Author : Harsh V. Pant

Published on May 29, 2023 Updated 0 Hours ago

চিনের উত্থানের নেতিবাচক বাহ্যিক প্রভাব মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে ফ্রান্স কতটা আন্তরিক তা নিয়ে ম্যাক্রোঁ সন্দেহের উদ্রেক করেছেন।

ম্যাক্রোঁর চিনের প্রতি বিশৃঙ্খল দৃষ্টিভঙ্গি

ঠিক যখন মনে হচ্ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন শেষপর্যন্ত একটি বিশ্বব্যাপী ভূ–রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে কৌশলগত সমন্বয় অর্জন করছে, তখনই ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সাম্প্রতিক চিন সফর সেই ধারণাকে ভেঙে দিয়েছে।

যখন বিশ্বের বড় শক্তিগুলির মধ্যে চ্যুতিরেখা স্পষ্টতর হচ্ছে, সেই সময় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডের লেইন এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে চিনে গিয়েছিলেন বেজিংয়ের সঙ্গে ঐক্যের মনোভাব তুলে ধরার আশায়। দুই নেতা  তাঁদের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে ক্রমবর্ধমানভাবে সমস্যাসঙ্কুল বাণিজ্য সম্পর্ক স্থিতিশীল করার পাশাপাশি ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে চিনকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। অন্য ইউরোপীয় নেতারাও, যেমন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ ও স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ, সাম্প্রতিক মাসগুলিতে চিনা নেতৃত্বের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

তবে ম্যাক্রোঁ অন্যদের ছাড়িয়ে গিয়েছেন, কারণ তিনি ‘‌তৃতীয় মহাশক্তি’‌ হিসাবে ইউরোপের ‘‌কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’‌–এর পক্ষে কথা বলেছেন। ম্যাক্রোঁ যুক্তি দেন যে ইউরোপ ‘‌বিরাট ঝুঁকির’‌ সম্মুখীন হবে যদি সে ‘এমন সঙ্কটে জড়িয়ে যায় যা‌ আমাদের নয় এবং যা তাকে তার কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন গড়ে তুলতে বাধা দেয়’‌। ম্যাক্রোঁ তাৎক্ষণিক বিতর্কের সৃষ্টি করেন এই পরামর্শ দিয়ে যে ইউরোপকে অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর তার নির্ভরতা কমাতে হবে, এবং তাইওয়ান নিয়ে চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া এড়াতে হবে। ম্যাক্রোঁ সওয়াল করেছিলেন, মার্কিন–চিন দ্বন্দ্বের যদি আরও অবনতি হয়, তাহলে ‘‌‘‌আমাদের [ইউরোপ] নিজস্ব কৌশলগত  স্বায়ত্তশাসনের অর্থায়ন করার সময় বা উপায় আমাদের থাকবে না, এবং আমরা অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ব, যেখানে আমরা কিনা [‌বিশ্ব ব্যবস্থায়] তৃতীয় মেরুতে পরিণত হতে পারি, যদি আমাদের হাতে তা বিকাশ করার জন্য কয়েক বছর সময় থাকে।’‌’‌

চিনা কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত গ্লোবাল টাইমস বলেছে যে মন্তব্যগুলি ‘‌স্পষ্টতই ম্যাক্রোঁর দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ ও চিন্তনের ফলাফল’‌, এবং তা এমন একটি পথের কথা বলে যা ‘‌আপেক্ষিকভাবে বিষয়গত, যুক্তিযুক্ত এবং ইউরোপের নিজস্ব স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ’‌।

