Author : Shivam Shekhawat

Published on Jun 14, 2023 Updated 0 Hours ago

আফগানিস্তানের সঙ্গে ইরানের ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততা তার নীতিতে একটি সূক্ষ্ম পরিবর্তন চিহ্নিত করে, এবং তা হল দ্বন্দ্ব থেকে সহযোগিতার দিকে এগোনো

তালিবান–শাসিত আফগানিস্তান সম্পর্কে ইরানের নীতি পর্যালোচনা

২৬  ফেব্রুয়ারি  ইসলামি  প্রজাতন্ত্র  ইরান  একটি  ছোট  কিন্তু  উল্লেখযোগ্য  সংখ্যক  দেশের  সঙ্গে  যোগ  দিল  এবং  আফগানিস্তানের  ইসলামিক  এমিরেট  (আইইএ)–এর  কূটনীতিকদের  তেহরানে  আফগান  দূতাবাসের  দায়িত্ব  নেওয়ার  অনুমতি  দিল।  এই  ঘটনাটি  ইরানের  আগের  অবস্থান,  অর্থাৎ  যে  জমানাকে  তারা  স্বীকৃতি  দেয়  না  তাদের  কাছে  দূতাবাস  হস্তান্তর  না  করার  থেকে  একটি  সূক্ষ্ম  পরিবর্তন।  তবে  সমস্ত  সম্প্রদায়ের  প্রতিনিধিদের  নিয়ে  একটি  অন্তর্ভুক্তিমূলক  সরকারের  প্রতি  তার  প্রতিশ্রুতি  ইরান  পুনর্ব্যক্ত  করেছে।

ইরান–আফগানিস্তান  সম্পর্ক  ক্রমিক  সহযোগিতা  ও  প্রতিদ্বন্দ্বিতার  পর্যায়গুলির  মধ্যে  অস্থির  অবস্থায়  থেকেছে।  ঘন  ঘন  সীমান্ত  সংঘর্ষ,  আফগানিস্তানের  সঙ্গে  পূর্ব  সীমান্ত  থেকে  ইরানে  উদ্বাস্তুদের  ক্রমাগত  প্রবাহ,  এবং  জলের  ন্যায়সঙ্গত  বণ্টন  নিয়ে  বিরোধের  মতো  কিছু  বিষয়  কাবুলে  কে  ক্ষমতায়  আছে  তা  নির্বিশেষে  অব্যাহত  রয়েছে।  তবে  তালিবানের  জমানায়  এখন  শীর্ষে  রয়েছে  ইসলামিক  স্টেট  খোরাসান  প্রদেশের  (আইএসকেপি)–এর  কাছ  থেকে  ইরানের  অনুভূত  আন্তঃসীমান্ত  বিপদ  এবং  অন্য  নিরাপত্তা  বিবেচনাগুলি,  যা  সহযোগিতার  সুযোগ  তৈরি  করতে  পারে।  ভূগোল  ও  ভূ–রাজনীতির  মধ্যে  সরাসরি  আবদ্ধ  উভয়  পক্ষই  তাদের  স্বার্থ  সুরক্ষিত  করার  জন্য  কিছু  ধরনের  সম্পৃক্ততা  অপরিহার্য  বিবেচনা  করে  সম্পর্ককে  গুরুত্ব  দেয়।  কিন্তু  কিছু  প্রতিযোগী  স্বার্থের  মধ্যে  অসঙ্গতি  এই  সহযোগিতাকে  কঠিন  করে  তুলেছে,  যার  প্রভাব  পড়ছে  এই  অঞ্চলের  উপর।

ভূগোল  ও  ভূ–রাজনীতির  মধ্যে  সরাসরি  আবদ্ধ  উভয়  পক্ষই  তাদের  স্বার্থ  সুরক্ষিত  করার  জন্য  কিছু  ধরণের  সম্পৃক্ততা  অপরিহার্য  বিবেচনা  করে  সম্পর্ককে  গুরুত্ব  দেয়।

