-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
বহু বছর ধরে তার সংশোধনবাদী অ্যাজেন্ডার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হওয়ার পর বেজিং একটি নরম ভাবমূর্তি তুলে ধরার প্রয়োজন সম্পর্কে সচেতন হয়েছে
এপ্রিলের মাঝামাঝি মার্কিন–চিন সংঘর্ষের আরেকটি ফ্রন্ট খুলল, যখন ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন ম্যানহাটনের চায়নাটাউনে একটি চিনা ‘গোপন পুলিশ স্টেশন’ পরিচালনা করার অভিযোগে কিছু লোককে গ্রেপ্তার করে। তার আগে, মার্চ মাসে, কানাডা অনুরূপ চিনা ফাঁড়ি বলে সন্দেহের কারণে কয়েকটি জায়গায় তদন্ত শুরু করেছিল। চিন বরাবরই এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। তবে এটি প্রতিবেদিত হয়েছে যে বিদেশে বসবাসকারী চিনা নাগরিকদের কার্যকলাপ ‘নিরীক্ষণ’ করার জন্য ৫০টিরও বেশি দেশে প্রায় ১০০টি স্টেশন রয়েছে।
এই ঘটনাগুলি এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন চিন বিশ্ব সমস্যা সমাধানে আগ্রহী একটি সৌম্য শক্তি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। বহু বছর ধরে তার সংশোধনবাদী অ্যাজেন্ডার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হওয়ার পর বেজিং একটি নরম ভাবমূর্তি তুলে ধরার প্রয়োজন সম্পর্কে সচেতন হয়েছে। কোভিড–পরবর্তী যুগে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বেজিংয়ে পৌঁছনোর সঙ্গেসঙ্গেই চিনের সামনে তার উপস্থিতি নতুন করে অনুভব করানোর জন্য একটি সুযোগ এসেছে।
‘নেকড়ে যোদ্ধা’ কূটনীতিকে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উপস্থিতির একটি পরিমিত মানসিকতা দিয়ে, কারণ চিন বন্ধুদের জয় করতে এবং অস্থির সময়ে মানুষকে প্রভাবিত করতে চায়।
এই সময়টি বেজিংয়ের জন্য একটি অস্বাভাবিকভাবে ব্যস্ত কূটনৈতিক ক্যালেন্ডার ছিল। তারা বেশ কয়েকজন নেতাকে আতিথ্য দিয়েছে, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে পৌঁছেছে, এবং সেইসঙ্গে ইউক্রেন দ্বন্দ্ব ও সৌদি–ইরানের জটিল অচলাবস্থায় নিজেকে একটি শান্তি–নির্মাতা হিসাবে উপস্থাপন করেছে। তাদের ‘নেকড়ে যোদ্ধা’ কূটনীতিকে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উপস্থিতির একটি পরিমিত মানসিকতা দিয়ে, কারণ চিন বন্ধুদের জয় করতে এবং অস্থির সময়ে মানুষকে প্রভাবিত করতে চায়। বিশ্বব্যাপী এই নতুন অবস্থানের চৈনিক প্রচেষ্টার মূলে রয়েছে নিজেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করার আকাঙ্ক্ষা। কোভিড বছরগুলি যেখানে চিনকে তার অভ্যন্তরীণ উদ্বেগ নিয়ে ব্যস্ত দেখেছিল, কোভিড–পরবর্তী পর্যায়টি অবশ্যই দাবি করবে যে বেজিং বাইরের দিকে তাকিয়ে পরিস্থিতির প্রতিকার করবে।এটি এমন একটি সময় যখন বিশ্ব–শৃঙ্খলায় নেতৃত্বের শূন্যতা রয়েছে। বিশ্বজুড়ে এখন বৃহৎ শক্তিগুলির সম্পর্কের একটি মৌলিক ভাঙনের মধ্যে ভূ–রাজনৈতিক ও ভূ–অর্থনৈতিক সঙ্কট ক্রমশ বেশি করে প্রতিভাত হচ্ছে। এই সময় বেজিং নিজেকে বিশ্বব্যাপী মধ্যস্থতাকারী হিসাবে উপস্থাপন করার জন্য সময়টি কাজে লাগাচ্ছে। চিন বুঝতে পেরেছে যে তারা দ্রুত না–এগোলে ভারতের মতো দেশ এবং নরেন্দ্র মোদীর মতো নেতারা সমাবেশের কেন্দ্র হিসাবে আবির্ভূত হবেন। কোভিডের সময় উন্নয়নশীল বিশ্বের কাছে ভারতের পৌঁছে যাওয়া, এবং তার জি২০ প্রেসিডেন্সির মূলে ‘বৈশ্বিক দক্ষিণ’কে রাখার প্রয়াস, উন্নয়নশীল দেশগুলির নেতা হিসাবে চিনের স্ব–পরিকল্পিত চিত্রকে চ্যালেঞ্জ করেছে।
