Author : Ramanath Jha

Published on Jun 26, 2022 Updated 0 Hours ago

মেগাসিটিতে সুশাসন প্রদানের জন্য দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনকে ফের একক সত্তা হিসেবে ফিরিয়ে আনার পর একে তিন ভাগের পক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তিগুলি সামনে আসছে।

মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের একত্রীকরণ: ভাল না খারাপ?

২২ মার্চ ২০২২-এ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা উত্তর দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন, দক্ষিণ দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন এবং পূর্ব দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনকে নিয়ে মেগাসিটিতে একটি একক, একীকৃত মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন তৈরি করার জন্য একটি বিলে সম্মতি দিয়েছে। এর নাম হবে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন অফ দিল্লি। দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (সংশোধনী) বিল, ২০২২ নামের এই বিলটি তারপরে সংসদের উভয় কক্ষে অনুমোদিত হয়। বিলটি এখন রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে, যার ফলে এটি একটি আইনে পরিণত হবে এবং সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার পরে কার্যকর হবে। এই একত্রীকরণ ২০১১ সালে একে তিন ভাগে ভাগ করার পূর্বেকার সেই পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনল যখন একক দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের মধ্যে  এই তিনটি পৌর সংস্থার ভূখণ্ডগত এক্তিয়ার একত্রিত ছিল। নতুন আইনটি দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (সংশোধনী) আইন, ২০১১   দ্বারা সম্পাদিত বিভাজনটিকে নাকচ করে পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে আনল। এটি এমন একটি গতিপ্রক্রিয়া শুরু করল যা সম্পূর্ণ হতে একীভূত মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের নির্বাচন হওয়ার আগে কিছু সময় লাগবে। অন্তর্বর্তী সময়ে দিল্লির সম্মিলিত পৌরসভার বিষয়গুলি চালানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে একজন বিশেষ অফিসার নিয়োগ করতে হবে। আইনে এই পরিস্থিতির কথা মাথায় রাখা হয়েছিল এবং এই ধরনের নিয়োগের ব্যবস্থা করে রাখা আছে।

একত্রীকরণটি ২০১১ সালে একে তিন ভাগে ভাগ করার  আগেকার পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনল, যখন একক দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের মধ্যে  এই তিনটি পৌর সংস্থার ভূখণ্ডগত এক্তিয়ার একত্রিত ছিল।

যখন বিলটি নিয়ে সংসদে আলোচনা চলছিল, তখন তা লোকসভার অনেক রাজনৈতিক দলের গুরুতর বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিল। তারা এর সময় ও অভিপ্রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। যাই হোক, সরকার সভায় তার কারণগুলি দিয়েছে, এবং এই যুক্তি দিয়েছে যে একত্রীকরণের লক্ষ্য দিল্লির সর্বোত্তম সুশাসনের ব্যবস্থা করা। এই নিবন্ধটির উদ্দেশ্য হল বিষয়টিকে ঘিরে তৈরি রাজনৈতিক বিতর্ক থেকে দূরে সরে গিয়ে সিদ্ধান্তটির একটি আবেগবর্জিত মূল্যায়ন করা। তার জন্য প্রথমে দেখা প্রয়োজন দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (সংশোধনী) আইন, ২০১১, যা দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনকে তিন ভাগে ভাগ করেছিল।

দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (সংশোধনী) আইন ২০১১-র সঙ্গে থাকা ‘‌উদ্দেশ্য এবং কারণ’‌ সম্পর্কিত বিবৃতিতে তিন ভাগে ভাগ করার পিছনের কারণগুলি উল্লেখ করা হয়েছিল৷ এতে বলা হয়েছিল যে দিল্লিতে মৌলিক পরিষেবার ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে। বেশ কয়েকটি কমিটি সমস্যাটি পর্যালোচনা করে পরামর্শ দিয়েছিল যে দিল্লির একচেটিয়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (এমসিডি) বিলুপ্ত করা যেতে পারে, আর বেশ কয়েকটি সুসংহত পৌরসভা দ্বারা তাকে প্রতিস্থাপিত করা যেতে পারে। কমিটিগুলির মধ্যে বালকৃষ্ণন কমিটি (১৯৮৯), বীরেন্দ্র প্রকাশ কমিটি (২০০১), এবং মন্ত্রী–গোষ্ঠীর (জিওএম) সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাঁরা সকলেই সর্বসম্মতিক্রমে এমসিডি–কে বিভক্ত করার পক্ষে ছিলেন। তবে ক’‌টি ছোট কর্পোরেশন তৈরি করা উচিত তার সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মত ছিল।

অন্যদিকে, ২০২২ সালের আইনের উদ্দেশ্য এবং কারণের বিবৃতিতে তিন ভাগের বিরুদ্ধে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, এবং একত্রীকরণের কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এর মূল্যায়নে বলা হয়েছে, তিনটি মিউনিসিপ্যাল সত্তার মাধ্যমে নাগরিক পরিষেবার দক্ষ সরবরাহের প্রধান উদ্দেশ্যটিই অর্জিত হয়নি। এটি দিল্লির পৌরসভার কার্যকারিতাকে ‘‌‌‌‌আঞ্চলিক বিভাগ এবং রাজস্ব-উৎপাদন সম্ভাবনার ক্ষেত্রে অসম ভাবে’‌‌ বিভক্ত করেছে। আর তার ‘‌ফলস্বরূপ, তিনটি কর্পোরেশনের নিজ নিজ দায়বদ্ধতার সঙ্গে উপলব্ধ সম্পদের বিশাল ব্যবধান তৈরি হয়েছে’‌। তিনটি কর্পোরেশন আর্থিক সমস্যায়  পড়েছিল এবং বেতন দেওয়া বা পৌর কর্মচারীদের অবসরকালীন সুবিধা সংক্রান্ত বিষয়ে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল৷ এর পরিণতি ছিল ঘন ঘন ধর্মঘট, পরিচ্ছন্নতার সমস্যা এবং নাগরিক পরিষেবা বজায় রাখতে ব্যর্থতা।‌

বেশ কয়েকটি কমিটি সমস্যাটি পর্যালোচনা করে পরামর্শ দিয়েছিল যে দিল্লির একচেটিয়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (এমসিডি) বিলুপ্ত করা যেতে পারে, এবং বেশ কয়েকটি সুসংহত পৌরসভা দ্বারা তাকে প্রতিস্থাপিত করা যেতে পারে।

এই পটভূমিতে, ২০২২-এর আইনটির লক্ষ্য (১) তিনটি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনকে একক, সমন্বিত, সক্ষম সত্তায় একীভূত করা; (২) সমন্বিত ও কৌশলগত পরিকল্পনা এবং সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য একটি শক্তিশালী প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা; এবং (৩) দিল্লির জনগণের জন্য বৃহত্তর স্বচ্ছতা, উন্নত শাসনব্যবস্থা এবং নাগরিক পরিষেবাগুলির আরও দক্ষ সরবরাহ নিয়ে আসা। বলা হয়েছে, এটি দেশের রাজধানীর জন্য বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ, এবং এই শহরের অনন্য মর্যাদার পরিপ্রেক্ষিতে ‘‌একে আর্থিক দুর্ভোগ ও কার্যক্ষমতাগত অনিশ্চয়তার’‌ শিকার হতে দেওয়া যায় না’।