সহযোগিতা  ও  প্রতিদ্বন্দ্বিতার  মধ্যে  দোদুল্যমানতা
তালিবানের  আফগানিস্তান  দখলের  পর  ইরানের  সর্বোচ্চ  নেতা    আয়াতোল্লা  খামেইনি  পাশের  দেশের  শাসনের  প্রতি  ইরানের  দৃষ্টিভঙ্গির  রূপরেখা  দিয়েছেন।  তাঁর  মতে,  ইরানের  নীতি  হবে  পারস্পরিক,  এবং  তা  এই  অঞ্চলে  তাঁদের  স্বার্থ  ও  অগ্রাধিকারের  প্রতি  তালিবানের  সংবেদনশীলতার  মাত্রা  দ্বারা  প্রভাবিত  হবে।  যদিও  এটি  একটি  দীর্ঘমেয়াদি  কৌশলের  প্রয়োজন  এড়িয়ে  যায়  না,  এটি  তালিবানকে  সম্পূর্ণরূপে  বিশ্বাস  করার  বিষয়ে  তেহরানের  কুণ্ঠার  ইঙ্গিত  দেয়।  ক্ষমতায়  কে  আছে  তা  নির্বিশেষে  ইরান  সব  সময়ে  আফগানিস্তান  সম্পর্কে  সতর্ক  ছিল,‌  তবে  পরিবর্তিত  আন্তর্জাতিক  প্রেক্ষাপট  এবং  উত্তেজনাপূর্ণ  অভ্যন্তরীণ  পরিবেশ  দেশটির  অসুবিধাগুলিকে  আরও  বাড়িয়ে  দিয়েছে।  একটি  সুসঙ্গত  নীতি  প্রতিক্রিয়া  তৈরি  করার  ঘটনাটি  ইরানের  অভ্যন্তরীণ  বিভাজনগুলিকেও  বড়  করে  তুলে  ধরেছে,  এবং  দেখা  গিয়েছে  কিছু  অংশের  কাছে  তালিবানের  সঙ্গে  জড়িত  থাকার  বিষয়টি  অনেক  বেশি  গ্রহণযোগ্য।

ভূগোল  এবং  ভাগ  করে  নেওয়া  রাজনৈতিক,  অর্থনৈতিক  ও  সভ্যতাগত  সম্পর্ক  দ্বারা  একত্রে  আবদ্ধ  ইরান  ও  আফগানিস্তানের  মধ্যে  ঐতিহাসিকভাবে  তাৎপর্যপূর্ণ  কিন্তু  উত্তাল  দ্বিপাক্ষিক  সম্পর্ক  রয়েছে।  আফগানিস্তান  চেম্বার  অফ  কমার্সের  মতে  বছরের  পর  বছর  ধরে  বাণিজ্য  ও  অর্থনৈতিক  সহযোগিতা  বৃদ্ধি  পেয়েছে,  এবং  দ্বিমুখী  বাণিজ্য  ১  বিলিয়ন  মার্কিন  ডলারে  পৌঁছেছে।  তেহরানের  জন্য  কাবুলের  সঙ্গে  বাণিজ্য  ২০০৫  সাল  থেকে  বিক্ষিপ্তভাবে  কার্যকর  মার্কিন  নিষেধাজ্ঞাগুলির  বিপর্যয়কর  প্রভাবকে  অতিক্রম  করার  একটি  উপায়,  এবং  তা  ইরানের  ‘‌প্রতিরোধ  অর্থনীতি’‌কে  সমর্থন  করেছে।  আফগান  সীমান্ত  শহর  জারঞ্জে  ইরানি  রিয়াল  ব্যবহার  করা  হয়  এবং  সুপারমার্কেটের  তাকগুলিতে  ইরানি  পণ্যের  সর্বব্যাপী  উপস্থিতি  দেখা  যায়।  সীমান্ত  অঞ্চলগুলি  এভাবে  গভীরভাবে  একীভূত  হয়েছে।  কিন্তু  যখন  বাণিজ্য  বৃদ্ধি  পেয়েছে,  সেই  সময়  অন্যান্য  বিষয়ে  পার্থক্য  ক্রমশ  বেড়েই  গিয়েছে।

ক্ষমতায়  কে  আছে  তা  নির্বিশেষে  ইরান  সব  সময়ে  আফগানিস্তান  সম্পর্কে  সতর্ক  ছিল;‌  তবে  পরিবর্তিত  আন্তর্জাতিক  প্রেক্ষাপট  এবং  উত্তেজনাপূর্ণ  অভ্যন্তরীণ  পরিবেশ  দেশটির  অসুবিধাগুলিকে  আরও  বাড়িয়ে  দিয়েছে।

