Published on Jan 13, 2022 Updated 0 Hours ago

এটা স্পষ্ট যে অতিমারি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকারি সংস্থাগুলি একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে। কাজেই সেগুলোকে আরও শক্তিশালী করা উচিত। 

অতিমারির শিক্ষা: রাষ্ট্রের কার্যক্ষমতা ও তৃতীয় স্তরীয় শাসনপ্রক্রিয়া

আমাদের দৈনন্দিন বেঁচে থাকাকে প্রভাবিত করে এমন বহু বিষয় সম্পর্কে কোভিড–১৯ অতিমারি এখনও আমাদের নতুন কথা শিখিয়ে চলেছে। এর কারণেই আমরা সময় পেয়েছি এক পা পিছিয়ে গিয়ে এখনকার ব্যবস্থাগুলোর পুনর্মূল্যায়নের। আর তা শুধু সঙ্কটকালের জন্য নয়, নাগরিকদের দীর্ঘমেয়াদি মঙ্গলের জন্যও।

অতিমারি শুরুর সময় এবং পরে তার মোকাবিলার ক্ষেত্রে অনেকগুলি চ্যুতি রেখা প্রকাশ্যে এসেছে। অবশ্যই এ এমন এক মাপের স্বাস্থ্যসঙ্কট যার মোকাবিলা অতীতে করতে হয়নি। কিন্তু তা হলেও অতিমারি দেখিয়ে দিল আমাদের আইন ও শাসনব্যবস্থায় কতটা ফাঁক আছে, এবং জনস্বাস্থ্যজনিত জরুরি অবস্থার মোকাবিলার প্রশ্নে প্রস্তুতির অভাব ছিল কতটা। ২০২০ সালের মার্চ মাসে কোভিড–১৯ শুরু হওয়া থেকে আজ পর্যন্ত এর মোকাবিলার উপায়গুলো ক্রমাগত বদলাচ্ছে, এবং নতুন করে তৈরি হচ্ছে। এখন আমরা এই সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনার কিছু বিষয়ের মূল্যায়ন করতে পারছি, বিষয়গুলো বুঝতে পারছি, এবং ভবিষ্যতে কী ভাবে সমাধান খুঁজতে হবে সেই ধারণাও আমাদের হয়েছে।

২০২০ সালের মার্চ মাসে কোভিড–১৯ শুরু হওয়া থেকে আজও পর্যন্ত এর মোকাবিলার উপায়গুলো ক্রমাগত বদলাচ্ছে, এবং নতুন করে তৈরি হচ্ছে। এখন আমরা এই সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনার কিছু বিষয়ের মূল্যায়ন করতে পারছি, বিষয়গুলো বুঝতে পারছি, এবং ভবিষ্যতে কী ভাবে সমাধান খুঁজতে হবে সেই ধারণাও আমাদের হয়েছে।

অতিমারি নিয়ন্ত্রণের জন্য ভারতে দুটো আইন বার বার প্রয়োগ করা হয়েছে — এপিডেমিক ডিজিজেস অ্যাক্ট, ১৮৯৭ ও ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট, ২০০৫। এপিডেমিক ডিজিজেস অ্যাক্ট তৈরি করা হয়েছিল প্লেগ নিয়ন্ত্রণের জন্য, এবং এটা তৈরি হয়েছিল এমন এক সময়ে যখন রাষ্ট্রের সক্ষমতার ধারণা, স্থানীয় শাসনের সংজ্ঞা, বা প্রশাসনের থেকে দাবিদাওয়া একেবারেই ভিন্ন ছিল। ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট তৈরি হয়েছিল ২০০৪–এ ভারত মহাসাগরের সুনামির পর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা করতে। কোভিড–১৯–এর সময় এই আইনগুলির আওতায় অনেক নোটিশ জারি করা হয়েছে, কখনও কখনও প্রতি দিন, এবং তার উদ্দেশ্য ছিল অতিমারির পরিবর্তনশীল চাহিদা পূরণ করা। এপিডেমিক ডিজিজেস অ্যাক্ট রাষ্ট্রকে এমনকি স্থানীয় স্তরেও ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দেয়, যার ফলে কাজটা বিকেন্দ্রীকৃত হয়। ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে জরুরি পরিস্থিতির জন্য তৈরি হয়নি, কিন্তু অতিমারি মোকাবিলার ব্যবস্থাপনায় তা ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই আইনে বিপর্যয়ের সংজ্ঞা এতই প্রসারিত যে ছোঁয়াচে অসুখও তার আওতায় চলে আসতে পারে। কোভিড–১৯ অতিমারি এক অভূতপূর্ব জনস্বাস্থ্য সঙ্কট, এবং সেই কারণেই ভারতের মতো দেশে, বা পৃথিবীর আরও অনেক দেশে, এই ধরনের জনস্বাস্থ্য সঙ্কট মোকাবিলার উপযোগী আইন ছিল না। সঙ্কট যখন তুঙ্গে তখন রাষ্ট্র সব ধরনের আইনি অস্ত্র প্রয়োগ করেছিল, যার মধ্যে এই দুটি আইন ছাড়াও ফৌজদারি আইন ও অন্যান্য বিধিবদ্ধ ব্যবস্থাও ছিল। এর প্রভাব পড়েছিল সব ক্ষেত্রে, যার ফলে তৈরি হয়েছিল বিভ্রান্তি, সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব, এবং রাষ্ট্রীয় বা রাজ্য পর্যায়ে যা রূপায়িত হচ্ছে তার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় পর্যায়ে কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে তার হিসেব ওলটপালট হয়ে যাওয়ার ঘটনায়।

