চারটি নির্বাচনে ছ’জন প্রেসিডেন্টের জিতে আসা এবং তাঁদের মধ্যে একজনেরও দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় না-ফেরা আবারও প্রমাণ করেছে যে, গণতন্ত্রের সঙ্গে মলদ্বীপের দেড় দশকের সম্পর্ককে সহজে নষ্ট করা সম্ভব নয়। ক্ষমতাসীন শক্তি-বিরোধী মনোভাব অক্ষুণ্ণ রেখে ভোটাররা এই শক্তিশালী বার্তা দিয়েছেন যে, তাঁরাই তাঁদের ভাগ্যের নির্ধারক এবং তাঁরা ভোটের প্রাক্কালে ইশতেহার, উপঢৌকন এবং প্রতিশ্রুতি দ্বারা প্রভাবিত হন না, বিশেষ করে যখন তা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং নৈতিকতার ধারণার বিরুদ্ধে যায়। গত মাসে দুই পর্যায়ের প্রেসি্ডেন্ট নির্বাচনের সময় এই বার্তাটিই পুনরাবৃত্ত হয়েছে, যেখানে বিরোধী দল পিপিএম-পিএনসি জোটের মালে সিটির মেয়র ৪৫ বছর বয়সি ডাঃ মোহাম্মদ মুইজ্জু ক্ষমতাসীন মলদ্বীপ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এমডিপি) ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলি-কে উল্লেখযোগ্য ব্যবধানে পরাজিত করেছেন।
এমনটা করতে গিয়ে ভোটাররা জেলে বন্দি বিরোধী দলনেতা ও পূর্বতন প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিনের অতীতের দুর্নীতি সংক্রান্ত সোলি সরকারের ধারণা এবং প্রচারের বিরুদ্ধে হেঁটে নিজস্ব মত বেছে নিয়েছেন। যাই হোক, অন্য যে বিষয়টি একই সঙ্গে প্রশংসনীয়, তা হল নতুন প্রেসিডেন্টের হাতে মসৃণভাবে ক্ষমতা তুলে দেওয়া, যেমনটা নির্বাচন-পরবর্তী প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে সোলি-র হস্তান্তর বিবৃতি থেকেই স্পষ্ট। সংবিধান অনুসারে, মুইজ্জু আগামী ১৭ নভেম্বর পার্লামেন্টে শপথ গ্রহণ করবেন এবং উভয় পক্ষই অতীতের মতো রূপরেখা নির্ধারণের জন্য ‘ট্রানজিশন টিম’ বেছে নিয়েছেন। সোলি তাঁর দেশ ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জল্পনায় জল ঢেলে বলেছেন যে, তিনি এমডিপি-কে সশক্ত করার প্রয়াসে কাজ করলেও ফের প্রার্থী হতে চাইবেন না। বিশেষ করে জোর দিয়ে বলেন যে, তাঁর সরকারের প্রতিটি কাজের জন্য তিনি দায় নিতে প্রস্তুত।
এই প্রেক্ষিতে সোলি বলেছিলেন যে, এমডিপি-তে দলের চেয়ে কোনও ব্যক্তিই বড় নয়, যা আসলে ছিল তাঁর একদা-বন্ধু এবং পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ নাশিদের বক্তব্যের একটি পরোক্ষ প্রতিক্রিয়া। নাশিদ এমডিপি থেকে বেরিয়ে গিয়ে ডেমোক্র্যাট দল গঠন করার পরে ফের নিজের থেকেই মূল এমডিপি-তে যোগদানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
মুইজ্জু অতীতের মতভেদকে দূরে রেখে ঐক্য এবং দেশকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আশা করেছিলেন যে, প্রতিশ্রুতি মাফিক এবং নতুন প্রশাসনকে দায়বদ্ধ করে এমডিপি একটি ‘দায়িত্বশীল বিরোধী দল’ হিসাবে কাজ করবে। তিনি কেবল ইয়ামিনের মুখপাত্র হিসেবেই কাজ করবেন, এমন গুজব খারিজ করে মুইজ্জু বলেন যে, ‘আমার উপর কারও কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।’ এই প্রেক্ষিতে সোলি বলেছিলেন যে, এমডিপি-তে দলের চেয়ে কোনও ব্যক্তিই বড় নয়, যা আসলে ছিল তাঁর একদা-বন্ধু এবং পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ নাশিদের বক্তব্যের একটি পরোক্ষ প্রতিক্রিয়া। নাশিদ এমডিপি থেকে বেরিয়ে গিয়ে ডেমোক্র্যাট দল গঠন করার পরে ফের মূল এমডিপি-তে যোগদানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ডেমোক্র্যাটরা ৯ সেপ্টেম্বর দুই পর্যায়ের নির্বাচনের প্রথম পর্যায়টিতে দূরবর্তী হলেও সম্ভাব্য নির্ণায়ক তৃতীয় স্থানে আসীন হয়েছে এবং তুলনামূলক ভাবে ৭.