(অ)  নিয়ন্ত্রণযোগ্য  পার্থক্য?
আগস্ট  ২০২১  থেকে  ফেব্রুয়ারি  ২০২৩  পর্যন্ত  তেহরান  ও  কাবুলের  কর্মকর্তারা  প্রায়  ৬৭  বার  দেখা  করেছেন,  বেশিরভাগ  সময়েই  দ্বিপাক্ষিকভাবে।  এই  বৈঠকগুলির  কথিত  অ্যাজেন্ডা  ছিল  সম্পর্ককে  জর্জরিত  করে  এমন  সমস্যাগুলি  নিয়ে  ঐকমত্য  খোঁজা,  এবং  একটি  মধ্যম  স্থল  তৈরি  করা৷  এই  ‘ইস্যু’গুলির  মধ্যে  কোনও  কোনওটির  সম্পর্কের  আরও  অবনতি  ঘটানোর  সম্ভাবনা  রয়েছে।  গত  বছর  (মার্চ  ২০২২–ফেব্রুয়ারি  ২০২৩)  আফগানিস্তান  থেকে  প্রায়  ৪৪৫,৪০৩  জন  শরণার্থী  ইরানে  আশ্রয়  নিয়েছিলেন।  তেহরান  ঐতিহাসিকভাবে  আফগান  শরণার্থীদের  একটি  বড়  অংশকে  আশ্রয়  দিয়েছে।  প্রধানত  শিয়া  হাজারা  ও  তাজিক  সম্প্রদায়ের  প্রায়  ৩.৬  মিলিয়ন  শরণার্থী  ইতিমধ্যেই  সে  দেশে  রয়েছেন  ।  কিন্তু  যদিও  ইরানের  শরণার্থী  নীতি  তুলনামূলকভাবে  অন্তর্ভুক্তিমূলক  ছিল,  তারা  অনেক  শরণার্থীকে  আফগানিস্তানে  ফেরতও  পাঠিয়েছে,  কখনও  কখনও  স্বেচ্ছায়  এবং  প্রায়শই  বলপ্রয়োগের  মাধ্যমে।  গত  মাসে  ১১  জন  শরণার্থী,  যাঁরা  অবৈধভাবে  সীমান্ত  অতিক্রম  করার  চেষ্টা  করছিলেন,  তাঁদের  দিকে  ইরানি  রক্ষীদের  গুলিচালনা  কাবুলের  অভ্যন্তরে  শোরগোল  ও  ইরান–বিরোধী  বিক্ষোভের  জন্ম  দেয়।  তালিবান  আসার  পর  থেকে  অবৈধভাবে  ইরানে  প্রবেশের  চেষ্টা  করা  প্রায়  ১০০  শরণার্থীর  একই  পরিণতি  হয়েছে।  আফগানিস্তানের  সীমান্তবর্তী  নানগারহারে  বিমানবন্দরের  পুনর্নির্মাণে  অবদান  রাখা  এবং  ভিসা  ইস্যু  করার  সুবিধার  মাধ্যমে  তেহরান  তাদের  দেশে  উদ্বাস্তুদের  প্রবাহ  নিয়ন্ত্রণের  জন্য  কয়েকটি  পদক্ষেপ  করেছে।  ইতিমধ্যে  উভয়  পক্ষ  উদ্বাস্তুদের  সঙ্গে  দুর্ব্যবহার  এবং  তাদের  বলপূর্বক  প্রত্যাবাসন  নিয়ে  আলোচনার  জন্য  নিয়মিত  বৈঠক  করেছে,  কিন্তু  তেমন  কোনও  উল্লেখযোগ্য  অগ্রগতি  হয়নি।

