মলদ্বীপের ভারতের সঙ্গে যৌথ হাইড্রোগ্রাফিক সমীক্ষার চুক্তিটি বাতিল করার সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে কিছু বিতর্ক তৈরি করেছে। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বীপরাষ্ট্রে সফরের সময় স্বাক্ষরিত এই চুক্তিটিকে ভারত–মলদ্বীপ প্রতিরক্ষা সম্পর্কের প্রতীক হিসাবে দেখা হয়েছিল। দ্বীপরাষ্ট্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে নয়াদিল্লিকে তার উপকূল থেকে ভারতীয় সামরিক উপস্থিতি প্রত্যাহার করতে বলার কয়েক সপ্তাহ পরে মালে এই পদক্ষেপ করে। ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পৃক্ততা নিয়ে তার আপত্তির উপর জোর দেওয়ার জন্যই যেন মালে ডিসেম্বর ২০২৩–এ কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভের সর্বশেষ বৈঠকটিও এড়িয়ে যায়।
ভারত ও মলদ্বীপের মধ্যে আস্থার ঘাটতি যে রয়েছে তা সহজেই স্পষ্ট। মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট হিসেবে মোহাম্মদ মুইজ্জুর নির্বাচনের পর থেকেই যা অনুমান করা হয়েছিল সেইভাবে মালে নতুন দিল্লির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে চেষ্টা করেছে। মুইজ্জু ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচার চালিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন, এবং স্লোগানটিকে তাঁর বিদেশ নীতির একটি মূল স্তম্ভ বানিয়েছিলেন। মলদ্বীপের প্রেসিডেন্টদের প্রথমে নয়াদিল্লিতে আসার একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য ভঙ্গ করে প্রেসিডেন্ট প্রথমে তুর্কিয়েতে গিয়েছিলেন যা ছিল কার্যত একটি স্পষ্ট সংকেত যে ভারত নতুন প্রশাসনের বিদেশনীতি অগ্রাধিকারের মধ্যে নীচের দিকে রয়েছে।
হাইড্রোগ্রাফি চুক্তি পুনর্নবীকরণ করতে মুইজ্জু প্রশাসনের অস্বীকৃতি বেজিংয়ের সাথে তার বিশেষ সম্পর্কের চেয়ে সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে প্রেসিডেন্টের সংবেদনশীলতার সাথে কম সম্পর্কযুক্ত বলে মনে হয়।
মলদ্বীপ চাইবে বিশ্ব বিশ্বাস করুক যে আঞ্চলিক শক্তি — চিন ও ভারত — যখন প্রতিযোগিতামূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবদ্ধ, তখন তারা সীমাবদ্ধ পরিস্থিতিতে তাদের স্বায়ত্তশাসন জোরদার করছে। কিন্তু তা প্রকৃত ঘটনা নয়। বেজিং ও নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখা থেকে দূরে, দক্ষিণ এশিয়ার অনেক রাষ্ট্র প্রাজ্ঞতার সঙ্গে যা করেছে সেইভাবেই মালে চিনের পাশে তার রাজনৈতিক অবস্থান নির্ধারিত করেছে। হাইড্রোগ্রাফি চুক্তি পুনর্নবীকরণ করতে মুইজ্জু প্রশাসনের অস্বীকৃতির কারণ যতটা বেজিংয়ের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক তৈরির আগ্রহ, ততটা সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে প্রেসিডেন্টের সংবেদনশীলতা নয়। মলদ্বীপের জলসীমা থেকে ভারতীয় হাইড্রোগ্রাফিক জাহাজগুলিকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য আশেপাশের সমুদ্রে চিনের সামুদ্রিক জরিপকে সহায়তা করা বলে মনে হচ্ছে।
তবুও, ভারতে আলোচনা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লক্ষ্য করেনি। প্রথমত, হাইড্রোগ্রাফিক ডেটা নিজে থেকে নির্বিষ নয়। অন্যান্য তথ্যের মতো সামুদ্রিক তথ্যও অঙ্গীকারহীন, এবং তা বেসামরিক বা সামরিক উভয় উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যেসব ডেটা নৌ–সামরিক উদ্দেশ্যগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে, যেমন নৌ–নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সামুদ্রিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং পরিবেশগত পর্যবেক্ষণ, তা–ই আবার একটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ উপকূলীয় স্থাপনা বা যুদ্ধের সম্পদের উপর নজরদারির মতো সামরিক লক্ষ্যগুলিকেও সহজতর করে।
