Published on Jun 04, 2024 Updated 0 Hours ago

নেপাল-ভারত-শ্রীলঙ্কা উদ্যোগকে মানুষের সঙ্গে মানুষে সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।

দক্ষিণ এশিয়ায় ক্ষুদ্রপাক্ষিকতার সঞ্চার

২৩ ফেব্রুয়ারি রাইসিনা ডায়লগের বক্তৃতানেপালের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী এনপি সৌদ সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল অর্গানাইজেশন-এর (সার্ক) পুনরুজ্জীবনের আশার কথা ব্যক্ত করেছিলেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে শ্রীলঙ্কার বিদেশমন্ত্রী মোহাম্মদ উভাইস মোহাম্মদ আলি সাবরির সঙ্গে এনপি সৌদের বৈঠকেও এই কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছিল, যেখানে দুই দেশ সার্ক এবং বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশনের (বিমস্টেক) মতো আঞ্চলিক সংস্থাগুলিকে পুনরুজ্জীবিত ও শক্তিশালী করার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছিল।

ভারত ও চিনের মধ্যে বিদ্যমান প্রতিযোগিতা বিশ্বব্যবস্থার অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করলে এ কথা সহজেই বোধগম্য হয় যে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি আরও আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য চাপ দিচ্ছে। তবে এই সংস্থাগুলির নিয়তি কাঠামোগত সমস্যায় জর্জরিত হওয়ায় এই চাপ দেওয়ার বিষয়টি ক্রমশ ভুল পথে চালিত হচ্ছে বলে মনে করা যেতে পারে। এটি আসলে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলিকে আঞ্চলিক সহযোগিতা উন্নত করতে এবং সুনির্দিষ্ট বিষয়ে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার উদ্দেশ্যে ক্ষুদ্রপাক্ষিকতাবাদের প্রবণতাকে গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছে

 

ভারত ও চিনের মধ্যে বিদ্যমান প্রতিযোগিতা বিশ্বব্যবস্থার অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করলে এ কথা সহজেই বোধগম্য হয় যে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি আরও আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য চাপ দিচ্ছে।

 

১৯৮৫ সালে উৎপত্তির পর থেকে সার্ক-এর ভাগ্য মূলত ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উপর নির্ভর করে চলেছে২০১৬ সালে পাকিস্তান সমর্থিত উরি হামলার পর সংগঠনটির কার্যকলাপ একেবারে থেমে গিয়েছে এবং শেষ শীর্ষ সম্মেলনটিও আয়োজিত হয়েছিল প্রায় ১০ বছর আগে। ২০১৯ সালে বালাকোট বিমান হামলা এবং ভারতের কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলুপ্ত করার ঘটনা এই মতপার্থক্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারত বর্তমানে পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও প্রকার সমঝোতায় আসার সদিচ্ছা প্রকাশ করছে না। কারণ ভারত চিনের মতো উদ্ভূত প্রতিবন্ধকতার মোকাবিলায় ব্যস্ত এবং এই বিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় ভারত একটি প্রধান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যখন পাকিস্তানের নতুন সরকার কাশ্মীর প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে চলেছে, নয়াদিল্লিও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সন্ত্রাসবাদ আলোচনা একই পঙ্‌ক্তিতে বসতে পারে না’। এই অঞ্চলে যৎসামান্য পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে এবং সার্ক কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের দাবির চাপ অব্যাহত রেখেছে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং তালিবানের ক্ষমতায় ফিরে আসা ইতিমধ্যেই আঞ্চলিক সংগঠনের জটিলতা বৃদ্ধি করেছে

অন্য দিকে বিমস্টে আবার সার্ক-এর বিকল্প হিসাবে বিবেচিত আর কটি আঞ্চলিক সংস্থা এবং বিমস্টেকও তেমন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেনি। সম্প্রতি ক্রমবর্ধমান প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ সত্ত্বেও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের প্রাধান্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিমস্টেক-এর মাত্র পাঁচটি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজিত হয়েছে। এটি আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্যের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি এবং ২০০৪ সালে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে এফটিএ-ভাগ্য দীর্ঘায়িত হয়েছে। একই ভাবে, বিমস্টেক-এর পরিবহণ সংযোগ সংক্রান্ত প্রত্যাশিত মাস্টার প্ল্যানও নানাবিধ বাধার সম্মুখীন হয়ে চলেছে। কারণ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে যোগসূত্রকারী দেশ মায়ানমার নিজেই রাজনৈতিক ও নিরাপত্তামূলক অস্থিরতার সম্মুখীনবিমস্টেক দক্ষিণ এশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে কতটা কাজ করবে এবং এর সদস্যরা সঙ্কটের সময় মায়ানমারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে আদৌ ইচ্ছুক কি না, তা অবশ্য এখনও বোঝা যায়নি।

 

বিমস্টেক-এর পরিবহণ সংযোগ সংক্রান্ত প্রত্যাশিত মাস্টার প্ল্যানও নানাবিধ বাধার সম্মুখীন হয়ে চলেছে। কারণ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে যোগসূত্রকারী দেশ মায়ানমার নিজেই রাজনৈতিক ও নিরাপত্তামূলক অস্থিরতার সম্মুখীন

 

