Author : Sayantan Haldar

Published on Dec 16, 2024 Updated 0 Hours ago

মালাবার অনুশীলন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি অনুকূল সামুদ্রিক নিরাপত্তা পরিবেশ গড়ে তোলার যৌথ প্রচেষ্টায় কোয়াড দেশগুলির মধ্যে ক্রমবর্ধমান সমন্বয়ের প্রতীক।

মালাবার মহড়া: কোয়াড দেশগুলির মধ্যে সমন্বয়কে শক্তিশালী করা

ভারত এই বছরের মালাবার নৌ-‌মহড়ার আয়োজন করেছিল ভারতের বিশাখাপত্তনমে, যা ছিল ইস্টার্ন নেভাল কমান্ডের তত্ত্বাবধানে চারটি কোয়াড দেশের — মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারত — একটি যৌথ মহড়া। এই বছরের মহড়া ছিল দুটি ধাপে পরিচালিত, হারবার এবং সাগর, এবং এতে চারটি কোয়াড দেশই অংশগ্রহণ করেছিল। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক নৌ-‌সহযোগিতা হিসাবে ১৯৯২ সালে মহড়ার সূচনা হলেও, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান যোগ দেওয়ায় এটি আরও আকর্ষক হয়ে ওঠে। এর আগে, মহড়ায় কানাডা ও সিঙ্গাপুরের অংশগ্রহণও দেখা গিয়েছিল। ভূ-রাজনৈতিক ও কৌশলগত বাধ্যবাধকতার কারণে ২০১০-এর দশকে জাপান ও অস্ট্রেলিয়া মহড়া থেকে সরে যায়। জাপান ২০১৪ সালে মহড়ায় ফিরে এলেও অস্ট্রেলিয়া ২০২০ সালে আবার অনুশীলনে যোগ দেয়।


ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের সামুদ্রিক অভিযানগুলি এই অঞ্চলের নিয়ম-ভিত্তিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করেছে, যার ফলে একটি মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রবক্তা ও তাদের সমমনস্ক অংশীদারদের মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।



২০২০ সাল থেকে, সব কোয়াড দেশের অংশগ্রহণে মালাবার মহড়া বার্ষিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণভাবে, অনুশীলনটি কোয়াড–এর অংশ হিসাবে  পরিচালিত হয় না, স্বাধীনভাবে অনুষ্ঠিত হয়। যাই হোক, এই মহড়ার প্রতি সদস্য দেশগুলির ধারাবাহিকতা ও দায়বদ্ধতা কোয়াড দেশগুলির মধ্যে ক্রমবর্ধমান সমন্বয়ের প্রতীক৷ ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা গত এক দশকে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে
চিনের সামুদ্রিক অভিযানগুলি এই অঞ্চলের নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করেছে, যার ফলে একটি মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রবক্তা ও তাদের সমমনস্ক অংশীদারদের মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এর ফলে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনা দুঃসাহসিকতার দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন রূপরেখার উদ্ভব হয়েছে। অওকাস, স্কোয়াড — অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ফিলিপিন্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত একটি গোষ্ঠী — বা এমনকি কোয়াডকেও ব্যাপকভাবে চিনের প্রতিক্রিয়া হিসাবে দেখা হয়। যাই হোক, কোয়াড নিজেকে 'চিনবিরোধী ক্লাব' হিসাবে তুলে ধরতে অনিচ্ছুক। ফলে এটি চিনের প্রতি কৌশলগত দৃঢ়তা দেখাতে না-‌পারার জন্য সংশয়বাদীদের কাছ থেকে সমালোচিত হয়েছে।