৫ শতাংশ কম ভোট পেয়েছে। সোলি বলেছিলেন যে, এমডিপি-র ৯৯ শতাংশ সদস্যই নাশিদের পুনঃপ্রবেশের বিরোধিতা করেছেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে সোলি প্রশাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনের বিরুদ্ধে তাঁর অব্যাহত বিরোধিতার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন, যার জন্য নাশিদ নির্বাচন কমিশনে (ইসি) একটি পার্লামেন্টারি প্রস্তাব পাঠাতে পেরেছিলেন। সোলি গণমাধ্যমকে বলেন যে, জনাদেশ মোতাবেক নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের একটি সুযোগ প্রাপ্য। ২০০৮ সালে বর্তমান গণতান্ত্রিক সংবিধানের জন্মের আগে নাশিদ যে ‘পার্লামেন্টারি স্কিমে’র প্রস্তাব করেছিলেন তা রূপায়িত হলে প্রেসিডেন্ট সেই সুযোগ হারাবেন। এই প্রশ্নটির প্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষ এক বছর আগে প্রেসিডেন্সিয়াল সিস্টেম অব্যাহত রাখার পক্ষে ৬২-৩৮ শতাংশ অনুপাতে মতদান করেন।
সোলি গণমাধ্যমকে বলেন যে, জনাদেশ মোতাবেক নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের একটি সুযোগ প্রাপ্য। ২০০৮ সালে বর্তমান গণতান্ত্রিক সংবিধানের জন্মের আগে নাশিদ যে ‘পার্লামেন্টারি স্কিমে’র প্রস্তাব করেছিলেন তা রূপায়িত হলে প্রেসিডেন্ট সেই সুযোগ হারাবেন।
ইসি ২৯ অক্টোবর গণভোট নির্ধারণ করেছে এবং পার্লামেন্ট এখনও গণভোটের প্রেক্ষিতে ইসি-র অনুরোধে সাড়া দেয়নি। সর্বোপরি মুইজ্জু এবং তাঁর জোট প্রেসিডেন্সিয়াল সিস্টেমের পক্ষাবলম্বন করেছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় দু’টি দল পার্লামেন্টারি স্কিমে যে কোনও রকমের রূপান্তরকেই প্রত্যাখ্যান করার সঙ্গে সঙ্গে নাশিদের দল জনগণের কাছে পার্লামেন্টারি স্কিমের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে সচেতনতা প্রচারের সময় পাওয়ার জন্য গণভোট পিছিয়ে দিতে মজলিসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
ঐতিহাসিক জয়
মুইজ্জুর জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক জয়। দলের মাথা ইয়ামিনকে একরকম অগ্রাহ্য করেই আক্ষরিক অর্থে অন্তিম পর্যায়ে ময়দানে প্রবেশ করে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পিএইচ ডি-ধারী ৪৫ বছর বয়সি মুইজ্জুর হাতে নির্বাচনী প্রচারের জন্য মাত্র তিন সপ্তাহ সময়ই ছিল, যেখানে ক্ষমতাসীনদের হাতে ছিল পুরো পাঁচটি বছর। অপর ছয় প্রার্থীর কাছে প্রথম পর্যায়ের প্রচারের জন্য মাস থেকে বছর পর্যন্ত অনেক বেশি সময় থাকা সত্ত্বেও সকলেই পরাজিত হন।
কারাগার থেকেই ইয়ামিন চেয়েছিলেন যে, সুপ্রিম কোর্ট কারাগার থেকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়ে ইসি-র বাধাকে বহাল রাখার পরে জোটটি নির্বাচন বর্জন করবে (অথবা প্রযোজ্য হলে তাঁর কারাবাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন বছর পর্যন্ত)। একটি পর্যায়ে মনে হয়েছিল, প্রোগ্রেসিভ ন্যাশনাল কংগ্রেস-এর (পিএনসি) নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মুইজ্জু একাই লড়াই করবেন। ইয়ামিন প্রেসিডেন্ট পদ হারানোর পর পিএনসি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং পিএনসি-ই একতরফা ভাবে মুইজ্জুকে তাদের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত করে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং ইয়ামিনের বিচ্ছিন্ন সৎভাই মামুন আব্দুল গাইয়ুম প্রতিষ্ঠিত প্রোগ্রেসিভ পার্টি অব মলদ্বীপ-এর (পিপিএম) উত্তরাধিকার ইয়ামিনের উপর বর্তায় এবং গাইয়ুম অনেক দেরিতে হলেও প্রার্থী হিসেবে ইয়ামিনকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।
২০২৩ সালের নির্বাচন দর্শিয়েছে যে, মুইজ্জু সম্ভবত এই ভোটারদের অনেকাংশকেই ধরে রাখতে পারেন এবং দুই পর্যায়ে যখন ক্ষমতাশীলরা সর্বদাই পরাজয়ের সম্মুখীন হচ্ছিলেন, তখন নীরব ভাবে ক্ষমতা-বিরোধিতা দিয়ে শুরু করলেও এবং প্রথম পর্যায়ে কম ভোট পেলেও মুইজ্জু আখেরে জয় লাভ করতে পারেন।
