র্যান্ড মুফতি ঐতিহ্যগতভাবে আল আজহারের সিনিয়র আলেমদের একটি  কাউন্সিল দ্বারা নির্বাচিত হন, এবং আমরা শেখ শাওকি ইব্রাহিম আল্লামের সঙ্গে একটি ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলেছি। আমরা ২০২২ সালের মে মাসে আইসিসিআর–এর বিশিষ্ট দর্শক (ডিস্টিঙ্গুইশড ভিজিটর) কর্মসূচির অংশ হিসাবে তাঁকে ভারতে আতিথেয়তা দেওয়ার মতো যথাযোগ্য উদ্যোগ নিয়েছিলাম, এবং তা ঘটেছিল আল আজহার মার্চ মাসে নূপুর শর্মার মন্তব্য নিয়ে মৃদু তিরস্কার করার পরেও। এই ঘটনা তাৎপর্যপূর্ণ যে প্রধানমন্ত্রী গ্র্যান্ড মুফতির সঙ্গে দেখা করেছেন, এবং দশম শতকের ফাতিমীয় স্মারক পুরনো কায়রোর আল হাকিম মসজিদ পরিদর্শন করেছেন। ভারতের দাউদি বোহরা সম্প্রদায় মনে করেন তাঁদের ঐতিহ্যের সূত্রপাত ওই মসজিদ থেকে। বোহরাদের দ্বারা পুনরুদ্ধার ও পুনর্নির্মাণ করা এই ঐতিহাসিক মসজিদের পরিদর্শন ছিল বৈদেশিক নীতির মধ্যে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির একটি ভাল প্রক্ষেপণ, কারণ বোহরারা গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় থেকেই প্রধানমন্ত্রী মোদীর অবিচল সমর্থক।

যখন আমরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন যুগে প্রবেশ করছি, তখন আমাদের কিছু ‘আর্মচেয়ার কমেন্টেটর’-এর এই ধরনের বিলাপ করাটা অস্বস্তিকর যে মিশর মে মাসে  শ্রীনগরে পর্যটন বিষয়ক জি২০ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে অংশ নেয়নি। আমাদের মিশরকে জি২০–তে আমন্ত্রণ জানানোর অর্থ এই নয় যে দেশটি জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে বা রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্কারের বিষয়ে তার দীর্ঘস্থায়ী অবস্থানকে ক্ষুণ্ণ করবে। বর্তমানে কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও মিশর তার বৈদেশিক নীতিভঙ্গিতে কিছুটা স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখার চেষ্টা করে, এবং আমাদের ভারতীয়দের এই পদ্ধতিটি অন্য অনেকের চেয়ে ভাল বোঝা উচিত। শ্রীনগর নিয়ে অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সফরসূচি অপরিবর্তিত রাখার ঘটনাটি আমাদের বৈদেশিক নীতির দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিপক্বতা প্রদর্শন করে।

আমাদের কাছে একটা কথা স্পষ্ট হওয়া উচিত। তা হল, মিশরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের গতিপথটি ইউএই ও সৌদি আরবের ক্ষেত্রে আমরা যে নাটকীয় উন্নতি দেখেছি তার চেয়ে অনেক কম বর্ণময় হবে। ভারতের মতো মিশরও দ্বন্দ্বে ভরপুর। দেশটি একই সময়ে প্রাচীন ও আধুনিক, কর্তৃত্ববাদী ও তর্কাত্মক, দ্রুতগতিসম্পন্ন ও আমলাতান্ত্রিক, বন্ধুত্বপূর্ণ ও মতামতপূর্ণ। কাজেই এই যাত্রা শুরু করার সময় আমাদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া্র জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।


এই ভাষ্যটি প্রথমে ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এ প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.