কোয়াড যখন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভাগ করা সুযোগের উপর জোর দিয়ে চলেছে, তখন মালাবার মহড়ার মাধ্যমে কোয়াড সদস্য-রাষ্ট্রগুলির নৌবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা ও আন্তঃকার্যক্ষমতা জোরদার করার একটি সমান্তরাল ব্যবস্থা চলছে। চিত্তাকর্ষক বিষয় হল, মালাবার মহড়া প্রতি বছর ইন্দো-প্যাসিফিক জুড়ে বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে পরিচালিত হয়েছে। এ বছর বঙ্গোপসাগরে মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূর্ববর্তী সংস্করণগুলি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর, পূর্ব চিন সাগর, ফিলিপিন সাগর, আরব সাগর ইত্যাদিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। চারটি দেশের নৌবাহিনীর এই বিস্তৃত ভৌগোলিক  অঞ্চলে প্রসার নির্দেশ করে যেখানে তাদের সমন্বয় কার্যকর হচ্ছে সেই পুরো এলাকায় উপস্থিতি তাদের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

কেন এই ধরনের নৌ-‌মহড়া গুরুত্বপূর্ণ?

সামুদ্রিক নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিসর যেখানে দেশগুলি ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা চাইছে। কোয়াডের মাধ্যমে চারটি দেশ সামুদ্রিক নিরাপত্তার নির্দিষ্ট ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতা প্রসারিত করার চেষ্টা করেছে — প্রাথমিকভাবে মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ত্রাণ (এইচএডিআর) কার্যক্রমের মাধ্যমে। সম্প্রতি সমাপ্ত কোয়াড নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে গোষ্ঠীটি কোস্টগার্ড-স্তরের সমন্বয় এবং এইচএডিআর কার্যক্রমে সহযোগিতার প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করার জন্য কোয়াড-অ্যাট-সি শিপ অবজারভার মিশন এবং কোয়াড ইন্দো-প্যাসিফিক লজিস্টিক নেটওয়ার্ক চালু করেছে, যেমনটি ঐতিহাসিক
উইলমিংটন ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি কোয়াড দেশগুলি আন্তঃকার্যক্ষমতা ও নৌ সহযোগিতা বাড়াচ্ছে। অ্যাডমিরাল স্টিভ কোহেলারের একটি বিবৃতি অনুযায়ী, মালাবার মহড়া শুধুমাত্র ইন্দো-প্যাসিফিকের একটি মূল্যবোধ-ভিত্তিক শৃঙ্খলার জন্য ভাগ করা অঙ্গীকারকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করে না, বরং সংঘর্ষকেও রোধ করে। এটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনা দুঃসাহসিকতার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধ এগিয়ে নিয়ে যেতে কোয়াড দেশগুলির মধ্যে ভাগ করা সমন্বয়ের পরামর্শ দেয়।


কোয়াড সদস্য রাষ্ট্রগুলির সূক্ষ্মতা ও পরিপক্বতা এই ঘটনার মধ্যে নিহিত যে তারা সামুদ্রিক নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য একটি সমান্তরাল ফোরাম বা প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে।



যদিও মালাবার মহড়া স্পষ্টভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনা কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে একটি শক্তি হিসাবে নিজেকে সংজ্ঞায়িত করে না, তবে একটু গভীরে গিয়ে দেখলে তা স্পষ্ট বোঝা যায়। এখানেই এই অনুশীলনের গুরুত্ব। তৎপর্যপূর্ণভাবে, সামুদ্রিক নিরাপত্তা সহযোগিতার আগে প্রায়শই রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হয়। কোয়াড সদস্য রাষ্ট্রগুলির সূক্ষ্মতা ও পরিপক্বতা এই ঘটনার মধ্যে নিহিত যে তারা সামুদ্রিক নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য একটি সমান্তরাল ফোরাম বা প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে। বছরের পর বছর ধরে, মালাবার নৌ-‌মহড়া বিস্তৃত ইন্দো-প্যাসিফিকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ পেরিয়েছে। আন্তঃকার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা জোরদার করার পাশাপাশি, এটি একটি রাজনৈতিক বার্তাও দিয়েছে যে কোয়াড দেশগুলি সামুদ্রিক নিরাপত্তা প্রচেষ্টার লক্ষ্যে সক্রিয় সম্পৃক্ততা ও সহযোগিতা চাইছে।