সঙ্কট যখন তুঙ্গে তখন রাষ্ট্র সব ধরনের আইনি অস্ত্র প্রয়োগ করেছিল, যার মধ্যে এই দুটি আইন ছাড়াও ফৌজদারি আইন ও অন্যান্য বিধিবদ্ধ ব্যবস্থাও ছিল।

যে সাধারণ সূত্র সব ইস্যুগুলোকে যুক্ত করেছিল তা হল এই মহাসঙ্কটের সময় তৃতীয় স্তরটির ভূমিকা। লকডাউন কার্যকর করা থেকে ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রশ্নে দ্বিধার মোকাবিলা করায় স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা পুরো অতিমারির সময়েই সুস্পষ্ট ছিল। যদিও বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকেই উদাহরণ দেওয়া যায়, এই নিবন্ধে এমন দুটো বিষয়ের কথা বলা হবে যেগুলো ভারতীয় সংবিধানের সপ্তম তফসিলের অন্তর্ভুক্ত, এবং সেই কারণে এই ক্ষেত্রে আইন তৈরি করার অধিকার রাজ্যের হাতে আছে। প্রথমটা হল জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত আইন, যার মধ্যে কোভিড–১৯–এর সময় পাওয়া শিক্ষাগুলো যুক্ত করতে হবে;‌ আর দ্বিতীয়টা হল এই সঙ্কটের সময় সরকারি লাইব্রেরির উপর আলোকপাত করা, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় এই ধরনের সময়কালে সামাজিক স্থান বা কমিউনিটি স্পেস কতটা জরুরি। নিজ নিজ ক্ষেত্রে ভিন্ন হলেও এইগুলো রাষ্ট্রের সক্ষমতার প্রতীক, এবং এগুলো আমাদের পাঠ দেয় অতিমারি থেকে পাওয়া শিক্ষার

