Published on Aug 31, 2021 Updated 0 Hours ago

শক্তির সফল রূপান্তর শুধুমাত্র পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিক্ষেত্রের (রিনুয়েবল এনার্জি) উৎপাদন ক্ষমতা, লগ্নির পরিমাণ এবং চাকরির সংস্থানের হিসাব নিকাশেই সীমাবদ্ধ নয়। যদিও এগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তবুও জীবন, জীবিকা এবং অর্থনীতির উন্নতি শক্তির সফল রূপান্তরের প্রকৃত পরিচায়ক।

সবুজায়নের জন্য ভারতের লক্ষ্য হোক মানবিক ও স্থিতিশীল রূপান্তর

মানবিক রূপান্তর, জাতীয় বিদ্যুৎ নীতি, সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট (ভবিষ্যত প্রজন্মের চাহিদা পূরণের সামর্থ্য সুনিশ্চিত রেখে সমকালীন প্রয়োজন মেটানোর উন্নয়নের পথ) সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক জাতীয় বিদ্যুৎ নীতি, ২০২১-এর (ন্যাশনাল ইলেকট্রিসিটি পলিসি, ২০২১) একটি খসড়া প্রকাশ করেছে। এই নীতির প্রাথমিক লক্ষ্য হল বিশ্বব্যাপী জলবায়ু ও শক্তির উৎসের রূপান্তরের উদ্দেশ্যে নেওয়া কর্মসূচির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে দূষণমুক্ত এবং স্থিতিশীল বিদ্যুৎ উৎপাদন।

বিগত বছরগুলির তুলনায় বর্তমানে ভারতে শক্তির উৎসের রূপান্তরের বিষয়টি আগের চেয়ে অনেক বেশি সুসংগঠিত এবং সুনির্দিষ্ট হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল ৭ (ভবিষ্যত প্রজন্মের চাহিদা পূরণের সামর্থ্য সুনিশ্চিত রেখে সমকালীন প্রয়োজন মেটানোর উন্নয়নের লক্ষ্য) দিয়ে শুরু হওয়া লক্ষ্যমাত্রা নতুন রূপ নিয়েছে, যার বর্তমান উদ্দেশ্য হল ২০২২ সালের মধ্যে ১৭৫ গিগাওয়াট এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৫০ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন করা।

এই সমস্ত লক্ষ্যমাত্রা নিঃসন্দেহে উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং তা বিশ্বব্যাপী সকলের নজর কেড়েছে। যদিও এ বিষয়ে কিছু প্রশ্ন থেকেই গেছে। যেমন, এই লক্ষ্যমাত্রা কি আদৌ বিজ্ঞানসম্মত? এগুলি কি আদৌ বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সঠিক ভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে? এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রেক্ষিতে পরিবেশগত এবং আর্থ-সামাজিক যুক্তিই বা কী?

উদ্বেগের কারণ এখানেই শেষ নয়।

শুধুমাত্র পরিবেশগত দিক থেকে মহান উদ্যোগ বলেই এই রূপান্তরকে কি আদৌ ‘সবুজায়ন’-এর তকমা লাগিয়ে দেওয়া যায়? কয়লা খনিতে কর্মরত প্রায় ১২ লক্ষ মানুষের জীবন ধারণের পথই বা কী হতে চলেছে? কয়লার উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি এবং খনি সংক্রান্ত কাজের উপর বেঁচে থাকা সমাজের ভবিষ্যৎই বা কী? ব্যবহারিক শক্তির উৎসের রূপান্তরের কাজে প্রয়োজনীয় আনুমানিক ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের কোনও অংশই কি আদৌ এই কাজের সঙ্গে জড়িত মানুষদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের কাজে ব্যবহৃত হবে?

আর যাই হোক, এই অতিমারি আমাদের রূঢ় ভাবে দেখিয়ে দিয়েছে সমাজের অরক্ষিত ও নিরাপত্তাহীন অংশের মানুষজনকে অবহেলা করার প্রতিকূল প্রভাব কী হতে পারে।

এবং এই প্রেক্ষিতেই ‘মানবিক ও সহানুভূতিশীল রূপান্তরের ভাবনা’ টি প্রকট হয়ে ওঠে। এই পুরো প্রক্রিয়াটির প্রাথমিক কৌশল ছিল কয়লাখনির শ্রমিকদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরা। এবং পাশাপাশি এর অন্তর্নিহিত আদর্শ হল ‘রূপান্তরের মধ্যেও সুবিচার’।

বর্তমান পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে, ভারতের ব্যবহারিক শক্তিক্ষেত্র মানবিক রূপান্তরের পথে হাঁটবে এমন সম্ভাবনা খুবই কম। ‘মানবিক রূপান্তর’-এর শব্দগত বিন্যাসের দিকে চোখ রাখলে স্পষ্ট হবে যে, এই রূপান্তরের দুটি বিশেষ দিক রয়েছে- ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে বর্তমান উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা এবং এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সব মানুষের সার্বিক উন্নতিঢ় প্রসঙ্গকেও গুরুত্ত দেওয়া। মজার ব্যাপার হল, এই দুটি ধারণাই বর্তমানে এত বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে কারণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বৃদ্ধির প্রচলিত তত্ত্বে এই দুটি বৈশিষ্ট্যকে কোনও গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। যদিও এই দুটি বিষয়ের মূল ভাব সম্পর্কে মানুষ বরাবরই অবগত ছিল, তা সত্ত্বেও এগুলিকে তত দিন উপেক্ষা করা হয়েছে, যত দিন না আধুনিক গবেষক এবং নীতি নির্ধারকেরা এ বিষয়ে জোর দিয়েছেন — এই পুরো ব্যাপারটাই অত্যন্ত বিপজ্জনক নজির।