আঞ্চলিক সংস্থাগুলির সীমাবদ্ধতার পরিপ্রেক্ষিতে ভারগত এক দশকে বিদ্যমান ক্ষুদ্রপাক্ষিক জোটগুলিকে শক্তিশালী করতে এবং নতুন জোট নির্মাণে বিনিয়োগ করেছে সমমনস্ক অংশীদারদের ছোট ছোট গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত এই ক্ষুদ্রপাক্ষিকগুলি ভারতকে দ্রুত ঐকমত্যে পৌঁছতে এবং নির্দিষ্ট বিষয়ে সহযোগিতা করতে সাহায্য করেছে। এ হেন কয়েকটি উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম হল ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক নিরাপত্তার জন্য কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ; সামুদ্রিক নিরাপত্তা পরিসরভিত্তিক সচেতনতার জন্য ভারত-ফ্রান্স-অস্ট্রেলিয়া জোট; উন্নয়নমূলক সহায়তা, সামুদ্রিক সমস্যা এইচএডিআর-এর জন্য ভারত-অস্ট্রেলিয়া-ইন্দোনেশিয়া জোট, সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিস্থাপকতা বাণিজ্যিক বৈচিত্র্যের জন্য অস্ট্রেলিয়া-জাপান-ভারত জোট; অবকাঠামো আধুনিকীকরণ নিম্ন কার্বন পথের অগ্রগতির জন্য আইটুইউটু; স্বাস্থ্য ও তথ্য ভাগ করে নেওয়া, জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা সামুদ্রিক পরিসরে সচেতনতার জন্য কোয়াড।

দক্ষিণ এশিয়াতেও ভারত সমমনস্ক অংশীদারদের সঙ্গে নমনীয় সহযোগিতা পছন্দ করেছেভারত বিকল্প উন্নয়ন অংশীদারিত্বের প্রস্তাব দিতে এবং শ্রীলঙ্কা, নেপাল বাংলাদেশের মতো দেশে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো বিনিয়োগের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার মতো দেশগুলির সঙ্গে সমন্বয় সাধন করেছে। নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে জ্বালানি বাণিজ্যকে সহজ করে তোলার কাজে সাহায্য করবে ভারত।

তা সত্ত্বেও, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি এই ক্ষুদ্রতর সমমনস্ক সম্পৃক্ততার গতিতে অবদান রাখার বিষয়ে কম উত্সাহীনির্বাচিত সমমনস্ক প্রতিবেশীদের সঙ্গে কার্যকারিতাভিত্তিক আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রচারের জন্য তাদের এই ভাবনা বদল করতে হবে এবং নয়াদিল্লির এই প্রেক্ষিতে একটি আলোচনার ভাল অবস্থান রয়েছে, বিশেষ করে যখন আঞ্চলিক সংস্থাগুলি অচল হয়ে পড়েছে কাঠামোগত সমস্যায় জর্জরিত।

 

ভারত এটি আরও ভাল ভাবে উপলব্ধি করেছে এবং নির্বাচিত অংশীদারদের সঙ্গে আরও ক্ষুদ্রতর এবং নমনীয় সমমনস্ক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য চাপ দিচ্ছে।

 

নেপাল শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলি - যারা আঞ্চলিক সংগঠনের পক্ষে ওকালতি করেছে - তাদের ভারতের সঙ্গে একটি ক্ষুদ্রপাক্ষিক প্রচারের উদ্দেশ্যে জোটবদ্ধ হওয়া উচিত। উদাহরণ স্বরূপ, নেপাল-ভারত-শ্রীলঙ্কা উদ্যোগ তাদের নিজ নিজ রামায়ণ এবং বৌদ্ধ পরিসরকে কাজে লাগিয়ে মানুষে-মানুষে সম্পর্ক, পরিবহণ সংযোগ সাংস্কৃতিক সম্পর্কে উন্নতি ঘটাতে পারে। এই দেশগুলি ইতিমধ্যে এ ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি সাধন করেছে। ভারত বহু দিন ধরে নেপালের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ রামায়ণ সার্কিট নিয়ে আলোচনা করেছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক সঙ্কট রাম মন্দিরের উদ্বোধনের পরে ভারতের সঙ্গে রামায়ণ বৌদ্ধ সার্কিটের জন্য চাপ দেওয়ার বিষয়ে শ্রীলঙ্কার তরফে আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রীলঙ্কা ও নেপালের মধ্যে সাম্প্রতিক আলোচনাও লুম্বিনি কলম্বোর মধ্যে বিমান সংযোগের সম্ভাবনাকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। এই ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতার কার্যকারিতা ভৌত অবকাঠামো, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি ইত্যাদি ক্ষেত্রে আরও সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করতে পারে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির পক্ষে তাদের আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও সংগঠনগুলিকে দূরে সরিয়ে রাখা মোটেও কার্যকর নয়; ভূ-রাজনৈতিক জলবায়ু দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সমন্বিতকরণের জন্য উপযুক্ত নয়। ভারত এটি আরও ভাল ভাবে উপলব্ধি করেছে এবং নির্বাচিত অংশীদারদের সঙ্গে আরও ক্ষুদ্রতর নমনীয় সমমনস্ক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য চাপ দিচ্ছে। তাদের পক্ষ থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির এই গতিকে কাজে লাগানোর বিষয়ে দ্বিধা করা উচিত নয়। শ্রীলঙ্কা এবং নেপালের মতো দেশগুলি - যারা আঞ্চলিক সংস্থাগুলিকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে – তাদের উচিত ক্ষুদ্রপাক্ষিকতার প্রচার করা। বিশেষ করে যখন আঞ্চলিক সংস্থাগুলি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়, তখন এই ক্ষুদ্রপাক্ষিকগুলি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলিকে আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য চাপ দিতে এবং ভারতের সঙ্গে তাদের আলোচনা দর কষাকষির ক্ষেত্রে সুবিধা পেতে সাহায্য করবে

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.