সমস্যা হল দুটি বা ততোধিক পৌর সংস্থাকে একটি একক বৃহত্তর সংস্থায় একীভূত করা হলে তা বৃহত্তর প্রশাসনিক লাভের লক্ষ্যে কাজ করবে, না কি এমন একটি মেগাসিটি তৈরি করবে যা পরিচালনা করা কঠিন। বিষয়টি নিয়ে মতামত বিভক্ত বলে মনে হচ্ছে। উভয় পক্ষেরই কিছু যুক্তি বৈধ হতে পারে। একত্রীকরণের কারণে তৈরি হতে পারে এমন কিছু নেতিবাচক দিক দেখা যাক। ছোট পৌরসভাগুলি বৃহত্তর বিকেন্দ্রীকরণ অর্জন করে, যা সুশাসনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। সেখানে নাগরিকদের একটি বৃহত্তর কণ্ঠস্বর থাকে, এবং কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি করার বৃহত্তর দায়িত্ব থাকে। নাগরিকেরা ইনপুট দেওয়া এবং সিদ্ধান্তগুলিকে প্রভাবিত করা সহজ মনে করেন, কারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রেক্ষাগৃহটি তাঁদের কাছাকাছি অবস্থিত। সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্র নাগালের যত বাইরে হবে, ব্যক্তি তত কম প্রভাবশালী হয়ে পড়বে। এমনও প্রমাণ রয়েছে যে বৃহত্তর পৌরসভাগুলি ‘‌আমলাতান্ত্রিক যানজট’‌ – অর্থাৎ স্থানীয় ‘আমলাতন্ত্রের সংখ্যাবৃদ্ধির‘ প্রবণতার ফলে ভুগতে থাকে। এক অর্থে তাই ২০১১ সালের সংশোধনীটি সঠিক ভাবেই যুক্তি দিয়েছিল যে তা পুরসভাটিকে তিন ভাগে ভাগ করার মাধ্যমে বিকেন্দ্রীকরণ ঘটিয়ে নাগরিক পরিষেবাগুলির আরও ভাল সরবরাহ নিয়ে আসবে।

একত্রীকরণের পক্ষের যুক্তিগুলিও সমান ভাবে বৈধ। একটি বৃহত্তর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন বৃহত্তর আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার পরিচয় দেয়, যা মেগাসিটিগুলি পরিচালনার জন্য যেমন প্রয়োজন তেমনই প্রয়োজন পরিকাঠামোর জন্য বাজার থেকে ঋণ তোলার জন্য দর–কষাকষির ক্ষেত্রে। যদি একটি সংলগ্ন জনসংখ্যা একটি ঐক্যবদ্ধ সত্তায় একত্র থাকে, তবে আয়তনের অর্থনৈতিক নীতিটি আরও ভাল ভাবে পরিবেশিত হয়। ফলস্বরূপ, ইউনিট প্রতি কম খরচ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তা ছাড়া, প্রশাসনিক ওভারহেডগুলি হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, কারণ এখানে একাধিক পৌরসভার জন্য  প্রশাসনিক ব্যবস্থার সম্পূর্ণ এবং ভিন্ন ভিন্ন সেট থাকছে না।

একটি একত্রিত পৌর ভবন কিছু নির্দিষ্ট সুবিধা দিলেও চ্যালেঞ্জ হল কী ভাবে গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণের সুবিধাগুলিকে পৌর কাঁথায় বোনা হবে।

