Published on Apr 21, 2023 Updated 0 Hours ago

সভাপতিত্বের জন্য নয়াদিল্লির কর্মসূচির পথ ধরে ২০২৩-এর কেন্দ্রীয় বাজেট জি২০-র উদ্দেশ্যগুলিকে অগ্রাধিকার প্রদান করেছে

লাইফ, স্থিতিস্থাপকতা এবং সুস্থতা: ভারতের যা করণীয়

জি২০ সূচনার পর থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ভারত প্রথমবারের মতো বহুল প্রত্যাশিত সভাপতিত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করে জি২০কে নেতৃত্ব দানের স্থানে উঠে আসতে সক্ষম হয়েছে। ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টান্তের পরিবর্তনের মাঝে মঞ্চটিতে ভারতের অবস্থান শুধুমাত্র সবচেয়ে জনবহুল দেশের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক মঞ্চের প্রতিনিধিত্বই করে না, বরং সমগ্র গ্লোবাল সাউথের জন্য বিশ্বের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) ৮৫ শতাংশ এবং বিশ্বের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধিত্বকারী সদস্য দেশগুলির মধ্যে উন্নয়নমূলক অগ্রাধিকারগুলির উপস্থাপনার জন্য একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে।

সভাপতিত্বে নয়াদিল্লির কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে ভারত ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ বা ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’কে তার জি২০ কার্যক্রমের পটভূমি হিসাবে মনোনীত করেছে এবং অবিলম্বে ২০২৩ সালে তার শক্তিশালী কেন্দ্রীয় বাজেট দিয়ে বছর শুরু করেছে, যাতে জি২০-র উদ্দেশ্যগুলিকে যথেষ্ট অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে। উদ্দেশ্যগুলি হল —দূষণহীন উন্নয়ন, পরিবেশের জন্য জলবায়ু অর্থায়ন ও লাইফস্টাইল ফর এনভায়রনমেন্ট (লাইফ), অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্থিতিস্থাপক বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত রূপান্তর, স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অগ্রগতি এবং নারী নেতৃত্বাধীন উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা ইত্যাদি।

এ বছরের বাজেট দেশের লাইফ প্রতিশ্রুতির অধীনে প্রকল্পগুলির জন্য যথেষ্ট তহবিল বরাদ্দ করলেও এই উদ্যোগগুলি কীভাবে উদ্দিষ্ট সুবিধাভোগীদের, বিশেষ করে গ্রামীণ এবং আধা-শহুরে জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছয় এবং ভারতীয় প্রকল্পে কীভাবে সেগুলির মূল্যায়ন সম্ভব, সেটাই দেখার।

কপ২৬-এ প্রধানমন্ত্রী মোদী দ্বারা সূচিত লাইফ-এর কর্মসূচিতে পরিবর্তনশীল চাহিদা ও উৎপাদনের ধরনগুলিকে ভারতের বিপুল জনসংখ্যার ভারের প্রেক্ষিতে আরও স্থিতিশীল স্তরে আনার কথা বলা হয়েছে। এ বছরের বাজেট দেশের লাইফ প্রতিশ্রুতির অধীনে প্রকল্পগুলির জন্য যথেষ্ট তহবিল বরাদ্দ করলেও এই উদ্যোগগুলি কীভাবে উদ্দিষ্ট সুবিধাভোগীদের, বিশেষ করে গ্রামীণ এবং আধা-শহুরে জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছয় এবং ভারতীয় প্রকল্পে কীভাবে সেগুলির মূল্যায়ন সম্ভব, সেটাই দেখার।

পরিবেশগত স্থিতিশীলতার পথে

হাইড্রোজেন শক্তি বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ক্ষেত্রে এখন প্রধান আলোচ্য। একটি পরিচ্ছন্ন পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস হিসাবে হাইড্রোজেনের ব্যবহারকে বিকাশ, উৎপাদন এবং উদ্দীপিত করার দৌড়ে বৈশ্বিক শক্তিগুলির সঙ্গে সমতা অর্জনের লক্ষ্যে এ বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটে আমদানি শুল্ক হ্রাস, কর প্রণোদনা এবং এই গ্যাসের উৎপাদন ও বিতরণের জন্য পরিকাঠামো প্রতিষ্ঠার  ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই উদ্যোগের জন্য সরকারের সদ্ভাবনা ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ এমএমটি বার্ষিক উৎপাদন অর্জনের বহু বিলিয়ন ডলার প্রচেষ্টার বাস্তবায়ন এবং অর্থায়নের ত্রুটিগুলির সমাধান করে না। ‘ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ডিং’-এর একটি নির্ভুল পদ্ধতির মাধ্যমে ৪০০০ এমডব্লিউএইচ-এর ব্যাটারি স্টোরেজের প্রযুক্তি – একটি প্রমাণভিত্তিক পদ্ধতি যা সরকারকে এর জন্য চূড়ান্ত ব্যয় নির্ধারণের আগে কর্মসূচির সাফল্য বা ব্যর্থতা পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ দেয়—তার জন্য তহবিল প্রদানকে এ ক্ষেত্রে যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত বলা যেতে পারে।

