Published on Dec 17, 2024 Updated 0 Hours ago

কৌশলগত কার্যকরী ব্যর্থতাকে কৌশলগত বিজয়ে রূপান্তরিত করে তথ্যমূলক আক্রমণ মোকাবিলা করার জন্য ভারতকে পশ্চিমের বিশ্বাসযোগ্যতার ফাটলকে কাজে লাগাতে হবে

লড়াইয়ে পরাজয় হলেও যুদ্ধে যেন জয় আসেই: ভারতকে অবশ্যই পশ্চিমী বিশ্বাসযোগ্যতার ফাটলের উপর নজর রাখতে হবে

কানাডার প্রাইম মিনিস্টার জাস্টিন ট্রুডো খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদী হরদীপ সিং নিজ্জারকে হত্যার জন্য ভারতীয় গোয়েন্দাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার এক বছর পর অটোয়া ভারতের সঙ্গে সেই খুনের প্রমাণ ভাগ করে নেওয়ার বিষয়টি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। উপরন্তু, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খালিস্তানি নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার চেষ্টার বিরুদ্ধে তদন্তের অংশ হিসাবে একজন ভারতীয় কর্মকর্তা বিকাশ যাদবের নাম প্রকাশ্যে আনলে তা পর্যবেক্ষকদের যথেষ্ট আতঙ্কিত করেছে। এর ফলে রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (আরঅ্যান্ডএডব্লিউ বা র) দুর্বল মানের লেনদেনমূলক ক্ষমতা জনশক্তি ব্যবস্থাপনা এবং দায়বদ্ধতার অভাবের জন্য সমালোচনার মুখে পড়েছে এবং কেউ কেউ এই ঘটনাপ্রবাহকে সংস্থাটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় বলে অভিহিত করেছেন। এই নিবন্ধটিতে যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, এই ধরনের ভাষ্যগুলি অদূরদর্শী এবং তার পরিবর্তে বলা হয়েছে যে, ভারতীয় বুদ্ধিজীবী তাআন্তর্জাতিক শৃঙ্খলের তথ্যগত পরিসর ব্যবহার করে কৌশলগত কার্যকরী ব্যর্থতাকে কৌশলগত সাফল্যে রূপান্তরিত করা উচিত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খালিস্তানি নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার চেষ্টার বিরুদ্ধে তদন্তের অংশ হিসাবে একজন ভারতীয় কর্মকর্তা বিকাশ যাদবের নাম প্রকাশ্যে আনলে তা পর্যবেক্ষকদের যথেষ্ট আতঙ্কিত করেছে।

ইন্টেলিজেন্স অপারেশনাল বা গোয়েন্দামূলক কার্যকারিতার ব্যর্থতা অনিবার্য

র-এর বিরুদ্ধে সাধারণ সমালোচনা করা হয় যে, সংস্থাটির পুলিশি আধিপত্য এটিকে একটি অকার্যকর গোয়েন্দা সংস্থা করে তুলেছে, যেখানে গোপন অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় গুণগুলি পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যদি কেউ গোয়েন্দা তথ্যের উপর পুলিশ কর্মীদের উপযোগিতা চ্যালেঞ্জগুলি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চালায়, তবে অবশ্যই নীতিগত বিবেচনার যোগ্য আকর্ষ ফলাফল উঠে আসতে পারে। যাই হোক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অসফল অভিযানের কারণ হিসাবে এই বিষয়টির নিছক অনুমান বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, যদি পুলিশ আধিপত্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যর্থতার কারণ হয়, তা হলে একই সংস্থা দ্বারা পাকিস্তানে অসংখ্য সফল হত্যাকান্ডের ব্যাখ্যা কী (ধরে নেওয়া যাক, এই হত্যাকাণ্ডগুলির জন্য র দায়ী)? অতএব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যর্থতা সাংগঠনিক না হয়ে সম্পূর্ণ রূপে কার্যকর ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে। এই মুহূর্তের বাস্তবতা হল এই যে, উত্তর আমেরিকা সংস্থাটির জন্য নতুন কার্যকরী অঞ্চল হয়ে উঠেছে এবং ইতিহাস দর্শায় যে, সমস্ত গোয়েন্দা সংস্থাকেই একটি শিক্ষামূলক প্রক্রিয়া এবং নতুন কার্যকরী প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, যেখানে অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষার আগে প্রাথমিক ব্যর্থতার মুখোমুখি হতে হয়।

উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৮ সালে ইরায়েলি গোয়েন্দারা হামাস নেতা খালেদ মাশালকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। অভিযানটি স্পষ্টতই ব্যর্থ হয় এবং রায়েলি গুপ্তচররা জর্ডনের কর্তৃপক্ষের হাতে ধরা পড়ে, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। মাশাল পর্বটি  মোসাদের অভিযানমূলক দক্ষতা হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়, যা তখন সংস্থাটির সবচেয়ে বড় শক্তি হিসাবে মনে করা হতরনেন বার্গম্যান যেমন বলেছেন, এই মন্দার কারণ ছিল পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতেমোসাদের ব্যর্থতা। ইরানের প্রবেশ ঘটনাচক্রে উন্নততর এনক্রিপশন প্রযুক্তির দরুন মোসাদ একটি অভিনব পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল যা যে কোন আরব রাষ্ট্রের তুলনায় অনেক বেশি পরিশীলিত' ছিল’। এই ধরনের নতুন অভিযানের জন্য সময়, পরিকল্পনা, প্রস্তুতি আরও গুরুত্বপূর্ণ ভাবে যে কোনও ধাক্কা সহ্য করা ও সঠিক পাঠ নেওয়ার মতো স্থিতিস্থাপক ক্ষমতার প্রয়োজন।

র-এর বিরুদ্ধে উঠে আসা দ্বিতীয় সমালোচনাটি হল এই যে, সংস্থাটি অপরাধীদের অংশীদার হিসাবে ব্যবহার করে। এটি অভিযানমূলক এবং নৈতিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতের জন্য নতুন কিছু নয়। রাশিয়া, চিন এবং ইরানের মতো রাষ্ট্র হোক বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো গণতন্ত্রগোয়েন্দা সংস্থাগুলি গোয়েন্দা  এবং অভিযানমূলক ব্যবধান পূরণ করতে দীর্ঘদিন ধরে সংগঠিত অপরাধী গোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করে আসছে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন গোয়েন্দারা গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের জন্য অপরাধীদের ব্যবহার করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন গোয়েন্দা আন্ডারওয়ার্ল্ডের (কালো দুনিয়া বা মাফিয়া-বিশ্ব) মধ্যে যে জোটের আবির্ভাব ঘটেছিল, সেই সময় থেকে শুরু করে আমেরিকানরা কিউবা, আফগানিস্তান, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া লাতিন আমেরিকায় অভিযান চালানোর জন্য একাধিক ধরনের সংগঠিত অপরাধীদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করেছে। তাই দৃঢ় জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা নৈতিক বিবেচনা নির্বিশেষে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি অপরাধীদের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে, বিশেষ করে যদি সংস্থাটি নিজের অভিযানের উদ্দেশ্য পূরণ করতে চায় এবং সম্পদ দক্ষতা বজায় রাখতে চায়। ভারত এই অর্থে অনন্য নয় এবং বিশেষ করে সন্ত্রাস দমনের ক্ষেত্রে এ হেন অপরাধীদের সঙ্গে অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তাকে প্রতিস্থাপিত করার জন্য কোনও পদক্ষেপ করতেও দায়বদ্ধ নয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক ভারতীয় যাদবকে প্রত্যর্পণ করার জন্য ভারতের উপর মার্কিন চাপের পাল্টা হিসাবে তাহাউর হুসেন রানা ডেভিড হেডলি মার্কিন নিরাপত্তার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