রাজ্য–তালিকার ৬ নম্বর বিষয়টির মধ্যে আছে ‘‌জনস্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন;‌ হসপিটাল ও ডিসপেনসরি’‌। কিছু রাজ্যে, যেমন অসম, তামিলনাড়ু ও গোয়া (‌এবং দমন ও দিউ)‌, কোভিড–১৯ অতিমারির আগে থেকেই জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত আইন ছিল। ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল জনস্বাস্থ্য কাঠামোর সংস্কারে আইনগত ও শাসন–কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে আইন ও কার্যনির্বাহী বিভাগের জন্য নতুন পরিকল্পনা তৈরি করতে। স্বাস্থ্য রাজ্য তালিকাভুক্ত হওয়ায় এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের বলে বলীয়ান হয়ে মহারাষ্ট্রের খুবই প্রয়োজন একটা রাজ্য জনস্বাস্থ্য আইন তৈরি করার, যার মধ্যে কর্তব্যক্ষমতাসংযম নীতিসমূহ থাকবে, এবং সরকার ও রাষ্ট্রের এজেন্সিগুলো ছাড়াও জনস্বাস্থ্য সঙ্কট ও অন্য সময়ে জনগণের দায়িত্ব ও কর্তব্যও নির্দিষ্ট করা থাকবে। যা গুরুত্বপূর্ণ তা হল আইনগত ভাবে জনস্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থার প্রোটোকল তৈরি করা ও সক্ষমতা অর্জন, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ ও প্রমাণ–নির্ভর সিদ্ধান্তগ্রহণের প্রোটোকল তৈরি করা। শেষ পর্যন্ত এই কাজের লক্ষ্য হতে হবে সক্ষম স্বাস্থ্যআইন–কর্মীবর্গ তৈরি করা। এই কর্মীদের মধ্যে থাকবেন সব ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা, যাঁরা তথ্য ও কৌশল–সংক্রান্ত ধারণা আদানপ্রদান করতে পারবেন এবং দক্ষ প্রযুক্তিগত ও আইনি সহায়তার মাধ্যমে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারবেন।

গুরুত্বপূর্ণ হল আইনগত ভাবে জনস্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থার প্রোটোকল তৈরি করা ও সক্ষমতা অর্জন, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ, ও প্রমাণ–নির্ভর সিদ্ধান্তগ্রহণের প্রোটোকল তৈরি করা।

লাইব্রেরি আসে সপ্তম তফসিলের ১২ নম্বর বিষয়টিতে। লাইব্রেরি হল জনক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ যা জীবনভর শিক্ষার ব্যবস্থা করে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক দক্ষতার উন্নতি ও প্রসারের জন্য সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি। দেশজুড়ে লকডাউনের সময় মহারাষ্ট্রে পাবলিক লাইব্রেরিগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। অথচ এই সময়ে পাবলিক লাইব্রেরিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারত। এই জায়গাগুলোকে অনলাইন স্কুলের জন্য, কোভিড–১৯ সংক্রান্ত তথ্যভান্ডার হিসেবে, কোয়ারানটিন সেন্টার হিসেবে, ভ্যাকসিন দেওয়ার জায়গা হিসেবে এবং বড়দের ও ছোটদের অন্যান্য নানা কাজের জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারত। পাবলিক লাইব্রেরিগুলো খোলা থাকলে সেগুলোর ডিজিটাইজিং–এর প্রক্রিয়া দ্রুততর হতে পারত, কারণ জনসম্প্রদায়ের জন্য ডিজিটাইজেশনের কাজ জরুরি হয়ে পড়ত। কিন্তু সেগুলো বন্ধ থাকায় এই উদ্দেশ্য সাধিত হল না। যদি লাইব্রেরিগুলোর প্রশাসন ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার ওয়ার্ড কমিটি এবং/‌বা জেলা পরিষদের মতো স্থানীয় সংস্থাগুলোর হাতে থাকত তা হলে এগুলো খোলা থাকতে পারত, এবং কোভিড–১৯ সম্পর্কে তথ্য বা রোগের বিস্তারের ভিত্তিতে সেগুলোর প্রয়োজনের পুনর্বিন্যাস সম্ভবপর হত।

যদিও কোভিড–১৯ আমাদের বাধ্য করেছে স্বাস্থ্যের উপর নজর দিতে, সেই সঙ্গেই এই অতিমারি কিন্তু আমাদের সমস্ত সামাজিক ব্যবস্থা তছনছ করে দিয়েছে, এবং আমাদের বাধ্য করেছে ভবিষ্যতে রাষ্ট্র কী ভাবে হস্তক্ষেপ করবে, প্রতিরোধ করবে বা এমন পরিস্থিতির মোকাবিলা করবে তার বিভিন্ন স্তরের পুনর্মূল্যায়ন করতে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এখনও একটা তৃতীয় ঢেউয়ের সম্ভাবনা প্রবল। কাজেই রাষ্ট্রের সক্ষমতা তৈরি করা ও তৃতীয় স্তরের ক্ষমতায়ন এখনও প্রাসঙ্গিক ও জরুরি, এবং তা শুধু ভবিষ্যতের অজানা সঙ্কটের জন্য নয়, এখনকার অতিমারির জন্যও।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.