ইয়ামিন এখনও ২০১৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে তাঁর স্বতন্ত্র ৪২ শতাংশ ‘রক্ষণশীল’ ভোটের বেশির ভাগই হাতে রাখলেও সোলি সাধারণ বিরোধী প্রার্থী হিসাবে সর্বকালের সর্বোচ্চ ৫৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। ২০২৩ সালের নির্বাচন দর্শিয়েছে যে, মুইজ্জু সম্ভবত এই ভোটারদের অনেকাংশকেই ধরে রাখতে পারেন এবং দুই পর্যায়ে যখন ক্ষমতাশীলরা সর্বদাই পরাজয়ের সম্মুখীন হচ্ছিলেন, তখন নীরব ভাবে ক্ষমতা-বিরোধিতা দিয়ে শুরু করলেও এবং প্রথম পর্যায়ে কম ভোট পেলেও মুইজ্জু আখেরে জয় লাভ করতে পারেন। এর মধ্যে নতুন ও পুরনো মিলিয়ে সেই ভোট, যা সোলির বিরুদ্ধে জোটের পক্ষে গিয়েছে; সেই সকল ব্যক্তি, যাঁরা প্রথম অথবা দ্বিতীয় পর্যায়ে সোলির বিরোধিতা করেছেন এবং অবশ্যই দলছুট এবং প্রথম পর্যায়ের পরে দ্বিতীয় পর্যায়ে আশানুরূপ ভাবে লড়াই না করা ডেমোক্র্যাট দলের ইলিয়াস হাবিবের প্রাপ্ত ৭.৫ শতাংশ ভোট… সব ভোটই মুইজ্জুর পক্ষে গিয়েছে।
কথা মতো কাজ
ইয়ামিনের আবেদন সপ্তাহের পর সপ্তাহ বিচারাধীন থাকার পরে ইয়ামিনকে ‘গৃহবন্দি’ হিসেবে স্থানান্তরিত করার জন্য ব্যক্তিগত ও প্রকাশ্য অনুরোধের মাধ্যমে মুইজ্জু তাঁর ভোট-পরবর্তী রাজনীতি শুরু করেন। সোলি তাঁর উত্তরসূরির প্রস্তাব মেনে নিতে দ্বিধা করেননি এবং বলেন যে, জনমতকে সম্মান জানিয়ে ‘জাতীয় স্বার্থে’ তিনি এমনটা করতে প্রস্তুত। সমগ্র প্রচার জুড়েই মুইজ্জু পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন যে, ইয়ামিনের জন্য ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করা প্রেসিডেন্ট হিসাবে তাঁর প্রথম কাজ হবে। ইয়ামিনের আইনি দল নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে তাঁর স্বাধীনতার দাবি জানালে মুইজ্জু তাঁর বিজয় সমাবেশে রাস্তায় না নেমে বিষয়টির জন্য সময় দিতে অনুরোধ করেন।
ইয়ামিনের অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং আন্তঃ-দলীয় সম্পর্ক থেকে শুরু করে এবং দায়িত্ব গ্রহণের পরে নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর ক্রম-অভিযোজিত সম্পর্ক ও বিদেশনীতির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। মলদ্বীপের নিকটতম এবং বৃহত্তম প্রতিবেশী ভারত সোলি-ইয়ামিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভ্যন্তরীণ টানাপড়েনের শিকার হয়, যা বিগত বছরগুলিতে পিপিএম-পিএনসি জোটের যৌথ ‘ইন্ডিয়া আউট / ইন্ডিয়া মিলিটারি আউট’ প্রচারাভিযানে পরিণত হয়েছিল।
ইয়ামিনের আইনি দল নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে তাঁর স্বাধীনতার দাবি জানালে মুইজ্জু তাঁর বিজয় সমাবেশে রাস্তায় না নেমে বিষয়টির জন্য সময় দিতে অনুরোধ করেন।
প্রেসিডেন্ট হিসাবে ইয়ামিন ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ বিদেশনীতির প্রণয়ন করেন এবং দু’টি দেশের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় পিপিএম-পিএনসি জোটের অধীনে প্রথমে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রবণতার পরিবর্তন ঠেকানো ও পরে সেই প্রবণতার অভিমুখ বদল। তাঁর প্রচারাভিযানের সময় মুইজ্জুও দেশের ‘স্বাধীনতা’ এবং বিদেশী সৈন্য, বিশেষ করে ভারতীয় সামরিক উপস্থিতির অপসারণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিলেন। বিজয় সমাবেশে মুইজ্জু প্রথম বারের মতো ভারতের নাম উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি ‘রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ে’ এ বিষয়ে কথা বলবেন এবং অফিসে তাঁর প্রথম কাজের দিনেই প্রক্রিয়াটির সূচনা করবেন।