এই উদ্যোগের জন্য সরকারের সদ্ভাবনা ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ এমএমটি বার্ষিক উত্পাদন অর্জনের বহু বিলিয়ন ডলার প্রচেষ্টার বাস্তবায়ন এবং অর্থায়নের ত্রুটিগুলির সমাধান করে না।

এই ফ্ল্যাগশিপ কর্মসূচি ছাড়াও সরকারের সম্প্রদায়ভিত্তিক নাগরিককেন্দ্রিক গ্রিন ক্রেডিট প্রোগ্রাম হল সংস্থা, নাগরিক সমাজ এবং স্থানীয় সংস্থাগুলির দ্বারা পরিবেশগতভাবে স্থিতিশীল এবং প্রতিক্রিয়ামূলক পদক্ষেপগুলিকে উৎসাহিত করার জন্য সুপ্রশাসনের উদ্যোগের দিকে আর একটি পদক্ষেপ। কিন্তু যে প্রকল্পের জন্য ভারত সরকারের খ্যাতি, সেই পিএম উজ্জ্বলা প্রকল্প – প্রাথমিকভাবে মহিলাদের এবং পরিবারগুলিকে এত দিন ব্যবহৃত কয়লা এবং কাঠ থেকে রক্ষা করার জন্য কেন্দ্রীয় অর্থায়নে গ্রামীণ জনগণের মধ্যে ভর্তুকিযুক্ত রান্নার গ্যাস ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পিত- এ বছরের বাজেটে তার কোনও বরাদ্দ না-থাকা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচিকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করা; তবে গ্রামীণ এবং শহুরে উভয় এলাকায় ২০০টি কম্প্রেসড বায়োগ্যাস (সিবিজি) প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মূল বিনিয়োগ-সহ গোবর্ধন (গ্যালভানাইজিং অর্গানিক বায়ো-এগ্রো রিসোর্সেস ধন) প্রকল্পটি লাইফ কর্মসূচির জন্য দেশীয় পদ্ধতিগুলি অন্বেষণ করার নিরিখে প্রয়োজনীয় অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারে।

সামাজিক কল্যাণের অগ্রগতি

অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং কার্যকর স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থা-সহ ভারতের অস্থির ইতিহাস অরক্ষিত জনগণের মধ্যেও সামাজিক কল্যাণকে এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টার প্রমাণ দর্শায়। সামান্য বিস্ময়কর হলেও এটি জি২০ সভাপতিত্ব এবং ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ দর্শনের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ২০২৩ অর্থবর্ষে বাজেটটি তার অন্য ছ’টি ‘সপ্তঋষি’ বা সাতটি অগ্রাধিকারমূলক উদ্যোগে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নকে তুলে ধরে। ভারত সরকারের আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা (পিএমজেএওয়াই) – একটি সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিমা প্রকল্প – একটি স্থির স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বর্তমান বাজেটের ব্যয়ের মধ্যে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

নিরাপদ আবাসন, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, শিক্ষায় উন্নত সুযোগ, রাস্তা ও টেলিকম সংযোগ এবং পিভিটিজি পরিবারের জন্য স্থিতিশীল জীবিকার সুযোগ বিধানের উদ্দেশ্যে ১.৮ মার্কিন বিলিয়ন ডলারের প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে দুর্বল উপজাতীয় গোষ্ঠী (পিভিটিজি) উন্নয়ন মিশন চালু করা হয়েছে। ন্যাশনাল টেলি মেন্টাল হেলথ প্রোগ্রামের প্রসারের জন্য ১৬.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ধার্য করা হয়েছে। দেশের মানসিক সুস্থতা অভিধানে একটি স্বাগত সূচনা হিসাবে চিকিৎসা পেশাজীবী এবং শিল্প পেশাজীবীদের দ্বারা এই কর্মসূচিটি প্রশংসা পেয়েছে।

