-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
এই কারণগুলির সংমেল ইউনের ঘাঁটিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে।
কেবল দেশের দলগুলির মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী দ্বন্দ্বের কারণে নয়, বরং চিরাচরিত রাজনৈতিক অঙ্গনের বাইরে থাকা উপাদানগুলির কারণেও দক্ষিণ কোরিয়া ক্রমশ মেরুকরণের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
রক্ষণশীল অনলাইন গণমাধ্যমের উত্থান, তরুণদের মধ্যে প্রতিবাদী দল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’ (এমএজিএ) দ্বারা অনুপ্রাণিত একটি আন্দোলন দেশের কষ্টার্জিত গণতান্ত্রিক ভারসাম্যকে আরও অস্থিতিশীল করার ঝুঁকিতে ফেলেছে।
প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের ব্যর্থ সামরিক আইন ঘোষণার পর থেকে ২০ এবং ৩০-এর কোঠায় থাকা তরুণরা তাঁকে সমর্থনকারী বৃহত্তম জনসংখ্যা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে এবং অনেকেই প্রেসিডেন্টের সমর্থনে রাস্তায় নেমেছেন। এটি চিরাচরিত ভাবে ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টির ভিত্তি হিসেবে বয়স্ক ভোটারদের থেকে এক সুস্পষ্ট পরিবর্তনকেই দর্শায়। বিপরীতে তরুণীরা আবার ইউন-বিরোধী ও অভিশংসনের পক্ষে বিক্ষোভ পরিচালনা করেছেন। দেশে এই লিঙ্গগত বিভাজন ইতিমধ্যেই বিদ্যমান থাকলেও বর্তমান এ হেন পরিবেশ আরও তীব্রতর হয়েছে এবং নানাবিধ প্রতিবাদ এই পরিসরে এক নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে উঠেছে।
একই সঙ্গে রক্ষণশীল নতুন গণমাধ্যম, বিশেষ করে ইউটিউবার এবং ছোট পরিসরের ওয়েব মঞ্চগুলি যুব সম্প্রদায়ের, বিশেষ করে পুরুষদের এই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়েছে, যাঁরা এই সব গণমাধ্যমের দৈনন্দিন ভোক্তা।
একই সঙ্গে রক্ষণশীল নতুন গণমাধ্যম, বিশেষ করে ইউটিউবার এবং ছোট পরিসরের ওয়েব মঞ্চগুলি যুব সম্প্রদায়ের, বিশেষ করে পুরুষদের এই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়েছে, যাঁরা এই সব গণমাধ্যমের দৈনন্দিন ভোক্তা। এই সব কিছুই ভুয়ো খবর এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বিস্তারে অবদান রেখেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্ষণশীল রাজনীতিবিদদের দরুন এগুলি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এঁদের মধ্যে ইউন নিজেও রয়েছেন।
একটি নতুন ঘটনাও আলোড়ন সৃষ্টি করছে: এমএজিএ দ্বারা অনুপ্রাণিত আন্দোলন - যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (কু)খ্যাত কর্মকাণ্ড, যেমন ‘স্টপ দ্য স্টিল’ প্রচারণা এবং ‘বিকল্প তথ্য’-এর সমর্থনকে কেন্দ্র করে অনুপ্রাণিত হয়েছে। ক্রমশ বাড়তে থাকা নির্বাচনী কারসাজির অভিযোগ বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ায় আরও শিকড় গেড়েছে এবং ইউন-পন্থী বিক্ষোভ একটি কেন্দ্রীয় মঞ্চ প্রদান করছে।
এমএজিএ দ্বারা অনুপ্রাণিত আন্দোলন যতটা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, দক্ষিণপন্থী গণমাধ্যমের বিকল্প তথ্য ও তীব্রতর ষড়যন্ত্রের তত্ত্বগুলি বিক্ষোভের মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে এবং তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর ফলে একটি বিস্ফোরক আখ্যান তৈরি হয়েছে, যা দক্ষিণ কোরিয়ার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।
এই কারণগুলির সংমিশ্রণ পিপল পাওয়ার পার্টির মধ্যেও কিছু মানুষকে আতঙ্কিত করেছে। পিপিপির প্রাক্তন নেতা হান ডং-হুন বলেছেন, ‘যদি আমরা ষড়যন্ত্রতাত্ত্বিক এবং চরমপন্থী ইউটিউবারদের মতো চরমপন্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হই, অথবা যদি আমরা তাদের বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদিত আতঙ্কে ডুবে থাকি, তা হলে রক্ষণশীলতার কোনও ভবিষ্যৎ নেই।’ ইউনের অভিশংসনের পর হান ডং-হুন পদত্যাগ করেছিলেন এবং দলের রক্ষণশীল ভিত্তিকে ভেঙে দেওয়ার কারণগুলিকে দায়ী করেছিলেন।
উদাহরণস্বরূপ, ইউন-পন্থী বিক্ষোভ বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনসাধারণ অপ্রমাণিত তথ্যের ভিত্তিতে অভিযোগ করতে শুরু করে যে, উত্তর কোরিয়ার পরিকল্পিত জাতীয় নির্বাচন কমিশনের (এনইসি) নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ফলে এপ্রিল মাসের সংসদীয় ভোটে জালিয়াতি হয়েছে, যেখানে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতৃত্বে বিরোধী উদারপন্থী ব্লক পিপিপি-র বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছে। যাই হোক, উত্তর কোরিয়ার আখ্যান ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্বের পক্ষে চিনা হস্তক্ষেপের দাবি করলেও ইউনের আইনি দল বিষয়টিতে বেজিংয়ের সম্ভাব্য জড়িত থাকার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আগুনে ঘি ঢালে।