শি জিনপিং ও চিনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব এই বাস্তবতা মেনে নিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে যে তাঁদের অতি–আক্রমণাত্মক বৈদেশিক নীতি বেজিংকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে, এবং তার মূল্য অসহনীয় হয়ে উঠছে। কোভিড–প্ররোচিত অর্থনৈতিক মন্দা পার হয়ে স্থির গতিতে বৃদ্ধির জন্য চিনের পশ্চিমকে প্রয়োজন। ফলস্বরূপ, কোভিড বিচ্ছিন্নতা থেকে বেরিয়ে আসার পরে চিন প্রথমে বড় করে পৌঁছতে চেয়েছিল ইউরোপের কাছে। ফেব্রুয়ারিতে কূটনীতিক ও রাজনীতিবিদ ওয়াং ই চিন–ইউরোপ সম্পর্ক পুনর্নিশ্চিত করার পাশাপাশি ইউরোপকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দূরে সরিয়ে আনার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে ইউরোপে গিয়েছিলেন। ট্রান্স–অ্যাটলান্টিক অংশীদারি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে একটি সুসংহত চিন নীতি তুলে ধরার জন্য বেশ অস্বাভাবিকভাবে একত্র হয়েছে। কাজেই বেজিংয়ের জন্য পশ্চিমে ফাটল তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ।
শি জিনপিং ও চিনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব এই বাস্তবতা মেনে নিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে যে তাঁদের অতি–আক্রমণাত্মক বৈদেশিক নীতি বেজিংকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে, এবং তার মূল্য অসহনীয় হয়ে উঠছে।
ইউক্রেনের জন্য একটি পরিকল্পনা ছাড়া এমনটা ঘটা সম্ভব ছিল না। তাই চিন দুটি পজিশন পেপার প্রকাশ করে: ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য একটি শান্তি পরিকল্পনা এবং বিশ্বের জন্য একটি শান্তি পরিকল্পনা। এগুলির কেন্দ্রীয় বিষয় হল সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধার পাশাপাশি একতরফা নিষেধাজ্ঞার ব্যবহার প্রত্যাখ্যান করা। শি জিনপিংয়ের মস্কো সফরের পথ প্রশস্ত করতে চিন–রাশিয়ার আলিঙ্গনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনের জন্য এই শান্তি পরিকল্পনার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধের সম্পর্ক খুব কমই ছিল। পুরো বিষয়টি ছিল একটি শক্তি হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে চিনের এই বিশ্বাসযোগ্যতা তুলে ধরা যে সে সংকটের সমাধানের বিষয় আন্তরিক, যেখন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার অভিপ্রায় রয়েছে।
সুশোভন হওয়ার জন্য চিনের সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বেজিংয়ের কিন্তু তার মূল দাবিগুলি থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনও বাস্তব উদ্দেশ্য নেই, যেগুলি দেখা যায় তাইওয়ানের প্রতি সামরিক ভীতিপ্রদর্শন এবং পূর্ব ও দক্ষিণ চিন সাগরে উত্তেজনা তৈরি করার মধ্যে। চিন–ভারত সীমান্ত সমস্যাও চলতে থাকবে। চিনের কূটনৈতিক বাগাড়ম্বর পরিশীলিত হয়ে উঠেছে। কিন্তু তার ক্রিয়াকলাপগুলি এখনও এমন একটি শক্তির চিত্রকে আকার দিয়ে চলেছে যা যে কোনও উপায়েই হোক না কেন আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলায় তার স্থান নিতে বদ্ধপরিকর।
এই ভাষ্যটি প্রথমে ‘দ্য টেলিগ্রাফ’–এ প্রকাশিত হয়েছিল।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...
Read More +