আফগানিস্তানের  হেলমান্দ  নদী  থেকে  ইরানের  সিস্তান–বালুচিস্তান  প্রদেশের  হামাউন  জলাভূমিতে  প্রবাহিত  জলের  ন্যায়সঙ্গত  বণ্টন  নিয়ে  মতপার্থক্যও  একটি  ঝাঁঝালো  সমস্যা।  যেহেতু  কাবুল  ও  তেহরান  উভয়ই  জলের  ঘাটতি  এবং  শক্তপোক্ত  জল  ব্যবস্থাপনা  পরিকাঠামোর  অভাবের  সঙ্গে  লড়াই  করছে,  এই  প্রশ্নে  যে  কোনও  (ভুল)  পদক্ষেপের  অভ্যন্তরীণ  রাজনৈতিক  প্রভাব  রয়েছে।  তেহরানের  ক্ষেত্রে  জলের  ঘাটতি  অশান্ত  প্রদেশ  সিস্তান  বালুচিস্তান  থেকে  মানুষের  চলে  যাওয়াকে  ত্বরান্বিত  করবে,  এবং  দেশের  অভ্যন্তরে  ইতিমধ্যে  তৈরি  হওয়া  অসন্তোষকে  বাড়িয়ে  তুলবে।  ২০২১  সালের  মার্চে  যখন  কামাল  খান  বাঁধটি  উদ্বোধন  করা  হয়েছিল,  তখন  প্রাক্তন  প্রেসিডেন্ট  আশরাফ  ঘানি  জলের  উপর  আফগানদের  অধিকার  পুনরুদ্ধার  করে  ইরানকে  বিনামূল্যে  জল  দিতে  অস্বীকার  করেছিলেন,  এবং  তেহরানকে  জলের  পরিবর্তে  তেল  দিতে  বলেছিলেন।

পূর্ববর্তী  মার্কিন–সমর্থিত  সরকারগুলির  বিপরীতে  তাঁদের  সংবেদনশীলতাকে  তালিবান  সরকার  সম্মান  করবে  বলে  তেহরানের  আশা  মিলিয়ে  গেছিল  যখন  বাঁধের  জল  আফগানিস্তানের  ক্ষেতে  সরিয়ে  দেওয়া  হয়েছিল,  এবং  ইরানের  প্রতিবাদে  কর্ণপাত  করা  হয়নি।  চুক্তির  অধীনে  তার  অধিকার  সুরক্ষিত  করার  জন্য  আইনি  চ্যালেঞ্জ  করার  হুমকিও  আফগানিস্তানকে  নড়াতে  ব্যর্থ  হয়েছে।  আফগানরা  তাদের  নিজস্ব  জাতীয়  স্বার্থের  প্রাধান্যকে  পুনর্ব্যক্ত  করেছে  এবং  বাঁধের  উদ্বোধনকে  দেখেছে  তাদের  ন্যায্য  অংশ  পুনরুদ্ধার  করা  হিসাবে।  জ্বালানি  ও  জল  উপমন্ত্রী  মুজিব  উর  রহমান  ওমর  আফগানিস্তানের  জাতীয়  স্বার্থের  প্রতি  তালিবানের  দায়বদ্ধতার  রূপরেখা  দিয়েছেন  এই  বলে  যে  তাঁরা  আরও  বাঁধ  নির্মাণে  মনোনিবেশ  করবেন।  ইস্যুটির  আবেগপ্রবণ  প্রকৃতির  কারণে  সম্পর্কের  অন্য  দিকগুলিতে  এর  প্রভাব  ছড়িয়ে  পড়া,  এবং  উভয়  দেশের  অভ্যন্তরীণ  বিভিন্ন  শক্তির  এর  অপব্যবহারের  সম্ভাবনাও  বেশি।  ইরানি  এমপি–দের’    সীমান্ত  শহর  থেকে  আফগান  উদ্বাস্তুদের  উচ্ছেদের  হুমকি  এবং  আফগানিস্তানে  তেহরানের  দূতাবাস  ও  কনস্যুলেটের  বাইরে  আফগানদের  বিক্ষোভ  এরই  ইঙ্গিতবাহী।

আফগানিস্তানের  হেলমান্দ  নদী  থেকে  ইরানের  সিস্তান–বালুচিস্তান  প্রদেশের  হামাউন  জলাভূমিতে  প্রবাহিত  জলের  ন্যায়সঙ্গত  বণ্টন  নিয়ে  মতপার্থক্যও  একটি  ঝাঁঝালো  সমস্যা।