দ্বিতীয়ত, চিনের সমুদ্রতলের জরিপ এবং সামুদ্রিক ডেটা ব্যবহারের উদ্দেশ্য স্পষ্টতই একটি কৌশলগত অ্যাজেন্ডা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। দেশটির একটি বিস্তৃত সামুদ্রিক গবেষণা কার্যক্রম রয়েছে, যেখানে ‘বৈজ্ঞানিক গবেষণা জাহাজ’, বিশেষ করে শি ইয়ান শ্রেণির সামুদ্রিক জরিপ জাহাজ, ভারত মহাসাগরে মোতায়েন করা হয়। চিন ভারত মহাসাগরে নিয়মিত ইউয়ান ওয়াং সিরিজের গোয়েন্দা–নজরদারি–নিরীক্ষণ জাহাজ মোতায়েন করে। তাদের উপস্থিতি চিনের ক্রমবর্ধমান নৌ–পদচিহ্নের কারণে অলক্ষিতই থেকে যায়।
দেশটির একটি বিস্তৃত সামুদ্রিক গবেষণা কার্যক্রম রয়েছে, যেখানে ‘বৈজ্ঞানিক গবেষণা জাহাজ’, বিশেষ করে শি ইয়ান শ্রেণির সামুদ্রিক জরিপ জাহাজ, ভারত মহাসাগরে মোতায়েন করা হয়।
তৃতীয়, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সামুদ্রিক জরিপ ও নিরীক্ষণ হল দূর সমুদ্রে পিএলএএন–এর সামুদ্রিক কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ সক্ষমকারী। চিনের সাবমেরিন–বিরোধী যুদ্ধের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সমুদ্র সমীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতীয় পর্যবেক্ষকদের ধারণা, সমুদ্রের তাপমাত্রার প্রোফাইল ম্যাপিং এবং অন্যান্য মহাসাগরীয় ঘটনা, যেমন স্রোত ও ঘূর্ণিস্রোতের অধ্যয়ন, এ সবেরই উদ্দেশ্য হল সোনার পারফরম্যান্স উন্নত করা এবং শত্রু সাবমেরিন সনাক্তকরণ। এটি এমন সিস্টেমের বিকাশে সহায়তা করে যা চিনা সাবমেরিনগুলিকে উপকূলীয় যুদ্ধের জন্য সনাক্তকরণ এবং ফাইন–টিউন ট্যাকটিক এড়াতে সহায়তা করে। চিন গত বছর শ্রীলঙ্কা ও মলদ্বীপকে তাদের বন্দরে সামুদ্রিক গবেষণা জাহাজ নোঙর করার অনুমতি দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করেছিল।
যাই হোক, বন্ধুত্বপূর্ণ দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্রগুলির জলসীমায় চিনের সমুদ্রবিজ্ঞান সমীক্ষা এই অঞ্চলে ভারতীয় হাইড্রোগ্রাফিক জাহাজের উপস্থিতির কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভারতীয় নৌবাহিনী বিদেশী জাহাজের সাবসারফেস সেন্সর কার্যকলাপ ট্র্যাক করতে পারে। চিনের সমুদ্র বিজ্ঞানীরা জানেন যে ভারতীয় হাইড্রোগ্রাফিক অপারেশনগুলির ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রগুলির জলে তাদের সামুদ্রিক জরিপ প্রচেষ্টায় হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা আছে।
এদিকে, মলদ্বীপে একটি নৌঘাঁটি গড়ে তোলার চিনা পরিকল্পনা নিয়ে জল্পনা চলছে। ২০১৮ সালে চিন ভারতের লক্ষদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জ থেকে অদূরে মালের উত্তরে মাকুনুধু অ্যাটলে একটি সমুদ্র পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিল। মলদ্বীপের বিরোধী নেতারা তখন সাবমেরিন ঘাঁটির জন্য একটি বিধানসহ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সম্ভাব্য সামরিক প্রয়োগ সম্পর্কে আপত্তি প্রকাশ করেছিলেন। চিন সেই প্রস্তাবটিকে পুনরুজ্জীবিত করেছে এমন কোনও প্রমাণ নেই, তবে পর্যবেক্ষকেরা বলছেন সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে এমন সম্ভাবনাকে বাদ রাখা যাবে না।