‘মানবিক রূপান্তর’-এর শব্দগত বিন্যাসের দিকে চোখ রাখলে স্পষ্ট হবে যে, এই রূপান্তরের দুটি বিশেষ দিক রয়েছে — ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে বর্তমান উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা এবং এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সব মানুষের সার্বিক উন্নতিঢ় প্রসঙ্গকেও গুরুত্ত দেওয়া। মজার ব্যাপার হল, এই দুটি ধারণাই বর্তমানে এত বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে কারণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বৃদ্ধির প্রচলিত তত্ত্বে এই দুটি বৈশিষ্ট্যকে কোনও গুরুত্বই দেওয়া হয়নি।

শক্তিক্ষেত্রে ‘মানবিক রূপান্তর’ যেন শুধুমাত্রই মুখের কথা না হয়ে দাঁড়ায়। প্রথমত, মানুষ যে কেবল নিজের স্বার্থের দ্বারাই পরিচালিত হয়, প্রচলিত অর্থনীতির এমন ধারণা দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। এ কথা মনে রাখতে হবে যে এই কয়লা ক্ষেত্রের লগ্নিকারীদের সঙ্গে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিক্ষেত্রের স্বার্থের সংঘাত অবশ্যম্ভাবী।

তা সত্ত্বেও বিবদমান দুই পক্ষের সমকেন্দ্রাভিমুখী হওয়ার একাধিক কারণ রয়েছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, পরিবেশগত ভাবে উন্নত এক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ইচ্ছে, আরও ভাল কর্মসংস্থানের সুযোগ অথবা উন্নততর জীবনযাত্রা। এই সাধারণ লক্ষ্যমাত্রা যেন পরস্পর বিবদমান ও লগ্নিকারী দুই পক্ষের মধ্যে কোনও স্বার্থগত বোঝাপড়ার পরিণতি হয়ে না দাঁড়ায়। বরং এটা যেন দুই পক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল হয়।

দ্বিতীয়ত, এ রকম কোনও সাধারণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং তা সফল ভাবে প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রথমেই একমাত্রিক ও সংকীর্ণ চিন্তাধারা বর্জন করতে হবে। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও অবলম্বন শুধুমাত্র সরকারপক্ষ এবং বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির মধ্যে হওয়া কোনও সমঝোতা নয়, বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক জটিল পরিকাঠামো। তাই এ ক্ষেত্রে একমাত্র বিজেতার ভাঁড়ারেই সব পুরস্কার গোছের ভাবনার বদলে এমন দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বনের প্রয়োজন যা একাধিক মানুষের প্রচ্ছন্ন অভিসন্ধি ও তির্যক ক্ষমতার খেলাকেও গুরুত্ব দেবে।

তৃতীয়ত, কিছু লক্ষ্যমাত্রা এবং দৃষ্টিভঙ্গিতেও বদল আনা প্রয়োজন। ব্যবহারিক শক্তিক্ষেত্রের সফল রূপান্তর শুধুমাত্র পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিক্ষেত্রের উৎপাদন ক্ষমতা, লগ্নির পরিমাণ এবং চাকরির সংস্থানের পরিসংখ্যানেই সীমাবদ্ধ নয়। যদিও এগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তবুও জীবন, জীবিকা এবং অর্থনীতির উন্নতি সফল রূপান্তরের প্রকৃত পরিচায়ক।

সর্বোপরি, যে কোনও নীতির বয়ান এবং সম্ভাব্য লাভালাভের হিসেবের বাইরেও আর কিছু বিষয় থাকে।

এ সব কিছুর জন্যই দরকার নীতি নির্ধারণের সময়ে সাধারণ মানুষ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণার মৌলিক পরিবর্তন। যত দিন পর্যন্ত সাধারণ মানুষ শুধুমাত্র নীতি নির্ধারণের ফলে প্রাপ্ত সুবিধেগুলির সঙ্গেই সম্পৃক্ত থাকবে এবং এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারবে না, তত দিন এ দেশের নীতি নির্ধারকেরা তাঁদের প্রচলিত পথই অবলম্বন করে মানুষের জীবনযাত্রার ভালমন্দ নির্ধারণ করতে থাকবেন। এর পরিবর্তে বরং নীতি নির্ধারণ করার সময়ে তৃণমূল স্তরের মানুষদের মতকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে যাতে এই সকল রূপান্তর মানুষের জন্য,মানুষের দ্বারা এবং মানুষের হয়ে কথা বলে।


প্রবন্ধের ইংরেজী সংস্করণ আগে মানি কন্ট্রোল পত্রিকায় প্রকাশিত।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Aparna Roy

Aparna Roy

Aparna Roy is a Fellow and Lead Climate Change and Energy at the Centre for New Economic Diplomacy (CNED). Aparna's primary research focus is on ...

Read More +
Sarthak Shukla

Sarthak Shukla

Sarthak Shukla is an Independent public policy consultant working on issues around sustainability inclusive economy and resilience

Read More +