একটি ছোট অনলাইন আউটলেট স্কাই ডেইলি-র মতো ইউনপন্থী গণমাধ্যম এমনকি অভিযোগ করেছে যে, চিনা গুপ্তচররা এনইসির কেন্দ্রের নিরাপত্তাকে বিপদের মুখে ফেলেছে এবং এর ফলে অনেকেই সিওলে বেজিংয়ের দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করতে বাধ্য হয়েছিল।
এই আখ্যানগুলি থেকে উপকৃত হয়েছেন ইউন নিজেই, যিনি তাঁর কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইতে অস্বীকার করেছেন এবং সামরিক আইনের ঘোষণাকে সমর্থন করেছেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর দলের মধ্যে ইউন জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, যেমনটা নির্বাচন এবং তাঁর পক্ষাবলম্বনকারীদের তরফে বিক্ষোভের বৃদ্ধির মাধ্যমেই স্পষ্ট।
অন্য রক্ষণশীল দলগুলিও এ হেন উন্মাদনা থেকে লাভবান হচ্ছে। ইউনের প্রতি নিঃশর্ত, অন্ধ সমর্থনের কারণে মিনিস্টার অফ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড লেবার কিম মুন-সুর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিমের জনপ্রিয়তা দলে তাঁর অবস্থানকে প্রতিফলিত না করলেও আসলে এই জনপ্রিয়তা দর্শায় যে, দল ও দেশ কোন দিকে এগিয়ে চলেছে।
তরুণ জনগণ এবং অনলাইন রক্ষণশীল গণমাধ্যমের জোট প্রসারিত হয়েছে। সারাং জেইল প্রেসবিটেরিয়ান চার্চ, কুমনান মেথোডিস্ট চার্চ এবং ইভাঞ্জেলিক সেভ কোরিয়া গ্রুপের বিশিষ্ট সদস্য-সহ ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলি এই শিবিরে যোগ দিয়েছে।
এই তীব্র মেরুকরণের গুরুতর পরিণতি দেখা যাচ্ছে। যেমন বিক্ষোভকারীরা ইউনের গ্রেফতারি পরোয়ানা অনুমোদনকারী জেলা আদালতের প্রাঙ্গনে প্রবেশ করছে এবং বিচারকরা প্রেসিডেন্টের সমর্থকদের কাছ থেকে প্রাণনাশের হুমকিও পাচ্ছেন।
তরুণ জনগণ এবং অনলাইন রক্ষণশীল গণমাধ্যমের জোট প্রসারিত হয়েছে। সারাং জেইল প্রেসবিটেরিয়ান চার্চ, কুমনান মেথোডিস্ট চার্চ এবং ইভাঞ্জেলিক সেভ কোরিয়া গ্রুপের বিশিষ্ট সদস্য-সহ ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলি এই শিবিরে যোগ দিয়েছে। এই সমর্থন ইউন এবং তাঁর প্রাক্তন ডিফেন্স মিনিস্টার কিম ইয়ং-হিউনকে - যিনি সাংবিধানিক আদালতের শুনানিতে কোনও অনুশোচনা দেখাননি - সাহসী করেছে যে, রাজনৈতিক আখ্যানের বিরুদ্ধে লড়াই জারি থাকবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বলেই মনে হচ্ছে। সাম্প্রতিক গ্যালাপ কোরিয়ার একটি সমীক্ষায় বিভাজন ধরা পড়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে যে, পিপিপি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির চেয়ে ৩% এগিয়ে রয়েছে। যদিও আর একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, ৪৭% উত্তরদাতা ইউনকে সমর্থন করেছেন এবং অভিশংসনের পক্ষে সমর্থন এখনও বেশি। যদিও ২০১৬ সালে আর এক রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন-হাইকে অভিশংসিত করার সময় তা ততটা বেশি ছিল না। এই সব কিছুই দর্শায় যে, দক্ষিণপন্থী ভোটাররা পিপিপি এবং ইউনের সঙ্গে সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছেন।
ইউনের কর্মকাণ্ডের তদন্ত যত দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে এবং আরও তথ্য প্রকাশ্যে আসছে, তাঁর পক্ষে জমায়েত আরও বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে এবং রাজনীতিবিদ ও রক্ষণশীল গণমাধ্যম নানাবিধ অভিযোগকে কাজে লাগাতে থাকবে। এই সব কিছুই ইউনের রাষ্ট্রপতিত্ব রক্ষার নিশ্চয়তা না দিলেও তা ক্ষমতাসীন দলকে হারানো জমি পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করবে।
রাজনৈতিক লড়াইটি সাংবিধানিক আদালত ও ক্রমবর্ধমান বিভক্ত জনগণের আদালতেই দেখা যাবে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত: দক্ষিণ কোরিয়ায় বাম এবং দক্ষিণপন্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা এখন আর প্রচলিত রাজনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা জনপরিসরে একটি অংশ হয়ে উঠেছে, যেখানে গণমাধ্যম ও জনসাধারণ সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করছে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য জাপান টাইমস-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Abhishek Sharma is a Research Assistant with ORF’s Strategic Studies Programme. His research focuses on the Indo-Pacific regional security and geopolitical developments with a special ...
Read More +