আপাত  ‘‌ভুল  বোঝাবুঝির’‌  কারণে  সীমান্তটি  ঘন  ঘন  সংঘর্ষের  সাক্ষী  হয়েছে,  কখনও  কখনও  গুলি  বিনিময়  এবং  পোস্ট  দখলের  ঘটনাও  ঘটেছে।  গত  কয়েক  মাসে  হিরমান্দ  কাউন্টি,  হেরাত  ও  নিমরোজ  প্রদেশে  একাধিক  বড়  ঘটনা  ঘটেছে।  ইরানের  সীমান্ত  রক্ষীরা  ইরানের  দাবিকৃত  অঞ্চলগুলিতে  আফগান  পতাকা  উত্তোলন  এবং  অবৈধ  রাস্তা  নির্মাণের  জন্য  তালিবানের  প্রচেষ্টাকে  বাধা  দিয়েছে,  এবং  সীমা–লঙ্ঘনের  ঘটনায়  তার  হালকা  প্রতিক্রিয়াকে  তার  দুর্বলতা  হিসাবে  ভেবে  নেওয়ার  বিরুদ্ধে  সতর্ক  করেছে।  এই  ইস্যুতে  সহযোগিতা  করার  জন্য  একটি  যৌথ  কমিশন  ২০২২  সালের  আগস্টে  গঠিত  হয়েছিল,  কিন্তু  গত  ৫  মার্চের  অচলাবস্থার  সময়  থেকে  সংঘর্ষ  অব্যাহত  রয়েছে।  সীমান্তে  অস্থিতিশীলতা  মাদক  চোরাচালানের  ঝুঁকি  বাড়ায়,  এবং  এই  অঞ্চলে  কর্মরত  অপরাধী  চক্রকেও  শক্তিশালী  করতে  পারে।

আইএসআইএস  হুমকি:  সহযোগিতা  করার  যথেষ্ট  প্রণোদনা?
তালিবান  ছাড়াও  তেহরানের  জন্য  কাবুলের  শাসনব্যবস্থার  পরিবর্তনের  ফলে  সবচেয়ে  বড়  যে  নেতিবাচক  বাহ্যিকতা  আরোপিত  হয়েছে  তা  হল  তালিবানের  ক্ষমতায়  আসার  পর  থেকে  শক্তিশালী  হয়ে  ওঠা  চরমপন্থী  ও  সন্ত্রাসবাদী  সংগঠনগুলির  নতুন  বিপদ।  যদিও  আইএসকেপি  (‌আইএসআইএস–এর  আঞ্চলিক  শাখা)‌  তালিবানের  কাছেও  একটি  চ্যালেঞ্জ  তৈরি  করেছে,  ইরানের  উপরেও  এর  বিপদের  দীর্ঘ  ছায়া  রয়েছে।    ইরান–আফগানিস্তান  সীমান্তের  কাছে  জারাঞ্জে  অনেক  আইএসকেপি–র  আস্তানা  পাওয়া  গিয়েছে।  গোষ্ঠীটি  আফগানিস্তানের  অভ্যন্তরে  রাশিয়া  ও  চিনের  মতো  অন্যান্য  দেশের  স্বার্থের  উপর  হামলার  জন্যও  দায়ী।  তাই  তালিবানের  সমর্থন,  এবং  তালিবান  যাতে  আইএসকেপি–র  ষড়যন্ত্রের  জবাব  দেয়,  তা  নিশ্চিত  করা  তেহরানের  জন্য  একটি  উল্লেখযোগ্য  অগ্রাধিকার।

এই  অসুবিধাজনক  বাস্তবতার  কারণেই  ইরান  তালিবানের  সঙ্গে  সহযোগিতা  করতে  এবং  বিরোধী  শক্তিগুলির  প্রতি  তার  সমর্থন  কমাতে  ইচ্ছুক,  যা  বিরোধী  নেতাদের  পক্ষে  শাসনের  সমান্তরাল  কাঠামো  তৈরি  করা  আরও  কঠিন  করে  তোলে।  এর  মধ্যেই  আইএসকেপি–র  ‘‌বহিরাগত’‌দের  থেকে  তালিবানের  ‘‌অধিবাসী’‌  প্রকৃতিকে  আলাদা  করে  গোষ্ঠীটিকে  পুনরায়  ব্র্যান্ড  করার  প্রচেষ্টার  ব্যাখ্যা  পাওয়া  যায়।  তা  ছাড়া  এই  বিষয়টির  উপরেও  জোর  দেওয়া  হচ্ছে  যে  আইএসকেপি–র  মতো  তালিবান  মোটেই  খিলাফত  প্রতিষ্ঠা  করতে  চাইছে  না।  শিয়াদের  বিরুদ্ধে  তালিবানের  অতীতের  নৃশংসতাও  কম  করে  দেখানো  হচ্ছে।  ইরানের  ‘‌  জানুস–মুখী  নীতির’‌  এই  ধারাবাহিকতার  লক্ষ্য  নিজের  প্রতিক্রিয়া  শক্তিশালী  করা  এবং  সব  দিক  থেকে  তার  স্বার্থ  সুরক্ষিত  করা।