তৃতীয় সমালোচনাটি বিকাশ যাদব সম্পর্কিত ঘটনাপ্রবাহের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। তাঁর চরিত্র এবং জীবনকাহিনি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা জনসাধারণের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। সত্য যা-ই হোক না কেন, ধারণা করা হচ্ছে যে, তাঁকে মার্কিনদের হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। যদি তা-ই হয়, তা হলে কর্মকর্তাদের এই ধরনের সুরক্ষা গোয়েন্দা জগতে অগ্রাধিকার ছাড়া সম্ভব নয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক ভারতীয় যাদবকে প্রত্যর্পণ করার জন্য ভারতের উপর মার্কিন চাপের পাল্টা হিসাবে তাহাউর হুসেন রানা ডেভিড  হেডলি মার্কিন নিরাপত্তার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। এই যুক্তিটি অকাট্য বলে মনে হলেও এ কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, যাদব ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা এবং রানা হেডলি মোটেও মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ছিলেন না। ১৯৯৫ সালের শেষের দিকে মুয়াম্মার গদ্দাফিকে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার পর এমআই৬-এর দুই আধিকারিক অর্থাৎ রিচার্ড বার্টলেট এবং ডেভিড ওয়াটসনের সুরক্ষার কথা উত্থাপন করা বরং আরও সঠিক তুলনা হবে। কঠোর ভাবে মিডিয়া সেন্সরশিপ করার পাশাপাশি এমআই৬ এই দুই আধিকারিকের নিরাপত্তা রক্ষা করে এসেছে এবং দুই কর্মকর্তাকে স্থানান্তর করেছে ও তাঁদের নতুন পরিচয় প্রদান করেছে। কাজেই অভিযানমূলক ব্যর্থতা থেকে শুরু করে অপরাধীদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব এবং ধরা পড়ে যাওয়া কর্মকর্তাদের রক্ষা করার কাজ ভারত একাই করেনি।

অভিযানমূলক ব্যর্থতাকে কৌশলগত সাফল্যে রূপান্তর করতে তথ্য যুদ্ধ

ইতিহাস কৌশলগত এবং অভিযানমূলক পরাজয়ের উদাহরণে পরিপূর্ণ যা পরে কৌশলগত বিজয়ের দিকে চালিত হয়েছে এবং তার উল্টোটা। যুদ্ধক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ যুদ্ধক্ষেত্রে ভাগ্য যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারণের অন্যতম কারণ। এ ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক যে উদাহরণটি তুলে ধরা যেতে পারে, তা হল ভিয়েতনামে ১৯৬৮ সালের টেট অফেনসিভ। উত্তর ভিয়েতনামী সেনাবাহিনী এবং ভিয়েত কং মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে ব্যাপক আশ্চর্যজনক আক্রমণ শুরু করে। কার্যকর ভাবে আক্রমণ ব্যর্থ হয় এবং আক্রমণকারী জোট বিভিন্ন শহর থেকে বিতাড়িত হওয়ার আগে বিপুল হতাহতের সম্মুখীন হয়। তা সত্ত্বেও এই অভিযানটি মার্কিন পরাজয় এবং ভিয়েতনামের বিজয়ের পিছনে সবচেয়ে প্রভাবশালী কারণ হয়ে ওঠে। তার চেয়েও বড় কথা, বিজয়ের রূপ প্রদান করেছিল তথ্যের পরিসরকারণ আক্রমণের পরপরই ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কিত মিডিয়া কভারেজ এক বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব’ তৈরি করেছিল, যা মার্কিন জনসাধারণের মনে যুদ্ধ সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্যের প্রতি অবিশ্বাস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল। ভারত পশ্চিমের মধ্যে বর্তমান পরিস্থিতিকে ভিয়েতনামের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে।