যদিও ফন ডের লেইন চিনে গিয়েছিলেন ম্যাক্রোঁর আমন্ত্রণে, এই সফরটির মূল উচ্ছ্বাসের কেন্দ্র ছিল ম্যাক্রোঁর দৃষ্টিভঙ্গি এবং বেজিংয়ের স্পষ্ট উল্লাস যে ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্কের মধ্যে একটি বিভেদ তৈরি করা সত্যিই সম্ভব। ম্যাক্রোঁকে চিনে যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গে স্বাগত জানানো হয়, এবং তাঁর মন্তব্যগুলি ব্যাপক কভারেজ পেয়েছে। চিনা কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত গ্লোবাল টাইমস বলেছে যে মন্তব্যগুলি ‘‌স্পষ্টতই ম্যাক্রোঁর দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ ও চিন্তনের ফলাফল’‌, এবং তা এমন একটি পথের কথা বলে যা ‘‌আপেক্ষিকভাবে বিষয়গত, যুক্তিযুক্ত এবং ইউরোপের নিজস্ব স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ’‌।

ম্যাক্রোঁ এই সফরকে ইউক্রেনের যুদ্ধের বিষয়ে ‘অভিন্ন পন্থা সংহত করার’‌ প্রচেষ্টা এবং চিনকে বিষয়টির সঙ্গে তার সম্পর্কের মূল্য বুঝতে বাধ্য করার প্রয়াস হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তবে সফরের সময় বা পরে কীভাবে তা অর্জিত হল, তা মোটেই স্পষ্ট নয়। উরসুলা ফন ডের লেইন, যাঁকে চিনে মোটের উপর অবজ্ঞা করা হয়েছে, স্পষ্টভাবে ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ করার জন্য চিনের ১২ দফা পরিকল্পনার নিন্দা করেন এবং চিনের সঙ্গে ইউরোপের বাণিজ্য সম্পর্ক ‘‌ঝুঁকিমুক্ত’‌ করার প্রয়োজনের উপর জোর দেন।

কিন্তু ম্যাক্রোঁর হস্তক্ষেপ চারদিক থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ইউরোপীয়রা এটা স্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে ফরাসি নেতার অবস্থানের পক্ষে তেমন কোনও সমর্থন নেই। একটি বিবৃতিতে ইন্টার–পার্লামেন্টারি অ্যালায়েন্স অন চায়না বলেছে যে ম্যাক্রোঁর মন্তব্য ইউরোপীয় নেতৃত্বের অনুভূতির সঙ্গে ‘‌নিদারুণভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ’‌ এবং তিনি ইউরোপের মুখপাত্র নন। বিশেষ করে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের কর্মকর্তারা তাঁদের হতাশা ব্যক্ত করে ম্যাক্রোঁর নীতিসংক্রান্ত পছন্দের বিরোধিতায় সোচ্চার হয়েছেন।  পোলিশ প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি তাঁর ইউরোপীয় অংশীদারদের কাছে স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘‌‘‌মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন গড়ে তোলার পরিবর্তে আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারি প্রস্তাব করছি।’‌’‌ যে ইউরোপীয় দেশগুলি রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের মুখে প্রথম সারিতে রয়েছে, তারা আজকের চ্যালেঞ্জগুলিকে অস্তিত্বের সঙ্কট হিসাবে দেখে। রাষ্ট্রধারণার উপর ফরাসি দার্শনিক বিশ্লেষণের জন্য তাদের কোনও সময় নেই। যেহেতু ফ্রান্স ও জার্মানির কোনও উল্লেখযোগ্য সামরিক শক্তি নেই, তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর ইইউ–এর নির্ভরতা কৌশলগতভাবে বাধ্যতামূলক। ম্যাক্রোঁর অ–সময়োচিত মন্তব্যগুলি আবারও ‘‌পুরনো’‌ ও ‘‌নতুন’‌ ইউরোপের মধ্যে মতপার্থক্য তুলে ধরেছে, যদিও ‘পুরনো’‌ ইউরোপও ম্যাক্রোঁর বিশ্বদর্শনকে সমর্থন করেনি।