উপরে উল্লেখিত সমস্ত তর্কের নিজস্ব বৈধতা থাকা সত্ত্বেও, আমাদের মনে রাখতে হবে যে একটি খুব বড় শহরে নাগরিকেরা সংলগ্ন ভাবে বাস করেন এবং লেনদেন করেন একটি সামগ্রিক একক হিসেবে। তা ছাড়া, কিছু নির্দিষ্ট পরিষেবা এমন উৎস থেকে সরবরাহ করা হয় যা অভিন্ন। এবং একটি খুব বড় শহরের এমন অনেক বিষয় থাকে যার জন্য একটি একীভূত স্থাপত্য এবং অপারেশন প্রয়োজন হয়। এমন পরিস্থিতিতে, একটি বিভাগের ভিন্ন ভিন্ন পুরসভায় একাধিক পৃথক অস্তিত্ব, যা প্রতিটি পৌর ইউনিটকে পূর্ণতা ও স্বতন্ত্র কার্যকারিতা প্রদানের জন্য প্রয়োজন, তা কিছুটা অযৌক্তিক। যেমন, প্রধান পরিবহণ রুটগুলির (‌ট্রাঙ্ক রোড, মেট্রো এবং বাস পরিষেবা)‌ পরিকল্পনা এক সঙ্গে করা উচিত। সামগ্রিক ভূমি ব্যবহারের পরিকল্পনা এবং জলের মতো সম্পদের বণ্টনও তাই। পরিকল্পনা ছাড়াও, যে কোনও বড় পরিকাঠামোতে কোনও আর্থিক বিনিয়োগের প্রয়োজনের ক্ষেত্রে সেই অর্থ একক ভান্ডারে জমা করা হলে তা আরও ভাল ভাবে ব্যবহৃত হবে।

এই নিবন্ধটি কিন্তু এই লেখকের বারবার উপস্থাপিত তত্ত্বটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে না যে মেগাসিটির পথে চলা সঠিক উপায় নয়। আমরা এখানে নগর শাসনের এমন একটি  বিন্দুতে রয়েছি যেখানে একটি মেগাসিটি ইতিমধ্যেই গড়ে উঠেছে, এবং বেজিং ও সাংহাইতে চিনারা যে ভাবে শহরের মেদ কমাতে প্রয়াসী হয়েছিল তেমন অনুশীলনের কোনও সম্ভাবনা নেই। যাই হোক, একটি একত্রিত পৌর ভবন কিছু নির্দিষ্ট সুবিধা দিলেও চ্যালেঞ্জ হল কী ভাবে গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণের সুবিধাগুলিকে পৌর কাঁথায় বোনা হবে। সংক্ষেপে, এর অর্থ হল এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করা যেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সরকারি স্তরটি থাকবে জনগণের সবচেয়ে কাছে। এ ক্ষেত্রে সংবিধানে ওয়ার্ড কমিটি গঠনের পথ দেখানো হয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনী ওয়ার্ড পর্যন্ত ব্যাপ্ত বৃহত্তর বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে এটি আরও নিচুতলা পর্যন্ত নামিয়ে আনা যেতে পারে। এর অর্থ হল পুরো শহরের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত সিদ্ধান্ত টাউন হলেই নেওয়া৷ যে বিষয়গুলির একটি অঞ্চলে প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে সেই সিদ্ধান্তগুলি ওয়ার্ড কমিটিগুলিতে আঞ্চলিক ভাবে নেওয়া হবে৷ আর যে সিদ্ধান্তগুলি সম্পূর্ণ স্থানীয় এবং শুধু একটি নির্বাচনী ওয়ার্ডকে প্রভাবিত করে, সেগুলি নির্বাচনী ওয়ার্ড স্তরে নেওয়া হবে৷ দুর্ভাগ্যবশত, ২০২২-এর বিলটি গণতান্ত্রিক সুশাসনের প্রয়োজনীয়তা পূরণের লক্ষ্যে পৌরসভার যে ধরনের বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন, সেই  দিকটিতে যায়নি।

যদিও দিল্লির মেগাসিটি তার জনসংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি পূর্বসংঘটিত বিষয়, এর শাসনের স্থাপত্য সব সময়েই পরিবর্তন করা যেতে পারে গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ, স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এ ভাবে একদিকে যেমন আয়তনের সুবিধা নেওয়া যাবে, তেমনই অন্য দিকে স্থানীয় সিদ্ধান্তগ্রহণের লাভগুলিও পাওয়া যাবে। এই বিষয়ে এখনও উদ্যোগী হওয়া যেতে পারে, এবং তা করলে অন্য মেগাসিটিগুলির জন্য একটি অনুকরণযোগ্য উদাহরণও তৈরি করা যাবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.