Author : Aparna Roy

Published on Nov 27, 2021 Updated 0 Hours ago

জলবায়ু পরিবর্তন হল মূলত একটা বিশ্বজনীন ব্যবস্থাগত সমস্যা। এ কোনও বিচ্ছিন্ন ইস্যু নয় যে তার সমাধান করা যাবে ভিন্ন ভিন্ন কুঠুরিতে পৃথক ভাবনাচিন্তা, পরিকল্পনা ও নীতিভিত্তিক সক্রিয়তার দ্বারা।

কপ২৬ ও পরবর্তী সময়ের জন্য বিশ্বব্যাপী জলবায়ু ব্যবস্থাগ্রহণের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল

এই নিবন্ধটি ‘‌এক কম–কার্বন ও জলবায়ু–স্থিতিস্থাপক পৃথিবীর পথে:‌‌ কপ২৬ থেকে প্রত্যাশা’‌ শীর্ষক সিরিজের অংশ।


বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সঙ্কট এখন বিভিন্ন দেশে আঞ্চলিক বা বিশ্বজনীন মঞ্চে আলোচনার বিষয়বস্তু। বিশ্ব যখন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে নির্ণায়ক ‘‌‌সক্রিয়তার দশক’‌–এ প্রবেশ করছে, সে সময় সঙ্কটের মোকাবিলার জন্য সমষ্টিগত প্রয়াস আরও জোরালো করা প্রয়োজন, এবং তা করতে হবে নীতিভিত্তিক অভিমুখে। এই সময়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের ফ্রেমওয়র্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (‌ইউএনএফসিসিসি)‌–এর ২৬তম কনফারেন্স অফ পার্টিজ (‌কপ২৬)‌ পৃথিবীর সামনে একটা সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে এখনও অবধি কী কাজ হয়েছে তা খতিয়ে দেখে জলবায়ু সক্রিয়তার ভবিষ্যৎ দিশা নির্ধারণের একটা সুচিন্তিত দীর্ঘমেয়াদি কৌশল তৈরি করার।

জলবায়ু সঙ্কট যে কতটা গভীর তার যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমাণ রয়েছে। ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (‌আইপিসিসি)‌–এর ষষ্ঠ অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্টে (‌এআর৬)‌ বিষয়টির উপর যথেষ্ট আলোকপাত করা হয়েছে। মানবজাতির জন্য এখনকার পরিস্থিতি হল ‘‌‌কোড রেড’‌, আর তা সব দেশের সামনে নিয়ে এসেছে পরিবেশগত ও আর্থসামাজিক নিয়মবিধিতে কাঠামোগত পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ। এইগুলো সমর্থিত হচ্ছে সাধারণ ভাবে যা দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে দিয়ে, যেমন বিশ্বজুড়ে সাইক্লোন, বন্যা, দীর্ঘস্থায়ী খরা, তাপপ্রবাহ ও অন্যান্য জলবায়ু–ঘটিত বিপর্যয়ের মতো নানা চরম জলবায়ু পরিস্থিতি ও আবহাওয়াগত ঘটনাসমূহ যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে এবং মারাত্মক হয়ে উঠছে। ওয়র্ল্ড মেটিওরলজিকাল অরগানাইজেশন–এর রিপোর্টে বলা হয়েছে গত ৫০ বছরে গড়ে প্রতি দিন একটা–না–একটা আবহাওয়া বা জলবায়ু সম্পর্কিত বিপর্যয় ঘটেছে, এবং তার ফলে দৈনিক ক্ষতি হয়েছে ২০ কোটি ২০ লক্ষ মার্কিন ডলার।

বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় এখন সরকারগুলোকে বলছেন ২০৩০–এর মধ্যে গোটা বিশ্বে নিঃসরণ অর্ধেক করতে এবং ২০৫০–এর মধ্যে নেট জিরোয় পৌঁছনোর জন্য সব রকম চেষ্টা করতে। এগুলো এখন আর উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য নয়, একেবারে জীবনমরণের প্রশ্ন। জলবায়ু সঙ্কটের পদচিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে গোটা বিশ্বে, আর তাই ভবিষ্যৎ জলবায়ু সক্রিয়তার দিশা নির্ণয় ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল স্থির করার দায়িত্বও পৃথিবীর সমষ্টিগত ও প্রতিনিধিত্বমূলক মঞ্চগুলির। এই ক্ষেত্রে কপ২৬ এমন একটা মঞ্চ যেখানে গোটা বিশ্ব সমষ্টিগত ঐক্যের মধ্যে দিয়ে জলবায়ু সক্রিয়তার কৌশল স্থির করতে এবং আরও এগিয়ে বর্তমান প্রয়োজন অনুযায়ী ভুল শুধরে নতুন করে শিখতে পারবে।

