Author : Amna Mirza

Published on Mar 13, 2023 Updated 1 Days ago

পরিবেশগত স্থিতিশীলতা ‌ও লাইফ (‌LiFE)‌–এর মূল নীতিগুলি পূরণ করতে ৪আইআর ও বিশ্বায়ন ৪.০–এর সুবিধাগুলি ব্যবহার করার প্রয়োজন রয়েছে

‘‌লাইফ ও শিল্প ৪.০: স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য ডিজিটালাইজেশন ও বিশ্বায়ন ৪.০–এর সঠিক সমন্বয় প্রয়োজন

মানব সভ্যতার সব সময়েই পরিবেশের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ থেকেছে। লাইফ (‌LiFE বা পরিবেশের জন্য জীবনশৈলী) উদ্যোগ এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিকটিকে তুলে ধরেছে। বৈশ্বিক পরিবেশগত উদ্বেগ , যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ, পরিবেশগত অবক্ষয় বা সম্পদহ্রাস মানবতার জন্য এমন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে যা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। অনুমান অনুসারে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবে বিশ্বব্যাপী প্রায় তিন বিলিয়ন মানুষ, যা গ্রহের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ, ২০৫০ সালের মধ্যে জলের দীর্ঘস্থায়ী অভাব এবং জিডিপি–র প্রায় ১৮ শতাংশের ক্ষতির মতো অপরিবর্তনীয় প্রতিকূল ফলাফলের সম্মুখীন হতে পারে। যাই হোক, নতুন শক্তি সংস্থান, জলবায়ু নিরাপত্তা, স্থায়িত্ব ও বৃত্তাকার অর্থনীতির বিষয়ে আলোচনায় যে বিষয়টি উপেক্ষা করা কঠিন তা হল শিল্প ৪.০–র উত্থান কীভাবে প্রভাবিত হবে।

পরিবেশগত নিরাপত্তার প্রতি বিবেকবান অঙ্গীকারের ভিত্তিতে মনোভাব ও উপলব্ধিতে ব্যক্তিগত পরিবর্তন একটি বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলবে, এই ধারণাটি প্রকৃতপক্ষে ভবিষ্যতের জন্য একটি উদ্ভাবনী ও অসাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি। যে কোনও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর জন্য বৈশ্বিক উদ্বেগকে পুরোপুরি উপেক্ষা না–করেও একটি তৃণমূল সংযোগ প্রয়োজন। অ্যাজেন্ডা ২০৩০–এর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (মিলেনিয়াল ডেভলপমেন্ট গোলস বা এমডিজি’‌স) থেকে ক্রমে স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (সাসটেনেবল ডেভলপমেন্ট গোলস বা এসডিজি’‌স) সরে আসার কাহিনি সবারই জানা। বৈশ্বিক লক্ষ্য হিসাবে এসডিজি’‌স–এর জন্য এখন জনসাধারণকে কেন্দ্রে রেখে সকল অংশীদারের মধ্যে সঠিক সহযোগিতা প্রয়োজন। এসডিজি অর্জনের জন্য পুরনো ও উদীয়মান প্রযুক্তি একটি সক্রিয় ফ্যাক্টর হতে পারে, এবং সমস্ত অংশীদারের জন্য তা লাভদায়ক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। ব্যক্তিগত অনুসন্ধান ও সম্মিলিত সংহতির অগ্রগতির মধ্যে শিল্প ৪.০–র উত্থান হয়েছে, এবং একে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), বিগ ডেটা অ্যানালিটিক্স, সাইবার ভৌত ব্যবস্থা ও ব্লক চেন–এর মতো সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির সঠিক সমন্বয় তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। সমসাময়িক সময়ে সেচ ও জল পরিবহণ থেকে শুরু করে সৌর শক্তি পর্যন্ত পরিবেশগতভাবে সম্ভাব্য সমস্যা সমাধানের পদ্ধতির সূচনা করার জন্য প্রযুক্তিভিত্তিক নতুন সমাধানগুলির প্রভাব গুরুতর মনোযোগ দাবি করে।

সূত্র: ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ মার্কেট অ্যানালিসিস রিপোর্ট অ্যান্ড রিজিয়ন ফোরকাস্ট, ২০২২ – ২০৩০

বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থা এক অদ্ভুত মন্থন প্রত্যক্ষ করছে। ইতিহাসের দিকে তাকালে পরিষেবাগুলি–সহ একটি বাণিজ্য ও পণ্য বিনিময় প্রক্রিয়া হিসাবে বিশ্বায়নের বিরাট তাৎপর্য রয়েছে। এটি একটি অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এলাকা, যেখানে সুবিধা ও অসুবিধা দু’‌‌রকমই আছে। বৈশ্বিক বাজার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির উত্থানকে আমাদের দেখতে হবে তৃণমূল–সংযোগ হারানো, উন্নয়ন–সুযোগ–সম্পদের ক্রমবর্ধমান বৈষম্য, এবং পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতার মতো বিভিন্ন বিষয়ের প্রেক্ষাপটে। উল্টো দিকে, কেউ বিশ্বায়নের সমালোচনা করতে পারেন, তবে এটিকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল করার আহ্বান কাজের কথা নয়।

বিশ্বায়নের পশ্চাদপসরণের আহ্বানটি আরও ভাল বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আসার জন্য উদারপন্থী প্রকল্পগুলির পতনের প্রেক্ষাপটে এসেছিল। পপুলিজমের উত্থান, পরিবর্তনশীল সময়ের প্রয়োজন এবং স্থানীয় চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষার মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে বৈশ্বিক প্রতিনিধিত্বমূলক প্রক্রিয়াগুলিকে সংস্কার করার আহ্বান, এই সব একত্রে একটি আকর্ষণীয় বিতর্ক উপস্থাপন করে, যা কিনা আজকের বৈশ্বিক সমস্যাগুলির মন্থনকে প্রতিফলিত করে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে (৪আইআর) বুঝতে হবে বিশ্বায়ন ৪.০–এর উত্থানের প্রেক্ষাপটে। অতীতে শিল্প বিপ্লবগুলিও বিশ্বায়নের পূর্ববর্তী পর্যায়গুলির সঙ্গে একটি বিচিত্র বৈপরীত্য তৈরি করে এবং বৈচিত্র্যময় হয়। যেহেতু বিশ্ব এখন বিশ্বায়ন ৪.‌০–এর কাঠামোর মধ্যে যান্ত্রিকীকরণ থেকে অটোমেশন, রোবোটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, বিগ ডেটা অ্যানালিটিক্স, সাইবার ভৌত ব্যবস্থা ও শিল্প ৪.০–এর দিকে  এগিয়ে যাচ্ছে, তাই এই দুই দৃষ্টান্তের একটি সাধারণ বর্ণন এই বিষয়টি নিশ্চিত করবে যে ফলাফলগুলি সাধারণ বাস্তবতা ও একটি স্থিতিশীল ভবিষ্যতের সঙ্গে আরও বেশি সম্পর্কযুক্ত হবে।

শিল্প ও বিশ্বায়নের পূর্ববর্তী পর্যায়গুলি বাণিজ্য ও সংযোগের সুবিধার সূচনা করেছিল, তবে শেষ ফলাফলের মধ্যে আভিজাত্য ও বৈষম্য কিন্তু চালিত করেছিল সাংস্কৃতিক পরিচয়ের ক্ষতি, অসম অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, সস্তা শ্রম বাজারের শোষণ এবং পরিবেশগত অবনতির বিশাল সমস্যার দিকে। অতিমারি–পরবর্তী পর্যায়টি এসডিজি–কে কেন্দ্রে রেখে অর্থনীতি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরামিতিগুলির পুনর্বিবেচনার দাবি করে। বিশ্বব্যাপী পৌঁছের সঙ্গে জাতীয় উদ্বেগের ভারসাম্য বজায় রেখে দেশগুলিকে সুবিধাগুলি তুলতে হবে। এক্ষেত্রে শিল্প ৪.০ ও বিশ্বায়ন ৪.০ উভয়ের জন্যই একটি সঠিক অভিমুখ প্রয়োজন, যা স্বতন্ত্র রাষ্ট্র ও অন্য অংশীদারদের জন্য দেশীয় স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক লাভের ভারসাম্য তৈরি করে।

এ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক শাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হল যে বৈশ্বিক সমস্যাগুলি এখন ছিদ্রযুক্ত। রাষ্ট্রপন্থী ব্যবস্থা এখনও পবিত্র, কিন্তু একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক–দেশীয় দ্বিধাবিভক্তির ধারণাটি অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আর এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রাষ্ট্রগুলি পূর্ববর্তী শিল্প বিপ্লবগুলির লাভ তুলতে ব্যর্থ হয়ে থাকতে পারে, তবে ৪আইআর–এর গুণাবলি থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা বর্তমান সময়ের পক্ষে কাজের কথা নয়। বৈশ্বিক ও স্থানীয় সুযোগ–সুবিধার জন্য এটি ব্যবহার করার জন্য কার্যকর বিকল্পগুলিকে বিবেচনা করা এই সময়ের প্রয়োজন।