বৃহত্তর উপলব্ধিটি হল, মালাবার মহড়াটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি অনুকূল সামুদ্রিক নিরাপত্তা পরিবেশ তৈরির দিকে যৌথ প্রচেষ্টায় কোয়াড দেশগুলির মধ্যে ক্রমবর্ধমান সমন্বয়ের প্রতীক বলে মনে হচ্ছে। এটি পর্যায়ক্রমে চলছে বলে মনে হচ্ছে, যেখানে এই অনুশীলনের মাধ্যমে কোয়াড দেশগুলি যৌথ মহড়া পরিচালনা করছে, এবং এই দেশগুলির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চলে আন্তঃকার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। এটি তিনটি আন্তঃসম্পর্কিত উদ্দেশ্য পূরণ করতে চায়। প্রথমত, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যে কোনও শক্তির একতরফা পদক্ষেপ রোধ করতে কোয়াড দেশগুলির মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতার প্রচেষ্টা দৃশ্যমান। দ্বিতীয়ত, সহযোগিতার সমান্তরাল ট্র্যাক বেছে নিয়ে কোয়াড দেশগুলি কারও বিরুদ্ধে পরিচালিত হওয়ার পরিবর্তে ভাগ করা সুযোগগুলিকে কাজে লাগাতে কোয়াডের
ইতিবাচক অ্যাজেন্ডা ধরে রাখতে সাহায্য করে। তৃতীয়ত, এটি কোয়াড দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতায় একটি শক্তিশালী সামুদ্রিক নিরাপত্তা মাত্রা যোগ করে কোয়াডের সমালোচকদের মোকাবিলা করতে সহায়তা করে। এটি আসলে, কোয়াড দেশগুলির কৌশলগত বাধ্যবাধকতার জটিলতার কারণে সহযোগিতার একটি সহায়ক ব্যবস্থা।


মালাবার মহড়া ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে উদ্ভাসিত সামগ্রিক ভূ-রাজনৈতিক ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা ‌কাঠামোর একটি ক্রমাঙ্কিত প্রতিক্রিয়া উপস্থাপন করে।



ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্রমঅবনতিশীল নিরাপত্তা পরিবেশের মধ্যে মালাবার নৌ-‌মহড়া এই অঞ্চলে চিনের ক্রমবর্ধমান দুঃসাহসিকতা রোধ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা। যেহেতু ইন্দো-প্যাসিফিক মঞ্চের বেশ কয়েকটি মূল অঞ্চল চিনা একতরফা পদক্ষেপ এবং দেশটির নিয়ম-ভিত্তিক আদেশ উপেক্ষা করার কারণে কৌশলগত ও সুরক্ষা সংঘাতবিন্দু হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, তাই এই জাতীয় অনুশীলনগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মালাবার মহড়া ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে উদ্ভাসিত সামগ্রিক ভূ-রাজনৈতিক ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা ‌কাঠামোর একটি ক্রমাঙ্কিত প্রতিক্রিয়া উপস্থাপন করে। যাই হোক, মনে হচ্ছে মহড়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হল গোষ্ঠীটির ইতিবাচক অ্যাজেন্ডা ধরে রেখে সামুদ্রিক নিরাপত্তা প্রচেষ্টায় কোয়াড দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে এর সাফল্য। এর মধ্যে মহড়াটি কোয়াড দেশগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান সমন্বয়ের প্রতীক।



সায়ন্তন হালদার ওআরএফ-‌এর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের একজন গবেষণা সহকারী।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Sayantan Haldar

Sayantan Haldar

Sayantan Haldar is a Research Assistant at ORF’s Strategic Studies Programme. At ORF, Sayantan’s research focuses on Maritime Studies. He is interested in questions of ...

Read More +