নির্বাচন-পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট সোলি পুনর্ব্যক্ত করেন যে, তাঁর সরকার ‘কোনও একটি দেশের উপর নির্ভর করেনি’। একই সঙ্গে তিনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য কোনও ক্ষমা প্রার্থনা করেননি এবং তাঁর শাসনকালে নয়াদিল্লি থেকে প্রাপ্ত সব সহায়তার প্রশংসাও করেছিলেন।
সময় দ্বারা পরীক্ষিত সম্পর্ক
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অতীতের মতোই মুইজ্জুকে অভিনন্দন জানানোর নিরিখে প্রথম বিদেশি নেতা হয়ে উঠেছেন। তিনি সামাজিক গণমাধ্যমে একটি পোস্টে বলেন, ‘ভারত সময় দ্বারা পরীক্ষিত ভারত-মলদ্বীপের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে আমাদের সামগ্রিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এ কথা সত্যি যে, দেশ হিসেবে মলদ্বীপ ও ভারতের মধ্যে না হলেও একটি দেশের নির্বাচিত নেতৃত্ব এবং অন্য দেশে অব্যাহত প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মধ্যে কিছু সমস্যা বিদ্যমান। প্রতিবেশী প্রায় প্রতিটি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে ভারতের সমীকরণের এই অসামঞ্জস্যতা (অবশ্যই পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান ব্যতীত) সমাধান করা দরকার। কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় নয়াদিল্লির দ্বিপাক্ষিক সমীকরণগুলি এখন চিনের সঙ্গে সাম্প্রতিক সম্পর্কের প্রেক্ষিতে নির্ধারিত হচ্ছে, যেমনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঠান্ডা লড়াইয়ের যুগে দেখা গিয়েছিল। তবে চিনের ক্ষেত্রে ভারতের জন্য হুমকি অনেক বেশি বাস্তব।
মুইজ্জুর চিন সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা ইয়ামিনের অধীনে পূর্ত ও আবাসনমন্ত্রী থাকাকালীন চিন দ্বারা অর্থায়িত মালে-হুলহুলে সমুদ্র সেতু এবং দেশটির তৎকালীন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো প্রকল্পের মধ্যেই সীমিত।
এটি মলদ্বীপের ক্ষেত্রেও একই রকম, বিশেষ করে যখন ‘চিনপন্থী’ ইয়ামিন ক্ষমতায় ছিলেন। মুইজ্জুর চিন সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা ইয়ামিনের অধীনে পূর্ত ও আবাসনমন্ত্রী থাকাকালীন চিন দ্বারা অর্থায়িত মালে-হুলহুলে সমুদ্র সেতু এবং দেশটির তৎকালীন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো প্রকল্পের মধ্যেই সীমিত। তা সত্ত্বেও ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ তাঁকে ‘চিনপন্থী’ (অতএব ‘ভারত-বিরোধী’?) হিসাবে তুলে ধরেছে। নব-নির্বাচিত নেতাকে এই বিষয়ের উপর কাজ করতে হবে। তিনি কী করবেন, কী ভাবে করবেন এবং কার সহায়তায় করবেন, তা-ই আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতের – এমনকি সব রাজনৈতিক দল এবং নেতৃত্ব আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে পার্লামেন্ট নির্বাচনের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও – সঙ্গে দেশটির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিপথ নির্ধারণ করবে।
নতুন মুইজ্জু সরকারকে হাউসে মুইজ্জুর উদ্বোধনী ভাষণ নিয়ে বিতর্ক সামলানো ছাড়াও এমডিপি-নিয়ন্ত্রিত পার্লামেন্ট বা পিপলস মজলিস গড়ে তুলতে হবে, নতুন মন্ত্রিসভা অনুমোদন করাতে হবে এবং ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ২০২৪-এর অর্থবর্ষের জন্য নতুন সরকারের বাজেট পাস করতে হবে, যা আসন্ন মাস এবং বছরগুলিতে দ্বীপদেশটির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের সুর বেঁধে দেবে।
এন সত্য মূর্তি চেন্নাইভিত্তিক নীতি বিশ্লেষক এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকার।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.