সংশ্লিষ্ট বৈশ্বিক পরিবেশের সঙ্গে শিল্প বিপ্লবগুলি দেশীয় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাষ্ট্রগুলির লাভ নির্ধারণে মূল ভূমিকা পালন করেছে। পরিবর্তন একমাত্র ধ্রুবক; এবং পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ও স্ফূর্তি হল সুবিধার ক্ষেত্রগুলির ব্যবহারের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক। অর্থনৈতিক উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অস্তিত্বগত বিপদের মধ্যে পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীলতা প্রয়োজন, এবং সেইজন্য এআই, মেশিন লার্নিং, বিগ ডেটা অ্যানালিটিক্স, ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি) ও রোবোটিক্স–এর সঠিক বিকাশের সময় এই দুইয়ের সমন্বয় অত্যন্ত প্রয়োজন।

পরিবেশের সঙ্গে এসডিজি–গুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ রয়েছে। স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ পানীয় জল, এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের মতো মহৎ পরিকল্পনাগুলি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত, এবং তথ্য ও সমাধানের বাস্তব উৎস সরবরাহ করতে প্রযুক্তির ভূমিকাকে উপেক্ষা করা যায় না। উৎপাদন থেকে উপভোগ পর্যন্ত অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া পরিবেশের উপরেও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে, এবং তাই লেনদেন পর্যায়ে সবুজ প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তি হয়ে উঠেছে স্থিতিশীল ব্যবসায়িক অনুশীলনে একটি নতুন প্রবণতা। এই বিষয়ে অর্থনৈতিক ও পরিবেশগতভাবে দক্ষতার কৌশলগত স্থাপত্য গড়ে তোলার জন্য শিল্প ৪.০–র সম্ভাব্যতা সব স্তরে সঠিক নীতি সমন্বয়ের দাবি করে, যাতে তথ্য প্রবাহ ও প্রতিক্রিয়া কার্যকর ও নির্ভুল থাকে।

৪আইআর হল শিল্পের অগ্রগতির সর্বাধুনিক পর্যায়, যার সঙ্গে স্মার্ট গ্রিড, ইন্টেলিজেন্ট ফ্যাক্টরি এবং ন্যূনতম পরিবেশগত ক্ষতির জন্য গ্যাজেটগুলিতে স্বয়ংক্রিয়তা–সহ ডিজিটালাইজেশন একইসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইনপুট এবং আউটপুট। প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এর আগেও হয়েছে, কিন্তু তার প্রসারের বিকেন্দ্রীকরণ ও বৈশ্বিক পরিমণ্ডলের সঙ্গে উপযুক্ত পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ঘাটতি ছিল।

বৈশ্বিক শাসন–ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক ও আদর্শগত কাঠামোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিল হল সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা। ব্যবসা থেকে সাধারণ প্রাত্যহিক জীবনের একটি সত্য হিসাবে ব্যাঘাত এবং অতিমারি–পরবর্তী পর্যায়ে মন্থনকে চালিত করার জন্য নতুন দেশীয় আখ্যানের প্রয়োজনীয়তা একই সূত্রে বাঁধা। ‘‌বসুধৈব কুটুম্বকম’‌–এর ভারতীয় নীতিগুলি এই অবস্থার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোকবর্তিকা। এই ধারণাটির সম্প্রসারণ হিসাবে সমতা ও অন্তর্ভুক্তির উপর ভিত্তি করে ৪আইআর–এর সুবিধাগুলি নেওয়ার জন্য বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার ঘটনাটি কিন্তু লাইফ ও এসডিজি অর্জনের জন্য বিশাল সুবিধার সূচনা করতে পারে।

ডিসেম্বর ২০২২ দেশের জন্য একটি নতুন ভোরের সূচনা করেছিল, কারণ তখন ভারত এক বছরের জন্য জি২০ গোষ্ঠীর প্রেসিডেন্সির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল। সকলেই এ বিষয়ে একমত যে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্র, যেখানে জাতীয় স্বার্থ সর্বোচ্চ, তার প্রেক্ষাপট হল মানুষের জীবনের সঙ্গে তার গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ ও প্রভাব। যে বিষয়গুলি নিয়ে ভারত অতীতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তেমন তিনটি সম্পূরক ও পরিপূরক বিষয়ের মধ্যে সঠিক সমন্বয়ের জন্য এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে:‌ পরিবেশগত ভারসাম্য, ডিজিটালাইজেশনের সুবিধা নেওয়ার ব্যবস্থা করা, এবং সকলের উন্নতির জন্য বিশ্বব্যাপী শাসন কাঠামোর সংস্কার।


এই ভাষ্যটি থিঙ্ক২০–র টাস্ক ফোর্স ৩–এর অধীনে আলোচনার অংশ

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.