Published on Jan 14, 2024 Updated 0 Hours ago

এলপিজির চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমছে, এবং সরবরাহের ‌দিকের চ্যালেঞ্জ ভারতে এলপিজির চাহিদার উপর চাপ বাড়াতে পারে।

তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস: ভারতে সরবরাহের চ্যালেঞ্জ

তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) উৎপাদন ১৯৪০ ও ’‌৫০–এর দশকে ভারতে সক্রিয় আন্তর্জাতিক তেল সংস্থা বার্মা–শেল ও স্ট্যানভাক শুরু করেছিল। বার্মা শেল ১৯৫৫ সালে মুম্বইতে এলপিজির বিপণন কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (আইওসি), যার হাতে জাতীয়করণের পর বার্মা শেলের শোধনাগারগুলি এসেছিল, তার কলকাতায় ইন্ডেন নামক প্রথম এলপিজি সংযোগ চালু করতে আরও দশ বছর লেগেছিল। ১৯৭০–এর দশকের গোড়ার দিকে, এলপিজি ব্যবহারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ পরিবারগুলির এটি ব্যবহারের পথে বাধা সৃ্ষ্টি করেছিল। যেমন, ১৯৭০ সালে, আইওসি–র ইন্ডেন এলপিজি–র মাত্র ২৩৫,০০০ নিবন্ধন ছিল। নিবন্ধন সংখ্যা ১৪.৮ মিলিয়নে নিয়ে যেতে লেগেছিল প্রায় তিন দশক সময়, একটি সুসংগঠিত মিডিয়া প্রচারাভিযান, এবং ভর্তুকি। ১৯৮০–র দশকে চাহিদা পূরণের জন্য এলপিজির অভ্যন্তরীণ উৎপাদন অপ্রতুল ছিল, এবং  বম্বে ও সাউথ বেসিন ক্ষেত্র থেকে প্রচুর পরিমাণে ‘‌অ্যাসোসিয়েটেড গ্যাস’‌ থেকে প্রোপেন ও বিউটেন এবং আরও বেশি পরিমাণে ‘‌ফ্রি গ্যাস’‌ নিষ্কাশন শুরু করা হয়েছিল। এলপিজি নিষ্কাশন, বোতলজাত করার জন্য প্ল্যান্ট  স্থাপন, এবং রান্নার জ্বালানি হিসাবে এলপিজি বাজারজাতকরণের জন্য নির্দিষ্ট বাজেটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ১৯৭০–৭১ এবং ২০১০–১১–এর মধ্যে এলপিজি উৎপাদন বার্ষিক গড় ৯.৯১ শতাংশের বেশি হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল, যেখানে ব্যবহার বৃদ্ধি পায় ১১.৩৩ শতাংশ হারে। এটা ছিল পেট্রোল ও ডিজেল–সহ সমস্ত পেট্রোলিয়াম ডেরিভেটিভগুলির মধ্যে দ্রুততম বৃদ্ধির হার৷ ২০১০–১১ সালে এলপিজির চাহিদার প্রায় ৪৭.৩ শতাংশ পূরণ করেছিল আমদানি, যা ২০২২–২৩ সালে ৬৪.২ শতাংশের উপরে চলে গিয়েছে। এলপিজি আমদানি ছিল ২০২২–২৩ সালে মোট পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানির ৪১.১ শতাংশেরও বেশি। এলপিজির চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমছে এবং সরবরাহের ‌দিকের চ্যালেঞ্জ ভারতে এলপিজির চাহিদার উপর চাপ বাড়াতে পারে।