স্থিতিস্থাপক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য মানব সম্পদ

স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) দৃঢ়ভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধি এবং মানব সম্পদে বিনিয়োগের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ভারত শিক্ষাগত এবং দক্ষতার ফলাফল বাড়ানোর পাশাপাশি জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য প্রত্যেককে সাশ্রয়ী মূল্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ দিতে বদ্ধপরিকর। এ কথা সুপ্রতিষ্ঠিত যে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা বৃদ্ধি এবং বৈষম্য কমানোর পদ্ধতিগুলি দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রচেষ্টার সঙ্গে সম্পর্কিত। শিশু বিকাশ এই জীবনধারারই একটি অন্যতম অংশ। লাইফ কোর্সে হস্তক্ষেপ এবং বিনিয়োগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পাশাপাশি তাঁদের জন্যও তিনগুণ সুবিধা প্রদান করে, যাঁরা বর্তমানে জীবিত আছেন এবং ভবিষ্যতে যাঁরা প্রাপ্তবয়স্ক হবেন। অর্থনীতিবিদ জেমস হেকম্যান দীর্ঘমেয়াদে তাঁদের উত্পাদনশীলতা, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাগত ফলাফলগুলিকে বাড়ানোর জন্য ছোট শিশুদের উপরে আরও বেশি বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেন।

ভারত শিক্ষাগত এবং দক্ষতার ফলাফল বাড়ানোর পাশাপাশি জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য প্রত্যেককে সাশ্রয়ী মূল্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ দিতে বদ্ধপরিকর।

এনএফএইচএস-৫ অপুষ্টির উদ্বেগজনক প্রবণতা এবং ক্ষুধা নির্মূলের দিকে অগ্রগতির বিপরীতমুখী প্রবণতাকে প্রকাশ করে, যা অতিমারির কারণে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করার বিষয়টিকে আগের চেয়ে কঠিন করে তুলেছে। বিশ্বের ম্যালেরিয়ার তিন শতাংশ এবং যক্ষ্মা রোগের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি ঘটনা ভারতে পাওয়া যায়। ভারত স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতে তার জিডিপির যথাক্রমে মাত্র ১.২৬ শতাংশ এবং ৩ শতাংশ ব্যয় করে। অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সাধ্যাতীত খরচ (ওওপিই) ভারতের দারিদ্র্যের অন্যতম কারণ। এটি জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি ২০১৭-র ২.৫ শতাংশ লক্ষ্য পূরণের জন্য জনস্বাস্থ্য ব্যয়ের গুরুত্ব পুনর্মূল্যায়ন করার সুপারিশ করে এবং ওওপিই-কে স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যয়ের বর্তমান ৬৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সহায়তা করে৷ আয়ুষ্মান ভারত যোজনা, জাতীয় শিক্ষা নীতি, আত্মনির্ভর ভারত যোজনা, সমগ্র শিক্ষা এবং আরবান লার্নিং প্রোগ্রাম হল ভারত সরকারের এমন কিছু উদ্যোগ, যাতে দেশটির মানব সম্পদের ভিত্তি শক্তিশালী হয়। যদিও আয়ের বৈষম্য কমাতে এবং স্থিতিস্থাপক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিকে সুনিশ্চিত করতে জনগণের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং দক্ষতা নির্মাণে সুরক্ষা এবং বিনিয়োগ অপরিহার্য।

অতিমারিটি অর্থনীতি, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যাহত করেছে এবং এখনও নতুন একাডেমিক ও মনস্তাত্ত্বিক পথ ধরে তা বিকশিত হচ্ছে। আসন্ন মন্দা, ২০০টি জি২০ সমাবেশ এবং মুদ্রাস্ফীতিজনিত চাপ নিয়ে দেশটি আগামী বছর নির্বাচনে যেতে চলেছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও দেশের প্রত্যাশা পূরণের উদ্দেশ্যে সরকারের প্রচেষ্টা প্রতিফলিত হয়েছে। এ কথা বলা ভুল হবে না যে, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের শেষ পূর্ণ বাজেটটি দেশের জি২০ সভাপতিত্বের যুগে বিশিষ্টতার পথে নিজেকে চালিত করার জন্য সব থেকে ব্যয়বহুল পদক্ষেপ হতে পারে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Shoba Suri

Shoba Suri

Dr. Shoba Suri is a Senior Fellow with ORFs Health Initiative. Shoba is a nutritionist with experience in community and clinical research. She has worked on nutrition, ...

Read More +
Soumya Bhowmick

Soumya Bhowmick

Soumya Bhowmick is an Associate Fellow at the Centre for New Economic Diplomacy at the Observer Research Foundation. His research focuses on sustainable development and ...

Read More +