এই লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ হবে এত দিন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমনে যে সব কাজকর্ম করা হয়েছে তার সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে নেওয়া। এত দিন সামগ্রিক ভাবে ‘প্রদূষণকারীরাই টাকা দেবে’‌ নীতি অনুসরণ করা হয়েছে, আর চেষ্টা করা হয়েছে যারা সঙ্কট ডেকে এনেছে প্রথমত তাদের উপর দায়িত্ব চাপাতে, এবং সেই সঙ্গে আনুপাতিক হারে তাদের টাকা দিতে বাধ্য করতে। জলবায়ু পরিস্থিতিতে এই দৃষ্টিভঙ্গিকে বলা হয়েছে ‘‌অভিন্ন কিন্তু পৃথকীকৃত দায়িত্ব’‌। এটা ভাবা হয়েছে এই নীতির ভিত্তিতে যে বিভিন্ন রাষ্ট্রকে দায় নিতে হবে জলবায়ু সঙ্কটে কার কতটা ভূমিকা সেই নিরিখে, যাতে করে আমাদের গ্রহের আরও ভাল ভবিষ্যতের অভিন্ন লক্ষ্যে এগনো যায়। একটা জায়গা যেখানে এই নীতি অক্ষরে অক্ষরে অনুসৃত হচ্ছে তা হল অর্থসংস্থান। প্যারিস চুক্তির (‌২০১৫)‌ অঙ্গ হিসেবে উন্নত দেশগুলোকে ২০২০ সালের মধ্যে ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার দিতে বলা হয়েছিল। তবে এই সংখ্যায় পৌঁছনোটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, আর তার ফলে জলবায়ু সক্রিয়তা শ্লথ হয়ে গিয়েছে উন্নয়নশীল ও সবচেয়ে কম উন্নত দেশগুলোতে (‌এলডিসি)‌, এবং বিশেষ করে উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতে, যারা কিনা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং যারা অর্থনৈতিক ভাবেও সঙ্কটাপন্ন।

সার্বিক জলবায়ু সক্রিয়তার ক্ষেত্রে অন্য আরেক মাত্রার জটিলতাও সমস্যা তৈরি করেছে। তা হল বিষয়টিকে যে ভাবে দেখা হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী বিষয়টির যে ভাবে সমাধান খোঁজা হয়েছে, সেই সংক্রান্ত। জলবায়ু পরিবর্তন হল মূলত একটা বিশ্বজনীন ব্যবস্থাগত সমস্যা। এ কোনও বিচ্ছিন্ন ইস্যু নয় যে তার সমাধান করা যাবে ভিন্ন ভিন্ন কুঠুরিতে পৃথক ভাবনাচিন্তা, পরিকল্পনা ও নীতিভিত্তিক সক্রিয়তার দ্বারা। একই সঙ্গে এটাও ঘটনা যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব ভৌগোলিক ভাবে, সামাজিক ভাবে, এবং জনসংখ্যাগত ভাবে চারিদিকে ছড়িয়ে আছে, এবং এতে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন গরিব ও অসহায় মানুষেরা। কাজেই জলবায়ু পরিবর্তন বিভিন্ন অঞ্চল ও জনগোষ্ঠীকে যে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে তার মধ্যে বৈষম্য রয়েছে, আর সেই কথা মাথায় রেখে সমাধানও খুঁজতে হবে স্থানীয় স্তরে পরিকল্পনা ও রূপায়ণের মাধ্যমে, এবং বিকেন্দ্রীকৃত ও নিচু–থেকে-উপরে পৌঁছনো সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে। এর অর্থ এই নয় যে বিশ্ব মঞ্চগুলো স্থানীয় সক্রিয়তা থেকে বিযুক্ত হবে। বরং কপ২৬–এর মতো বিশ্ব মঞ্চগুলোর ভূমিকা হওয়া উচিত জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধানে স্থানীয়, জনগোষ্ঠীভিত্তিক সক্রিয়তাকে বিবর্ধিত করা ও খরচের পরিপ্রেক্ষিতে আরও দক্ষ করে তোলা। তা ছাড়া, বিশ্ব মঞ্চগুলো যদিও ‘‌জলবায়ু ন্যায়বিচার’‌ ও ন্যায়সঙ্গত জলবায়ু সক্রিয়তার কথা বলে, কার্যক্ষেত্রে কিন্তু ‘‌ন্যায়সঙ্গত অতিক্রমণ’‌–এর সুদৃঢ় কাঠামো চোখে পড়ে না।