যেহেতু ফ্রান্স ও জার্মানির কোনও উল্লেখযোগ্য সামরিক শক্তি নেই, তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর ইইউ–এর নির্ভরতা কৌশলগতভাবে বাধ্যতামূলক।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়াও একইভাবে কঠোর হয়েছে। যদিও হোয়াইট হাউস এ কথাই বলেছে যে ‘‌ফ্রান্সের সঙ্গে আমাদের অসাধারণ সহযোগিতা ও সমন্বয়ের উপরেই আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে’‌, রিপাবলিকানরা কিন্তু বিতর্কের ঝড় তুলেছে। রিপাবলিকান সেনেটর মার্কো রুবিও আলঙ্কারিকভাবে বলেন যে, ম্যাক্রোঁর মন্তব্যের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি শুধু চিনকে প্রতিরোধ করার উপর তার বৈদেশিক নীতির দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ সামলানোর ভার ইউরোপের উপর ছেড়ে দেয়, তা হলে কী হবে। চিনা কমিউনিস্ট পার্টি সংক্রান্ত হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস–এর সিলেক্ট কমিটির রিপাবলিকান চেয়ারম্যান মাইক গ্যালাগারও ম্যাক্রোঁর মন্তব্যকে ‘বিব্রতকর’‌ এবং ‘‌অসম্মানজনক’‌ বলে বর্ণনা করেছেন। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিকভাবেই আরও বর্ণময়, ম্যাক্রোঁ ‘‌চিনে [শি’‌র] পশ্চাৎ চুম্বন করতে গিয়েই শেষ হয়ে গেছে।” ম্যাক্রোঁর অবস্থান ওয়াশিংটনের উদ্বেগের বিষয় হবে, কারণ সেগুলি সম্ভবত চিনকে উত্সাহিত করবে। এমনকি এটি ইউরোপীয় নিরাপত্তার জন্য আমেরিকার কতটা দায়বদ্ধ হওয়া উচিত সে সম্পর্কে বিতর্ককে পুনরুজ্জীবিত  করবে।

ম্যাক্রোঁ ফ্রান্সে প্রায় অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন, কারণ তাঁর অনুমোদনের রেটিং তলানিতে এসে ঠেকেছে, এবং তাঁর সরকার গত মাসে অনাস্থা ভোটে অল্পের জন্য বেঁচে গেছে। তাই ফরাসি রাজনীতিতে বহুকাল ধরে যা একটা বড় ইস্যু তা নিয়ে বিশ্বমঞ্চে সরব হওয়া সম্ভবত রাজনৈতিকভাবে তাঁর পক্ষে স্বাভাবিক। তিনি অতীতেও এমন বিতর্কিত কথা বলেছেন, যেমন ন্যাটোর ‘‌ব্রেন ডেথ’‌ হচ্ছে, এবং ইউক্রেন আক্রমণের কয়েক মাস পরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘‌নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’‌ দেওয়ার চেষ্টা করা। কিন্তু যখন পশ্চিমীরা অনেক কষ্টে চিনের সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি তুলে ধরার চেষ্টা করেছে, এবং যখন বিশেষ করে তাইওয়ানের বিরুদ্ধে চিনের আগ্রাসন স্পষ্ট, এবার সেই সময় এমন মন্তব্য করা হয়েছে যা প্রথমত সফরের উদ্দেশ্যের ঠিক বিপরীত। ঘটনাটি সংকল্পের অভাব তুলে ধরেছে, এবং এমন সুযোগ এনে দিয়েছে যার সদ্ব্যবহার করতে বেজিং খুবই আগ্রহী হবে। ইন্দো–প্যাসিফিকে ফ্রান্সের অংশীদারদের জন্য, চিনের উত্থানের নেতিবাচক বাহ্যিকতা্র প্রভাব মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে ফ্রান্স কতটা আন্তরিক তা নিয়ে ম্যাক্রোঁ সন্দেহের উদ্রেক করেছেন।


এই ভাষ্যটি প্রথম ‘ব্লুমবার্গ’-এ প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.