এইভাবে  কাবুলের  পতনকে  পশ্চিম  ও  ইরানের  মধ্যে  সম্পর্ক  নতুন  করে  উদ্ভাবনের  একটি  উপায়  হিসাবে  দেখা  হয়,  যেখানে  কাবুল  ‘‌কূটনৈতিক  সম্পৃক্ততা  ও  সহযোগিতার  পথ’‌  হয়ে  উঠে  সব  পক্ষের  স্বার্থকে  এগিয়ে  নিয়ে  যায়।


প্রভাব  বিস্তারের  জন্য  সচেষ্ট
কিছু  অংশে  একটি  সাধারণ  আশাবাদী  ধারণা  রয়েছে  যে  আফগানিস্তান  ইরানের  নেতাদের  আন্তর্জাতিক  সম্প্রদায়ের  সঙ্গে  ‘‌গঠনমূলকভাবে  সম্পৃক্ত’‌  হওয়ার  সুযোগ  দেয়।  এইভাবে  কাবুলের  পতনকে  পশ্চিম  ও  ইরানের  মধ্যে  সম্পর্ক  নতুন  করে  উদ্ভাবনের  একটি  উপায়  হিসাবে  দেখা  হয়,  যেখানে  কাবুল  ‘‌কূটনৈতিক  সম্পৃক্ততা  ও  সহযোগিতার  পথ’‌  হয়ে  উঠে  সব  পক্ষের  স্বার্থকে  এগিয়ে  নিয়ে  যায়।  যখন  মার্কিন  যুক্তরাষ্ট্র  তার  বাহিনী  আফগানিস্তান  থেকে  প্রত্যাহার  করে  নেয়,  তখন  তেহরান  দেশটিতে  দুই  দশক  ধরে  জড়িত  থাকার  পর  মার্কিন  যুক্তরাষ্ট্রের  ব্যর্থতাকে  উপহাস  করার  সুযোগ  কাজে  লাগিয়েছিল,  এবং  এই  অঞ্চলে  নিজেকে  দায়িত্বশীল  দেশ  হিসাবে  ও  ‘‌প্রতিরোধের  অক্ষ’‌–এর  প্রবক্তা  হিসাবে  তুলে  ধরেছিল।

সুতরাং,  ইরানের  তরফে  পশ্চিমী  ষড়যন্ত্রের  বিরুদ্ধে  এই  অঞ্চলে  প্রতিরোধে  অগ্রগামী  হিসাবে  নিজের  ভাবমূর্তি  বজায়  রাখাকে  অগ্রাধিকার  দেওয়া  হবে।  গভীরভাবে  বিচ্ছিন্ন  তালিবানের  জন্য  এমনকি  তেহরানের  কাছ  থেকে  সীমিত  সমর্থনও  কাবুলে  জমি  মজবুত  করার  জন্য  গুরুত্বপূর্ণ;‌  অন্যদিকে,  আইএসকেপি–কে  দমন  করা  হচ্ছে  কি  না  তার  উপরেই  তেহরানের  দীর্ঘমেয়াদি  কৌশল  নির্ভর  করবে।    তালিবান  কর্মকর্তাদের  সঙ্গে  তাদের  সাম্প্রতিকতম  বৈঠকের  সময়    কাবুলের  ইরানি  দূতাবাস  আশা  করেছিল  যে  ‘‌দুই  দেশের  মধ্যে  সম্পর্ক  ও  অভিন্নতার  সম্প্রসারণ’‌  তালিবানকে  ইরানের  দাবি  মেনে  নিতে  উদ্বুদ্ধ  করবে।  যদিও  এটি  আফগানিস্তানে  ইরানের  প্রভাব  সম্পর্কে  আশাবাদের  একটি  ভুল  ধারণা  হতে  পারে,  এটি  উভয়  পক্ষের  মধ্যে  সহযোগিতার  প্রয়োজনীয়তার  দিকে  নির্দেশ  করে।  এটি  আরও  দেখায়  যে  কীভাবে  তেহরানের  নীতি  স্বল্পমেয়াদে  আরও  প্রতিক্রিয়ানির্ভর  ও  প্রয়োজনভিত্তিক  হতে  থাকবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.