Published on Jul 27, 2024 Updated 0 Hours ago

ভারত মলদ্বীপ সরকারের নতুন নীতি বুঝতে পেরেছে, কিন্তু তারা আশা করে যে দ্বীপরাষ্ট্রটি ভারতীয় সংবেদনশীলতাকে সম্মান করবে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি সমান ভাবে বজায় রাখবে।

মলদ্বীপের নতুন চিনপন্থী ঝোঁক উদ্বেগজনক কিন্তু ভারত বাস্তববাদে আশা রাখছে

মলদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী মুসা জমিরের থেকে ১০ মে পর্যন্ত ভারত সফরটি ২০২৩ সালের নভেম্বরে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে মোহাম্মদ মুইজ্জুর ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকে দ্বীপরাষ্ট্রটির তরফে প্রথম উচ্চ পর্যায়ের সফর সফরের সময় বিদেশমন্ত্রী ভারতীয় বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক পর্যালোচনা এবং আরও সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য দেখা করেন। তিনি বাজেট সমর্থনের জন্য ভারতকেও অনুরোধ করেছিলেন যার প্রতি নয়াদিল্লি ইতিবাচক প্রত্যুত্তর দিয়েছে। এটি এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক টানাপড়েনময় এবং মুইজ্জু সরকার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হ্রাস করতে এবং চিনকে আলিঙ্গন করতে চেয়েছে

ভারত নতুন সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও ভারত আশা করে যে, মলদ্বীপ ভারতীয় সংবেদনশীলতাকে সম্মান করবে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি সমান ভাবে বজায় রাখবে।

 

মুইজ্জুর নতুন নীতি: ইন্ডিয়া আউট, চায়না ইন

নভেম্বরে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মুইজ্জু একটি মলদ্বীপপন্থী নীতি গ্রহণ করেছেন যার লক্ষ্য ভারতের উপর নির্ভরতা হ্রাস করা, চিনের সঙ্গে মলদ্বীপের সম্পর্ক দ্বিগুণ করা এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কে বৈচিত্র্য আনা। এই নীতি তার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং ভারতের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী ভঙ্গির ফসল; চিনের প্রতি মতাদর্শগত এবং ব্যক্তিগত ঝোঁক, অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে এবং তার স্বার্থকে আরও এগিয়ে নিতে ইন্দো-প্যাসিফিকের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানকে কাজে লাগাতে মুইজ্জু এমনটা করছেন

মুইজ্জুই প্রথম যিনি ক্ষমতায় আসার পর মলদ্বীপের প্রেসিডেন্টদের প্রথম সফরের গন্তব্য হিসেবে ভারতকে বেছে নেওয়ার চিরাচরিত প্রথা ভেঙেছিলেন। তিনি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে একটি সরকারি সফরে তুর্কিয়ে এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে একটি রাষ্ট্রীয় সফরে চিন গিয়েছিলেন। উপরন্তু, তিনি ভারতের কাছে তার ৭৬ জন সেনা প্রত্যাহারের দাবি করেছিলেন, যাঁদের হেলিকপ্টার এবং ডর্নিয়ার বিমানের দেখাশোনা করার জন্য মোতায়েন করা হয়েছিল। তিনি ভারতের সঙ্গে হাইড্রোগ্রাফি চুক্তি পুনর্নবীকরণ না করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন, যেটির মেয়াদ জুন মাসে শেষ হয়েছে।

 

ভারতকেও কোন নতুন প্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া হয়নি, যখন মুইজ্জু চিনের সঙ্গে বিআরআই প্রকল্পগুলিকে ত্বরান্বিত করতে এবং এফটিএ বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছে এবং সেগুলির অধীনে সাম্প্রদায়িক উন্নয়ন, আবাসন এবং অবকাঠামো প্রকল্পগুলিকে মঞ্জুর করেছেন।

 

অন্য দিকে, তিনি চিনের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেনতিনি  তুর্কিয়ে থেকে ড্রোন আমদানি করেছেন, ড্রোন পাইলটদের প্রশিক্ষণের জন্য চিনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন এবং বেজিং আঙ্কারা থেকে সামরিক/ নজরদারি জাহাজগুলিকে দেশে নোঙর করার অনুমতি দিয়েছেন। ভারতকেও কোন নতুন প্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া হয়নি, যখন মুইজ্জু চিনের সঙ্গে বিআরআই প্রকল্পগুলিকে ত্বরান্বিত করতে এবং এফটিএ বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছে এবং সেগুলির অধীনে সাম্প্রদায়িক উন্নয়ন, আবাসন এবং অবকাঠামো প্রকল্পগুলিকে মঞ্জুর করেছেন। এ ছাড়াও মলদ্বীপ বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং স্বাস্থ্য-ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার বৈচিত্র্যকরণ আনছে।

 

ভারতের ‘প্রতিবেশ প্রথম’ প্রতিশ্রুতি

ভারত মুইজ্জুর বিদেশনীতি এবং তাঁর দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল। নিরাপত্তা, কৌশলগত এবং স্থিতির কারণে ভারত সবসময় দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরে তার প্রভাব বজায় রেখেছে। যে কোন অস্থিতিশীলতা এবং এই অঞ্চলে প্রতিকূল শক্তির উপস্থিতি ভারতের উপর প্রভাব ফেলবে এবং এর ফলে মলদ্বীপকে উপেক্ষা করা বা বিচ্ছিন্ন করা কঠিন ভারত এই ভাবে তার প্রতিবেশীর চাহিদা মেটাতে এবং এই অঞ্চলে সংযোগ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং নিরাপত্তার প্রচারের জন্য তার প্রতিবেশ প্রথম এবং সাগর (অঞ্চলে সকলের জন্য নিরাপত্তা এবং বৃদ্ধি) নীতি ব্যবহার করেছে।

