ব্রিকস–ব্যাপী বর্ধিত বিনিয়োগ ও সমর্থন ব্রিকস–কে সব থেকে ভাল করে কাজে লাগানোর একটি প্রত্যক্ষ উপায়, এবং তা ব্রেটন উডস অর্থোডক্সির বিপরীত যুক্তি হয়ে উঠতে পারে
এইনিবন্ধটি‘রাইসিনাএডিট২০২৩’সিরিজেরঅংশ।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্রিকস দেশগুলির সহযোগিতা স্থিতিস্থাপক ও ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে। ব্রিকস দেশগুলির জন্য তাদের অংশীদারি শক্তিশালী করতে, এই অনিশ্চিত সময় কাটিয়ে উঠতে, এবং যে বিষয়টির এখন আরও শক্তিশালী বাস্তবায়ন প্রয়োজন সেই চলতি ও ক্রমবর্ধমান প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের পরিপ্রেক্ষিতে এই গোষ্ঠীর মধ্যে ও অন্যান্য অঞ্চল জুড়ে বিনিয়োগ করা ও বিনিয়োগের সুবিধাকে উৎসাহিত করা অপরিহার্য। বিভিন্ন উপায়ে ব্রিকস সদস্যদের সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহী দেশগুলির সংখ্যাবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করা এবং সমর্থন করাও বুদ্ধির কাজ হবে।
পাঁচটি ব্রিকস দেশ সক্রিয়ভাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে। তাদেরসম্মিলিত জনসংখ্যা ৩.৩৩ বিলিয়ন, যা বিশ্বের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের বেশি, চারটি মহাদেশ জুড়ে গ্রহের ভূমির ২৬ শতাংশ তাদের, এবং বিশ্বব্যাপী মোট আভ্যন্তর উৎপাদনের (জিডিপি) ২৫ শতাংশ ও বিশ্ব বাণিজ্যের ২০ শতাংশের অংশীদার তারা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে তার অংশীদারি ও সহযোগিতার মাধ্যমে ব্রিকস বিশ্বব্যাপী শাসন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গণতন্ত্রীকরণের প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব সৃষ্টি করেছে; আর সেইসঙ্গে ব্রিকসের সঙ্গে সংযুক্ত হতে আগ্রহী বিভিন্ন উন্নয়নশীল ও উদীয়মান বাজার দ্বারা এ কথা প্রত্যয়িত করা হয়েছে যে সহযোগিতার বিকাশ ও প্রসারে ব্রিকস চিত্তাকর্ষক পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। যাই হোক, প্রতিটি সদস্যের একটি অনন্য ঘরোয়া প্রেক্ষাপট রয়েছে; কাজেই তাদের অবশ্যই কার্যকরভাবে বাধা ও অভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলি অতিক্রম করার জন্য সহযোগিতা করতে হবে। ব্রিকসকে আগের চেয়ে আরও বেশি একসঙ্গে কাজ করতে হবে, এবং উচ্চমানের অংশীদারির ছবি তুলে ধরতে হবে।
বিভিন্ন আর্থ–সামাজিক সমস্যা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ব্রিকস দেশগুলি রাজনৈতিক আস্থা তৈরি করতে, তাদের ব্যবহারিক সহযোগিতা জোরদার করতে, এবং তাদের নাগরিকদের মধ্যে উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সকলের পক্ষে লাভজনক মিথস্ক্রিয়াকে উন্নীত করতে একসঙ্গে কাজ করেছে।
ব্রিকস তার সদস্যদের মধ্যে আলোচনা ও সহযোগিতার জন্য ক্রমান্বয়ে একটি নিবেদিত গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন আর্থ–সামাজিক সমস্যা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ব্রিকস দেশগুলি রাজনৈতিক আস্থা তৈরি করতে, তাদের ব্যবহারিক সহযোগিতা জোরদার করতে, এবং তাদের নাগরিকদের মধ্যে উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সকলের পক্ষে লাভজনক মিথস্ক্রিয়াকে উন্নীত করতে একসঙ্গে কাজ করেছে। ব্রিকস–এর উন্নয়নের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হবে তার সদস্য সম্প্রসারণ। ২০২১ সালে ব্রিকস জাতীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক (এনডিবি) সম্ভাব্য সদস্যদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা পরিচালনা করে। সফল আলোচনার পর ব্রিকস এনডিবিসংযুক্ত আরব আমিরশাহি, বাংলাদেশ, উরুগুয়ে ও মিশরের অন্তর্ভুক্তির অনুমোদন দেয়। এই দেশগুলির এখন ব্রিকস সদস্য ও অন্য উদীয়মান অর্থনীতি ও উন্নয়নশীল দেশগুলির সঙ্গে পরিকাঠামো ও স্থিতিশীল উন্নয়নে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য এনডিবি–তে একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম পেয়েছে। এনডিবি–র প্রেসিডেন্ট মার্কোস ট্রয়জো ও মিশরের অর্থমন্ত্রী এইচ ই মোহাম্মদ মায়েত ইউএনএফসিসিসি–র পক্ষগুলির ২৭তম সম্মেলনে (কপ২৭) মিলিত হন, এবং২০৩০ অ্যাজেন্ডার উদ্দেশ্যগুলিকেএগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতার পরিকল্পনা ও যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করেন। এইচ ই মোহাম্মদ মায়েতের মতে, এনডিবি–র সঙ্গে কাজ করা হলসবুজ ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক বৃদ্ধির লক্ষ্যেঅগ্রসর হওয়ার একটি উল্লেখযোগ্য সুযোগ।