মলদ্বীপের বিরোধী নেতারা তখন সাবমেরিন ঘাঁটির জন্য একটি বিধানসহ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সম্ভাব্য সামরিক প্রয়োগ সম্পর্কে আপত্তি প্রকাশ করেছিলেন।
এদিকে, ভারতের হাইড্রোগ্রাফিক কার্যকলাপ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের একটি রূপ বলে মলদ্বীপের আশঙ্কা রয়েছে। এর উদ্বেগগুলি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন নয়, তবে তার কারণ এই নয় যে মলদ্বীপের জলসীমায় ভারতীয় কার্যকলাপ সন্দেহজনক, কারণ হল হাইড্রোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণকারী আইন বা আইনি কাঠামো সামরিক সমীক্ষা পরিচালনার নিয়ম থেকে আলাদা নয়। ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অফ দ্য লজ অফ দ্য সিজ (ইউএনক্লস) একটি উপকূলীয় রাষ্ট্রকে তার আঞ্চলিক সমুদ্রের বাইরে পরিচালিত জলভাগ জরিপ বা সামরিক সমীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য স্পষ্টভাবে অনুমোদন দেয় না; একটি উপকূলীয় রাষ্ট্র শুধুমাত্র তার ইইজেড–এ সামুদ্রিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অর্থাৎ, হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ পরিচালনাকারী বিদেশী সামুদ্রিক সংস্থাগুলি উপকূলীয় রাষ্ট্রের আঞ্চলিক জলসীমার বাইরে সমুদ্রের মানচিত্রায়ন করতেই পারে। এই সম্ভাবনাই মালে সমস্যাযুক্ত বলে মনে করে।
সমস্যাটি আরও ভালভাবে বোঝা যায় যদি কেউ বিবেচনা করেন যে হাইড্রোগ্রাফির লক্ষ্য জ্ঞানের খাতিরে টোপোগ্রাফি ও জিওফিজিক্যাল প্রক্রিয়া সম্পর্কে ডেটা সংগ্রহ করা নয়। পরিবর্তে, এটি একটি নির্দিষ্ট চাহিদা পূরণ করে, যা হয় সামুদ্রিক পরিবেশবিদ, বিজ্ঞানী বা সামুদ্রিক শিল্পের তরফ থেকে আসতে পারে, অথবা সামরিক কৌশলবিদ ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিকল্পনাবিদদের কাছ থেকে। এটি এই বাস্তবতাকে পরিবর্তন করে না যে অনেক নৌবাহিনীর, বিশেষ করে আইএন–এর, তাদের প্রতিবেশে হাইড্রোগ্রাফিক সমীক্ষার একটি দৃষ্টান্তমূলক ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে। আইএন ১৯৯০ সাল থেকে মরিশাসকে হাইড্রোগ্রাফিক সহায়তা প্রদান করেছে, বিশাল মরিশিয়ান ইইজেডের তালিকা তৈরি করেছে, এবং সক্ষমতা তৈরিতে সহায়তা করেছে, এমনকি মরিশিয়ান হাইড্রোগ্রাফারদের মধ্যে দক্ষতা বিকাশের জন্য একটি হাইড্রোগ্রাফিক ইউনিট স্থাপনেও সহায়তা করেছে।
মলদ্বীপ ভারতের সামুদ্রিক সহায়তার রেকর্ডের দিকে নজর রাখবে। আঞ্চলিক সংকটের সময় আইএন একটি স্বীকৃত প্রথম প্রতিক্রিয়া শক্তি, এবং দক্ষিণ এশিয়ার অনেক রাষ্ট্রের জন্য একটি সুবিধাজনক নিরাপত্তা অংশীদার। মালের জানা উচিত যে সামুদ্রিক সচেতনতা ও নিরাপত্তা বাড়ানোর সর্বোত্তম বাজি এখনও ভারতের সঙ্গে একটি অংশীদারিত্ব। বেজিংয়ের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতার জন্য প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর আগ্রহ স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক গণনা দ্বারা চালিত। তাঁর জানা উচিত যে ভারত নয়, চিন সমুদ্র সমীক্ষাকে অস্ত্র করতে চায়। সমুদ্রের কাছাকাছি মলদ্বীপে চিনা সামরিক ও অ–সামরিক উপস্থিতির বিরূপ পরিণতি মালের জন্য মারাত্মক হতে পারে।
অভিজিৎ সিং অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন–এর মেরিটাইম পলিসি ইনিশিয়েটিভ–এর প্রধান
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.