উত্তর ভিয়েতনামী সেনাবাহিনী এবং ভিয়েত কং মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে ব্যাপক আশ্চর্যজনক আক্রমণ শুরু করে।

টেট অফেনসিভের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় ভারতীয় অভিযানগুলি তাদের পরিশীলনের অভাব নির্বিশেষে জাতীয় নিরাপত্তার যুক্তি দ্বারা সমর্থিত সাহসিকতার ধারণাই প্রদর্শন করেছে। ব্যর্থতা তার পরবর্তী কালে জনসমক্ষে তথ্যের উদ্ঘাটন জনগণকে উস্কে দিয়েছে এবং ঘটনাপ্রবাহের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বাধ্য করেছে। যাই হোক, ভারতীয় বুদ্ধিজীবীরা সন্ত্রাসবাদ ও সার্বভৌমত্বের পশ্চিমের নীতিতে বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব’ দর্শিয়ে ভারতীয় গোয়েন্দাদের সৃষ্ট সুযোগকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে যে, সন্ত্রাসবাদ দমন এমন একটি নীতি যার জন্য সর্বজনীন জোটের প্রয়োজন এবং বাস্তবে তার নিজস্ব সন্ত্রাসবাদ বিরোধী নীতিগুলি এই বাগাড়ম্বর বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ৯/১১-র আগেকার সময়ে অসংখ্য উদাহরণ দর্শিয়েছে যে, পশ্চিমী গোয়েন্দারা আসলে সন্ত্রাসবাদীদেসুরক্ষা দিয়ে চলেছে। ব্রিটেন ওসামা বিন লাদেনকে সুরক্ষা দেওয়ার দোষে দুষ্ট। কারণ একাধিক আল কায়েদা কর্মী তার ভূখণ্ডের মধ্যেই আশ্রয় নিয়েছিল। বিন লাদেনকে গ্রেফতারের জন্য লিবিয়ার পরোয়ানাকে ব্রিটিশ ও মার্কিন গোয়েন্দারা চেপে দিয়েছিল এবং ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের হুমকিকে খাটো করে দেখিয়েছিল। তা সত্ত্বেও, ৯/১১ হামলা ওয়ার অন টেরর বা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের (ডব্লিউওটি) জন্ম দিয়েছিল এবং আশা ছিল যে, ডব্লিউওটি-র আখ্যান বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখবে। তবুও ডব্লিউওটি-সূচনার এক দশক মধ্যেই কথা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, মার্কিনরা নির্দিষ্ট কিছু সন্ত্রাসবাদীদে লক্ষ্যবস্তু করেছে, যা আসলে আবার ‘ওদের সন্ত্রাসবাদী’ বনাম ‘মাদের সন্ত্রাসবাদী’র মধ্যে পার্থক্যের জন্ম দিয়েছে। বর্তমানে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর পশ্চিমী দেশগুলি সন্ত্রাসবাদবিরোধী নীতিকে দুর্বল করতে এবং বিশ্বব্যাপী তল্লাশি চলছে এ হেন সন্ত্রাসবাদীদের গোয়েন্দা সম্পদ হিসাবে নিয়োগ করতে আরও উৎসাহিত হয়েছে।