রাষ্ট্র, নীতিনির্ধারক ও নাগরিকদের জন্য কপ২৬ একটা এসপার-ওসপারের সুযোগ এনে দিয়েছে, আর সেই সুযোগটা হল এমন মূল্যবোধভিত্তিক দীর্ঘস্থায়ী কৌশল অবলম্বনের যার লক্ষ্য হবে ন্যায্য, কার্যকর ও মানবকেন্দ্রিক জলবায়ু সক্রিয়তা। প্রথমত, জটিল ব্যবস্থাগুলোকে, জলবায়ু সঙ্কটের চরিত্রকে, এবং তার মোকাবিলার জন্য যে ঐক্যবদ্ধ সমষ্টিগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তা গোটা পৃথিবীকে স্বীকার করতে হবে। এর অর্থ হল জলবায়ু সক্রিয়তার অভিন্ন কিন্তু পৃথকীকৃত দায়িত্বকে কী ভাবে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে আরও চাঙ্গা করে তোলা যায় তা পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে খতিয়ে দেখা। দেশগুলোকে তাদের অভ্যন্তরীণ জলবায়ু প্রয়াসের ক্ষেত্রেও ন্যায়সঙ্গত দৃষ্টিভঙ্গি নিতে হবে:‌ আর বিশ্বজনীন ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের চাপ দিতে হবে যাতে উত্তরের উন্নত দেশগুলো আরও কড়া ব্যবস্থা নেয়। তবে একই ধরনের ব্যবস্থা অন্য দেশগুলোকেও রূপায়িত করতে হবে তাদের জাতীয় জলবায়ু প্রয়াসের ক্ষেত্রে। জলবায়ু ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে সমাজের বা অর্থনীতির তুলনায় অধিকতর–সম্পন্ন মানুষদের ঐতিহাসিক কাজের ফল যেন অনিশ্চিত–অবস্থায়–থাকা অসহায় জনগোষ্ঠীগুলিকে ভুগতে না হয়। তা ছাড়া এই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশ যে সব ব্যবস্থা নিচ্ছে তা কার্যকর ভাবে প্রচারিত হলে সেটাই হয়ে দাঁড়াবে পুরো পৃথিবীকে আরও ন্যায়সঙ্গত জলবায়ু সক্রিয়তার দিকে নিয়ে যাওয়ার উপায়।

দ্বিতীয়ত, দেশগুলোকে এই সঙ্কটের পিছনে যে বিজ্ঞানভিত্তিক চালিকাশক্তিগুলো রয়েছে তা অনুধাবন করতে হবে, এবং প্রমাণভিত্তিক নীতিনির্ধারণের দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্মান করতে হবে। সব দেশকে তাদের সাফল্য বা ব্যর্থতা স্বীকার করার ক্ষেত্রে, এবং তাদের শিক্ষা সারা পৃথিবীকে জানিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে, স্বচ্ছ হতে হবে। দেশগুলির প্রতিনিধিদের ব্যর্থতা ঢাকা দিয়ে জলবায়ু সক্রিয়তার বিশ্বজনীন নেতা হিসেবে নিজেদের ভূমিকা অক্ষুণ্ণ রাখা বা নিজের দেশের জন্য আরও বিনিয়োগ টানার উদ্দেশ্যে ভিকটিম কার্ড খেলার লোভ সম্বরণ করতে হবে। এটা করতে পারলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে কথাবার্তা ও আলোচনা চালানো এবং আহৃত জ্ঞান ভাগাভাগি করে নেওয়ার ক্ষেত্রে একটা স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হবে। সারা পৃথিবীর বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়কে যুক্ত করে কপ২৬ ওই বিষয়টিকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। কারণ, বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় স্বাধীন ভাবে একটি দেশের জলবায়ু সক্রিয়তা, জলবায়ুর কারণে বিপর্যয়, প্রশমন ও অভিযোজনের মূল্যায়ন করতে পারেন। কোনও দেশের স্বাধীন এক্তিয়ারকে বা স্বাধিকারকে কোনও ভাবে বিঘ্নিত না করে এই কাজ করতে হবে, এবং এই অন্তর্দৃষ্টির একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হবে, আর হয়ে উঠতে হবে পৃথিবীর মঙ্গলের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক মূল্যায়ন। এটা করা যেতে পারে সহযোগিতার ভিত্তিতে, প্রত্যেকটি দেশের নিজস্ব বৈজ্ঞানিক ও সুশীল সমাজের নেটওয়ার্কগুলির সঙ্গে সমন্বয়সাধন করে।