ফলস্বরূপ, নয়াদিল্লি বাস্তববাদকে গ্রহণ করেছে এবং দ্বীপদেশটিকে চিনের কাছাকাছি না ঠেলে দিয়ে নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করেছে। ভারত দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি উচ্চ স্তরের কোর গ্রুপের প্রস্তাব করেছে এবং ৭৬ জন ভারতীয় সৈন্যকে প্রত্যাহার করে, তাঁদের জায়গায় প্রযুক্তিগত কর্মী নিয়োগ করেছে। মলদ্বীপের ভারত-বিরোধী ঝোঁক থাকা সত্ত্বেও, ভারত মলদ্বীপে তার উন্নয়ন সহায়তা ৫০% বাড়িয়েছে – ৪০০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৬০০ কোটি টাকা করেছে এবং কিছু খাদ্য পণ্যের রফতানি কোটাও ৫% বাড়িয়েছে – যা ১৯৮১ সালের পর থেকে উভয় দেশের মধ্যে হওয়া সমঝোতার সর্বোচ্চ

 

পারস্পরিক স্বার্থ সমুন্নত রাখা

তবে সাম্প্রতিক বৈঠকটি ইঙ্গিত দেয় যে, দ্বীপরাষ্ট্রের নীতির সঙ্গে বাধ্য থাকা সত্ত্বেও, মুইজ্জুর চিনের প্রতি ঝোঁক নয়াদিল্লির ধৈর্যের পরীক্ষা করছে। বৈঠকের সময় মলদ্বীপ মুইজ্জুর ভারত সফরের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে এবং ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ প্রদানের অনুরোধ করেছে, যার এক-তৃতীয়াংশ ২০২৪ সালের মে মাসে প্রদানের কথা। ভারত এই অনুরোধের প্রত্যুত্তর দিয়েছে এবং কোনও সুদ ছাড়াই ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ট্রেজারি বিল এক বছরের জন্য বৃদ্ধি করেছে। ভারতের প্রতিক্রিয়া তার অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি প্রদর্শন করে, বিশেষ করে যখন মলদ্বীপের অর্থনীতি গভীর ঋণ সঙ্কটে রয়েছে। যাই হোক, এই সম্পর্কগুলি পারস্পরিক স্বার্থ এবং পারস্পরিক সংবেদনশীলতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কী ভাবে সর্বোত্তম ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সে সম্পর্কে একটি বোঝাপড়ায় পৌঁছনো উভয় দেশের সাধারণ স্বার্থ বলে ভারত স্পষ্ট করেছে। সেই সঙ্গে এ কথাও বলেছে যে, এই সম্পর্ক বজায় রাখা ভারতের একমাত্র দায়িত্ব নয়।

 

ভারত এই অনুরোধের প্রত্যুত্তর দিয়েছে এবং কোনও সুদ ছাড়াই ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ট্রেজারি বিল এক বছরের জন্য বৃদ্ধি করেছে। ভারতের প্রতিক্রিয়া তার অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি প্রদর্শন করে, বিশেষ করে যখন মলদ্বীপের অর্থনীতি গভীর ঋণ সঙ্কটে রয়েছে।

 

টি কোন কাকতালীয় ঘটনা নয় যে এই সফর টানাপোড়েন সম্পর্কের মূল্যায়ন করার উদ্দেশ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে সম্পৃক্ত। ভারত সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি পূরণ করে এবং মুইজ্জু সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে তাঁর ক্ষমতা সুসংহত করেছেন। ভারত মলদ্বীপের স্বার্থের প্রতি সংবেদনশীল হলেও মুইজ্জুর চিনের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চিত। ভারত আশা করে যে, পার্লামেন্টে অতি সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে নতুন শাসনব্যবস্থা নমনীয়তা নিয়ে আসতে পারে এবং চিনের নির্দেশে কাজ করার পরিবর্তে একটি বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে পারে।

ভারত উপলব্ধি করে যে, তার ভৌগোলিক নৈকট্য এবং আঞ্চলিক স্বার্থ ভারতকে চিনের চেয়ে মলদ্বীপের জন্য একটি ভাল এবং উন্নততর উন্নয়ন, বাণিজ্য এবং নিরাপত্তা অংশীদার করে তোলে। কিন্তু, ভারত এ কথাও বুঝতে পারে যে, এই অঞ্চলটি আজ চিন-ভারত প্রতিযোগিতার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, যেখানে ছোট দেশগুলি তাদের স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাদের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে। তাই, ভারত তার প্রতিবেশীদের এবং তাদের চাহিদাগুলি বুঝতে সক্ষম এবং সেগুলির সঙ্গে মানিয়ে নিতে রাজি। তা সত্ত্বেও, ভারত আশা করে যে, ছোট দেশগুলিও ভারতের সক্রিয়তা এবং সংবেদনশীলতাকে সম্মান করবে বলে আশা করে। সর্বোপরি, একটি সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে উভয় তরফেই সংবেদনশীলতার প্রয়োজন।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় মানিকন্ট্রোল-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.