সন্ত্রাসবাদের মতোই সার্বভৌমত্বের নীতিটিও এমন ক বাগাড়ম্বর, যেটিকে পশ্চিমীরা শুধু মাত্র বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছে। এর একটি আদর্শ উদাহরণ হল, ১৯৮৫ সালের অক্টোবর মাসে তিউনিসিয়ার তিউনিসে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) সদর দফতরের উপর রায়েলি বিমান হামলা। হামলার পর সার্বভৌমত্ব আঞ্চলিক অখণ্ডতার নীতির আহ্বান জানিয়ে ভারত-সহ রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) সদস্য দেশগুলি ইরায়েলের নিন্দা করে এবং রেজোলিউশন ৫৭৩ বহাল করে। শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই সে সময়ে ভোটদান থেকে বিরত ছিল, যা আসলে নীতির তুলনায় মার্কিনদের স্বার্থকেই দর্শায়। একই ভাবে, গোয়েন্দা তথ্যের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যখন কানাডা ভারতের বিরুদ্ধে সার্বভৌমত্বের নীতির আহ্বান জানিয়ে আসছে, তখন এ কথা মনে করা জরুরি যে, কানাডা মোসাদের অভিযানের সমর্থনে কানাডিয়ান পাসপোর্ট প্রদান করে রায়েলি গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেছিল। গোয়েন্দা সংস্থাগুলি অভিযানের উদ্দেশ্যে অন্য দেশের জাল পাসপোর্ট যে ব্যবহার করছে, তা আর আশ্চর্যজনক নয়। কিন্তু কানাডার মতো একটি দেশের জন্য - যারা এক দিকে সার্বভৌমত্বের নীতির লঙ্ঘনকে অস্বীকার করে, আবার অন্য দিকে অন্য দেশের দ্বারা অপব্যবহারের জন্য আসল পাসপোর্ট প্রদান করে – এটি একটি গুরুতর বিশ্বাসযোগ্যতার অভাবকেই দর্শায়।

গোয়েন্দা তথ্যের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যখন কানাডা ভারতের বিরুদ্ধে সার্বভৌমত্বের নীতির আহ্বান জানিয়ে আসছে, তখন এ কথা মনে করা জরুরি যে, কানাডা মোসাদের অভিযানের সমর্থনে কানাডিয়ান পাসপোর্ট প্রদান করে রায়েলি গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেছিল।

অতএব, তথ্য যুদ্ধের দৃষ্টিকোণ থেকে পশ্চিমের বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব ভারতকে যথেষ্ট সুযোগ প্রদান করে। পশ্চিমী দেশগুলির মধ্যে এমন কয়েকটি দেশ রয়েছে, যারা তাদের নিজস্ব সরকারের নীতিকে ওভাররুলিং নীতি এবং সন্ত্রাসবাদীদের সহ্য করা কিংবা সহযোগিতা করার বিষয়ে প্রশ্ন তোলে। কানাডার বিরোধী নেতা খালিস্তানিদের প্রতি ট্রুডো সরকারের সমর্থন নিয়ে প্রশ্ন তোলার ক্ষেত্রেও এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায়। যাই হোক, একটি তথ্য যুদ্ধের কৌশল ছাড়া ভারতীয় বুদ্ধিজীবীরা এই পশ্চিমী ভাষ্যকে প্রসারিত করতে সক্ষম হনি বা আক্রমণাত্মক ভাবে কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম ছাড়া পশ্চিমের বিশ্বাসযোগ্যতার অভাবকে উন্মোচন করার জন্য নিজস্ব কোনও সংস্করণ তুলে ধরতে পারেনি। বরং মনোযোগ দেওয়া হয়েছে র-একার্যকরী দক্ষতার উপর, যেটি হয় অর্থহীন, অথবা আত্মঘাতীমূলক। র এই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে শোধরায় না কি আন্তর্জাতিক আইন মেনে সুনির্দিষ্ট হত্যার অনুশীলনকে সম্পূর্ণ রূপে পরিহার করে… তা একাধিক কারণ মাথায় রেখে নয়াদিল্লির রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেবে। জনসাধারণ এবং ভারতের বুদ্ধিজীবীদের যে বিষয়ের উপর মনোযোগ দিতে হবে, তা হল সেই সকল তথ্যমূলক আক্রমণ পরিচালনা করা, যেখানে কৌশলগত ও কার্যকরী ব্যর্থতাকে কৌশলগত বিজয়ে রূপান্তরিত করা যেতে পারে।

 


ধীরজ পরমেশ ছায়া সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব হল-এর ডিপার্টমেন্ট অফ ক্রিমিনোলজির ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটির অধ্যাপক।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.