এলপিজি উৎপাদন

১৯৭০–৭১ সালে এলপিজির অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ছিল ০.১৭ মিলিয়ন টন (এমটি)। ১৯৭০–৭১ থেকে ১৯৮০–৮৫ সাল পর্যন্ত এলপিজির উৎপাদন বার্ষিক গড় ১৩.৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৮০–৮১ থেকে ১৯৮৫–৮৬ সালে উৎপাদন বার্ষিক গড়ে প্রায় ২২.৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল, কারণ এই সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত পরিশোধন ক্ষমতা যুক্ত হয়েছিল, নতুন ক্র্যাকিং ইউনিট চালু করা হয়েছিল, এবং প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে এলপিজি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১৯৮৫–৮৬ থেকে ১৯৯৫–৯৬–এর মধ্যে এলপিজি উৎপাদনে বার্ষিক গড় বৃদ্ধি প্রায় ৩.১১ শতাংশে নেমে আসে;‌ কিন্তু ১৯৯৫–৯৬ থেকে ২০০০–০১ পর্যন্ত, যখন জামনগরে বেসরকারি ক্ষেত্রের শোধনাগার চালু হয়, তখন তা বেড়ে ৩১.৩৪ শতাংশে উন্নীত হয়। তারপর ২০০০–০১ থেকে ২০১০–১১ পর্যন্ত এলপিজি উৎপাদন বার্ষিক গড় মাত্র ২.১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল, এবং ২০১০–২০ সালে বৃদ্ধি সামান্য বেড়ে ২.২ শতাংশে পৌঁছয়। ২০২০–২১ থেকে ২০২২–২৩ পর্যন্ত এলপিজি উৎপাদন বার্ষিক গড় ৩.১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এলপিজি ২০১০–১১ সালে অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতার প্রায় ৫ শতাংশ হলেও ২০২২–২৩ সালে তা প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতার প্রায় ৪.২ শতাংশে নেমে এসেছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা সত্ত্বেও ভারতীয় পরিশোধকেরা অর্থপূর্ণভাবে এলপিজি উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ায়নি। ভারতীয় শোধনাগারগুলি পেট্রোল ও ডিজেল উৎপাদন করার জন্য আরও ভালভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, এবং এলপিজি উৎপাদন কম হয়েছে, যার ফলে দেশীয় এলপিজি উৎপাদন সীমিত হয়ে গিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রচুর এলপিজি প্রাপ্যতা থাকায় ভারতীয় তেল সংস্থাগুলির সম্ভবত ভবিষ্যতে নাটকীয়ভাবে এলপিজি উৎপাদন বাড়াবে না।

 

সূত্র: পেট্রোলিয়াম প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যানালিসিস সেল

আমদানি


এলপিজির অভ্যন্তরীণ উৎপাদন স্থবির থাকায় চাহিদা বৃদ্ধির জন্য আমদানি যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। এলপিজির জন্য আমদানি নির্ভরতা ২০১০–১১ সালে
৪১ শতাংশের বেশি থেকে ২০২২–২৩ সালে ৬৪ শতাংশের বেশি হয়েছে। ২০১০–১১ সালে এলপিজি আমদানির প্রায় ৭.৮ শতাংশ ছিল বেসরকারি ক্ষেত্রের আমদানি, কিন্তু ২০২২–২৩ সালে তা শূন্যে নেমে এসেছে। ২০১২–১৩ সালে ভারতে এলপিজি আমদানির ৯৯ শতাংশের বেশি এসেছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি থেকে৷ ২০২২–২৩ সালে ভারতের এলপিজি আমদানিতে মধ্যপ্রাচ্যের অংশ মোটামুটি ৯২ শতাংশে নেমে এসেছে। কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (ইউএই) ২০১২–১৩ সাল থেকে ভারতের জন্য শীর্ষ তিনটি এলপিজি আমদানির উৎস। ২০১২–১৩ সালে কাতার ভারতে এলপিজি আমদানির বৃহত্তম উৎস ছিল, কিন্তু এর অংশ ২০১২–১৩ সালের ৩২ শতাংশ থেকে ২০২২–২৩ সালে ২৭ শতাংশে নেমে এসেছে, তবে দেশটি এখনও ভারতের শীর্ষ এলপিজি সরবরাহকারী। সৌদি আরব ২০১২–১৩ সালে ভারতে এলপিজির দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী ছিল, এবং মোট আমদানির ২৫ শতাংশ তাদের থেকে আসত। কিন্তু এটি ২০২২–২৩ সালে ১৯ শতাংশে নেমে গিয়ে তৃতীয় স্থানে নেমে আসে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, যে ২০১২–১৩ সালে ২১ শতাংশ নিয়ে তৃতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী ছিল, ২০২২–২৩ সালে তার অংশ বৃদ্ধি করে ২৬ শতাংশে পৌঁছে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। ২০২২–২৩ সালে ভারত ১৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ১৮.৩ মেট্রিক টন এলপিজি আমদানি করেছে। আমদানি আয়তনের দিক থেকে এলপিজি মোট পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানির ৪১ শতাংশ এবং মূল্যের দিক থেকে আমদানির ৫১ শতাংশ। পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানি ভারতের মোট আমদানির প্রায় ২৪ শতাংশের জন্য দায়ী

 