তৃতীয়ত, বিকেন্দ্রীকৃত ও স্থানীয় স্তরের পরিকল্পনা ও তার রূপায়ণকে স্বীকৃতি দিতে হবে, এবং সেগুলিকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বিশ্বজনীন লড়াইয়ের কৌশল হিসেবে সংযুক্ত করতে হবে। স্থানীয়, জনগোষ্ঠীচালিত জলবায়ু প্রশমন ও অভিযোজনের ব্যবস্থাগুলিকে আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলার জন্য কপ২৬ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংক্রান্ত ব্যবস্থাগ্রহণের স্থাপত্যের মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে। এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের সামাজিক দিকটির সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া সম্ভব হবে, আর সেখানে মূল স্তম্ভ হবে বিপদের সামনে অসহায় জনগোষ্ঠীগুলির বিপদের সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষমতা তৈরি করা। এই প্রসঙ্গে সব থেকে ভাল উপায় হল জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল হিসেবে জনগোষ্ঠী-ভিত্তিক সমাধানের পরিকল্পনা ও তার রূপায়ণকে স্বীকৃতি দেওয়া।

চতুর্থত, বিশ্বব্যাপী আলোচনায় যথেষ্ট নজর দেওয়া প্রয়োজন জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন, এবং সমাজের, অর্থনীতির ও বাস্তুতন্ত্রের অসহায় অংশগুলির লড়াইয়ের ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে। আরও প্রয়োজন ক্ষেত্রভিত্তিক, দেশভিত্তিক কৌশল নেওয়া, যাতে করে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর দিকগুলো সঙ্গে অভিযোজন সম্ভব হয়, সম্ভাব্য প্রাকৃতিক বিপদ অনুমান করা যায়, এবং যে সব ক্ষেত্রকে তা প্রভাবিত করবে সেই সব ক্ষেত্রের জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা যায়। কোভিড–১৯ বুঝিয়ে দিয়েছে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি থাকা এবং বিপদের মূল্যায়নের ও বিপর্যয় মোকাবিলার প্রশ্নে এক কদম এগিয়ে থাকা কতটা জরুরি। কোভিড–১৯ অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হওয়ার লক্ষ্যে সব দেশ যে তৎপরতার সঙ্গে এগিয়ে এসেছিল, জলবায়ু সক্রিয়তার ক্ষেত্রেও সেই তৎপরতা দেখানোর চেষ্টা করতে হবে।

সবশেষে, দীর্ঘমেয়াদি কৌশল, নীতি, কর্মপদ্ধতি ও তৃণমূল স্তরে জলবায়ু সক্রিয়তা সার্থক ভাবে কার্যকর করার ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হল প্রযুক্তি উন্নত করা, হস্তান্তর করা, এবং প্রশমন ও অভিযোজনের লক্ষ্যে জলবায়ু সক্রিয়তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সক্রিয়তার জন্য অর্থসংস্থানের যে ব্যবস্থা রয়েছে, তাকে একটা কথা স্বীকার করতে হবে। তা হল বিভিন্ন দেশ ও জনগোষ্ঠী তাদের তুলনামূলক ধনী দেশগুলির অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক ক্রিয়াকর্মের ফলে যে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার মধ্যে একটা সহজাত অসাম্য রয়েছে। কাজেই যা আবশ্যক তা হল যথেষ্ট মাত্রায় বিশ্বজনীন অর্থসংস্থানের ব্যবস্থা করা, এবং তার ন্যায়সঙ্গত ও যথার্থ পুনর্বণ্টন। যে কোনও প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক কাজকর্মের সামাজিক, পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক ন্যায্যতা যাচাই করার একটা সহজ ও কার্যকর ব্যবস্থা হল ‘‌সাসটেনেবল ফিনান্স ট্যাক্সোনমি’‌। এই ধরনের শ্রেণিবিন্যাস এখন বিভিন্ন দেশে ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, দক্ষিণ আফ্রিকা, চিন, মালয়েশিয়া ,ও ভারতের মতো বিভিন্ন আঞ্চলিক ব্লকে উন্নয়ন ও রূপায়ণের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এই বাজারভিত্তিক কাঠামোগুলো প্রশমন ও অভিযোজন প্রক্রিয়া কতটা টেকসই হবে তা পরিমাপের মাপকাঠি হতে পারে, আর সেই সঙ্গেই সামাজিক কল্যাণ ও ন্যায়সঙ্গত অতিক্রমণের গুণগত পরিমাপের উপর প্রাপ্য গুরুত্ব দিতে পারে।

এই পাঁচ দফা দীর্ঘমেয়াদি কৌশল কপ২৬–এ গোটা বিশ্বের মানুষকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দিশা দেখাতে পারে। এ ক্ষেত্রে মূল কথা হল আরও স্থায়ী, ন্যায়সঙ্গত ও কার্যকর জলবায়ু সক্রিয়তার জন্য প্রতিটি দেশের এবং সমষ্টিগত ভাবে পুরো বিশ্বের রূপায়ণ, পর্যবেক্ষণ ও প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ সংক্রান্ত ব্যবস্থা তৈরি করা, আর তার জন্য প্রয়োজন আত্মসমীক্ষা করা, সত্যকে স্বীকার করা ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা তৈরি করা।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.