ইরান ও আর্জেন্টিনা আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকস ব্লকে যোগদানের জন্য আবেদন করেছে, এবং আলজেরিয়া গ্রুপে যোগ দিতে আগ্রহী আরেকটি দেশ হয়ে উঠেছে।
ব্রিকস এনডিবি–র সদস্যপদের বৃদ্ধি এই গোষ্ঠীটির বাজার অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য একটি নেতৃস্থানীয় উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠার লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ব্রিকসকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর জন্য আলোচনা ও পূর্ণ মতৈক্য প্রয়োজন। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনের সময় ব্রিকস বিদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মন্ত্রীদের বৈঠকের পর বলা হয়েছে, সদস্যদের মধ্যেপরামর্শ ও পূর্ণ ঐকমত্যের ভিত্তিতেব্রিকস সদস্যরাসম্প্রসারণ প্রক্রিয়ানিয়ে শেরপা চ্যানেলের মাধ্যমে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ইরান ও আর্জেন্টিনা আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকস ব্লকে যোগদানের জন্য আবেদন করেছে, এবং আলজেরিয়া গ্রুপে যোগ দিতে আগ্রহী আরেকটি দেশ হয়ে উঠেছে। উপরন্তু সৌদি আরব ও বাহরাইনও এইগোষ্ঠীতে যোগদানেরজন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ইচ্ছাপ্রকাশ করেছে।
সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলির মধ্যে একটি দেখায় যে চিন বাদে বাকি ব্রিকস দেশগুলি কোভিড–১৯ দ্বারা নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল।
কোভিড–১৯ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কটের দিকে চালিত করেছে এবং বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও অসাম্যের আকারে দুর্বলতা বাড়িয়েছে। অতিমারি, সরবরাহ শৃঙ্খলের সীমাবদ্ধতা, এবং পরবর্তী ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির প্রভাব থেকে বিশ্বে এখন পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া চলেছে। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার যৌথভাবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সঙ্গে সাময়িকভাবে কোভিড–১৯ ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা ক্ষেত্রেবুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি বিধিগুলি স্থগিতকরার জন্য লবি করা থেকে শুরু করে সহযোগিতা জোরদার করার জন্য ব্রিকস ভ্যাকসিন গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র চালু করা, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ভ্যাকসিনের ক্রয়ক্ষমতা নিশ্চিত করা, এবং ভ্যাকসিন, ডায়াগনস্টিকস ও থেরাপিউটিকসকেবাজারে আরও সহজলভ্য করা পর্যন্ত নানা বিষয়ে ব্রিকস সদস্যেরা একে অপরকে সমর্থন করেছে। বিপদের মুখে এই সাহসী প্রয়াস সত্ত্বেও অতিমারি নিয়ন্ত্রণ এবং বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধারকে উন্নীত করার চেষ্টার সময় গোষ্ঠীটির সামনে এখনও অনেক কাজ রয়েছে। ব্রিকস দেশগুলিকে এখনও সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি সমন্বয় এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে প্রয়াসী হতে হবে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলির মধ্যে একটি দেখায় যে চিন বাদে বাকি ব্রিকস দেশগুলি কোভিড–১৯ দ্বারা নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। নীচের চিত্র ১ দেখায় যে ২০২০ সালে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার জিডিপি হ্রাস পেয়েছে। কোভিড–১৯ এই চারটি ব্রিকস দেশকে অর্থনৈতিক ক্ষতির দিকে নিয়ে গেছে এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বেকারত্ব, দারিদ্র্য এবং অসাম্য পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে। কোভিড–১৯ সময়কালে চিনের জিডিপি অবশ্য ২০১৯ সালের ১৪,২৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৪০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০ সালে ১৪,৬৮৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়। বাকি চারটি দেশে কিন্তু তা হ্রাস পেয়েছিল। তবে ২০২০ সালের হ্রাসের পর ২০২১ সালের জন্য ব্রিকস দেশগুলির জিডিপি–র অঙ্কগুলো সুস্থিত প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত দেয়৷ ২০২১ সালে সমস্ত ব্রিকস দেশ জিডিপি বৃদ্ধির রেকর্ড করেছে৷ চিন ছিল কোভিড–১৯–এর কেন্দ্রস্থল, কিন্তু দেশটি সঠিকভাবে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিল, এবং সেই কারণে এরঅর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা বাড়িয়েছিল।
চিত্র ১: জিডিপি (বর্তমান বিলিয়ন মার্কিন ডলার),২০১০–২০২১
এই গোষ্ঠীর উপর কোভিড–১৯–এর নেতিবাচক প্রভাব সত্ত্বেও ব্রিকস অতিমারি–পরবর্তী ভবিষ্যতের দিকে কাজ করার জন্য তাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করেছে। অতীত এবং বর্তমান সময়ে বিশ্ব দেখেছে যে অর্থনৈতিক মন্দা প্রায়শই অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ বৃদ্ধি করে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় ভাঙ্গন ঘটায়; কিন্তু তা পরিবর্তন করা এবং পরিপূরকতা ও সমর্থনের সুযোগগুলি চিহ্নিত করে অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে উন্নত ও গভীর করার চেষ্টা করার সুযোগ রয়েছে। বিশ্ব ইতিমধ্যে পরস্পর নির্ভরশীল, এবং অতিমারি ও সরবরাহ শৃঙ্খলের সীমাবদ্ধতাকে ঘিরে সাম্প্রতিক সংকটগুলি দেখায় যে আরও ভাঙন বিশ্বব্যাপী গভীর মন্দা ও আরও খারাপ মূল্যস্ফীতির দিকে নিয়ে যাবে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক শাসনের উন্নতির জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে ব্রিকস দেশগুলিকে অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির সঙ্গে এবং জি২০, ডব্লিউটিও, বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডারের কাঠামোর মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয়সাধন করতে হবে।
জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্যগুলির সঙ্গে সমন্বিত হলে বিনিয়োগের সুবিধাদান বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে পারে, এবং দেশগুলির অর্থনীতিতে শিল্পায়ন ও কাঠামোগত রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
সহযোগিতা জোরদার করা বহুপাক্ষিকতার ঐতিহাসিক সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তা ছাড়া গভীর সম্পৃক্ততা আরও গঠনমূলক পরিবেশে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করে। অধিকন্তু ব্রিকস এবং বর্তমান ও ইচ্ছুক উচ্চাকাঙ্ক্ষী এনডিবি সদস্য দেশব্যাপী বিনিয়োগ ও সমর্থন বৃদ্ধি ব্রিকসকে সর্বাধিকভাবে কাজে লাগাতে, এবং ব্রেটন উডস অর্থোডক্সির প্রতিবিন্দু হিসাবে কাজ করার জন্য, একটি বিচক্ষণ উপায় হতে পারে। বিনিয়োগ ও বিনিয়োগের পথ করে দেওয়াব্রিকসের সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। বিনিয়োগ সুষম বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নকে উৎসাহিত করতে পারে।জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্যগুলির সঙ্গেসমন্বিত হলে বিনিয়োগের সুবিধাদান বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে পারে, এবং দেশগুলির অর্থনীতিতে শিল্পায়ন ও কাঠামোগত রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করতে পারে। আন্তঃবাণিজ্য ও বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে ব্রিকস দেশগুলো বেশ কিছু বোঝাপড়া ও চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার এই সময়ে বৈশ্বিক সঙ্কট থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য এই চুক্তিগুলি কাজে লাগানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপরন্তু, গোষ্ঠীটির বৃদ্ধি একে আরও বৈধতা দেয় এবং এই বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে যে এর সঙ্গে যুক্ত থাকা সার্থক।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.