ইস্যু

এলপিজি মূলত একটি জীবাশ্ম জ্বালানি। স্কোপ ১ নির্গমন (সরাসরি গ্রিনহাউস (জিএইচজি) নির্গমন যা এলপিজি উৎপাদকের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বা মালিকানাধীন উৎস থেকে ঘটে) এবং এলপিজির স্কোপ ২ নির্গমন (এলপিজি উৎপাদনকারীর দ্বারা ব্যবহৃত আমদানি করা শক্তি এবং বাহ্যিক শক্তির ইনপুটগুলির পরোক্ষ জিএইচজি নির্গমন) বেশ উচ্চ। এলপিজির স্কোপ ৩ নির্গমন  (মূল্য শৃঙ্খল জুড়ে নির্গমন যা কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে, উৎপাদন, বিতরণ এবং অবশেষে গ্রাহকের শেষ পণ্যের ব্যবহার পর্যন্ত বিস্তৃত) পেট্রোল ও ডিজেলের তুলনায় ব্যবহারের বিন্দুতে তুলনামূলকভাবে কম। স্কোপ ৩ হল যেখানে নির্গমনের সর্বাধিক শতাংশ তেল ও গ্যাস উৎপাদকদের জন্য ঘটে, এবং সাধারণত সঠিকভাবে পরিমাপ করা ও ট্র্যাক করা নির্মাতাদের পক্ষে সবচেয়ে কঠিন। এলপিজির জন্য আমদানি নির্ভরতা বৃদ্ধি নির্গমন চ্যালেঞ্জকে বাড়িয়ে তুলতে পারে, এবং শক্তি নিরাপত্তার লক্ষ্যকে দুর্বল করতে পারে। ভারতে এলপিজি সরবরাহ এবং ব্যবহারে সংবিদ্ধ (‌এমবেডেড)‌ শক্তি সুরক্ষা ও নির্গমন চ্যালেঞ্জগুলি ক্ষতি করতে পারে স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্য ৭ (এসডিজি ৭) অর্জনের সঙ্গে, যার লক্ষ্য সকলের জন্য পরিচ্ছন্ন রান্নার জ্বালানির সুযোগ বৃদ্ধি করা।


এলপিজি সরকারি ক্ষেত্রের (ওএনজিসি, আইওসি, এইচপিসিএল, বিপিসিএন ও অন্যান্য) বেশিরভাগ উৎপাদক ও আমদানিকারক ২০৪০–৫০ সালের মধ্যে স্কোপ ১ ও ২ নির্গমনকে ধীরে ধীরে শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি মধ্যমেয়াদে এলপিজি–র পরিবেশগত প্রমাণপত্রের যথেষ্ট উন্নতি ঘটাবে, কিন্তু এটি সেই উৎসগুলি থেকে এলপিজি আমদানি সীমিত করতে পারে যেগুলি স্কোপ ১ ও ২ নির্গমনকে পর্যায়ক্রমে শূন্যে নামাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দীর্ঘ মেয়াদে, এলপিজি উৎপাদনকারীদের বিনিয়োগ করতে হবে ফিডস্টক ব্যবহার করে পুনর্নবীকরণযোগ্য এলপিজি (আরএলপিজি) উৎপাদনে, যার মধ্যে থাকে কৃষির অবশিষ্টাংশ, শক্তি উদ্ভিদ, বনের অবশিষ্টাংশ, মিশ্র বর্জ্য, শেওলা, জৈব তেল ও ইথানল। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী স্বল্প পরিমাণে আরএলপিজি উৎপাদিত হচ্ছে। তবে এলপিজি থেকে প্রাপ্ত শক্তির একটি ছোট অংশকে আরএলপিজি থেকে প্রাপ্ত শক্তি দিয়ে প্রতিস্থাপনের জন্য দৃঢ় নীতিগত ধাক্কা ও প্রণোদনা প্রয়োজন।



সূত্র: পেট্রোলিয়াম প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যানালিসিস সেল (পিপিএসি)

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Lydia Powell

Lydia Powell

Ms Powell has been with the ORF Centre for Resources Management for over eight years working on policy issues in Energy and Climate Change. Her ...

Read More +
Akhilesh Sati

Akhilesh Sati

Akhilesh Sati is a Programme Manager working under ORFs Energy Initiative for more than fifteen years. With Statistics as academic background his core area of ...

Read More +
Vinod Kumar Tomar

Vinod Kumar Tomar

Vinod Kumar, Assistant Manager, Energy and Climate Change Content Development of the Energy News Monitor Energy and Climate Change. Member of the Energy News Monitor production ...

Read More +